নতুন, যাদের ফিল্মমেকিং সম্পর্কে আগ্রহ আছে তাদের জন্যই এ ধারাবাহিক পোস্ট। পুরোনো, যারা ইতিমধ্যেই ফিল্ম কিংবা ভিডিও মিডিয়ায় কাজ করছেন তাদের জন্য এ পোস্টে কিছুই নেই। তবে নতুনদের উদ্দেশ্যে যে কোনো পরামর্শ তারা দিতে পারেন।
একটা সিনেমা বানাতে চাই - ০১ ~~ একটা সিনেমা বানাতে চাই - ০২
*** *** ***
একটি ফিল্ম তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়। ধাপগুলো হচ্ছে -
১. প্রি-প্রডাকশন (পূর্ব প্রস্তুতি)
২. প্রডাকশন (নির্মাণ সময়)
৩. পোস্ট-প্রডাকশন (নির্মাণ পরবর্তী সময়)
আপনার একটি গল্প আছে এবং ফিল্ম বানানোর জন্য টাকাপয়সাও আছে। তাহলে এবার দেখা যাক কোন ধাপে কি কি কাজগুলো সম্পন্ন করবেন।
প্রি-প্রডাকশন
এ ধাপটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অধিকাংশ পরিকল্পনা কিংবা সিদ্ধান্ত এ ধাপেই নিতে হয়। যার প্রি-প্রডাকশন যতো শক্তিশালী হয়, তার প্রডাকশন ততো ভালো হয় এবং তার ফলে পোস্ট প্রডাকশনে প্রচুর সময় বেঁচে যায়। এজন্য খেয়াল করবেন বড় বড় হিট কিংবা বিখ্যাত মুভিগুলোর প্রি-প্রডাকশনে সময় বেশি ব্যয় হয়। পত্রপত্রিকাতেও ফিল্মের প্রি-প্রডাকশনের খবরগুলোও বেশি ছাপা হয়। বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলতে সত্যজিতের ১ বছর আগেই গাছ রোপণ, টাইটানিক নিয়ে গবেষণা, কারিনা কাপুর কিংবা হালের রাণী মুখার্জির সাইজ জিরো হওয়া, টিচার রেখে ক্যাটরিনার হিন্দি ভাষা শেখা - এসবই প্রি-প্রডাকশনের অন্তর্ভুক্ত। যাহোক, নিচের ক্রমগুলো দেখলেই বোঝা যাবে প্রি-প্রডাকশনের কাজ কি।
১. স্ক্রিপ্ট লেখা ও গবেষণা
২. কলাকুশলী নির্বাচন
৩. কলাকুশলীদের সঙ্গে মিটিং
৪. প্রডাকশন ক্রু নির্বাচন (বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে মূলত ক্যামেরাম্যান, এডিটর, এ্যানিমেটর)
৫. মিউজিক ডিরেক্টর নির্বাচন ও মিটিং
৬. লোকেশন পরিদর্শন ও নির্বাচন
৭. শুটিং শিডিউল
৮. স্ক্রিপ্ট কারেকশন
৯. কস্টিউম এন্ড প্রপস ম্যানেজমেন্ট
১০. ক্রুদের সঙ্গে মিটিং
১১. যাতায়াত, খাওয়া, থাকা ম্যানেজমেন্ট
মূলত এ কয়টা কাজ। তবে সেট নির্মাণ ছাড়াও পাত্রপাত্রীদের চরিত্রের প্রয়োজনে বিশেষ কোনো ট্রেনিং প্রি-প্রডাকশনের আওতায় পড়ে।
প্রডাকশন
প্রি-প্রডাকশনের প্ল্যান অনুযায়ী প্রতিদিন শুটিং কিংবা ফিল্মিং করে যাওয়াটাই প্রডাকশন ধাপের মূল কাজ। প্রি-প্রডাকশনে জড়ো হওয়া সকল নির্মাণশিল্পী, কলাকুশলী তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব এসময় পালন করে যান। প্রডাকশন টিমে যারা যারা কাজ করেন তাদের লিস্ট দেয়া হলো নিচে (বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে, স্টান্টম্যানদের বাদ দিয়ে)
১. পরিচালক
২. ক্যামেরাম্যান
৩. লাইট ক্রু
৪. প্রডাকশন ম্যানেজার
৫. মেকাপম্যান
৬. স্পেশাল ক্রু (ট্রলি, জিবআর্ম, ক্রেণ, রেইনমেশিন, ব্লোয়ারমেশিন ইত্যাদি)
৭. এস্টিট্যান্টস (পরিচালনা, চিত্রগ্রহণ, প্রডাকশন, মেকাপ ইত্যাদি)
৮. কলাকুশলী
প্রি প্রডাকশনের শুটিং শিডিউল অনুযায়ীই এসময় কাজ চলতে থাকে। পরিস্থিতি অনুযায়ী মাঝে মাঝে কিছু সিদ্ধান্ত বদল হতে পারে। প্রতিদিনের নির্ধারিত শুটিং শেষে ছোট একটা মিটিং হয়ে থাকে পরবর্তী দিনের শিডিউল নিয়ে।
পোস্ট প্রডাকশন
প্রি-প্রডাকশনের প্ল্যানিং অনুযায়ী প্রডাকশনের কাজ শেষ হওয়ার পর শুরু হয় পোস্ট প্রডাকশন। ধারণা করতে পারছেন এ সময়টার মূল কাজ 'সম্পাদনা'। প্রি-প্রডাকশন শক্তিশালী হলে, প্রডাকশনের সময় সকল কাজ সুষ্ঠুমতে সম্পন্ন হলে পোস্ট প্রডাকশন দারুণ গতিময় হয়। যাহোক পোস্ট প্রডাকশনের কাজগুলো হলো -
১. সম্পাদনা
২. প্যাচওয়ার্ক (রি-শুটিং ইত্যাদি)
৩. নেপথ্য কণ্ঠ কিংবা ডাবিং
৪. এনিমেশন (টাইটেল কিংবা স্পেশাল কোনো এফেক্টের জন্য)
৫. মিউজিক ডিরেক্টরের সঙ্গে মিটিং ও আবহ তৈরি
৬. কালার কারেকশন
৭. মাস্টার (সম্প্রচারের উপযোগী) তৈরি করা।
মোটামুটি এ হলো একটি ফিল্ম কিংবা নাটক নির্মাণের তিনটি ধাপ। বড় পর্দার (১৬ মিলি, ৩৫ মিলি, ৭০ মিলি) জন্য এ ধাপগুলোর কোনো কোনোটিতে কাজের ধরণ ও ক্রুদের পরিবর্তন হয়। তবে ডিজিটাল ফিল্মমেকিংয়ের জন্য প্রয়োজনীয় সকল বিষয়গুলো মোটামুটি উল্লেখ করেছি (ভুল হলে মনে করিয়ে দিয়েন)। আবারও বলছি নির্মাণে প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি হলো প্রি-প্রডাকশন। সবচেয়ে জোর দেয়া হয় ওই ধাপটির উপরই। আগামী পর্বগুলোতে প্রত্যেকটি ধাপের কাজগুলো সম্পর্কে আলাদা আলাদ পোস্ট দেয়ার ইচ্ছা আছে।
আপাতত এটুকুই। আমারফিল্ম.কম এ আপনার ফিল্ম দেখার প্রত্যাশায় রইলাম।
Saturday, 3 October 2009
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 মন্তব্য:
Post a Comment