Saturday 8 December 2007

জনমত জরিপ @ রংপুর থেকে ঢাকা

আগের পর্বে উল্লেখ করেছিলাম রাতেই আমরা আগমনী বাসে রংপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। কিন্তু এখন লিখতে বসে, স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মনে হচ্ছে আসলে আমরা ভোরের বাসটিতেই রওনা দিয়েছিলাম। ওটা ধরেই লিখতে শুরু করলাম ...

এবার বাসে আমাদের সিট ছিল শেষের ৪টি। এরশাদের কল্যাণে বৃহত্তর উত্তরাঞ্চলের রাস্তাগুলো বেশ মসৃণ হওয়াতে আমাদের অসুবিধা হচ্ছিল না। কিন্তু যতোই ঢাকার দিকে এগুচ্ছিলাম, বুঝতে পারছিলাম ঝাকানাকার পরিমাণ বাড়তেই থাকবে।

আমি আর নীলু যথারীতি পাশাপাশিই বসেছিলাম। রাতের বাসে রংপুর গিয়েছিলাম বলে কিছুই দেখতে পাইনি। তাই এবার মন ভরে রাস্তার দুপাশের সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে যাচ্ছি। জার্নি আমার বরাবরই পছন্দ। এতে আমি কোনো ক্লান্তি অনুভব করিনা। আমি দেখেছি জার্নির সময়ই আমি অনেক ভালো ভালো চিন্তা করতে পারি। আমার মধ্য কিটিবিটি (ক্রিয়েটিভি) জেগে উঠে। অনেকের আবার টয়লেটে এ ব্যাপারটা ঘটে। কোথায় যেন পড়েছিলাম কোন এক লেখিকার নাকি সঙ্গম শেষ হবার ঠিক পরমুহূর্তেই ব্যাপারটি ঘটে।

সৌন্দর্য্য নাকি বেশিক্ষণ উপভোগ করা যায় না। তাই বোর হবার আগেই নগরবাড়ি ঘাটে পৌঁছে গেলাম। হাতপা ঝাড়তে ফেরিতে বেশ কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলাম, ভাত-মাংস খেলাম। ইচ্ছে ছিল কান পরিষ্কার করে নিব। কিন্তু অসাবধাবশত যদি ফুটো করে দেয় সে ভয়ে আর দ্বিতীয় চিন্তা করিনি।

নগরবাড়ি থেকে বাসে আবার রওনা শুরু করলাম। বড়রাস্তায় উঠতেই পনির বলল, আচ্ছা আমাদের টাকাপয়সার হিসেব তো করা হলো না।

আমি বললাম, আমি ঢাকায় গিয়ে অফিসে রিপোর্ট করব। তারপর আপনাদের প্রতিদিনকার হিসেবে যা পাবেন তা দিয়ে আসব।
- সেটা তো দিবেই। কিন্তু আমি বলছি, আমাদের খরচের যে টাকা দিয়েছিল ওটা তো পুরো খরচ হয়নি।
- না তা খরচ হয়নি।
- গুড। তাহলে এখন ৪ ভাগ করে ফেল।
- কিন্তু খরচ তো হয়নি। তাহলে অফিসে ফেরত দিতে হবে না?
- কিসের ফেরত! হোটেলে থাকলে তো খরচ হতোই। ভাবো না কেন আমরা হোটেলেই থেকেছি।

আমি গম্ভীর ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম। তারপর বাকিটাকা গুলো ৪ভাগ করে সবাইকে দিয়ে দিলাম। আমি অবশ্য চেয়েছিলাম টাকাগুলো অফিসে ফেরত দিব। মনে হচ্ছিল জোচ্চুরি করে অফিসের টাকাটা মেরে দিচ্ছি (পরে অবশ্য এ সংক্রান্ত যাবতীয় শংকা আমার আর ছিল না, অফিসে আর কখনোই আমি জরিপ সংক্রান্ত কোনো টাকাপয়সা ফেরত দিইনি)।

ঘুম ঘুম পাচ্ছিল। মানিকগঞ্জের কাছাকাছি চলে আসছে বাস। নীলুর দিকে তাকিয়ে দেখি অহরহ পড়ছে। আমি ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। আসলে ঘুমের চেয়ে কম, তন্দ্রার চেয়ে বেশি।

বেশ কিছুক্ষণ পর টের পেলাম আমার সারা মুখেচোখে হাতের পরশ। সারাগাল বুলিয়ে ঠোঁটের কোণ ঘেষে হাত চলে যাচ্ছে চুলে। আমি চমকে উঠলাম। স্বপ্নে কোনো পরীটরী দেখছি না তো। বেশকিছুক্ষণ এই হাতের পরশ অনুভব করে আমি পরীটাকে চিনতে পারলাম, নীলু। কিন্তু কারণটা কি? আমারে এতো সোহাগ করছে কেন?

বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু ঠান্ডা তেমন না। বাসের বেশ কয়েকটা জানালা খোলা। রংপুরের ডাইরেক্ট বাসের বেশিরভাগ যাত্রিই নির্জীব হয়ে আছে। দ্রুতগতিতে পার হয়ে যাওয়া বাইরের অতিসবুজ গাছগুলো (বৃষ্টির কারণে) বাতাসকে ঠেলে বাসের ভিতরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। চোখ বন্ধ করে আমি টের পেলাম নীলু যেন আরো একটু ঘেঁষে বসল আমার সাথে।

ঘটনা যাই ঘটুক, আমি চোখ খুলছি না। কিছুক্ষণ পর অনুভব করি আবার চোখেমুখেচুলে হাত বুলাচ্ছে নীলু। বাস তখন মানিকগঞ্জ ছেড়ে এসেছে এবং প্রচন্ড ঝাঁকুনি হচ্ছে। তারপরও আমি চোখ খুলছি না, যদি নীলু আর হাত না বুলায়। এভাবেই চলছিল কিন্তু হঠাৎই বাসটা চরম ঝাঁকুনি খেলো। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। চোখ খুলে ফেললাম। না খুলে উপায় ছিল না। এমন ঝাঁকুনিতে, খোদার কসম, খোদ শয়তানও চোখ বন্ধ করে ঘুমের অভিনয় করতে পারত না।

আমি তাকিয়ে দেখি নীলু তখনও অহরহ পত্রিকা মুখের সামনে ধরে আছে। বাতাসে তার কানের পাশের চুলগুলো উড়ছে। আমি বললাম, হাই।
- বাবা যা ঘুমালে না।
- হুম। কিন্তু বাসের ঝাঁকুনিতে তো ভেঙ্গে গেল।
- ভালোই হয়েছে আর ২০ মিনিট পরে নেমে যাব।
- ঢাকা চলে এসেছি নাকি।
- ঢাকা না। ইউনিভার্সিটি নেমে পড়ব আমরা সবাই। পনির ভাইকে জাগাও।

যা শালা। কই আমি ভাবলাম আবার একটু ঘুমানোর ভান করব। আফসোস করে পনির ভাইকে ডেকে তুললাম। নীলু কাছ থেকে হলের নাম, রুমের নম্বর সব জেনে নিলাম। প্রান্তিক আসতেই সবাই নেমে পড়ল।

গাবতলী আসার আগ পর্যন্ত আমি নীলুর এ আচরণ নিয়ে অনেক ভাবলাম। রংপুরে যে কয়দিন ছিলাম, কখনো তো নীলুকে দেখে কিছুই বুঝতে পারিনি। তবে নীলু কি আমার প্রেমে পড়েছে? মনে হয় না। কিন্তু নীলু কেন এরকমটা করল? আমি পুরো বিষয়টা ভাবতে থাকি ...

0. মাত্র বৃষ্টি হওয়াতে বাইরের প্রকৃতি ছিল খুবই সুন্দর।
0. সঙ্গে সুন্দর বাতাস বইছিল, ঠান্ডা নয়, কিন্তু ভাবটা শিহরণের।
0. বাসের ওই সময় বেশিরভাগ যাত্রীই ঘুমিয়ে ছিল। যারা জেগে ছিল তাদেরও পিছু ফিরে তাকানোর কথা না। পনির ও মীরাও ঘুমিয়ে ছিল।
0. অহরহ পত্রিকার ওই সংখ্যায় কি নারীপুরুষের ভালোবাসা সংক্রান্ত কোনো বৈজ্ঞানিক আর্টিকেল ছাপা হয়েছিল?
0. ঘুমন্ত আমাকে দেখতে কেমন লাগছিল? এটা কি নীলুকে প্রভাবিত করেছিল?
0. নাকি নীলু একটু ফান করল?

সবকিছু ভেবে আমি ধরে নিলাম এটা তেমন কিছুই না। পারিপার্শ্বিক অবস্থা, প্রকৃতি, কয়েকদিনের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কারণে ওই সময় নীলুর মনটা তরল হয়ে গিয়েছিল। এবং ওই মুহূর্তেই তার পাশে একজন তরুণকে দেখে তার ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছিল। হয়তো পনির-মীরার ঘনিষ্ঠতা দেখে তারও মনে একটু ইচ্ছে, অন্যরকম রসায়ন জেগেছিল। নীলু আমার প্রেমে পড়ে যায়নি। আর এ বিষয়টা আমি বেশ কিছুদিন পরে নিশ্চিত হলাম যখন জানতে পারলাম দীপুর সঙ্গে নীলুর প্রেমের সম্পর্ক অনেকদিনের।
-------------------------------------------------------
পোস্টে সবার ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে।

1 মন্তব্য:

মাজেদুল ইসলাম said...

ভাইয়া এটা খুবই আশ্চর্য যে একটা মেয়ে তার প্রেমিক থাকা সত্ত্বেও আপনার সাথে এমন করল।আমার লাইফেও এমন হয়েছিল।তবে এই কাজটা ছেলেরা বেশি করে।কিন্তু কাজটা একটা বড় অন্যায়।