Monday 23 May 2011

ইয়াহু ... ম্যান সিটি ...

আজ রবিবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের শেষ ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো। ম্যানচেস্টার সিটি এবার দারুণ সাফল্যের সঙ্গে সিজন শেষ করলো। দেখা যাক তারা কী কী পেলো?
১। ৩৬ বছর পর এই প্রথম ম্যানসিটি কোনো কাপ জয়ের স্বাদ পেলো। এফ.এ কাপ।
২। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে ৩য় স্থান অধিকার করেছে। সিজনের শুরুতে আশা করেছিলাম ২য় হবে। হতোও, কিন্তু চেলসির সঙ্গে পয়েন্ট সমান হওয়ায় গোল ডিফারেন্সে ম্যানসিটির ৩য় হতে হয়।
৩। ৩য় স্থান অধিকার করায় আগামী সিজনে ইউরোপের এলিট ফুটবল টুর্নামেন্ট চ্যাম্পিয়নস লীগে সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে ম্যানসিটি।
৪। ম্যানসিটির গোলরক্ষক, ইংলিশ ন্যাশনাল টিমের নাম্বার ১ গোলরক্ষক জো হার্ট ৩৮ টি
খেলার মধ্যে ১৭টি খেলায় ক্লিনশিট (কোনো গোল না খাওয়া) থাকায় গোল্ডেন গ্লোব পুরষ্কার পেয়েছেন।
৫। ম্যানসিটি তালিসমান কার্লোস তেভেজ প্রিমিয়ার লীগে মোট ২১ টি গোল করে যৌথভাবে ম্যানইউ-র বারবাতোভের সঙ্গে গোল্ডেন বুট পুরষ্কার পাচ্ছেন।

অথচ এ ম্যানসিটি নিয়ে কতোই না সমালোচনা। আবুধাবি ইউনাইটেড গ্রুপের শেখ মনসুর এ ক্লাবটি কেনার পর থেকে টাকা ছড়াতে শুরু করেন। গুজব ছিলো মেসিকে নাকি ব্লাঙ্ক চেক সেধেছিলো। মেসির পর কাকা। সাড়া দিয়েছিলো রবিনহো। ২০০৮-০৯ সিজনে সেই সময়ে বৃটিশ রেকর্ড ৩২.৫ মিলিয়ন অর্থব্যয়ে তাকে কেনা হয়। পুরো সিজন মোটামুটি কেটে গেলে পরের সিজনে ম্যানসিটি তেভেজকে কিনে নেয়। এরপর আর পিছে ফিরতে হয়নি ম্যানসিটিকে। ২০০৯-১০ সিজনে লীগে ১০ নম্বর পজিশন থেকে ৫ নম্বরে উন্নীত হয়। শেষ খেলায় টটেনহামের সঙ্গে হেরে যাওয়ায় চ্যাম্পিয়নশিপ নিশ্চিত হয় না। উয়েফা কাপে অংশ নেয় ম্যানসিটি।

এরপর আরো টাকা ছড়াতে শুরু করে ম্যানসিটি। যাকেই পছন্দ হয়েছে অর্থের বিনিময়ে তাকেই কিনতে চেয়েছে ম্যানসিটি। ম্যানেজার পরিবর্তন হয়ে আসে ইটালির রবার্তো মানচিনি। তিনি জেকো, তোরে, মিলনার, মারিও, কোলারব, বোয়েতাংসহ বেশকিছু প্লেয়ার কেনেন, খরচ করেন মিলিয়ন পাউণ্ড। ম্যানসিটি হয়ে যায় বিশ্বের ধনী ফুটবল ক্লাব। গত ৩ বছরে খরচ করেছে ৩০০ মিলিয়ন পাউণ্ড। গুজব উঠেছে ৮০ মিলিয়ন দিয়ে কেনা পর্তুগালের রোনাল্ডোকে ১৫০ মিলিয়ন দিয়ে বেচার জন্য আলোচনা চলছে ম্যানসিটির সঙ্গে রিয়ালের। অবশ্য ম্যানসিটি এ গুজব অস্বীকার করেছে।

এতোসব কথা বলার কারণ হলো আমি ম্যানচেস্টার সিটি সাপোর্টার। কাড়ি কাড়ি অর্থ যখন খরচ করা হচ্ছে তখন ফুটবল পণ্ডিতরা নাক সিটকাচ্ছিলেন। ছ্যা ছ্যা ম্যানসিটির টাকা আছে তো কী হয়েছে? টাকা দিয়ে কি সব হয়? এইসব পণ্ডিতদের শরীর চুলকাচ্ছিলো ম্যানসিটির মালিক একজন আরব শেখ বলে। কারণ রিয়াল মাদ্রিদ যে কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে এই সিজনে কাকা আর রোনাল্ডোকে কিনে নিলো (যৌথভাবে ১৪০ মিলিয়ন, বাকিগুলোর হিসাব দরকার নাই,), চেলসির জাগরণ যে আব্রাহোমোভিচ টাকা উড়িয়ে পেলেন, এসব যেন উদাহরণ না।

এইসব পণ্ডিতদের আমি তখন একটাই কথা বলেছিলাম, ভাই একটু সবুর করেন। ম্যানসিটির মালিক আরব শেখ টাকা উড়ানোর পর লীগে ক্লাবের পজিশন ১০ থেকে ৫ হয়েছে। বর্তমান সিজনে ভালো শুরু করেছে। সো ক্লাব পজিটিভলি এগোচ্ছে। যেসব প্লেয়ার কেনা হলো তারা কেউই একসঙ্গে খেলেননি (পুরোটিম প্রায় নতুনই) কোনোদিন। একটু সবুর করুন। যদি অর্থ ব্যয় করে সাফল্য যদি না পায় তাহলেই বলা যেতে পারে, অর্থ দিয়ে কিছু হয় না।

আমার যদি ক্ষমতা থাকে মেসিরে কেনার, আমি কেন কিনবো না? কোনো প্লেয়ারের দাম বাজারে ২০ মিলিয়ন হলো, আর আমি যদি ভাবি তাকে দরকার, কেউ কিনে নেওয়ার আগেই ৩০ মিলিয়ন দিয়ে কিনে ফেলি, তাহলে দোষটা কই? সেই প্লেয়ারকে দিয়ে যদি সাফল্য আনতে পারি তাহলে তো আমার টাকার বিনিয়োগ ভালোদিকেই গেলো।

ফুটবল পণ্ডিতরা সিজন শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেননি। পণ্ডিতি করেই গেছেন। যার উপযুক্ত জবাব এই সিজনে ম্যানসিটি দিয়েছে। ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর এবারই সর্বোচ্চ সাফল্য এসেছে। অবশ্যই টাকা খরচ করার পর। তবে ভুললে চলবে না এই অর্থ ব্যয়ের পেছনে মেধা ও পরিশ্রম দুটোই ছিলো।

প্রতিবেশী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আমাদের NOISY NEIGHBOUR বলে থাকে। আমরা তাতে মাইণ্ড খাই না। এই সিজনে তো অল্প NOISE করেছি, নেক্সট সিজনে NOISE আরো হবে। দেখতে , থাকেন ... পণ্ডিতেরা ...

0 মন্তব্য: