Monday 13 August 2007

গাড়ি যন্ত্রণা ... জীবন যন্ত্রণা ...

গত প্রায় এক মাস ধরে নিজেকে খুব বিক্ষিপ্ত লাগছে। তারও দুই মাস আগে নতুন বাসাবদল, তারও ১ মাস আগে অফিসের ঝামেলা। আর গেলমাসের গাড়ি যন্ত্রণায় পুরোপুরি পূর্ণতা পেল সবকিছু।

আমার একটা হোন্ডা সিভিক গাড়ি ছিল। পুরানো গাড়ি। ৫০০ পাউন্ড দিয়ে কিনেছিলাম। ইনস্যুরেন্স করাতে হলো ১০৭০ পাউন্ডে। বাসার সামনের রাস্তায় পার্কিং পারমিট করলাম ৭০ পাউন্ড দিয়ে। লন্ডন শহরে শাদা চামড়ারাই রাস্তা চিনে না, তাই আমি একটা জিপিএস কিনে ফেল্লাম ১৬০ পাউন্ড দিয়ে। পরদিন গেলাম ব্রিকলেন। বন্ধুর অফিসে আড্ডা মেরে বেরিয়ে এসে দেখি গাড়ি নাই। পুলিশে ফোন করে নিশ্চিত হলাম ভুল জায়গায় পার্কিং করার কারণে গাড়ি উঠিয়ে নিয়ে গেছে। কি আর করা। ৫০০ পাউন্ডের গাড়ি পরদিন সকালে ৪০০ পাউন্ড দিয়ে ছুটিয়ে নিয়ে এলাম। তার একসপ্তাহ পর আবারো গাড়ি ক্ল্যাম্পড হলো। এবার দিলাম ১০০ পাউন্ড। গাড়ির রোডট্যাক্স করাতে হলো। গেলো ১৮০ পাউন্ড। MOT (আমাদের দেশে ফিটনেস) করাতে গেলাম। বের হতে থাকল গাড়ির যাবতীয় প্রবলেম। ভাবলাম এটাই শেষ খরচ এই গাড়ির পিছে। ওয়ার্কশপ চার্জসহ দিলাম ৩৫০ পাউন্ড। বন্ধু নবনীতার বাসায় গাড়ি গেল বিকল হয়ে, স্টার্ট নেয় না। ৮০ পাউন্ডে রিকভারী ভ্যান ভাড়া করে ছুটলাম গাড়ি আনতে। গ্যারেজে নিয়ে গাড়ি ঠিক করাতে লাগল তিনদিন। ১০০ পাউন্ড বিল নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার আমাকে একটা স্ক্রু ধরিয়ে দিয়ে বলল, এই গাড়ির স্টার্ট আবারও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তখন এই স্ক্রু দিয়ে ব্যাটারিটা টাইট দিতে হবে।

আমি স্ক্রু হাতে নিয়ে গাড়ি চালাই। আর গাড়ি থাকলে যা হয়। বন্ধুর বন্ধুর বাবা-মাকে আনতে এয়ারপোর্ট যাই, নিজের বন্ধুকে আনতে যাই। কলিগের ঘরের বাজার করে দেই।

শেষবার থার্ড আই বাংলাদেশ যাবে বলে তাকে হিথরো পৌঁছে দিয়ে এলাম। যাবার বেলায় খুব ভালোভাবেই গেলাম। ফিরে আসার পথে দেখি ড্যাশবোর্ডে ইঞ্জিন ওয়েল বাটনটা রেড-ব্লিকিং করছে। জানে পানি নাই হয়ে গেল। এই মটরওয়েতে গাড়ি বন্ধ হয়ে গেলে কি করব! তাড়াতাড়ি চালাতেও পারছি না। বিশাল জ্যাম। সবধর্মের যাবতীয় গুরুদের নাম জপতে শুরু করলাম। তাদের দোয়ায় মটরওয়ে ছেড়ে আর্লস কোট নামের একটা জায়গায় এসে গাড়িটা ঢেকুর তুলল। স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাবার আশংকার তাড়াতাড়ি একটা গলিতে ঢুকে পার্ক করামাত্রই অক্কা পেল আমার গাড়ি।

আশেপাশে কোথাও গ্যারেজ নেই। গাড়ি লক করে আমি রাস্তায় উদভ্রান্তের মতো হাঁটি। কোথাও কোনো গ্যারেজ কিংবা মটরশপ নেই। অফিসে ফোন করে বললাম আজকে আসতে পারব না। প্রায় ২০ মিনিট হেঁটে, টিউবে চড়ে তবে একটা মটর শপে ১০ পাউন্ডে ইঞ্জিন অয়েল কিনতে পেলাম।

গাড়ির কাছে ফিরে এসে পুরো বোতলটাই ঢেলে দিলাম। কিন্তু আমি যতোই ঢালি ততোই খালি হয়ে যায়। কি ব্যাপার! পায়ে যেন কি চটচট করে লাগছে। খেয়াল করে দেখি ইঞ্জিন অয়েলে রাস্তা ভেসে গেছে। আমার গাড়ির তলা গেছে ফুটো হয়ে। মেজাজ গেল সপ্তমে চড়ে। মাত্র দুইদিন আগে কেনা ১৭০ পাউন্ডে কেনা সিডিটা খুলে নিলাম - সিদ্ধান্ত নিলাম এই গাড়ি এখানেই ফেলে দিব। সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে, গাড়ি দিলাম স্ক্র্যাপ করে।

ড্রাইভিং পাস করেছি ৫ বার পরীক্ষা দিয়ে। গাড়ি ভাড়া ও পরীক্ষার ফি যাবত প্রতি পরীক্ষায় লাগত ১০০ পাউন্ড। ঢাকার গাড়িচালানোবিদ্যা দিয়ে এখানে কুলায় না, তাই ড্রাইভিং পরীক্ষার আগে ২০ টা লেসন নিয়েছি যার প্রতিটির ফি ১৮ পাউন্ড। এর আগে থিওরী পাস করেছি ৪৫ পাউন্ড দিয়ে।

আমার সমস্ত সেভিংস শেষ। ক্রেডিট কার্ডের বিল আছে ১৪০০ পাউন্ড। প্রতিমাসে হুদাই ২৫-৪০ পাউন্ড এক্সট্রা যোগ হতে থাকে। বাসা ভাড়া ২৫০ পাউন্ড, দুইটা ফোন মিলে ৭০ পাউন্ড, মুভি ক্লাবমেম্বারশীপ ১৫ পাউন্ড, ওয়েস্টার কার্ড বিল ৫৭ পাউন্ড। আর মাঝে মাঝে ক্লাবিং আর পাবের বিল তো আছেই। গতকালই উড়িয়ে দিলাম ৪০ পাউন্ড। আর হ্যা, জীবনধারণের জন্য খাওয়াদাওয়ার হিসাব তো দিলামই না।

এতোসবকিছুর মধ্যেও গতকাল একটা গাড়ি পছন্দ হয়েছে। ভক্সহোল আস্ট্রা জিএলএস (৯৯) ১.৮। ব্যাটা চাচ্ছে ১৬০০ পাউন্ড। আমি ১২০০ বলে থম মেরে আছি। দেখা যাক কি হয়। গাড়িটা যদি কিনি তবে ধারেই কিনতে হবে।

লোনের সমুদ্রে ডুবে আছি অথচ ফুটানি কমে না। কি যে করুম ...

2 মন্তব্য:

Anonymous said...

ভাল লিখেছিস। তবে লেখার মধা আরেক জনের লিখার মিল পেলাম। নাও হতে পারে। তবে সাদা চামরা কাল চামরা বলে
কিছু নাই। অনেক কঠিন বাংলা লিখা।কিনতু চেস্তা করতেসি।


wind of change

Anonymous said...

হাসান , পাউন্ডে পাউন্ডে ভরে উঠুক জীবন । লন্ডন এলে তোমার গাড়িটা ধার নিতে হবে । যাতে তোমার খরচ কমে । হি হি হি