মুভি রিভিউ লেখাটা বেশ কঠিন বলে জানি। এজন্যে কখনোই এ বিষয়ে চেষ্টা করিনি। মাত্র একবারই এপথে পা মাড়িয়েছিলাম। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ব্লগে বাংলা, ইংরেজি, হিন্দিসহ বিভিন্ন মুভির রিভিউ পড়ে ভাবলাম মুভি রিভিউ কীভাবে লেখে? রিভিউতে কী কী থাকা উচিত? রিভিউতে কি ছবির বিষয়বস্তু বলে দেব? এতে ছবির দেখার আগ্রহ দর্শক/পাঠকদের কমে যাবে কিনা? ছবি ভালো না লাগলে কতোটুকু সমালোচনা করব?
সমালোচকরা চিত্রনির্মাতা বা পরিচালকদের পরিচিতও হয়ে থাকেন। সমালোচনা লেখার সময় এ পরিচিতির বিষয়টি কতোটুকু বিব্রত করে? ছবির পাত্রপাত্রী যদি সমালোচকের পছন্দ না হয় তবে কতোটুকু নির্মোহ থাকা যায়? ছবির ট্যাগিং করে দেব - ট্র্যাজেডি, কমেডি, সামাজিক, আর্টফিল্ম (!) ইত্যাদি নামে? ছবির রিভিউ লেখার সময় ইতিহাস সম্পর্কে কতোটুকু জানতে হবে?
এরকম নানা হাবিজাবি অনেক কিছুই মুভি রিভিউ লিখতে গিয়ে আমাকে ভাবিয়েছে। ফেসবুকে টোকা, মেসেজ, ইমেইল ইত্যাদির মাধ্যমে বাংলাদেশের একজন প্রতিভাবান নাট্যপরিচালক/ ডিজিটাল সিনেমা নির্মাতাকে অনুরোধ করেছিলাম এ বিষয়ে একটি লেখা দিতে। ইচ্ছে ছিল আমারফিল্ম.কম এর উদ্বোধনী পাতায় তার লেখাটি থাকবে। তিনি আমার কোনো মাধ্যমেরই জবাব দেননি। তাই আমি নিজেই গুগল স্যারকে গুঁতিয়ে চেষ্টা করলাম - কীভাবে মুভি রিভিউ লিখতে হয়।
যে ছবির রিভিউ লিখবেন, প্রথমেই জেনে নিন ছবিটি সম্পর্কে
রিভিউ লেখার জন্য প্রথমেই একটি ছবিকে বেছে নিতে হবে। হতে পারে ছবিটি আপনি দেখে নিয়েছেন অথবা পত্রপত্রিকায় প্রচার, নিজের আগ্রহ অথবা অন্য যে কোনো কারণেই হোক ছবিটি আপনি দেখবেন বলে ঠিক করেছেন। এবার জানতে শুরু করুন ছবিটি সম্পর্কে। এ 'জানা' বলতে বোঝানো হচ্ছে ছবিটি নির্মাণের পেছনের কথা। এছাড়াও আর যেসব বিষয়গুলো জানা দরকার হতে পারে,
= ঠিক কী উদ্দেশ্যে এর প্রযোজক/ পরিচালক ছবিটি নির্মাণে উৎসাহী হলেন।
= ছবির পাত্রপাত্রী কারা এবং কেন তারা নির্বাচিত হলেন ছবিটিতে অভিনয়ের জন্যও সেটাও যতোদূর সম্ভব জেনে নেওয়া ভালো।
= ছবির পুরো টিম এর আগে কোনো ছবি বানিয়েছিল কীনা এবং সেই ছবির সাফল্য/ ব্যর্থতা কেমন ছিল।
= ছবিটি কি ইতিহাসনির্ভর অথবা কোনো জনপ্রিয় বই থেকে অনুপ্রাণিত
= পূর্বে নির্মিত কোনো ছবির সিক্যুয়েল কিনা
উপরের বিষয়গুলো নিয়ে একটু জানাশোনা থাকলে ছবির রিভিউর কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।
একটিমাত্র বাক্যে ছবিটির সমালোচনা করা যায়?
সমালোচনার নানা ঢং আছে। আপনার দেখা ছবিটিকে আপনি 'ভালো', 'সুন্দর', '৫ এর ভেতর ৩ কিংবা ৪', 'ঠিকাছে' নানাভাবে রেটিং করতে পারেন। এগুলো মূলত দর্শকরা করে থাকেন। কিন্তু আপনি যখন সমালোচনা লিখবেন তখন আরো একটু বিস্তারিতভাবে এগোতে হবে। প্রথমে একটি বাক্যে ছবিটির সমালোচনা করুন। উদাহরণ হিসেবে কোনো কমেডি ছবির ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে, হাস্যরসাত্মক ছবিটিতে খুবই স্থূল কিছু বিষয় ব্যবহার করা হয়েছে যা বিরক্তির উদ্রেক ঘটিয়েছে। অথবা কোনো হরর ছবির ক্ষেত্রে বলতে পারেন, ছবিটির শেষ পর্যন্ত ভয়ের শিহরণ চালু ছিল এবং একেবারে শেষে বোঝা গেল কি ঘটেছে।
তার মানে রিভিউ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রথমেই একটি বাক্যে ছবিটির সমালোচনা শুরু করে দেওয়া যায়। এরপরে আপনার এই ভাবনার পেছনের কারণগুলো বলতে শুরু করবেন।
মূল সমালোচনার শুরুটা করুন দারুণভাবে
কোনো ছবি সম্পর্কে সমালোচনা লিখতে গিয়ে উপরের উল্লেখিত দুইটি প্যারার পরেই শুরু হয়ে যায় মূল পর্ব। এখন দরকার পাঠককে ধরে রাখা। যার জন্য এখানে পাঠককে আরো আগ্রহী করে তোলার জন্য দরকার চিত্তাকর্ষক বুনন, লেখনী। এক্ষেত্রে শুরু করতে পারেন ছবির সবচেয়ে জনপ্রিয় কিংবা সমালোচিত কোনো সংলাপকে কেন্দ্র করে। বর্ণনা করুন ওই সংলাপটি কেন ছবির মূল আকর্ষণ ছিল বা ছবিতে ওই সংলাপের আবেদন কী ছিল। পাত্রপাত্রীরা সংলাপ আওড়ালেন কেমন।
এবার সংক্ষেপে শোনা যাক ছবির কাহিনি
এ পর্বে ছবির কাহিনি সম্পর্কে বলা যেতে পারে। কাহিনির বর্ণনা হওয়া উচিত সংক্ষেপ। পুরোপুরি বলে দিলে ছবির মজাটা নষ্ট হয়ে যাবে। তবে পাঠক যেন উৎসাহী হয়ে ছবিটি দেখতে যায় সে দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। এ বিষয়টি একটু রিস্কি। কেননা আপনার সমালোচনা কিংবা ছবির কাহিনিসংক্ষেপ পড়ে পাঠক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তিনি পয়সা খরচ করে ছবিটি দেখবেন কিনা। তবে পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে সমালোচনা ছেড়ে আপনি ছবির মার্কেটিং করতে বসে গেলেন কিনা। হ্যা কখনোই ছবির শেষটুকু বলে ফেলবেন না। সেটা রূপালী পর্দায় দেখার জন্য ছেড়ে দিন দর্শকদের জন্য।
এবার বলে দিন ছবি সম্পর্কে আপনার ভাবনা
এতোক্ষণ ছবিটি সম্পর্কে যেসব টুকটাক মন্তব্য করেছিলেন এ পর্যায়ে এসে সেগুলো বিস্তারিতভাবে বলতে শুরু করুন। ছবির পাত্রপাত্রী কেমন অভিনয় করলেন, লেখক/ চিত্রনাট্যকার কতোটুকু সফল হয়েছেন, পরিচালক ছবির সকল ক্ষেত্রে সমন্বয়ের কাজটি কেমন করলেন, কোনো মেসেজ কি দিতে পারলেন, ছবির টার্গেট অডিয়েন্স কারা, আপনার চেনাজানা কারো ছবি সম্পর্কে ভাবনা ইত্যাদি লিখতে থাকুন এ স্থানে। ছবির বিশেষ কোনো দৃশ্য সম্পর্কে আপনার একান্ত ভাবনাও এখানে লিখতে পারেন।
মনে রাখবেন সাধারণ দর্শকরা ছবির কারিগরি দিক সম্পর্কে তেমন একটা জানেন না। তাই কারিগরি দিক সম্পর্কে বিশদ লিখে তাদের ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটাবেন না। কারিগরি দিক সম্পর্কে হালকাভাবে বলে গেলেই হবে।
ভারি করে তুলবেন না যেন আপনার লেখাটি
কঠিন কঠিন শব্দ ব্যবহার করে সমালোচনা ভারি করে তুলবেন না। হৃদয়গ্রাহী, প্রাঞ্জল, ঝরঝরে ভাষায় সহজ করে লিখুন। মনে রাখতে হবে সকল শ্রেণির পাঠকদের জন্যই আপনার সমালোচনা। লেখায় মজা আনার জন্য কৌতুক, উপমার ব্যবহার করতে পারেন।
সৎ থাকুন, নির্মোহ থাকুন
ছবির পরিচালক থেকে শুরু করে পাত্রপাত্রী পুরো টিমের অনেকেই আপনার পছন্দের কেউ নাও হতে পারেন। তাই বলে সমালোচনার নামে তাদের উপর একহাত দেখে নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। এটা বুমেরাং হয়ে আপনার কাছেই ফিরে আসতে পারে। ছবির ট্যাগিং সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন। কমেডি ছবি হলে তাতে কেন ট্র্যাজেডি দেখানো হলো না সে আক্ষেপ করবেন না। ফ্যান্টাসী মুভি হলে তাতে বাস্তবের ছোঁয়া কেন নাই তা নিয়ে তর্ক জুড়ে দেবেন না। ছবির বিষয়বস্তু নিয়ে যতোটুকু নির্মোহ নিরপেক্ষ থাকা যায় ততোই মানসম্পন্ন হবে একটি ছবির সমালোচনা।
পরিশিষ্ট
এই পোস্টটি ইন্টারনেট থেকে চোথা মেরে এবং এতে নিজের কিছুর ভাবনা মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুরো লেখাটি পড়ার পর আমার মনে হয়েছে এই ফরম্যাটের বাইরে গিয়েও ছবির সমালোচনা লেখা যায়। আর এই ফরম্যাটই যদি 'নিশ্চিত অনুসরণীয়' হতো তাহলে পৃথিবীর সব সমালোচনা একই টাইপের হয়ে যায়। সুতরাং যারা 'মুভি রিভিউ' বা 'চিত্রসমালোচনা' লিখতে চান তারা তাদের ইচ্ছেমতোই লিখুক।
পছন্দের কয়েকটি লেখার লিংক দিলাম। আগ্রহীরা পড়ে দেখতে পারেন।
চলচ্চিত্র চালচিত্র: :মনপুরা’তে মন পুড়লো কি? -হিমালয়-
‘অশ্লীলতা’-বিরোধী প্রপাগান্ডা ও ‘সুস্থ’ চলচ্চিত্রের যুগে ঢাকাই সিনেমা - মোহাম্মদ আজম
আর্ট, রিয়ালিটি আর ডিজিটালের চক্করে বাংলা সিনেমা - রাজীব আহমেদ
নতুন সিনেমা: নির্মাণ ও প্রদর্শন সংক্রান্ত প্রস্তাবনা - নূরুল আলম আতিক
থার্ড পারসন সিংগুলার নাম্বার : ‘সে’ — নারী, পুরুষের হাওয়াই মিঠাই - ফারজানা ববি
= ছবি কৃতজ্ঞতা : গুগল স্যার =
Thursday, 18 February 2010
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
1 মন্তব্য:
আমরা চলছিত্র বিষয়ক একটি ইবুক করতে চাচ্ছি।
সেখানে আপনার এ লেখাটি নিতে চাচ্ছি।
আশা করি আপনার অনুমতি আমরা পাবো।
Post a Comment