Friday 29 May 2009

ভগবান vs আল্লাহ - গ্যালারিতে ঈশ্বর

ইংল্যান্ড আসার পর থেকেই খুব ইচ্ছে ছিল ছুটিছাটায় ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে ঘুরব। কিন্তু কোনোভাবেই ব্যাটেবলে হচ্ছিল না। কেটে গেল ৪ বছর। আর এবারই সুযোগ এসে গেল ইটালি যাবার।


রোম শহরের বাঙালিরা বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে। লন্ডনের বৈশাখী মেলার মতো অতো জমকালো না হলেও তাদের ইচ্ছে মেলাটি টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার করবে। কিন্তু আয়োজকদের এই খায়েশ একদম শেষ মুহূর্তে জেগেছে। ২৪ তারিখ থেকে মেলা শুরু হয়ে গেলেও ঠিক হলো শেষ তিনদিন অর্থাৎ ২৯, ৩০ ও ৩১ তারিখ প্রতিদিন ৪ ঘন্টা করে মেলা সরাসরি সম্প্রচার হবে। এদিকে আমাদের অনেকেরই ভিসা নেই। ব্যাংক হলিডের পরের দিন ২৬ তারিখ ভিসার জন্য ইটালি এ্যাম্বাসি যাব ঠিক করার পর দেখা গেল আমাদের অপারেশন চীফের পার্সপোর্টের মেয়াদ গত ২০০৭ সালেই শেষ, তিনি জানেন না। কি আর করা! মঙ্গলবার গেল তার পাসপোর্ট রিনিউ করাতে। তার পরদিন ২৭ তারিখ আমরা চারজন রওনা দিলাম ভিসার জন্য ইটালি এ্যাম্বাসিতে। সবাই হাসাহাসি করছে আমাদের পাগলামি দেখে। বলছে, কমপক্ষে ১০ দিন তো লাগবেই ভিসা পেতে, তার উপর বাংলাদেশী পাসপোর্ট। আমাদের সম্বল মেলা কমিটির একখানা আমন্ত্রণপত্র। এটা দেখিয়ে যদি কাজ হয়। অপারেশন চীফ প্রিন্স অবশ্য স্যাটেলাইট বুকিং, এসএনজি ভাড়া সহ সবকিছু ঠিকঠাক করে রেখেছে। ভিসা পেয়েই উড়াল দিব ...

গাড়িতে আমরা চারজন ছিলাম। এরমধ্যে রাজিব ছিল হিন্দু। তাকে বললাম, আমার মনে হয় ভিসা পাব না।
রাজিব - আরে ভগবান চাইলে সব হয়। ভিসা পাবই।
আমি - উহু। আমার আল্লাহ তো বলে ভিসা দেবে না।
রাজিব - না না। পাবই। আমার ভগবান বলছে ভিসা পাব।
আমি - ওকে ফাইন। দেখা যাক আল্লাহ আর ভগবানের মধ্যে কে জেতে। ঠিক আছে?
রাজিব - তবে লাগুক যুদ্ধ ভগবান আর আল্লাহর মধ্যে।

এ্যাম্বেসিতে গিয়ে পৌঁছলাম দুপুর সোয়া বারটায়। কিন্তু ১২টার সময়ই দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। আমি ফিচকি হাসলাম। কিন্তু আমাদের হেড অফ সেলস খুব করিৎকর্মা ছেলে। বেল টিপে এ্যাম্বেসির লোকের সঙ্গে কথা বলে ভিতরে ঢুকলাম। একজন অফিসারের সঙ্গে কথা হলো। স্বভাবতই তিনি নিয়মকানুন দেখানো শুরু করলেন। একপর্যায়ে মুখের উপরই বলে দিলেন, বাংলাদেশী পাসপোর্ট হলে তারা বেশি খোঁজখবর নেয়, এক্ষেত্রে সেটা করার সময় নেই। সুতরাং ভিসা না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিন্তু হেড অফ সেলস আরেফীন ছাড়ার পাত্র নয়। ছাড়া পাওয়ার আশায় অফিসার নিরূপায় হয়ে আমাদের কাগজপত্রগুলো দেখতে চাইল। দেখতে দেখতে সে পাসপোর্ট-কাগজপত্রগুলো ডেস্কের একপাশে সরিয়ে রাখতে থাকে, কিছুক্ষণ পরে নিজে থেকেই ভিসা ফি চেয়ে নেয়। আগামীকাল সকাল ৯টায় আসতে বলে বিদায় দিয়ে অফিসার আবারও বলল, সে কিন্তু ভিসার নিশ্চয়তা দিচ্ছে না।

বাইরে বেরিয়ে আমরা সন্দিহান হয়ে পড়লাম। কেউ বলল, ভিসা দিয়ে দেবে। কেউ বলল, না দেবে না। টাকাপয়সা রেখেছে যেন বলতে পারে অনেক চেষ্টা করেছে। রাজিব বলল, আরে ভাই ছাড়েন তো। আগামীকাল দেখা যাক না ভগবান vs আল্লাহর মধ্যে কে জেতে।

পরদিন ২৮ তারিখ আরেফীন একাই গেল ভিসা আনতে, কারণ অফিসার একজনকেই যেতে বলেছে। যদি ভিসা হয়ে যায় তবে আজ সন্ধ্যায়ই রোম রওনা হব। আমরা অফিসে উৎকণ্ঠার মধ্যে আছি। ঠিক ১১টায় আরেফীন ফোন করে জানাল আমাদের সবারই ভিসা হয়ে গেছে। ৫ দিনের সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা চেয়েছিলাম। সবাই ছয়মাসের মাল্টিপল ভিসা পেয়েছি। আরেফীন আরো জানাল, অফিসার তাকে বলেছে যেদিন ভিসার জন্য পাসপোর্ট জমা দিয়েছি, সেদিন বিকাল ৫টায় ভিসা সিল দেয়া হয়। অর্থাৎ ৫ ঘন্টার মধ্যে ইটালির ভিসা পেলাম।

রাজিব বলল, কি মিয়া দেখলেন তো ভগবানের শক্তি। ভিসা পাইয়ে দিল। আপনার আল্লাহ হেরে গেল।

এবার শুরু হলো মেলা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ। এখন পর্যন্ত কোনো টাকা ওদের কাছ থেকে নেয়া হয়নি। আমরাই নিচ্ছিলাম না ভিসা জটিলতার জন্য। মেলা কমিটি বলল ঘন্টাখানেক পরে জানাবে। আমরা অপেক্ষা করছি, টাকা এ্যাডভান্স জমা হলেই প্লেনের টিকেট কাটা হবে। দুই ঘন্টার পরিবর্তে চার ঘন্টা/ ছয় ঘন্টা কেটে গেল। মেলা কমিটির সবার ফোন বন্ধ। অনেক কষ্টে আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধির মাধ্যমে জানা গেল আমাদের দেয়ার জন্য যে টাকাটা তারা যোগাড় করতে পারবে ভেবেছিল, সেটা সম্ভব হচ্ছে না। রোম থেকে বৈশাখী মেলা সরাসরি সম্প্রচার করার খায়েশ তাদের মিটে গেছে।

আমি রাজিবের কাছে গিয়ে বললাম, ওস্তাদের মাইর শেষ রাইতে। ভগবান ভিসা পাইয়ে দিয়েছে। কিন্তু ইটালি তো যাওয়া হচ্ছে না। আল্লাহ বন কইরা দিছে।
রাজিব - তাইলে আপনেই কন আল্লাহ কি কামটা ভালো করল?
আমি - কথায় আছে আল্লাহ যা করেন, ভালোর জন্যই করেন।

ক্যান্টিনে আরেক কলিগ এসব শুনে বলল, ভগবান-আল্লাহরে লইয়া কথা কইতাছেন, ঈশ্বরের সিটিতে যাইবেন তো হেরে খেলায় না লইয়া গ্যালারিতে বহাইয়া রাখছিলেন ক্যান? যান এবার পোপের সিটিতে।

কি করুম। আমাদের মধ্যে কেউ তো খ্রীষ্টান ছিল না ...

ফুটনোট : আমি ও রাজিব দুজনেই চরম ধর্ম-নাঅন্তপ্রাণ। তাই এ পোস্টে কেউ ধর্মের অবমাননা সংক্রান্ত কোনো গন্ধ পাইলে নাক চাপা দিয়া দূরে চইলা যাইয়েন। কোনো আওয়াজ যেন না হয় ....

3 মন্তব্য:

rahat_1128 said...

অই মিয়া ফাইযলামি করেন নাকি?

অলৌকিক হাসান said...

হ। ফাজলামো করি। এখন কি কল্লা নামায়া দিবেন?

FAS iT CENTER said...

ভাই আপনার লেখাটা ভালো লাগলো না। তবে অলৌকিক লাগিয়ে বেআদবি করলেন মনে হয়......