
শিরোনাম দেখেই বুঝতে পারছেন কি বলতে চাইছি। এ ধরণের লেখার চেষ্টা এবারই প্রথম। সাধারণত বছর শেষ হবার পর কয়েকটি ঘটনাকে একটু উলটে পালটে দেখে আবার ভুলে যাওয়াটাই ছিল বছর শুরুর প্রথম রুটিন। কিন্তু আজকে মনে হলো কিছু লিখি। এই ২০০৭ সালেই আমার ব্লগিং জীবন শুরু। তাই ভাবলাম অন্যান্য ব্লগারদের সঙ্গে শেয়ার করা যাক আমার ২০০৭ বছরটি।
২০০৭ সালের প্রথম দিনেই আমার লেখা ও পরিচালিত একটি নাটক অন-এয়ার হওয়া দিয়ে বছর শুরু হয়। দেশের বাইরে এই প্রথম এবং একেবারেই আনাড়ী কিছু অভিনেতা অভিনেত্রীদের দিয়ে নির্মিত নাটকটি বেশ সাড়া ফেলে। যদিও মানের বিচারে আমার পূর্ববর্তী কয়েকটি নাটকের চেয়ে এই নাটকটিকে বেশি গুরুত্ব দেই না। তবু অতি সীমাবদ্ধতার ভেতরেও কাজ উদ্ধার করতে পেরেছিলাম, যা আমার আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।
প্রথম জীবনে সাংবাদিক হতে চেয়েছিলাম। সেমতে কাজ শুরু করেও ছিটকে গেছি টিভি/ফিল্ম মিডিয়ার প্রতি দুর্বার আকর্ষণের জন্য। সাংবাদিক হবার স্বাদ কিছুটা ঘোলে মিটেছে ২০০৭ এর ফেব্রুয়ারিতে। ভাষা দিবসের শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের বিষয় নিয়ে একটি রিপোর্ট করি। শহীদ বেদীতে ফুল ও ব্যানার সহযোগে আসা বিভিন্ন সংগঠনের বানান ভুলের বিষয়টি রিপোর্টে তুলে ধরা হয়। এসব সংগঠনগুলোর মধ্যে ছিল বাংলাদেশ হাইকমিশন, প্রথম সারির রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন। এছাড়াও ছিল লন্ডনের আরেকটি বাংলাভাষী টিভি চ্যানেল। প্রচন্ড সমালোচিত এবং প্রশংসিত হই এ রিপোর্টের কারণে।
২০০৭ সালের মার্চ মাস আমার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১২ মার্চ থার্ড আই প্রথম পরিচয় করিয়ে দেয় সামহোয়ারের সঙ্গে। ভার্চুয়াল জগতে এতো বাংলা শব্দ, লেখা, মতের সমাহার পেয়ে অত্যন্ত খুশি হই। দিন/রাতের বেশ কিছু সময় ব্যয় হতে থাকে ব্লগিংয়ের পেছনে। নিজেকে লেখক কখনোই ভাবিনি, কিন্তু সামহোয়ারে লিখতে গিয়েই হোঁচট খাই। বেশ কিছু ভালো ব্লগারদের ভিড়ে ছাগুদের ম্যাতকারে বিরক্ত হয়ে বন্ধ করে দেই লেখালেখি। শুরু হয় ছাগু পোন্দানো। রাজাকার বিরোধী আন্দোলনে অনেকেরই সাথী হই, অনেককে সাথে পাই। এখনো চলছে এই রাজাকার ঠ্যাঙ্গানো এবং চলবেই। তবে এ মাসেই বহু আকাংখিত ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাই। রবার্ট ব্রুসের মতো কঠিন অধ্যাবসায়ে পর পর ৪ বার ফেল করে পঞ্চমবারে ড্রাইভিং লাইসেন্স মিলে। একটা গাড়িও কিনে ফেলি। সে আরেক বিরাট যন্ত্রণার ইতিহাস।
এপ্রিল মাস হলো আমার সবচেয়ে প্রিয় মাস। সারা বছর অপেক্ষা করি এই মাসের ১৪ তারিখের জন্য, পহেলা বৈশাখের জন্য। এদিন বাংলাদেশের সব মেয়েকেই আমার খুব সুন্দর লাগে। সারা দেশ আনন্দে ভাসে। আর এ অতি প্রিয় মাসেই আমি চাকরি হারাই। কারণ খুব স্পষ্ট। জামাত বিরোধীতা ও ধর্মের অতি ব্যবহারের অপকার নিয়ে কথা বলায় দ্বিতীয় স্তরের ম্যানেজমেন্টের রোষের শিকার হই। ১৪ এপ্রিল দেশে থাকার চেষ্টা করি, চাকরি হারানোয় সে প্ল্যান বাদ দেই। দেশে যাওয়া হয় না, কেননা ভিসা সেপ্টেম্বরে শেষ। তখন তো একেবারেই চলে যাব। চাকরি হারানোর মাসে গাড়ি দাবড়ে লন্ডন শহর ঘুরে বেড়াই। সহানুভূতি দেখিয়ে বন্ধুরা তেলের পয়সা দেয়। বার ২/৩ ক্যাবিং করলাম (পরিচিত গন্ডীর মধ্যেই)।
মে মাসে বাসা চেঞ্জ করার পর ১৩ তারিখ আবার চাকরি ফেরত পাই। ওইদিন লন্ডনে বৈশাখী মেলা উদযাপিত হচ্ছিল। বাংলাদেশের বৈশাখি মেলার দিন চাকরি হারিয়ে লন্ডনের বৈশাখি মেলার দিন চাকরি ফিরে পাওয়া কাকতালীয় ঘটনাটা বেশ চমকপ্রদ। কিন্তু চাকরি হারিয়ে এবং এরপরে গাড়ি সংক্রান্ত জটিলতায় আমি প্রচন্ড অর্থকষ্টে পড়ি।
জুন মাসে সচলায়তনে যোগ দেয়া ছাড়া আগস্ট পর্যন্ত আর কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি। লন্ডনে ১২ বছর পর খুঁজে পাওয়া স্কুলজীবনের দুই বন্ধুর সঙ্গে 'কি করা যায় না যায়' অথবা 'বাড়ি কিনব না নতুন কোনো ব্যবসা করব' এই টাইপের আলোচনায় আড্ডার সময়গুলো বেশি কেটেছে।
তবে সেপ্টেম্বর আমার জন্মমাস বলে এপ্রিলের পর এই মাসটা আমার খুব ভালো লাগে। বাংলাদেশে থাকতে সেপ্টেম্বর মাসের ওয়েদারটাও খুব ভালো থাকত। এ মাসে আমার লন্ডন থাকার ব্যবস্থা (ভিসা) পোক্ত হয়।
অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত পুরোটাই নিরামিষ গেছে। বছরের শেষে ডিসেম্বর মাস প্রচন্ড ব্যস্ততায় কেটেছে। এ বছর দেশে যাওয়ার জন্য প্রচুর প্ল্যান করেছি আবার বাতিল করেছি সময় ও পয়সা দুইটা সমন্বয় করতে না পারায়। নতুন বাসায় উঠেছি, রুম গুছিয়েছি। বন্ধু/কলিগরা দেখে আশ্বস্ত হয়েছে। বলেছে - আমি সভ্য হয়েছি।
তবে বছর জুড়েই অন্যান্য প্রবাসীর মতো আমিও বাংলাদেশ মিস করেছি। মিস করেছি সেখানকার মিডিয়াকে। নাটক বানানো ক্ষুধা বেড়েছে কিন্তু মেটানোর সময় হয়ে উঠেনি। সারা বছরই মা-র সঙ্গে ফোনালাপের একটা নির্ধারিত বিষয় ছিল 'আমার বিয়ে' সংক্রান্ত। সেটার এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। এ বছর বাবা রিটায়ার করেছে। নিজের কাঁধে আরো একটু দায়িত্ব বেড়েছে। লন্ডনে বন্ধু বান্ধব বেড়েছে, বেশ কয়েকজন মেয়ে বন্ধুও (অন্য কোনো জটিলতা নাই) জুটেছে এবং অতি স্বাভাবিকভাবেই তাদের সঙ্গে আমার ঝগড়াটাই বেশি হয়েছে।
তবে সবকিছুর উপর আমি ব্লগকেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভাবছি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে (এখনও এক বছরও হয়নি) ব্লগে এতো পরিচিত হয়ে গেছি, এতো ভালো ভালো মানুষের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি, মাঝে মাঝে অবাকই লাগে।
সবাইকে নতুন বছর ২০০৮ এর শুভেচ্ছা।