Monday 26 November 2007

জনমত জরিপ @ প্রারম্ভিক

একটা এনজিওতে কমপিউটার আর ইংরেজি শিখতাম। সাল ১৯৯৫। তাতে ইংরেজি তো কিছুই শিখিনি বরং কমপিউটারে গেমস খেলতে খেলতে পুরো কীবোর্ড মুখস্থ হয়ে গেল। বাংলা আর ইংরেজি টাইপিংয়ে এতো দক্ষ হয়ে গেলাম যে ১৯৯৭ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত ফোন নম্বর, বাড়ির ঠিকানা, ছোটখাট চিরকুট ছাড়া আর কোনো কিছুই কলম দিয়ে কাগজে লিখিনি। সেসব অন্য কথা। তো আমার এই টাইপিং স্পিডের কারণে কোর্সের শেষে আমি ওই এনজিওতে টাইপিস্টের চাকরি পেয়ে গেলাম। যেহেতু এনজিও, আদর করে বলা হলো অফিস এক্সিকিউটিভ।

তবে আজকের পোস্টের বিষয় অন্য। জনমত জরিপ। কোর্সের শেষের দিকে আমাদের বলা হলো জরিপ করতে হবে সারাদেশব্যাপী। তারই রিহার্সাল হিসেবে আমরা ঢাকা শহরে একটা সার্ভে সম্পন্ন করলাম। তখন ১৯৯৬ সাল। সারাদেশ নির্বাচনমুখী। রাজনৈতিক দলগুলো নমিনেশন দিয়ে দিয়েছে। তো আমাদের এই নির্বাচনী জরিপ করতে হবে। সে মোতাবেক, আমাদের প্রস্তুতি হিসেবে কিছু ছোটখাট ওয়ার্কশপও করানো হলো। আমরা যারা নতুন তারা খুব গম্ভীর হয়ে জরিপ সংক্রান্ত মারপ্যাঁচগুলো শেখার চেষ্টা করে গেলাম। আমি খুব কষ্ট করে কয়েকটা জিনিস মনে রাখার চেষ্টা করলাম। যেমন,

0. বয়সের ক্ষেত্রে যদি প্রথমজন ১৮-২৫ হয়, তবে দ্বিতীয়জনের বয়সশ্রণী যেন ২৬-৩৫ হয়।
0. পেশার ক্ষেত্রেও তাই, পরপর একই পেশার কাউকেই যেন ইন্টারভিউ না নেয়া হয়।
0. গ্রামে যেন ডান পাশের এক বাড়িতে ইন্টারভিউ সেরে তার ৩/৪ টা বাড়ি পর বাম পাশের কোনো বাড়ির কারো ইন্টারভিউ নিই।
0. বাজারে, চা-র দোকানে ইত্যাদি জমায়েতপূর্ণ জায়গায় যেন একটাই ইন্টারভিউ নেয়া হয়
0. প্রশ্ন বলার পর তার কখগঘ উত্তরগুলোর কোনোটাতেই যেন আলাদাভাবে জোর না দেয়া হয়।
0. কেউ সময় দিতে চাইবে না। প্রথমে এড়িয়ে যেতে চাইবে, সেটা যেন নিজ দক্ষতায় ম্যানেজ করে নিই।

যাহোক, আরো কি কি সব জানি শিখিয়েছিল, আমার কিছুই মনে নেই। তবে যে বিষয়টা আমি খুব তাড়াতাড়ি বুঝে নিয়েছি তা হলো আমাদের হাতখরচ কতো দেয়া হবে। আর অতি উৎসুক হয়ে ছিলাম এটা জেনে যে আমাদের সঙ্গে মেয়েরাও যাবে। জীবনে এই প্রথম মেয়েদের সঙ্গে ঢাকার বাইরে যাব। এর আগে শুধু ফারহানাকে মাঝে মাঝে বুড়িগঙ্গার ওপারে পৌঁছে দিতাম অথবা সদরঘাট থেকে গুলিস্তান আসার পয়সা থাকত না দেখে ইতির সঙ্গে সিদ্দিকবাজার পর্যন্ত রিক্সায় আসতাম।

এবার আমাদের জিজ্ঞেস করা হলো কে কোন জেলায় যাব। সারা বাংলাদেশের ৩০০টি আসনের মধ্যে মার্জিনাল আসনগুলো বেছে নেয়া হয়েছিল। অর্থাৎ যে আসনগুলোর মাঝে বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর মধ্যে ২০০-৩০০০ ভোটের ব্যবধান রয়েছে। সে মোতাবেক যে কয়টি আসন বা জেলা সিলেক্ট করা হয়েছে তারমধ্যে রংপুর হলো সবচেয়ে দূরবর্তী জেলা। আমি চট করে সেটাই বেছে নিলাম। ততোদিনে আমি চাকরি করি বিধায় আমার একটা আলাদা দাপট তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আমাকে দলনেতাও নির্বাচন করা হলো। অথচ তখন পর্যন্ত জানি না আমার গ্রুপের অন্য সদস্যরা কারা? আমি জানতে না পেরে একাউন্টসে গিয়ে টাকা পয়সা তুলে রংপুর যাওয়ার ৪টা টিকেট কিনে ফেলি।

এই এনজিও-র একেবারে গোড়ার দিকে আরেকটা সার্ভে হয় সেখানে জাহাঙ্গীরনগরের ছেলেমেয়েরা অংশ নিয়েছিল। আমরা কোর্সে ছাত্রছাত্রী ছিলাম ৪০ জনের মতো। তাই এবারও জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্রছাত্রীদের ডাকা হলো। আমার সঙ্গে পরিচয় হলো জাবি-র এক ছাত্রের সঙ্গে। অফিস থেকে বলা হলো, সেই আমার গ্রুপের বাকি ৩ জনকে ম্যানেজ করে দেবে। আমি সেই ছাত্রের (নাম ভুলে গেছি) কাছে জানতে চাইলাম আমার গ্রুপের অন্য সদস্যদের ব্যাপারে। সে আমাকে পাল্টা প্রশ্ন করল, আপনি আজ রাত্রে রওনা দেবেন না? টিকেট কেটেছেন?

আমি হ্যা বলার সঙ্গে সঙ্গে বলল, তাহলে আমাকে তিনটা টিকেট দিয়ে দিন। আপনার গ্রুপের বাকিরা প্রান্তিক থেকে উঠবে। আপনি বাস ড্রাইভারকে বলে রাখবেন জাহাঙ্গীরনগরের প্রান্তিকে যেন বাস থামায়, লোক উঠবে। আমি নলা সব বুঝে তার হাতে তিনটা টিকেট তুলে দিলাম।

কোর্সমেটরা কে কোথায় কখন যাচ্ছে, তাদের সদস্য কারা এসব খোঁজ নিতে নিতে দেখি, হায় আল্লাহ, অনেকের গ্রুপে দেখি কোনো মেয়েই নেই। তবে যে বলল, প্রতি গ্রুপেই ১জন হলেও মেয়ে থাকবে। আমার গ্রুপেও কি তাহলে ...
____________________________

রাত ৯টায় বাস ছাড়ল গাবতলী থেকে। আমি বাসের একবারে সামনের চারটা টিকেট কেটেছিলাম। প্রায় আধাঘন্টা পর বাস প্রান্তিকে থামতেই একটা ছেলে ও দুইটা মেয়ে উঠে এলো। আমি বসেছিলাম ড্রাইভারের পিছনে জানালার সিট ছেড়ে। দেখলাম, একটা ছেলে আর একটা মেয়ে গেটের কাছের সিটদুটোয় বসে গেল। আর অন্য মেয়েটা সুড়সুড় করে আমার পাশে এসে বসল। ধারণা করলাম টিকেটের গায়ে সিট নাম্বার দেখেই তারা ধারণা করে নিয়েছে। ছেলেটা সিটে সুস্থির হয়ে বসে বলল, আমার নাম পনির, আর ও হচ্ছে মীরা।
আমার পাশের মেয়েটা বলল, আমার নাম নীলু।

আমি দাঁত কেলিয়ে সবাইকে সম্ভাষণ জানালাম। জরিপের কাজটা সম্পর্কে একটু ধারণা দিতে চাইলাম। ছেলেটা বলে উঠল, ওসব আমরা অনেক করেছি। আপনি চাইলে সকালে বুঝিয়ে দিয়েন। এরপর হালকা কিছু কথাবার্তা বলে পনির আর মীরা দুজনেই ঘুমানোর আয়োজন শুরু করল। বাসের সুপারভাইজার তখন সবাইকে ফান্টা আর স্যান্ডউইচ দিচ্ছিল। আমি আর নীলু ফান্টা নিলাম শুধু। নীলুর সঙ্গে কথা বলা শুরু করলাম। কিন্তু বেশিদূর এগোনো গেল না। জড়তা রয়েই গেল।
____________________________

বাস ছুটছে আরিচার দিকে। রাত তেমন বেশি হয়নি। অথচ আশ্চর্য পুরো বাসটিই ঘুমিয়ে গেছে। পনির আর মীরা তো সেই কবেই! পাশ ফিরে দেখি নীলুও চোখ মুদে আছে। আমি ফান্টায় চুমুক দিই। শীত শীত করে উঠে। হালকা অন্ধকারে বাসের গর্জন আর বাতাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুই নেই। আরেকবার ফান্টায় চুমুক দেই। টুং করে শব্দ হতেই খেয়াল করে দেখি নীলুর পায়ের কাছে আধখাওয়া ফান্টার বোতল। একটু দুলছে, আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি বোতলটার দিকে। দুলে উঠে পড়ে যেতে গেলেই যেন খপ করে ধরে ফেলতে পারি সেলক্ষ্যে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি, তাকিয়ে থাকি, তাকিয়েই থাকি ...

পরদিন সকালে রংপুর বাসস্ট্যান্ডে আমার ঘুম ভাঙ্গে।

1 মন্তব্য:

Ahir said...

Nice Article sir, Keep Going on... I am really impressed by read this. Thanks for sharing with us.. Happy Independence Day India WhatsApp SMS in English, Latest Government Jobs. List of Top 10 Free Classified Ad Posting Sites of India