Saturday 12 December 2009

হাজী মোহাম্মদ তালহা

মাত্র দুইদিন আগে মোহাম্মদ তালহা হজ্জ্ব করে ফিরলেন। হ্জ্জ্ব শেষে নামের প্রথমে হাজী টাইটেল লাগানো নিয়ম কিনা জানি না তবে অনেকেই এমন করেন বলেন মোহাম্মদ তালহাকে আমি হাজী মোহাম্মদ তালহা ভাবতেই পারি। হজ্জ্ব শেষে লণ্ডনে ফিরে আসার পর তার দৈনন্দিন সকালবেলা একটু অন্যরকমভাবে কাটছে। এখন তিনি প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ডিভিডি ছেড়ে পবিত্র মক্কা মদীনার ছবি দেখেন এবং আরবীতে বয়ান শোনেন। আরবী তার জানা না থাকলেও সেটি সমস্যা হচ্ছে না।


সাধারণত হ্জ্জ্ব থেকে ফিরে এসে অনেকেরই এমন ধর্মপ্রীতি বেড়ে যায়। শুনেছি বাংলাদেশের নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন হ্জ্জ্ব করে এসে চলচ্চিত্রে অভিনয় করাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। তবে এক্ষেত্রে হাজী মোহাম্মদ তালহার বিষয়টি একটু অন্য খাতের। কারণ তার ধর্মপ্রীতি বেড়ে যাওয়ার কারণ হচ্ছেন তার বাবা-মা। বাবা-মার মুখের উপর তিনি কথা বলতে পারেন না।

হাজী মোহাম্মদ তালহার বয়স মাত্র তিন বছর। মুখে তার আরবী কেন, ঠিকমতো বাংলা ইংরেজি কোনো ভাষাই ফুটেনি।

০০০ ০০০ ০০০

সম্প্রতি লণ্ডনে হজ্জ্বযাত্রীদের টাকা মেরে দেওয়া থেকে শুরু করে ট্রাভেল এজেন্টদের হজ্জ্বযাত্রীদের প্রতি অঙ্গীকার করা প্রাপ্ত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না করা সহ অনেক অনিয়ম দেখা গেছে। ফলে এবারের হজ্জ্বযাত্রীরা সংশয়ে ছিলেন তাদের হজ্জ্বযাত্রা নির্বিঘ্ন এবং সফল হবে কিনা। এসব বিষয়ে তালহার বাবার কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাকে নিশ্চিত করেন তার এজেন্ট এক্ষেত্রে খুবই অভিজ্ঞ এবং নিজে স্ত্রী পুত্র সহ এই তিনজনের জন্য সাড়ে দশহাজার পাউণ্ড খরচ করে উন্নতমানের হজ্জ্ব প্যাকেজ কিনেছেন।

হজ্জ্বের দিন ঘনিয়ে এলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কোন এয়ারলাইন্সে যাচ্ছেন। তিনি জানালেন সৌদি এয়ারলাইন্স। জিজ্ঞেস করলাম টিকিট পেয়েছেন। তিনি একটু চিন্তিত হয়ে বললেন, এখনও পাইনি। তবে পেয়ে যাব। এই টিকেট পাওয়াটাই একটু সমস্যা হয়ে যায়। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি তাহলে অন্য কোনো এয়ারলাইন্সে ট্রাই করছেন না কেন? নাকি সৌদি ছাড়া অন্য কোনো এয়ারলাইন্স সৌদি যায় না? তিনি বললেন, বৃটিশ এয়ারওয়েজও যায়। তবে হজ্জ্বে যাচ্ছি বুঝলেনই তো। হালাল খাবার, এয়ারহস্টেসরা পর্দাআদব করে। আমি মনে মনে ভাবলাম, এয়ারপোর্ট পর্যন্ত এতো বেপর্দা নারীদের পেরিয়ে হালাল সৌদি এয়ারলাইন্সে তিনি ঠিকমতো উঠতে পারবেন তো?

বাই দ্য ওয়ে তিনি কিন্তু বিমানসহ ইণ্ডিয়ান এয়ারলাইন্সেও বাংলাদেশে হলিডে করতে যান।

০০০ ০০০ ০০০

ফিরে আসি তালহা প্রসঙ্গে। হজ্জ্বে যাওয়ার পূর্বে প্রতিদিন সকালে তালহার কাজ ছিল ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে টিভির সামনে কার্টুন দেখা। লণ্ডনের আমার দেখা সব কিডসদের প্রিয় চ্যানেল এই চ্যানেলটি। যারা কমপিউটার চালাতে শিখে গেছে তারা স্কুল থেকে ফিরেই এই সাইটে বসে যায় গেম খেলতে। এই চ্যানেল আর সাইটটি দেখে আমার আফসোস বেড়ে যেত বাংলাদেশের শিশুদের জন্য। এমন ক্রিয়েটিভ একটি চ্যানেল কেন বাংলাদেশে নেই।

কিন্তু তালহার এখন এই চ্যানেল দেখার সুযোগ নেই। তার মা স্কুলে চলে যান। ফেরেন দুপুর ৩টায়। ততক্ষণ পর্যন্ত তালহাকে দেখেশুনে রাখেন তারা সদ্য হজ্জ্ব ফেরত বাবা। এবারের হজ্জ্বে গিয়ে তিনি অনেক ডিভিডি কিনে এনেছেন যেখানে মক্কা, মদীনা, হ্জ্জ্ব, শয়তানকে পাথর মারা সহ নানাবিধ জিনিস আছে। তিনি সকালবেলা এগুলো বসে বসে দেখেন, পাশে তালহাকেও এগুলো গিলতে হয়। বাবা টয়লেটে গেলেও তালহা এগুলোও দেখে। রিমোট টিপে চ্যানেল বদলানো এখনো হাজী মোহাম্মদ তালহা শিখেননি।

তিন বছর বয়সী যে শিশুর একটি রঙিন কাগজ দেখে কীভাবে সেটা দিয়ে ফুল বানাবে তা ভাবার দরকার ছিল, সে আজকে তার বোধগম্য নয় এমন একটি ভাষা বাধ্য হয়ে শুনছে। অবশ্য তালহা বুদ্ধিমান আছে। একটু দেরি হলেও সে ঠিকই শিখে ফেলবে। হজ্জ্ব থেকে ফেরার পরদিন আমাকে দেখে সে বলে উঠল - নবজী নবজী।

হাজী মোহাম্মদ তালহার জন্য রইল আমার শুভকামনা।