নাট্যপরিচালক : ডিসেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটা স্ক্রিপ্ট লাগে যে ... একটা চ্যানেলের সঙ্গে কথা প্রায় ফাইনাল।
নাট্যকার : মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্ক্রিপ্ট ... হুম...বস বলেন তো কেমন প্লট চান?
পরিচালক : মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি বা সে সময়কার বা দেশ স্বাধীন পরবর্তী যুদ্ধের প্রভাব ... যেটা ভালো মনে করেন।
নাট্যকার : বস ৩/৪ দিন টাইম দ্যান।
৩/৪ দিন পর ...
নাট্যকার : বস। জটিল একটা স্ক্রিপ্ট 'চিন্তা করসি'। আপনে ফিদা হয়া যাইবেন শুনলে।
পরিচালক : বলেন।
নাট্যকার : ১৯৭১ এর এপ্রিলের প্রথম দিকে। ঢাকায় তখন মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা ফাইট শুরু কইরা দিসে।
পরিচালক : ঢাকায় এপ্রিলে গেরিলা ফাইট শুরু হয়া গেছে!
নাট্যকার : জ্বি ভাই। তবে ওইটা আমাদের প্লট না। আমগো প্লট হইলো উত্তরবঙ্গের 'অমুক' জেলার 'তমুক' গ্রাম নিয়া। একদিন খবর আসলো পাকবাহিনি ট্যাংক নিয়া গ্রামে আসতেসে।
পরিচালক : কিন্তু আমি যতোদূর জানি যে ৭১ এর এপ্রিলে 'অমুক' জেলার 'তমুক' গ্রামে ট্যাংক যায় নাই।
নাট্যকার : তাতো জানি না ভাই। এটা আমি 'চিন্তা কইরা' বাইর করসি।
পরিচালক : বাহ। তারপর, মূল ঘটনাটা কী?
নাট্যকার : প্লট একদমই অন্যরকম। ঢাকায় গেরিলা ফাইট শুরু, লোকজন পলায়া গ্রামে আসতেসে, গ্রামের হুজুর শান্তিকমিটির চেয়ারম্যান হইসে, স্কুলমাস্টার তরুণদের যুদ্ধে যাবার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেসে, মাস্টারের কথা শুইনা বাতেন তার বউরে বলে, 'শোনো জুলেখা, দ্যাশ আমারে ডাকতেসে, আমি যুদ্ধে যাইতাসি। পেটের সন্তান পোলা হইলে নাম রাখবা জয় আর মাইয়া হইলে ময়না। দোয়া কর যেন দ্যাশ স্বাধীন কইরা ফিরতে পারি।' ওদিকে পাকবাহিনি ট্যাংক নিয়া গ্রামে ঢুইকাই প্রথমে স্কুলমাস্টাররে ব্রাশ ফায়ার করে। এরপর হুজুরের বাসায় বিশ্রাম নেয় .... তখন ...
পরিচালক : থামেন থামেন, এগুলা সবকিছু আপনের স্ক্রিপ্টে থাকবে?
নাট্যকার : এগুলা একটাও আমার স্ক্রিপ্টে থাকবে না বস। বললাম না আপনেরে, আমি যেইটা 'চিন্তা কইরা' বাইর করসি সেটা পুরা অন্যরকম। মুক্তিযুদ্ধের নাটক মানে তো এতোক্ষণ যেগুলা বললাম সবাই সেগুলাই করে। আমরা এগুলা দেখাব না ভাই।
পরিচালক : তাহলে আপনার কী গল্প সেটাই বলেন। 'গ্রামে ট্যাংক আসতেসে' এটা আপনার স্ক্রিপ্টে আছে বুঝতে পারছি।
নাট্যকার : আমি আর কোনো ভণিতা না করেই বলে ফেলতেসি ভাই। আপনে মনোযোগ দিয়া শুনেন।
পরিচালক : জ্বি আপনি বলেন।
নাট্যকার : গ্রামে ট্যাংক আসতেসে। মধ্যরাতের নিভৃতে। গ্রামেরই এক ঘরে ঘুমিয়ে ছিল আমাদের নায়িকা অষ্টাদশী মালিহা।
পরিচালক : মালিহা! বেশি মডার্ণ হয়ে গেল না?
নাট্যকার : একটু মডার্ণ টাচ না রাখলে প্রবলেম আছে ইউ নো ... আপনি শুনতে থাকেন। আমরা পরে চেঞ্জটেঞ্জ করে নিব। তারপর মালিহা ঘড়ঘড় ঘড়ঘড় ঘড়ঘড় ট্যাংকের মৃদুশব্দ শুনছে। সে বুঝতে পারে না কীসের শব্দ। শোয়া থেকে সে উঠে বসে। তারপর ধীরে ধীরে মালিহা দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। চাঁদের আলোতে তার অসহ্য সুন্দর রূপটা ধরা পড়ে। হেব্বি গ্ল্যামারাস লাগছে মালিহাকে।
পরিচালক : গ্রামের মেয়ে মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠেছে...তাকে গ্ল্যামারাস লাগতে হবে?
নাট্যকার : ভাই আপনি পুরাটা শুনেন। ওকে আমি তাড়াতাড়ি বলে দিই। মালিহা যখন দেখে দূরে গাড়ির মতো কী কী যেন দেখা যায় সে তখন তার বাবাকে ডাকে। বাবা তো বুঝে ফেলে পাক আর্মি গ্রামে আসতেসে। সে তখন চিতকার না করে আস্তে আস্তে গ্রামের সবাইকে খবর দিয়ে দেয়। সবাই বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে পড়ে। শুধু বয়স্করা রয়ে যায় বাড়িতে। এদিকে ট্যাংক এগিয়ে আসতে থাকে। কিন্তু ভোরের দিকে আর ট্যাংকের শব্দ শোনা যায় না। এদিকে গ্রাম থেকে একটু দূরে বৃদ্ধ দাদিকে নিয়ে থাকত আমাদের নায়ক রুহুল, একজন মুক্তিযোদ্ধা।
পরিচালক : রুহুল নামতো মডার্ণ হলো না তো।
নাট্যকার : হে হে বস, এগুলাই তো মজা। অবশ্য আমি প্রথমে রাহুল রাখতে চেয়েছিলাম, পরে 'চিন্তা করলাম' মুক্তিযোদ্ধাদের নাম মডার্ণ কিসিমের হয় এমন শুনি নাই। তাই রুহুল-ই রেখে দিসি। রুহুল ক্ষেতে যাওয়ার সময় দেখে দুইটা ইয়া বড় বড় ট্যাংক তাদের গ্রামে ঢোকার পথে যে নালা আছে সেখানে আধডোবা হয়ে আছে।
পরিচালক : মানে কী? ট্যাংক নালায় আটকে গেছে? ওয়াও ...
নাট্যকার : এইতো ভাই। মজা পাইতেছেন না এখন? আমি যখন লেখার সময় এইটা 'চিন্তা করসিলাম' তখনই বুঝতে পারছিলাম আপনি পছন্দ করবেন। এরপর শুনেন ... রুহুলও বুঝছে এরা পাক বাহিনি। আর এরা যে আটকায়া গেছে সেটাও বুঝতে পারসে। সে গ্রামের সবাইরে খবর দেয়। যারা পাটক্ষেতে, ল্যাট্রিনে বিভিন্ন স্থানে লুকায়া ছিল সবাই বের হয়ে আসে। এদিকে গ্রামবাসি কথায় কথায় জানতে পারে মালিহাই প্রথম ট্যাংক দেখে। গ্রামের সবাই তারে থ্যাংকস দেয়। রুহুল একটু একটু পছন্দ করে মালিহারে। সেও আড়চোখে তাকায়। বাট বস, আমরা এসব দিকে বেশি যাব না। কারণ এটা সিরিয়াস স্ক্রিপ্ট তো। যাই হোক, গ্রামের সবাই বুঝতে পারছে না ট্যাংক নষ্ট হয়া গেছে না অন্য কিছু হইসে।
পরিচালক : আসলে কী হইসে?
নাট্যকার : বস ট্যাংক নষ্ট হইয়া গেসে। আর চলতাসে না। পাক বাহিনি নালায় ট্যাংকের মধ্যে আটকায়া গেসে। এরা এমনিতে পানিরে ভয় পায়। এখন ট্যাংক ছাইড়া নামতেও পারতেসে না। আপনি সিচুয়েশনটা 'চিন্তা করতে' পারেন? পুরাই ফানি।
পরিচালক : আপনি কমেডি লিখসেন?
নাট্যকার : না বস টুইস্ট রাখছি। স্ক্রিপ্ট তো আসলে সিরিয়াস। তো পাকআর্মি আটাকায় গেলে কী হবে এদের হাতে তো অস্ত্র আছে। তাই গ্রামবাসী ভয়ে তাদের কাছে যাইতেসে না। এভাবে দুইদিন যায়। গ্রামবাসী লুকায়া লুকায়া ট্যাংক দেখে। দেখে আর্মিরা ট্যাংকের ছাদে বইসা থাকে। এরপর যে ঘটনা ঘটে সেটা হইলো মালিহা একদিন ভুলে হাঁটতে হাঁটতে ভোরের দিকে নালার কাছাকাছি চলে যায়। তখন ছাদে বসে থাকা এক পাকআর্মি অস্ত্র তাক করে মালিহার দিকে। মালিহা হতভম্ব হয়ে যায়। অস্ত্রের ইশারায় মন্ত্রমুগ্ধের মতো সে নালা ভেঙে ট্যাংকের কাছে চলে যায়। পাকিআর্মি তারে বন্দি করে। এদিকে গ্রামবাসী জানতে পারে মালিহার বোকামি। এখন মেয়েটারে কীভাবে উদ্ধার করবে। সবাই মিলে শলাপরামর্শ করে, কেউ পরামর্শ দেয় আগুনের মশাল ছুইড়া মারবে, কেউ বলে নালার মধ্যে সাপ ছাইড়া দিতে, কিন্তু কোনো পরামর্শই মানা হয় না। বস আপনে এ জায়গায় টেনশনটা নিয়া খেলবেন।
পরিচালক : আচ্ছা তারপর।
নাট্যকার : মালিহার কারণে রুহুলের মন খারাপ থাকে। সে আর্মিদের চোখ এড়ায়া একটা গাছের আড়ালে বইসা থাকে আর ট্যাংকের দিকে তাকায়া থাকে। হঠাৎ সে দেখে এক পাকি আর্মি ট্যাংকের ছাদে উঠে 'কোই হ্যায়' 'কোই হ্যায়' বলে চিৎকার করে। উর্দুতে বলতে থাকে, আমরা তোমাদের কিছুই করব না। তোমরা কেউ আমাদের কিছু খাবার দেও। আর খাবার দিলে আমরা মেয়েটাকে ছেড়ে দিব। রুহুল এটা গ্রামবাসীরে জানায়। ওইদিন দুপুরে গ্রামবাসী মিটিংয়ে বসে। সিদ্ধান্ত হয় তাদের খাবার দেয়া হবে। কেউ রাজি হয় না ট্যাংকে যেতে, তখন আমাদের রুহুল রাজি হয়। গ্রামের মা-ঝিরা মিলে মুর্গী, ছাগল জবাই দিয়ে রান্না করা হয়। রুহুল তার বৃদ্ধা দাদির মায়া ছেড়ে মাথায় বড় একটা বাক্সে খাবার দাবার প্লেটগ্লাস নিয়ে নালার মধ্যে নেমে পড়ে। কাছাকাছি যেতেই দুজন পাকআর্মি তার মাথা থেকে বাক্সটা নিয়ে নেয়। এরপর খট করে রুহুলের দিকে অস্ত্র তাক করে। রুহুল একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। গুলি করবে পাকআর্মি? উফ্, সিকোয়েন্সটা 'চিন্তা করতে'ই আমার লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে। যাহোক, রুহুল ভয়ে ভয়ে উর্দুতে বলে, আমি কি মালিহার সঙ্গে দেখা করতে পারি?
পরিচালক : আচ্ছা এতো ডিটেইলস তো আমি পরে পড়ে নিব। শর্টকাটে বলেন।
নাট্যকার : এরপর রুহুলকে ট্যাংকের ভিতরে নেয়া হয়। ওরা বাক্স খুলেই খাবার দাবার বের করতে শুরু করে। গপাগপ খেতে থাকে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সবাই বমি করতে শুরু করে কারণ খাবারে বিষ ছিল। গ্রামবাসীও সেটা জানত না। রুহুল নিজেই সেটা মিশিয়ে দেয়। এটা ফ্ল্যাশবাকে দেখিয়ে দিব যে নালায় নামার আগে সে বাক্সটা মাটিতে নামিয়ে রাখে। তখনই সে বিষ মিশায়। কারণ রুহুলরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রোট্রেট করতে গেলে এরকম সাহসী কিছু করাতে হবে। সো সবাই মারা গেলে সে মালিহাকে নিয়ে ট্যাংক থেকে বেরিয়ে আসে। ছাদে উঠতেই দেখে এক পাক আর্মি। রুহুল আর মালিহাকে দেখেই সে অস্ত্র তাক করে। কিন্তু রুহুল চালাকি করে বসে গিয়ে তারে লাথি মারে। সে অস্ত্র ফেলে নালাতে পড়ে যায়। সে অস্ত্র তুলে নিয়ে রুহুল জোরে চিৎকার করে উঠে - জয় বাংলা।
পরিচালক : আপনার কাহিনি শেষ?
নাট্যকার : হা হা হা। শেষ হইয়াও হইলো না শ্যাষ। এতোক্ষণ যে গল্প শুনলেন এটা আসলে পুরোটাই ফ্ল্যাশব্যাকে ছিল। কাহিনির এ পর্যায়ে এসে আমরা জানতে পারি যে এতোক্ষণ আমরা রুহুলের মুখেই গল্পটা শুনি। কারণ কী জানেন?
পরিচালক : আরোও কী কী কারণ?
নাট্যকার : কারণ গ্রামবাসী। মালিহা যে ২দিন ট্যাংকে ছিল আপনি কি মনে করেন পাকআর্মি তারে ধর্ষণ করে নাই? আমাদের ইতিহাসে লেখা আছে ২/৪ লক্ষ মা-বোন ধর্ষণের শিকার হইসে। তাই আমি 'চিন্তা করসি' এখানে মালিহা সেই মহান বীরাঙ্গনাদের রিপ্রেজেন্ট করবে। বাট দ্য স্যাড পার্ট ইজ সেই মালিহাকে গ্রামবাসী পরে ধীক্কার জানায়। কিন্তু আমাদের রুহুল, মুক্তিযোদ্ধা রুহুল, পিছপা হয়নি। সে মালিহাকে নিজের বউ করে ঘরে নেয়। যেটা আমরা নাটকের শেষে জানতে পারি যখন পুরা ফ্লাশব্যাক শেষে রুহুলের কাছে ফিরি। বস কেমন লাগল?
পরিচালক : ভালো। আমার পছন্দ হয়েছে। আসলেই আনকমন। এরকমও যে ঘটেছে ৭১ এ আমার জানা ছিল না। আমি এখনই 'অমুক' জেলার 'তমুক' গ্রামে খোঁজ লাগাচ্ছি। বেটার হয় ওখানেই শ্যুটিং করলে। আর ওখানে ওইসময়কার লোকজনের সঙ্গে কথা বলব, দেখি তারাও এ ঘটনায় আর কোনো ইনপুট দিতে পারে কিনা।
নাট্যকার : বস এসব কী বলেন। এটা তো সত্যি ঘটনা না। আমি 'চিন্তা কইরা' বাইর করসি।
পরিচালক : 'চিন্তা কইরা' বের করসেন?
নাট্যকার : হ্যা ভাই। নাইলে আনকমন কিছু করাটাই তো টাফ। আপনে দেখেন না মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক যতো নির্মাণ হইসে সবই একইরকম। নতুন কিছু দিতে হইলে বস 'অন্যরকম চিন্তা' করতে হবে।
পরিচালক : আপনি কয়দিনে এ স্ক্রিপ্ট লিখছেন?
নাট্যকার : এটা লিখতে আমার বেশি টাইম লাগে নাই। জাস্ট স্টাডি করতেই বেশি টাইম চলে গেছে।
পরিচালক : কী স্টাডি করছেন?
নাট্যকার : ওয়েল। আমি প্রচুর মুভি দেখি। তো আপনে বলার পর আমি যুদ্ধের ছবি বেশি বেশি দেখা শুরু করলাম। আমেরিকা-ভিয়েতনাম, বসনিয়া-সার্বিয়া, দুই কোরিয়া, চীন-জাপান যুদ্ধ, আর আমাদের পাক-ইণ্ডিয়া যুদ্ধের ছবি তো আছেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপরও প্রচুর ছবি দেখছি। এসব দেখেই আপনে মনে করেন যে এই স্ক্রিপ্টের আইডিয়াটা 'চিন্তা করতে' পারসি।
পরিচালক : আপনারে একটা অনুরোধ করি। আসছে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে আমি একটা নাটক বানাব। আপনি আমারে স্ক্রিপ্ট দিবেন। আরেকটা অনুরোধ হইলে এই নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে আপনি কষ্ট কইরা 'চিন্তা' কইরেন না কোনোকিছু। একটু রেস্ট নেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিছু 'চিন্তা' আপনে কইরেন না।
*** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
অফটপিক:
আমি সবসময়ই একটা কথা বিশ্বাস করি আর বলে আসছি যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছবি নির্মাণ করতে হলে আমাদের অতি কষ্ট করে 'কল্পনা করে' কোনো কাহিনি বানানোর দরকার নাই। ৭১ এর ন'মাস কিংবা তারও আগে থেকে দেশ স্বাধীন করার ইচ্ছা ও তা বাস্তবায়নে এ ভূখণ্ডের মানুষ যা করেছে তাতে অনেক 'সত্যি ঘটনা' পাওয়া যাবে। কল্পনা করে ছবি বানাতে গিয়ে 'মেহেরজান' টাইপ বিষ ঢুকে যাচ্ছে, আরও কয়েক প্রজন্ম পরে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবিগুলোর মনগড়া কাহিনি সে প্রজন্মদের বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধ - রাতের বেলায় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা নয়, যুদ্ধ করা - আরামের কাজ নয়, যুদ্ধে পরিবার পরিজন হারানো - খুশির সংবাদ নয়, যুদ্ধের কারণে দেশান্তর হওয়া - ডিবি লটারি জেতা নয়। এতো এতো সত্যি ঘটনা ছড়িয়ে আছে যে কষ্ট করে কল্পনা করার দরকার হয় না। 'সত্যি কাহিনি' নিয়ে ছবি বানান।
আর ছবিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনির মুখের উর্দু সংলাপে সাবটাইটেল ব্যবহার করুন।
সামনে ডিসেম্বর মাস আসছে। মুক্তিযুদ্ধের মনগড়া কাহিনি নিয়ে নাটক/ ছবি বানানোর হিড়িক পড়ে যাবে তাই এ আগাম সতর্কবাণী কিংবা অনুরোধ, জানিয়ে রাখলাম।
নাট্যকার : মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক স্ক্রিপ্ট ... হুম...বস বলেন তো কেমন প্লট চান?
পরিচালক : মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি বা সে সময়কার বা দেশ স্বাধীন পরবর্তী যুদ্ধের প্রভাব ... যেটা ভালো মনে করেন।
নাট্যকার : বস ৩/৪ দিন টাইম দ্যান।
৩/৪ দিন পর ...
নাট্যকার : বস। জটিল একটা স্ক্রিপ্ট 'চিন্তা করসি'। আপনে ফিদা হয়া যাইবেন শুনলে।
পরিচালক : বলেন।
নাট্যকার : ১৯৭১ এর এপ্রিলের প্রথম দিকে। ঢাকায় তখন মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা ফাইট শুরু কইরা দিসে।
পরিচালক : ঢাকায় এপ্রিলে গেরিলা ফাইট শুরু হয়া গেছে!
নাট্যকার : জ্বি ভাই। তবে ওইটা আমাদের প্লট না। আমগো প্লট হইলো উত্তরবঙ্গের 'অমুক' জেলার 'তমুক' গ্রাম নিয়া। একদিন খবর আসলো পাকবাহিনি ট্যাংক নিয়া গ্রামে আসতেসে।
পরিচালক : কিন্তু আমি যতোদূর জানি যে ৭১ এর এপ্রিলে 'অমুক' জেলার 'তমুক' গ্রামে ট্যাংক যায় নাই।
নাট্যকার : তাতো জানি না ভাই। এটা আমি 'চিন্তা কইরা' বাইর করসি।
পরিচালক : বাহ। তারপর, মূল ঘটনাটা কী?
নাট্যকার : প্লট একদমই অন্যরকম। ঢাকায় গেরিলা ফাইট শুরু, লোকজন পলায়া গ্রামে আসতেসে, গ্রামের হুজুর শান্তিকমিটির চেয়ারম্যান হইসে, স্কুলমাস্টার তরুণদের যুদ্ধে যাবার জন্য উদ্বুদ্ধ করতেসে, মাস্টারের কথা শুইনা বাতেন তার বউরে বলে, 'শোনো জুলেখা, দ্যাশ আমারে ডাকতেসে, আমি যুদ্ধে যাইতাসি। পেটের সন্তান পোলা হইলে নাম রাখবা জয় আর মাইয়া হইলে ময়না। দোয়া কর যেন দ্যাশ স্বাধীন কইরা ফিরতে পারি।' ওদিকে পাকবাহিনি ট্যাংক নিয়া গ্রামে ঢুইকাই প্রথমে স্কুলমাস্টাররে ব্রাশ ফায়ার করে। এরপর হুজুরের বাসায় বিশ্রাম নেয় .... তখন ...
পরিচালক : থামেন থামেন, এগুলা সবকিছু আপনের স্ক্রিপ্টে থাকবে?
নাট্যকার : এগুলা একটাও আমার স্ক্রিপ্টে থাকবে না বস। বললাম না আপনেরে, আমি যেইটা 'চিন্তা কইরা' বাইর করসি সেটা পুরা অন্যরকম। মুক্তিযুদ্ধের নাটক মানে তো এতোক্ষণ যেগুলা বললাম সবাই সেগুলাই করে। আমরা এগুলা দেখাব না ভাই।
পরিচালক : তাহলে আপনার কী গল্প সেটাই বলেন। 'গ্রামে ট্যাংক আসতেসে' এটা আপনার স্ক্রিপ্টে আছে বুঝতে পারছি।
নাট্যকার : আমি আর কোনো ভণিতা না করেই বলে ফেলতেসি ভাই। আপনে মনোযোগ দিয়া শুনেন।
পরিচালক : জ্বি আপনি বলেন।
নাট্যকার : গ্রামে ট্যাংক আসতেসে। মধ্যরাতের নিভৃতে। গ্রামেরই এক ঘরে ঘুমিয়ে ছিল আমাদের নায়িকা অষ্টাদশী মালিহা।
পরিচালক : মালিহা! বেশি মডার্ণ হয়ে গেল না?
নাট্যকার : একটু মডার্ণ টাচ না রাখলে প্রবলেম আছে ইউ নো ... আপনি শুনতে থাকেন। আমরা পরে চেঞ্জটেঞ্জ করে নিব। তারপর মালিহা ঘড়ঘড় ঘড়ঘড় ঘড়ঘড় ট্যাংকের মৃদুশব্দ শুনছে। সে বুঝতে পারে না কীসের শব্দ। শোয়া থেকে সে উঠে বসে। তারপর ধীরে ধীরে মালিহা দরজা খুলে বেরিয়ে আসে। চাঁদের আলোতে তার অসহ্য সুন্দর রূপটা ধরা পড়ে। হেব্বি গ্ল্যামারাস লাগছে মালিহাকে।
পরিচালক : গ্রামের মেয়ে মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠেছে...তাকে গ্ল্যামারাস লাগতে হবে?
নাট্যকার : ভাই আপনি পুরাটা শুনেন। ওকে আমি তাড়াতাড়ি বলে দিই। মালিহা যখন দেখে দূরে গাড়ির মতো কী কী যেন দেখা যায় সে তখন তার বাবাকে ডাকে। বাবা তো বুঝে ফেলে পাক আর্মি গ্রামে আসতেসে। সে তখন চিতকার না করে আস্তে আস্তে গ্রামের সবাইকে খবর দিয়ে দেয়। সবাই বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে পড়ে। শুধু বয়স্করা রয়ে যায় বাড়িতে। এদিকে ট্যাংক এগিয়ে আসতে থাকে। কিন্তু ভোরের দিকে আর ট্যাংকের শব্দ শোনা যায় না। এদিকে গ্রাম থেকে একটু দূরে বৃদ্ধ দাদিকে নিয়ে থাকত আমাদের নায়ক রুহুল, একজন মুক্তিযোদ্ধা।
পরিচালক : রুহুল নামতো মডার্ণ হলো না তো।
নাট্যকার : হে হে বস, এগুলাই তো মজা। অবশ্য আমি প্রথমে রাহুল রাখতে চেয়েছিলাম, পরে 'চিন্তা করলাম' মুক্তিযোদ্ধাদের নাম মডার্ণ কিসিমের হয় এমন শুনি নাই। তাই রুহুল-ই রেখে দিসি। রুহুল ক্ষেতে যাওয়ার সময় দেখে দুইটা ইয়া বড় বড় ট্যাংক তাদের গ্রামে ঢোকার পথে যে নালা আছে সেখানে আধডোবা হয়ে আছে।
পরিচালক : মানে কী? ট্যাংক নালায় আটকে গেছে? ওয়াও ...
নাট্যকার : এইতো ভাই। মজা পাইতেছেন না এখন? আমি যখন লেখার সময় এইটা 'চিন্তা করসিলাম' তখনই বুঝতে পারছিলাম আপনি পছন্দ করবেন। এরপর শুনেন ... রুহুলও বুঝছে এরা পাক বাহিনি। আর এরা যে আটকায়া গেছে সেটাও বুঝতে পারসে। সে গ্রামের সবাইরে খবর দেয়। যারা পাটক্ষেতে, ল্যাট্রিনে বিভিন্ন স্থানে লুকায়া ছিল সবাই বের হয়ে আসে। এদিকে গ্রামবাসি কথায় কথায় জানতে পারে মালিহাই প্রথম ট্যাংক দেখে। গ্রামের সবাই তারে থ্যাংকস দেয়। রুহুল একটু একটু পছন্দ করে মালিহারে। সেও আড়চোখে তাকায়। বাট বস, আমরা এসব দিকে বেশি যাব না। কারণ এটা সিরিয়াস স্ক্রিপ্ট তো। যাই হোক, গ্রামের সবাই বুঝতে পারছে না ট্যাংক নষ্ট হয়া গেছে না অন্য কিছু হইসে।
পরিচালক : আসলে কী হইসে?
নাট্যকার : বস ট্যাংক নষ্ট হইয়া গেসে। আর চলতাসে না। পাক বাহিনি নালায় ট্যাংকের মধ্যে আটকায়া গেসে। এরা এমনিতে পানিরে ভয় পায়। এখন ট্যাংক ছাইড়া নামতেও পারতেসে না। আপনি সিচুয়েশনটা 'চিন্তা করতে' পারেন? পুরাই ফানি।
পরিচালক : আপনি কমেডি লিখসেন?
নাট্যকার : না বস টুইস্ট রাখছি। স্ক্রিপ্ট তো আসলে সিরিয়াস। তো পাকআর্মি আটাকায় গেলে কী হবে এদের হাতে তো অস্ত্র আছে। তাই গ্রামবাসী ভয়ে তাদের কাছে যাইতেসে না। এভাবে দুইদিন যায়। গ্রামবাসী লুকায়া লুকায়া ট্যাংক দেখে। দেখে আর্মিরা ট্যাংকের ছাদে বইসা থাকে। এরপর যে ঘটনা ঘটে সেটা হইলো মালিহা একদিন ভুলে হাঁটতে হাঁটতে ভোরের দিকে নালার কাছাকাছি চলে যায়। তখন ছাদে বসে থাকা এক পাকআর্মি অস্ত্র তাক করে মালিহার দিকে। মালিহা হতভম্ব হয়ে যায়। অস্ত্রের ইশারায় মন্ত্রমুগ্ধের মতো সে নালা ভেঙে ট্যাংকের কাছে চলে যায়। পাকিআর্মি তারে বন্দি করে। এদিকে গ্রামবাসী জানতে পারে মালিহার বোকামি। এখন মেয়েটারে কীভাবে উদ্ধার করবে। সবাই মিলে শলাপরামর্শ করে, কেউ পরামর্শ দেয় আগুনের মশাল ছুইড়া মারবে, কেউ বলে নালার মধ্যে সাপ ছাইড়া দিতে, কিন্তু কোনো পরামর্শই মানা হয় না। বস আপনে এ জায়গায় টেনশনটা নিয়া খেলবেন।
পরিচালক : আচ্ছা তারপর।
নাট্যকার : মালিহার কারণে রুহুলের মন খারাপ থাকে। সে আর্মিদের চোখ এড়ায়া একটা গাছের আড়ালে বইসা থাকে আর ট্যাংকের দিকে তাকায়া থাকে। হঠাৎ সে দেখে এক পাকি আর্মি ট্যাংকের ছাদে উঠে 'কোই হ্যায়' 'কোই হ্যায়' বলে চিৎকার করে। উর্দুতে বলতে থাকে, আমরা তোমাদের কিছুই করব না। তোমরা কেউ আমাদের কিছু খাবার দেও। আর খাবার দিলে আমরা মেয়েটাকে ছেড়ে দিব। রুহুল এটা গ্রামবাসীরে জানায়। ওইদিন দুপুরে গ্রামবাসী মিটিংয়ে বসে। সিদ্ধান্ত হয় তাদের খাবার দেয়া হবে। কেউ রাজি হয় না ট্যাংকে যেতে, তখন আমাদের রুহুল রাজি হয়। গ্রামের মা-ঝিরা মিলে মুর্গী, ছাগল জবাই দিয়ে রান্না করা হয়। রুহুল তার বৃদ্ধা দাদির মায়া ছেড়ে মাথায় বড় একটা বাক্সে খাবার দাবার প্লেটগ্লাস নিয়ে নালার মধ্যে নেমে পড়ে। কাছাকাছি যেতেই দুজন পাকআর্মি তার মাথা থেকে বাক্সটা নিয়ে নেয়। এরপর খট করে রুহুলের দিকে অস্ত্র তাক করে। রুহুল একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। গুলি করবে পাকআর্মি? উফ্, সিকোয়েন্সটা 'চিন্তা করতে'ই আমার লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে। যাহোক, রুহুল ভয়ে ভয়ে উর্দুতে বলে, আমি কি মালিহার সঙ্গে দেখা করতে পারি?
পরিচালক : আচ্ছা এতো ডিটেইলস তো আমি পরে পড়ে নিব। শর্টকাটে বলেন।
নাট্যকার : এরপর রুহুলকে ট্যাংকের ভিতরে নেয়া হয়। ওরা বাক্স খুলেই খাবার দাবার বের করতে শুরু করে। গপাগপ খেতে থাকে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর সবাই বমি করতে শুরু করে কারণ খাবারে বিষ ছিল। গ্রামবাসীও সেটা জানত না। রুহুল নিজেই সেটা মিশিয়ে দেয়। এটা ফ্ল্যাশবাকে দেখিয়ে দিব যে নালায় নামার আগে সে বাক্সটা মাটিতে নামিয়ে রাখে। তখনই সে বিষ মিশায়। কারণ রুহুলরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রোট্রেট করতে গেলে এরকম সাহসী কিছু করাতে হবে। সো সবাই মারা গেলে সে মালিহাকে নিয়ে ট্যাংক থেকে বেরিয়ে আসে। ছাদে উঠতেই দেখে এক পাক আর্মি। রুহুল আর মালিহাকে দেখেই সে অস্ত্র তাক করে। কিন্তু রুহুল চালাকি করে বসে গিয়ে তারে লাথি মারে। সে অস্ত্র ফেলে নালাতে পড়ে যায়। সে অস্ত্র তুলে নিয়ে রুহুল জোরে চিৎকার করে উঠে - জয় বাংলা।
পরিচালক : আপনার কাহিনি শেষ?
নাট্যকার : হা হা হা। শেষ হইয়াও হইলো না শ্যাষ। এতোক্ষণ যে গল্প শুনলেন এটা আসলে পুরোটাই ফ্ল্যাশব্যাকে ছিল। কাহিনির এ পর্যায়ে এসে আমরা জানতে পারি যে এতোক্ষণ আমরা রুহুলের মুখেই গল্পটা শুনি। কারণ কী জানেন?
পরিচালক : আরোও কী কী কারণ?
নাট্যকার : কারণ গ্রামবাসী। মালিহা যে ২দিন ট্যাংকে ছিল আপনি কি মনে করেন পাকআর্মি তারে ধর্ষণ করে নাই? আমাদের ইতিহাসে লেখা আছে ২/৪ লক্ষ মা-বোন ধর্ষণের শিকার হইসে। তাই আমি 'চিন্তা করসি' এখানে মালিহা সেই মহান বীরাঙ্গনাদের রিপ্রেজেন্ট করবে। বাট দ্য স্যাড পার্ট ইজ সেই মালিহাকে গ্রামবাসী পরে ধীক্কার জানায়। কিন্তু আমাদের রুহুল, মুক্তিযোদ্ধা রুহুল, পিছপা হয়নি। সে মালিহাকে নিজের বউ করে ঘরে নেয়। যেটা আমরা নাটকের শেষে জানতে পারি যখন পুরা ফ্লাশব্যাক শেষে রুহুলের কাছে ফিরি। বস কেমন লাগল?
পরিচালক : ভালো। আমার পছন্দ হয়েছে। আসলেই আনকমন। এরকমও যে ঘটেছে ৭১ এ আমার জানা ছিল না। আমি এখনই 'অমুক' জেলার 'তমুক' গ্রামে খোঁজ লাগাচ্ছি। বেটার হয় ওখানেই শ্যুটিং করলে। আর ওখানে ওইসময়কার লোকজনের সঙ্গে কথা বলব, দেখি তারাও এ ঘটনায় আর কোনো ইনপুট দিতে পারে কিনা।
নাট্যকার : বস এসব কী বলেন। এটা তো সত্যি ঘটনা না। আমি 'চিন্তা কইরা' বাইর করসি।
পরিচালক : 'চিন্তা কইরা' বের করসেন?
নাট্যকার : হ্যা ভাই। নাইলে আনকমন কিছু করাটাই তো টাফ। আপনে দেখেন না মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক যতো নির্মাণ হইসে সবই একইরকম। নতুন কিছু দিতে হইলে বস 'অন্যরকম চিন্তা' করতে হবে।
পরিচালক : আপনি কয়দিনে এ স্ক্রিপ্ট লিখছেন?
নাট্যকার : এটা লিখতে আমার বেশি টাইম লাগে নাই। জাস্ট স্টাডি করতেই বেশি টাইম চলে গেছে।
পরিচালক : কী স্টাডি করছেন?
নাট্যকার : ওয়েল। আমি প্রচুর মুভি দেখি। তো আপনে বলার পর আমি যুদ্ধের ছবি বেশি বেশি দেখা শুরু করলাম। আমেরিকা-ভিয়েতনাম, বসনিয়া-সার্বিয়া, দুই কোরিয়া, চীন-জাপান যুদ্ধ, আর আমাদের পাক-ইণ্ডিয়া যুদ্ধের ছবি তো আছেই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপরও প্রচুর ছবি দেখছি। এসব দেখেই আপনে মনে করেন যে এই স্ক্রিপ্টের আইডিয়াটা 'চিন্তা করতে' পারসি।
পরিচালক : আপনারে একটা অনুরোধ করি। আসছে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে ভ্যালেন্টাইন্স ডে উপলক্ষে আমি একটা নাটক বানাব। আপনি আমারে স্ক্রিপ্ট দিবেন। আরেকটা অনুরোধ হইলে এই নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে আপনি কষ্ট কইরা 'চিন্তা' কইরেন না কোনোকিছু। একটু রেস্ট নেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কিছু 'চিন্তা' আপনে কইরেন না।
*** *** *** *** *** *** *** *** *** ***
অফটপিক:
আমি সবসময়ই একটা কথা বিশ্বাস করি আর বলে আসছি যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছবি নির্মাণ করতে হলে আমাদের অতি কষ্ট করে 'কল্পনা করে' কোনো কাহিনি বানানোর দরকার নাই। ৭১ এর ন'মাস কিংবা তারও আগে থেকে দেশ স্বাধীন করার ইচ্ছা ও তা বাস্তবায়নে এ ভূখণ্ডের মানুষ যা করেছে তাতে অনেক 'সত্যি ঘটনা' পাওয়া যাবে। কল্পনা করে ছবি বানাতে গিয়ে 'মেহেরজান' টাইপ বিষ ঢুকে যাচ্ছে, আরও কয়েক প্রজন্ম পরে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবিগুলোর মনগড়া কাহিনি সে প্রজন্মদের বিভ্রান্তিতে ফেলতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধ - রাতের বেলায় ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখা নয়, যুদ্ধ করা - আরামের কাজ নয়, যুদ্ধে পরিবার পরিজন হারানো - খুশির সংবাদ নয়, যুদ্ধের কারণে দেশান্তর হওয়া - ডিবি লটারি জেতা নয়। এতো এতো সত্যি ঘটনা ছড়িয়ে আছে যে কষ্ট করে কল্পনা করার দরকার হয় না। 'সত্যি কাহিনি' নিয়ে ছবি বানান।
আর ছবিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনির মুখের উর্দু সংলাপে সাবটাইটেল ব্যবহার করুন।
সামনে ডিসেম্বর মাস আসছে। মুক্তিযুদ্ধের মনগড়া কাহিনি নিয়ে নাটক/ ছবি বানানোর হিড়িক পড়ে যাবে তাই এ আগাম সতর্কবাণী কিংবা অনুরোধ, জানিয়ে রাখলাম।
5 মন্তব্য:
Thanks for very nice and informative sites........
Alpha Homeo Care is a health news and article related website. Here discuss about various types of health problem, natural care and cure, discuss about Homeopathy treatment.
Alpha Homeo Care
ভালো বলেছেন..
ভালো বলেছেন..
Nice Article sir, Keep Going on... I am really impressed by read this. Thanks for sharing with us. Bangladesh National Flag Images.
আমারা মাছে ভাতে বাঙালি। মাছ আমাদের অন্যতম প্রধান খাবার। মাছ মানে নদী থেকে ধরে আনা তাজা মাছের লাফা লাফি। আজ কাল তাজা বা টাটকা মাছ পাওয়া যাই না। ফরমালিন যুক্ত মাছ চারদিকে ছড়াছড়ি। আপনি কি তাজা ফ্রমালিন মুক্ত মাছ খোঁজ করছেন? তাহলে ভিজিট করুন freshfishbd.
Post a Comment