Monday 21 July 2008

ভারত, বিডিআর, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আর কিছু কথা

জরিপের কাজে আমি বাংলাদেশের অনেক জায়গাতেই ঘুরেছি। ইন্টারভিউয়াররা যখন হামলে পড়ত সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার যাওয়ার জন্য তখন আমি কোণে পড়ে থাকা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, রংপুরের পীরগঞ্জ, খাগড়ছড়ির দীঘিনালা, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ, ভোলার মনপুরা কিংবা বরিশালের গৌরনদী তুলে নিতাম। আমার লজিক ছিল বাংলাদেশের বিখ্যাত জায়গাগুলোতে কোনো না কোনোদিন যাওয়া হবেই। তাই এই ফাঁকে অখ্যাত অঞ্চলগুলোতেই বরং যাই। তাই ঘটেছে। বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েছি কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন, বান্দরবানের চিম্বুকে-কেওকারাডংয়ে, সিলেটের জাফলংয়ে। আমার বরাবরই সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো বেশ পছন্দের ছিল। কি সেটা নদীপথের, পাহাড়ের কিংবা সমতলের।


একবার বৃষ্টি দেখতে গিয়েছিলাম সিলেটের জাফলংয়ে। ঝুমবৃষ্টির মধ্যেই আমরা ছোট ডিংগি নৌকায় নদী পার হয়ে একটা ছোট চাবাগানে যাই। এদিক সেদিক ঘোরাঘুরির পর একজন বিডিআর সদস্যকে দেখতে পেয়ে কাছে যাই। আমরা তো আনন্দে বৃষ্টিতে ভিজছি কিন্তু সেই বিডিআর রাইফেল কাঁধে ঝুলিয়ে ফুটো হয়ে ছাতায় বৃষ্টি আগলে দাঁড়িয়ে দূরে তাকিয়ে আছেন। বয়স হয়তে ৪০-৪৫ হবে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি,

: আপনি কি দেখেন?
: ইন্ডিয়া। মানুষ।
: কই কিছুই তো দেখি না। খালি তো পাহাড়।
: আমি দেখি। ওই যে ওইদিকে দেখেন।

বিডিআরের নির্দেশিত দিকে আমি আঙ্গুল তুলে বলি,

: ওই দিকে ?
: আরে কি করেন। হাত নামান। হাত তুইলা দেখাইয়েন না।
: কেন? গুলি মারবে?
: মারতেও পারে।
: আচ্ছা ওরাও কি আপনারে দেখে?
: হ দেখে। ওরা দূরবীন দিয়া দেখে বাংকারে বইয়া।
: আপনের দূরবীন কই?
: আমি আল্লাহর দূরবীন দিয়া দেখি।

আমি লোকটার চোখে তাকাই। ভ্রু কুঁচকে ক্রমাগত চোখ এপাশ ওপাশ করে কি যেন খুঁজছেন। কাঁধ থেকে ঝুলে থাকা রাইফেলটা শক্ত হাতে চেপে ধরে আছেন। আল্লাহর দেয়া দুই দুরবীন তখন চকচক করছে।

: আচ্ছা কাদের অস্ত্র বেশি আধুনিক? বিডিআরের না বিসিএফের?
: আমাগো বন্দুকগুলা ভালো।
: কিরকম?
: ওরা তো একটা গুলি মাইরা মুইতা ঠান্ডা কইরা আবার গুলি মারে। আমরা ততক্ষণে অনেকগুলা গুলি করতে পারি। চাইনিজ মাল তো।
: তাইলে পেপারে যে এতো পড়ি বিএসএফ খালি বিডিআর মারে।
: কারণ ওগো সিস্টেম ভালো।
: কিরকম সিস্টেম?
: হাত তুইলেন না। আমি যেদিকে কই হেদিক তাকান। দেখছেন ওই যে গাছের নিছে একটা ছোট ঘর। ওইটা একটা ওয়াচক্যাম্প। ওইখানে কমপক্ষে ৪টা বিএসএফ আছে। তারপর ডানদিকে দেখেন আধামাইলও হইব না আরেকটা। দেখছেন?
: না।
: আরে বড় গাছটার আড়ালে। ওইখানে আরো ৪/৫ জন আছে। ওগো ক্যাম্পগুলার মধ্যে চলাচলের লাইগা গাড়িও আছে। এহন যদি আমারে গুলি মারে তাইলে একলগে কয়টা মারতে পারব চিন্তা করেন। আমি যদি বাঁইচাও যাই, নদী পার হইয়া ক্যাম্পে যাইতে পারুম না। কারণ গুলির শব্দে সব মাঝিরা নৌকা নিয়া ঘাটে যাইব গা ভয়ে। আমার কাছে ওয়ারল্যাসও নাই যে ক্যাম্পে খবর পাঠামু।
: তাইলে আপনারা এভাবেই ডিউটি করেন? ভয় লাগে না?
: কিয়ের ভয়? আমার কোনো ডর ভয় নাই।

ডরভয়হীন অকুতোভয় এই সীমান্তরক্ষীরে আবারও একলা ফেলে আমরা চলে যাই। অহেতুক আত্মতৃপ্তি নিয়ে ফিরি - আমাগো চাইনিজ মাল, ওগো বন্দুক দিয়া গুলি বাইরাইলে মুইতা ঠান্ডা করতে হয়। কিন্তু ভাবি না ওই ‘সিস্টেম’-এর কথা। আল্লাহর/ ভগবানের দুরবীন দিয়া সীমান্ত পাহারায় পাঠিয়ে দিই হান্নান আর কৃষ্ণপদদের।

* * * * * * * * * * * * *

আমি ইন্ডিয়ায় ছিলাম টানা চারমাস। অম্লমধুর অনেক অভিজ্ঞতা সেখানে হয়েছিল। ইন্সটিউটের অনেকের সঙ্গেই বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলাপ হয়েছিল। দুয়েকজন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি পাসপোর্ট নিয়ে এসেছ কেন এখানে? ইন্ডিয়ায় আসতে কি তোমাদের পাসপোর্ট লাগে? কই নেপালী কারো তো লাগে না।

এই অজ্ঞতা অবশ্য ইনস্টিউটের সবার ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে সবারই একটা তাচ্ছিল্যভাব এবং আগডুম বাগডুম কল্পনা ছিল। এমনকি কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে পাশ করা শ্বাশতীও তার কলেজ পর্যন্ত জানত বাংলাদেশে হিন্দুদের শুধু সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামেই দেখতে পাওয়া যায়। অনেকে এমন ভাব করত যে, নেপাল আর বাংলাদেশ ইন্ডিয়ারই স্টেট। শুধু দেশ হিসেবে এদেরকে দেখা হচ্ছে আরকি। অনেকই বিশ্বাস করত, আইএসআই-এর আরেকটা সদর দপ্তর বাংলাদেশে আছে। তাদের এ ধারণা যে ইন্ডিয়ার মিডিয়ার তৈরি সেটা আর বলাবাহুল্য।

ইন্সটিউটে আমার একবার হাতাহাতি হয়েছিল একজনের সঙ্গে। ‘বাংলাদেশ - ইট ইজ জাস্ট ফর ইন্দিরা গান্ধী’ এই বাক্যটার বিরুদ্ধে আমার যুক্তিতর্ক সে মানতে পারে নাই। আমাকে সেদিন সে ‘পিটাই’ করত যদি আশেপাশের কেউ না ঠেকাতো। ‘পড়াই কে লিয়ে’ আসার পর আমি বাংলাদেশ নিয়ে এতো কথা কেন বলি?

* * * * * * * * * * * * *

সম্প্রতি বিএসএফ কর্তৃক বিডিআর নিহত হওয়ার ঘটনায় আমি অবাক হই না। পাশ্ববর্তী দেশ হিসেবে ইন্ডিয়ার এই দাদাগিরি নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশকে অলমোস্ট নিজের বাজারে পরিণত করে নিয়েছে। বাংগালি জাতিকে আমি সবসময়ই বিপণনবিমুখ একটি জাতি হিসেবেই দেখি। তার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে রয়েছে দুর্নীতি। আর তারই সুযোগে প্রতিবেশি এই দেশটি দাদাগিরি ফলাচ্ছে। টেলিভিশনে ইন্ডিয়ান সংস্কৃতি আর পাকিস্তানি ইসলামি জোশের ঠেলায় হারাতে বসেছি বাংগালি কালচার। মুক্তিযুদ্ধ সাহায্য করেছে বলে এদেশীয় কিছু সুশীলের আনন্দবাজারীয় দালালি আর মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত কুত্তার বাচ্চাদের পাকিস্তানি পদলেহনে অস্থির হয়ে গেছে পুরো বাংলাদেশ। আর এসবের গ্যাড়াকলে পড়ে হান্নান আর কৃষ্ণপদেরা ঈদ-পূজায় দেশে যেতে পারে না ….

…. মেজাজ হঠাৎই খারাপ হয়ে গেছে। আর লিখলাম না ….

এ্যারে হুমায়ুন্যা … বালাছোত নি?

আইজকাইল সবাই বলা শুরু করছে যে বিশেষ কইরা ১২ থিকা ১৬ বছরের বাঙালি পুলাপাইনরা হুমায়ূন পইড়া বই (আউট বই) পড়ার অভ্যাস করছে। শুইনা আমার খটকা লাগে। পড়ার অভ্যাস করছে মানেটা কি? ১২ বছরের হওনের আগে কি ওই পোলাপাইন আর কোনো বই পড়ে নাই! ঠাকুমার ঝুলি, ঈশপের গল্প এসব কি আর নাই! যদি নাই থাকে নিশ্চয়ই রংচংয়া কোনো না কোনো বই তো বের হইছ। তাহলে এসব পড়া বাদ দিয়া ১২ থিকা ১৬ বছর পর্যন্ত ওয়েট করছে হুমায়ূন পইড়া বই পড়া অভ্যাস করণের লাইগা?
এসব শুনে আরো মনে হয় আমার বয়স বাইড়া গেছে। কারণ আমি ছুডুবেলায় যখন বই পড়া অভ্যাস করছি তখন হুমায়ুনরে চিনতাম না। বই পড়ছি কুয়াশা, দস্যু বনহুর, আর সবচেয়ে বেশি বই পড়ছি সেবা প্রকাশনীর। আমার বই পড়ার অভ্যাস করছে সেবায়। পরে ‘সৌরভ’ দিয়া হুমায়ূনের সাথে পরিচয়। আস্তে আস্তে হয়ে উঠেছি সর্বভুক। প্রথম প্রথম হুমায়ুন ব্যাডার লেহা পছন্দ করতাম। পরে যখন দেহি হালায় আগডুম বাগডুম লিখতাছে তখন বাদ্দিয়া দিছি। হের লেখা এহন টয়লেট টিস্যুর লাহান।


হুমায়ুনের নাকি একটি নির্দিষ্ট পাঠকশ্রেণী আছে। তারা কারা? স্কুলের শেষের দিকের থেকে শুরু করে কলেজ পড়ুয়া সবাইকে নিয়ে ভার্সিটির প্রথমদিকের ছাত্রছাত্রী পর্যন্ত সবাই নাকি হুমায়ুনের পাঠক। আগেই বিভিন্ন ফোরামে, ব্লগে বলা কথায় জেনে গেছি যে হুমায়ুন এদের পাঠাভ্যাস করিয়েছে আর তাই তারা বই পড়ছে। কিন্তু কি বই? হুমায়ুনই শুধু?
হ্যা কথা সত্য। হুমায়ুন যদি কোনো পাঠক তৈরি করে থাকে তবে সে শুধু হুমায়ুনপাঠক তৈরি করেছে। ওইসব পাঠকদের হুমায়ুনের বই পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়েছে, বই পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়নি। হুমায়ুনের বই যারা পড়ে তারা অন্য কোনো লেখকের বই পড়তে চায় না, মজা পায় না। জিগাইলে কয়, হুমায়ুন এতো মজা কইরা লেখে যে হেভ্ভি লাগে। অন্য বইগুলা এরম না।
আর তাই সবার মতো আমি মানতে পারি না যে হুমায়ুন বাঙালির পাঠাভ্যাস তৈরি করছে। হুমায়ুন তার নিজের নির্দিষ্ট পাঠকগোষ্ঠী তৈরি করেছে। ক্রেডিট দিতে চাইলে আমি রসময় গুপ্তরেও দিতে চাই। হেই ব্যাডায়ও বাঙ্গালির পাঠাভ্যাস তৈরি করছে। যদি ভালো কইরা কই, তাইলে সংবাদপত্রও বাঙালির পাঠাভ্যাস তৈরি করে।
এবার আসা যাক হুমায়ুনের নাটক-সিনেমা নিয়া। প্রথমেই বলে রাখি, হুমায়ুন আহমেদের যেসব নাটকের (এইসব দিনরাত্রি, অয়োময়, কোথাও কেউ নেই, বহুব্রীহি সহ আরো অনেক) প্রশংসা যা করা হয় তার একটাও তার নিজের পরিচালিত নয়। মোস্তাফিজুর, নওয়াজিশ, বরকতউল্লাহরা বানিয়েছেন এসব। হুমায়ুন আগে ভালো লিখতেন, ভালো পরিচালকেরা সেটা পরিচালনা করতেন। সো নো ক্রেডিট ফর হুমায়ুন।
এবার বলি তার অন্যান্য নাটকগুলার কথায়। যারা মিডিয়ার বাইরের লোক তাদের জানিয়ে রাখি অধিকাংশ নাটক হুমায়ুন নিজে পরিচালনা করেন না, তার এ্যাসিস্ট্যান্টরা করেন। তিনি তখন নূহাশ পল্লীর স্ইমিংপুলে সাঁতার কাটেন কিংবা খাস কামরায় কাউকে নিয়ে একান্ত সময় কাটান। যাক, সেসব বড়দের খাবার - আমাদের জন্য সেরেল্যাক। তো ইদানিংকালের তার নাটকে আমরা কি পাই? কোথাও কেউ নেইয়ের বাকের ভাইকে (অর্থাৎ সেরম একটা চরিত্র) আর কে কোন নাটকে দেখছেন মনে করেন তো? অয়োময়ের মির্জা সেই যে রাজ্য হারালো আর কোনো নাটকে সেটা আর ফিরে পেলো না। আমি উন্মুক্ত ফোরামে সবাইকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, যে কেউ হুমায়ূনের ইদানিংকালের দশটি নাটক এনে দেন। আমি ভালো কোনো সম্পাদককে দিয়ে এডিট করিয়ে আলাদা একটি পূর্ণাঙ্গ নাটক বানিয়ে দিব। আপনারা ধরতেও পারবেন না। গড়পড়তা অন্যান্য নাটকগুলোর মতো এটিও একটি হুমায়ুনীয় নাটক বলে মনে হবে আপনার। এতোটাই ফালতু, এতোটাই স্বকীয়তাহীন।
হুমায়ুনের পরিচালিত ফিল্ম? আজকাল খারাপ লাগলেও সমালোচনা করা যায় না যদি তাতে মুক্তিযুদ্ধের কোনো ছাপ থাকে। আগুনের পরশমনি’র স্ক্রিপ্ট মোটামুটি মানের হলেও উৎরে গেছে কেন সেতো প্রথমেই বলে রাখছি। এরপরের ফিল্মগুলো? ভাই পয়সা আছে, নাম আছে। তাই ফিল্মের ক্যামেরা ভাড়া করে একটা নাটক বানিয়ে বড় পর্দায় দেখিয়েছে। তুমি চুদির বাল কেডা এসব বোঝার।
আজকাল হুমায়ুনকে ব্যক্তি আর লেখক হিসেবে আলাদা করে দেখার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। হ ঠিক কথা। লেখক হিসেবে তিনি আগে খুব ভালো ছিলেন। এখন পচে গেছেন। ব্যবসায়ী লেখক। ব্যবসা খারাপ না, তবে কিসের ব্যবসা সেটা জানতে হবে। দুধ বেইচা মদ খাই নাকি মদ বেইচা দুধ খাই। মাইয়ার বান্ধবি শাওনরে বিয়া করাডা আমার কাছে অতো দোষের মনে হয় না। সেইদিক দিয়া হুমায়ুনরে ব্যক্তি হিসেবে আলাদাই ভাবতাছি। তবে বাংলাদেশের আমজনতারা এখনও আমার মতো এতো ডাইনামিক :-) চিন্তা করার পারে না। তাই এসব টাইপ লোকদের এরম অসম প্রেম একটু ভাইবা চিন্তা করনের কাম। ধরেন যেমন হুমায়ুনপাঠক আছেন তেনারা যদি এইসব অসমপ্রেম আর বিয়া করন শুরু করে তাইলে কি অবস্থা দাড়াইব?
লেখান হুমায়ুন আহমেদ - আপনার বাবা একজন শহীদ ব্যক্তি। আপনার প্রথম জীবনের দু:খকষ্টগুলো পড়েছি, জেনেছি। আপনার সহ পুরো পরিবারের প্রতি সমব্যথী, সহমর্মী হয়েছি। আপনার প্রথম দিকের লেখাগুলো আমি আজো পড়ি। ‘জনম জনম’ নামে একটি অসাধারণ উপন্যাস (আফসোস, এটাকে নিরন্তর নামে একটা ফালতু ছবি বানাইছে সাইদ) যিনি লিখতে পারেন তার কাছ থেকে আরো অনেক কিছু আশা করি। অথচ আপনি সবাইকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে আপনার মতোই লিখে চলেছেন। সম্প্রতি আপনি পত্রিকায় এদেশের মুক্তিযুদ্ধ আর শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে নিয়ে নাকি বিভ্রান্তিকর কথা বলেছেন। আমি সেসব মিস করেছি তাই বিশদ মন্তব্য করছি না। তবে আপনার কাছ থেকে আজো মুক্তিযুদ্ধের উপর কোনো ভালো লেখা পাইনি (জোছনা ও জননীকে গোণায় ধরি না)। রাজাকারদের বিরুদ্ধে একটা উঁচু শব্দ আপনার কণ্ঠ থেকে বের হতে শুনিনি। শহীদের সন্তান হিসেবে আপনার কর্মকান্ডকে যথেষ্ট মনে হয়নি আমার। আজকে চারিদিকে আপনাকে নিয়ে অতি স্বাভাবিকভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে যা আমার মনে হয়েছে আরো আগেই শুরু হতে পারত। এতোসব ডামাডোলের মতো আপনি কেমন আছেন এখন? এই যে হুমায়ুন … ভালো আছেন তো? এই যে হুমায়ুন ….ভালো আছেন তো?
ধুর হালায় দেহি কানে হুনে না।
এ্যারে হুমায়ুন্যা … বালাছোত নি?

Tuesday 15 July 2008

‘আচার’ আর ‘নিয়মের’ মাঝে তফাৎ কি? কোনটা ‘আচার’ কোনটা ‘নিয়ম’?

ব্লগার শমশের বলল, নিয়ম থাকলে নিয়ম ভাংগার ইচ্ছাটাও বাড়ে। কথা সত্য, কিন্তু আমরা তো প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু নিয়ম মেনে চলছি। সব তো ভেঙ্গে ফেলি না। বাসে লাইন ধইরা উঠি, টয়লেটের সামনে নিয়ম মাইনা কিউ ধরি। আমরা এতো নিয়ম মেনে আবার তার বিরোধিতা করি কেন? এসব ভাবতে ভাবতে আরেকটি শব্দ মনে পড়ল - ‘আচার’।

আমাদের দেশে স্কুলের পোলাপান ক্লাস নিতে টিচার এলেই দাঁড়িয়ে যায়। জানি না এইটা নিয়ম কিনা। অর্থাৎ আমি যদি না দাঁড়াইতাম তাহলে কি টিচার আমাকে নিয়ম ভঙ্গের জন্য মারত? (যদিও এরম ফাজলামো বহুত করছি, ধরা খাই নাই)। নাকি এইটা অনেককাল আগে থেকে ফলো করে আসায় একটা নিয়মে দাঁড়িয়েছে।


কেউ মারা গেলে পাশের বাড়ি থেকে মৃতবাড়িতে তিনবেলা খাবার যায়। এটি শিওর কোনো নিয়ম ছিল না। মানুষ সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দীর্ঘদিন ধরে এটা পালন করে আসায় একটা আচারে পরিণত হয়েছে।

তারমানে কোনটা আচার আর কোনটা নিয়ম তার কিছু কিছু বোঝা যায়। কিন্তু সবগুলোই কি? সহজে বোঝার জন্য আচার আর নিয়মের সংজ্ঞা কি কি?

Monday 14 July 2008

বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত কিভাবে দাঁড়িয়ে গাইতে হয়?

ফুটবল বিশ্বকাপে দেখতে পাই নানান দেশের জাতীয় সঙ্গীত নানান ভঙ্গিতে গাইবার ভঙ্গি। কেউ ডানবুকে, কেউ বামবুকে হাত রেখে, কেউ দুইহাত ভাঁজ করে রেখে কেউ ডান অথবা বামদিকে মাথা ঘুরিয়ে রেখে, কেউ কেউ থুতনি উর্ধ্বমুখে তুলে জাতীয় সঙ্গীত গাইছে। ধরে নিয়েছিলাম এই ভঙ্গিগুলো হচ্ছে সেসব দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাইবার সময় শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উপায়।

ছোটবেলায় স্কুলে পিটি করার সময় জাতীয় সঙ্গীত গাইতাম। সেই থেকেই চর্চা শুরু। পিটিতে আমরা দুইহাত (মুষ্ঠিবদ্ধ অথবা খোলা) রানের কাছে চেপে ধরে দুপায়ের মাঝে চারআঙ্গুল ফাঁক রেখে সটান সামনের দিকে তাকিয়ে হেড়ে গলায় গাইতাম। জানতাম সেটাই হলো নিয়ম। এভাবে দাঁড়িয়েই জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হয় অথবা জাতীয় সঙ্গীত গাইবার সময় এ ভঙ্গিতেই দাঁড়িয়ে গাওয়াটাই নিয়ম। এভাবেই সম্মান দেখাতে হয়।


কিন্তু আজকে ইউটিউবে ক্লোজআপ ওয়ান ২০০৮ এর অডিশনের বিভিন্ন ক্লিপ দেখছিলাম। সেখানে চট্টগ্রামের অডিশনে দেখলাম অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগ বুকে হাত রেখে জাতীয় সঙ্গীত গাইছে। খটকা লাগল আমার কাছে। জাতীয় সঙ্গীত দাঁড়িয়ে গাইবার এই ভঙ্গি তো আমারদের নয়। নিয়ম কি চেঞ্জ হয়ে গেল?

দুইপায়ের পাশে দুই হাত সমান বিছিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইবার যে নিয়ম ছোটবেলায় শিখেছি এখন কি সেটা যার যার ইচ্ছেমতো ভঙ্গিতে গাওয়ার নিয়ম হয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনী কিংবা রাষ্ট্র/সংবিধান কি বলে? এ ব্যাপারে কেউ কি ডিটেইলস জানেন?

পোস্টটি আমারব্লগে দেয়ার পর বিভিন্নজন কমেন্ট করেছেন এরকম।

**************************************************


পালকি সমাচার

বউ মেসেজ দিয়া কইল - আপনার ঘরে আমি পালকি চড়ে যেতে চাই।

ব্যস, আমি ঢাকায় ফোন করে পুরান ঢাকার এক বন্ধুকে বউয়ের খায়েশ জানিয়ে এ সংক্রান্ত যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করে রাখতে বললাম। বন্ধু আশ্বস্ত করল আমাকে। এর প্রায় একমাস পর ঢাকায় নেমে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করতেই বলল, কোনো টেনশন করিস না। ঢাকা শহরে পালকি যে ভাড়া পাওয়া যায় এটা আমি নিশ্চিত হয়েছি। এখন কষ্ট করে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

আমার মাথায় বাঁশ। হালায় কয় কি! ওর তো পালকি কনফার্ম করার কথা ছিল। এদিকে বিয়ের অনুষ্ঠানের বাকি আছে ৪ দিন, অনুষ্ঠানের ঝামেলা সারব না পালকি খুঁজব। মেজাজ খারাপ করে প্রথমে গেলাম কাঁটাবন। বিয়ের সামগ্রী বিক্রি করে এমন কয়েকটা দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল পালকি পাওয়া সম্ভব। এর জন্য ভাড়া লাগবে ২৫০০-৩০০০ টাকা। ডিপোজিট সমপরিমাণ। আর কনেবাড়িতে যাওয়ার ভাড়া বাবদ আরো ৫০০ টাকা। যদি নিজেই পালকি নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয় তাহলে টাকাটা লাগবে না। সবকিছুই ঠিক হলো কিন্তু সমস্যা হলো বেহারা পাওয়া যাবে না। তাহলে পালকি বইবে কে? এটা জানতে চাইলে দোকানদার একটা সাজেশন দিল। ৪ জন কামলা ভাড়া করে তাদের দিয়ে পালকি বহন করানো যায়। কিন্তু পোশাক। সেই ঐতিহ্যবাহী পালকিবেহারার পোশাক? সেটারও সমাধান মিলল। কমদামী ৪টা ফতুয়া আর শাদা লুংগি কিনে ফেললেই হলো। বেহারা সংকটে পড়ে আমি এ বুদ্ধিটাই গ্রহণ করলাম। তবে দোকানদারকে জানালাম যে আগামীকাল আমি কনফার্ম করব।

বউয়ের মেসেজ পাওয়ার পর লন্ডনে বসেই আমি চিন্তা করে রেখেছিলাম - বউ যদি পালকিতে চড়ে তবে আমি ঘোড়ার গাড়িতে চড়ব। সেই মোতাবেক পরদিন সকালবেলায় নিমতলী গেলাম ঘোড়ার গাড়ি অর্থাৎ টমটম খুঁজতে। আবার ভাবলাম টমটমে আমি আর পালকিতে বউ চড়ে আসবে অথচ কোনো মিউজিক থাকবে না তা কি হয়! তাই খোঁজ লাগালাম বাদকদল অর্থাৎ ব্যান্ড পার্টির।

নিমতলীতে টমটম খুঁজছি। একটা পেয়েও গেলাম। সবেমাত্র তৈরি করে রং লাগানো হচ্ছে এমন একটা টমটম পেয়েই মালিকের সংগে বাতচিত শুরু করলাম। ব্যাটা ১৮০০ টাকা চাইল। কি মনে করে তাকে বললাম আপনি বেহারা সহ পালকি আর ব্যান্ড পার্টি যোগাড় করে দেন। সে বলল চেষ্টা করে দেখবে। বিকালে একটা ফোন করতে বলল।

বিকেলে ফোন করতেই সে বলল, পালকি পাওয়া গেছে দিতে হবে ৬০০০ টাকা। বেহারার জন্য কোনো পয়সা লাগবে না। তাদের নিজস্ব পোশাকও রয়েছে। আর ব্যান্ড পার্টি বিভিন্ন ধরনের আছে। সর্বোচ্চ ২৪ জনের থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৪ জনের ব্যান্ড পার্টি। আমি ৪ জনের ব্যান্ড পার্টির কথা বলতেই জানালা তাদের ভাড়া হলো ১২০০ টাকা। কিছুক্ষণ মুলামুলি করার পর সব মিলিয়ে যা দাঁড়াল তা হলো

পালকি = ৫৮০০
টমটম = ১৬০০
ব্যান্ড = ১২০০

তবে এদের বখশিশ হিসাবের মধ্যে রইল না। সেটা আমার ইনসাফের উপর ছেড়ে দেয়া হলো।



এবার এলো ফুল সাজানোর বিষয়টি। কথা ছিল বিকাল ৪টার দিকে নিমতলী থেকে পালকি ভ্যানে করে আর টমটমে ব্যান্ড পার্টি নিয়ে শাহবাগ আসা হবে ফুল সাজাতে। সেখানে ফুল দিয়ে পালকি আর টমটম সাজিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আমার বাসায় আসবে। সেখান থেকে ৭টায় রওনা দিয়ে পৌঁছে যাব কনের কাছে, কমিউনিটি সেন্টারে। কিন্তু ফুল সাজানোতে অনেক সময় চলে যাওয়াতে পালকি আর টমটম আমার বাসায় এলো রাত ৮.৪৫ মিনিটে। সেখান থেকে রওনা দিব এমন সময় নামল ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি একটু থেমে আসতেই রওনা দিলাম টমটম চড়ে। আমার সামনে ভ্যানে করে পালকি যাচ্ছে। পেছনে ব্যান্ড পার্টি তারস্বরে বাজিয়ে চলছে বাংলা-হিন্দি নানান গান। অবশেষে সাড়ে নয়টায় কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছলাম।



বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রাতে বউকে চড়ানো হলো পালকিতে। আমি রওনা দিলাম ঘোড়ার গাড়িতে। কিছুদূর পর বন্ধুরা বলল, আগের দিনে বউয়ের পালকির পাশে জামাই হেঁটে যেত, আর তুই কিনা ঘোড়ার গাড়িতে। নাম ব্যাটা। আমিও চটজলদি লাফ দিয়ে নেমে পড়লাম। এরপর বাকি পথটুকু বউয়ের পালকির পাশে হেঁটেই বাসায় ফিরেছি।





পালকি বাসার সামনে থামতেই সবাই মিলে বউকে বরণ করে নিল।