Friday 21 December 2007

জনমত জরিপ @ পরবর্তী যাত্রার প্রস্তুতি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

রংপুর থেকে ফিরে সেদিন আর অফিস যাইনি। বাসায় প্রশ্নপত্রগুলো আরো একবার রিচেক করে পরদিন সকালে অফিসে গেলাম। আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা আগেরদিনই বিভিন্ন জেলা থেকে চলে এসেছে। আমি কাগজগুলো জমা দিয়ে একাউন্ট্যান্টের কাছে গেলাম। রিপোর্ট করলাম আমি একদিন বেশি কাজ করেছি তই পয়সাও একদিনের বেশি দিতে হবে। এটা নিয়ে কিছুক্ষণ বাতচিত চলল। পরে চপল ভাইয়ের (সার্ভে এনালিস্ট, এখন আমেরিকায়) সহায়তায় আমি চারদিনের পয়সা পেলাম। ২৫০ টাকা প্রতিদিন করে ৪ জনের জন্য মোট ৪০০০ টাকা। টাকাগুলো হাতে পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম পনির আর মীরাকে তিনদিনের পয়সা দিব। শুধু নীলুকে চারদিনের পয়সা দিব।

বিভিন্ন জনের অভিজ্ঞতার কথা শোনা হলো। এরমধ্যে দুইটি গ্রুপের কথা জানা গেল যারা আদৌ সার্ভে করতে যায়নি। তারা ঢাকাতেই ছিল অথচ কাগজ পূরণ করে দিয়েছে। এইটা খুবই লজ্জাজনক একটি কাজ হয়েছে। আমি ইন্টারেস্টেড ছিলাম জানতে, যেসব গ্রুপে মেয়েরা ছিল সেসব গ্রুপে ইন্টারেস্টিং কিছু ঘটেছে কিনা। দেখলাম তেমন কোনো গল্প নাই। বরং আমার গল্প শুনে বন্ধুরা হতবাক। কেউ কেউ বলে বসল, 'দোস্ত, নীলু তোকে প্রচন্ড লাইক করেছে। প্রেম করলে কইরা ফালা।' বন্ধু জাহিদ তো বলেই বসল, 'দোস্ত নীলুকে বলিস পরের সার্ভেতে ওর কোনো বান্ধবিকে নিতে।'

আমি 'ধ্যাত' বলে ধমক দিলেও মনে মনে হালকা একটু লাড়া কিন্তু ঠিকই খেলাম। 'দূরে কোথাও' নামে একটা গল্প লিখে ফেললাম। ছাপা হলো একটি সাপ্তাহিক পত্রিকায়। নীলুর সঙ্গে যোগাযোগ হলো। টাকা পয়সা দিয়ে বললাম মীরা আর পনিরকে না জানাতে। নীলু আমার গল্প পড়ে অভিভূত হয়ে গেল। টানা একসপ্তাহ তার ডিপার্টমেন্টের নোটিশবোর্ডে গল্পটি ঝুলিয়ে রাখল।

এদিকে নীলুর সঙ্গে বেশ ভাব হয়ে গেল। প্রতি বৃহস্পতিবার আমি জাহাঙ্গীরনগর যেতে শুরু করলাম। পল্টনে অফিস হওয়াতে আমি ওসমানী উদ্যান থেকে উঠতাম। প্রথম প্রথম গেস্ট হিসেবে ৩টাকা দিয়ে যেতাম। পরে যাতায়াতের মাত্রা বেড়ে যাওয়াতে ১টাকা করে দিতে শুরু করলাম। মামুরা টের পেত কিনা জানি না, তবে কোনোদিন প্রশ্নের সম্মুখীন হইনি। এছাড়াও জাহাঙ্গীরনগরের অনেকের সঙ্গেই তখন পরিচয় ছিল।

প্রশ্ন এবং উত্তরগুলোর কোডিং শেষ করে ডাটা এন্ট্রির কাজ শুরু হয়ে গেল। সেখানেও পয়সা। প্রতিটি প্রশ্নের ডাটা এন্ট্রির জন্য ১০ পয়সা করে। কিন্তু আমার টাইপিং স্পিড খুবই বেশি হওয়াতে এখানেও আমি অনেক টাকা ইনকাম করে ফেললাম। একমাস পরে সাপ্তাহিক পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশ হলো। সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা হলো নির্বাচনের ঠিক একমাস আগে আরেকটি সার্ভে শুরু হবে।

এনজিওটিতে তখন আরো অনেক ছাত্রছাত্রী বেড়েছে। তাই সিদ্ধান্ত হলো পরের সার্ভেতে জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ কমানো হবে। এটা শুনে আমি তো খুবই দুঃখিত। নীলুকে নিব কিভাবে? নীলুকে বলে রেখেছি এবং সেও যেতে আগ্রহী। বন্ধু জাহিদের পরামর্শে নীলু তার এক বান্ধবীকেও রাজি করিয়েছে।

চপল ভাইয়ের শরাণাপন্ন হলাম। চপল ভাই পরামর্শ দিলেন এমন একটা জেলা পছন্দ করতে যেখানে বর্তমান ছাত্রছাত্রীরা যেতে চাইবে না। আমার আইডিয়াটা খুবই পছন্দ হলো। নরমালি আমিও একটা ব্যকওয়ার্ড জায়গা খুঁজছিলাম যেখানে কেউই যেতে চাইবে না। লিস্ট খুঁজে আমি পিরোজপুর (মঠবাড়িয়া) পছন্দ করলাম। কেননা এর আগে যারা ওই জায়গায় যারা গিয়েছিল তারা জায়গাটার খুবই দুর্নাম করেছে। আর তাতেই আমি আরো উৎসাহী হয়েছি। নীলুকে বলতেই মুখ গোমড়া করল,

- পিরোজপুর! এতোদূরে কেন যাব?
- আরে কি যে বলো না। দূরে তো ভালোই।
- চিনি না তো। তুমি চিনো?
- আমি কি করে চিনব? গিয়েই চিনে নেব।
- না ভরসা পাচ্ছি না।
- আরে ধুর, আমি আছি না। চলো যাই।
- উহু। তুমি কি সামলাবে আমার জানা আছে।
- গেলে চলো। নাহলে নাই।
- আচ্ছা পরে জানাব।

আমি মেজাজ খারাপ করে চলে আসি ওইদিন জাহাঙ্গীরনগর থেকে। আমার উপর ভরসা করতে পারছে না। কিন্তু পরের বৃহস্পতিবারে নীলু কনফার্ম করে সে পিরোজপুর যাবে, সাথে তার আরেক বান্ধবি সুমি।

ঠিক হলো আমি, নীলু, সুমি আর বন্ধু জাহিদ যাব। একটা বড় গ্রুপ তৈরি হলো দক্ষিণাঞ্চলের জন্য। সবাই মিলে ঠিক করলাম খুলনা পর্যন্ত (বাগেরহাট আর পিরোজপুর) তিনগ্রুপ একসঙ্গে যাব। মোট ১২ জনের জন্য সম্ভবত খালেক এন্টারপ্রাইজের টিকেট কাটা হলো। সবাই রাত নয়টায় গাবতলী থেকে উঠবে। আমি শুধু নীলু আর সুমিকে নিয়ে জাহাঙ্গীরনগরের প্রান্তিক থেকে উঠব। জাহিদ আগে থেকেই বাসে থাকবে।

যাত্রার দিন ছিল প্রচন্ড ঝড়। আমি আটটার সময়ই জাহাঙ্গীরনগর চলে এলাম। ২ নম্বর হলে নীলুকে কল দিয়ে দেখি সে নাই। কই গেল? গেলাম সুমির বাসায় (টিচার্স কোয়ার্টার, প্রান্তিক ঘেষা)। সুমিকে জিজ্ঞেস করতে বলল, নীলু তো ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছে। আছে হয়তো আশেপাশে। আপনি অপেক্ষা করেন।

আমি আবার হলগেটে ফিরে এলাম। ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আমি আবারও কল দিলাম নীলুকে। হয়তো হলের অন্য কোনো রুমে আছে, এখন রুমে ফিরতে পারে। কিন্তু হতাশ। নীলু নেই। প্রচন্ড বাতাস আর বৃষ্টির মধ্যে আমি কোনোমতে ট্রান্সপোর্টে দাঁড়িয়ে আছি। রাত বাজে পৌণে নয়টা। সাড়ে নয়টায় প্রান্তিকে বাস আসবে।

রাত নয়টার দিকে আরেকবার গেলাম হলগেটে। গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে এমন সময় কিছু খালা (হলের আয়া) হুড়মুড় করে ভেতর ঢুকতে লাগল। আমি নীলুর কথা জিজ্ঞেস করতেই বলল, আফা তো বিকালেই বাইরে গেছে। আমি টেনশন নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। এমন সময় সুমি এলো, হাতে ব্যাগ।

- নীলুর কোনো খোঁজ পেলে?
- এখনো আসেনি? আমি তো আরো ব্যাগ নিয়ে চলে এলাম।
- ভালো। তুমি একটু খোঁজ নেও তো অন্য কোনো রুমে আছে নাকি।
- দেখছি।
- আচ্ছা শোনো নীলু যদি না যায় তুমি যাবে তো?
- না ভাইয়া। নীলু না গেলে তো আমি যাব না।

আমি চরম বিপদ দেখলাম। দুইজন মিলে সার্ভে করব কেমনে? ঘড়িতে অলরেডি সোয়া নয়টা। অস্থিরভাবে পায়চারি করছি। বৃষ্টিতে প্রায় ভিজে গেছি। সিগারেটও ধরাতে পারছি না। দমকা হাওয়া আর বৃষ্টি পড়ছে মুষলধারে। লম্বা লম্বা গাছগুলো নুয়ে পড়ছে মাটিতে ঝড়ের দাপটে। আমি মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকি গাবতলী থেকে বাস যেন দেরিতে ছাড়ে।

অনেকক্ষণ পর হলগেটের ওপাশ থেকে এক খালা বলে উঠল, আর মামা যে ভিজতাছেন, ভিতরে আইয়া বসেন।

গেট খুলে দিলে আমি ২ নম্বর হল (ফজিলাতুন্নেসা)-এ ঢুকলাম। অন্ধকার, কারেন্ট ছিল না। আমি বামের গেস্টরুমের দিকে এগোলাম। দরজা ঠাহর করে সেদিকে এগোলাম। দরজা দিয়ে ঢুকতেই হোঁচট খেলাম। একটা চেয়ার দরজার মুখেই। আমার হাতপা ব্যথা করছিল। আমি সেই চেয়ারটিতে বসে পড়লাম। অপেক্ষা করতে লাগলাম নীলুর জন্য।

সম্ভবত ঠিক পনের মিনিট পরেই একটি মেয়ে হন্তদন্ত হয়ে ঢুকল। চেঁচিয়ে বলল, খালা গেস্টরুমটা খুলে দাও। আমার আব্বা এসেছেন। শুনেই আমি তড়াক করে লাফিয়ে উঠলাম। গেস্টরুম খুলতে বলছে তাহলে আমি কোন রুমে বসে আছি?

চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াতেই বুঝলাম এইটা সম্ভবত টয়লেট। একটা বেসিন কি দেখতে পাচ্ছি? ততোক্ষণে খালা গেস্টরুম খুলে দিল। আমিও ওই মেয়েটার বাবার সঙ্গে গেস্টরুমে গিয়ে বসলাম। পুরো মেজাজ খারাপ। খালা এসে মোমবাতি জ্বালিয়ে দিয়ে গেল। ঘড়িতে তখন সাড়ে নয়টা। এসময়টাতেই প্রান্তিকে বাস আসার কথা। কি করব? নীলুর আশা ছেড়ে দৌড়ে যাব প্রান্তিকে?

এই ভাবনার ঠিক পাঁচ মিনিট পর নীলু হলে ঢুকল। গেটের কাছে খালাকে জিজ্ঞেস করল, আমার কাছে কেউ এসেছিল? খালা আমাকে দেখিয়ে দিল। আমি তখন মেজাজ খারাপ করে বললাম, জলদি ব্যাগ নিয়ে এসো। বাস চলে আসছে।

নীলু দৌড়ে হলের দিকে চলে গেল। আমি তখন ঠান্ডায় আর টেনশনে কাঁপছি। এখন যদি গিয়ে যদি বাস না পাই? ১৯৯৬ সাল। বাসে আমাদের গ্রুপের কারোরই তখন কোনো মোবাইল ছিল না।

4 মন্তব্য:

মাজেদুল ইসলাম said...
This comment has been removed by the author.
মাজেদুল ইসলাম said...

Google এ রংপুর সার্চ দিয়ে আপনার ব্লগ এর লিঙ্ক পেলাম।আপনার রংপুরের জনমত জরীপের ইন্টারেস্টিং ভ্রমন কাহিনী পড়লাম।আমি রংপুরে থাকি।

Ahir said...

Nice Article sir, Keep Going on... I am really impressed by read this. Thanks for sharing with us.. Happy Independence Day India WhatsApp SMS in English, Latest Government Jobs. List of Top 10 Free Classified Ad Posting Sites of India

Brittany said...

This is greatt