Wednesday, 15 September 2010

সারাংশ ০১

রিয়েলিটি আর রোমান্টিসিজম পাশাপাশি চালিয়ে নেওয়া অনেক জটিল ব্যাপার। সংসারে তেল-নুন-পেঁয়াজের হিসেব ঢুকে গেলে ভালোবাসা উড়ে যায় - এমন প্রচলিত প্রবাদের পাশাপাশি এটাও সত্য তেল-নুনটার দরকার আছে।

তাকানো যাক, অনিন্দ্য আর আভার সংসারের দিকে। কিছুদিন পরেই বিয়ের এক বছর পূর্তি হবে।

অনিন্দ্য - বাস্তববাদী একটি তরুণ। অফিসে যন্ত্রের মতো কাজ করে। তবে বাস্তববাদী হলেও তার মধ্যে রোমান্টিকতা একদমই কম নয়। ঠিক প্রয়োজনের মুহূর্তেই সে রোমান্টিক - ১০০%।

অপরদিকে আভা - সারাক্ষণই বনলতা সেন কিংবা হৈমন্তী সেজে বসে আছে। স্বামীর সোহাগী হয়ে জীবন কাটাতে চায়। প্রিয়-র চোখে দুনিয়া দেখতে কিংবা সারারাত জোছনা খেয়ে থাকতে চায় - কী দরকার কোমর বেঁধে রান্না করা, হাত মাখিয়ে ভাত খাওয়া।


অফিসের প্রজেক্ট নিয়ে ব্যস্ত অনিন্দ্য রাতে ঘরে ফিরে খাবার পায় না। প্রেমময়ী আভা যে সারাদিন তার কথা ভাবতে ভাবতে দিন পার করেছে। রান্না করার ফুরসত কই? এবারের শীতে অনিন্দ্যকে একটি সোয়েটার বুনে দিতে হবে। কিন্তু ... কিন্তু ... কোন রঙে যে তাকে মানায় ...

খিদের জ্বালায় অনিন্দ্য মাঝরাতে লুকিয়ে দুই পিস বিস্কিট খুঁজেপেতে খেয়ে নেয়। আভা তখন ঘুমিয়ে, হয়তো অনিন্দ্যকেই স্বপ্ন দেখছে।

স্বপ্নে বুঁদ হয়ে থাকা আভা মাঝে মাঝে জেগে উঠে কিন্তু। এই তো ক’দিন আগেই মাঝরাতে হুট করে জেগে উঠে জানাল, সে অনিন্দ্যর পা থেকে মোজার গন্ধ পাচ্ছে। তারও ক’দিন আগে বুয়ার সঙ্গে একচোট হয়ে গেল সোফায় ধুলো লেগে থাকা নিয়ে। অতিরিক্ত পরিষ্কার থাকার আভার এই বাতিকে অনিন্দ্য মাঝে মাঝে হাঁপিয়ে যায়।

এছাড়াও অনিন্দ্যর অফিসের যাওয়ার সময় মানিব্যাগ লুকিয়ে রাখা, চশমার কাঁচে রঙিন কাগজ সেঁটে রাখা, উপযুক্ত আদর না পাওয়া পর্যন্ত টাই ধরে ঝুলে থাকা - এসব খুনসুটি সারাক্ষণ লেগেই আছে।

অনিন্দ্য ভাবে, আভাকে স্বপ্নের রোমান্টিক ভুবন থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। নতুবা তার অনুপস্থিতিতে তো আভা বাস্তবজীবনে হোঁচট খাবে। কিন্তু হায়! হোঁচট খেয়ে গেল অনিন্দ্য নিজেই। গতকাল অফিসে প্রজেক্ট জমা দিয়েছিল। আজ অফিসে গিয়েই জানতে পারল বস গম্ভীর হয়ে আছেন।

চাকরি হারায় অনিন্দ্য। আভা ঘটনা জানতে পেরে চিৎকার করে উঠে, আমরা এখন খাব কী? থাকব কোথায়? অনিন্দ্য চমকায় আভার এমন করে বাস্তবে ফিরে আসায়। মৃদুস্বরে জানায়, গাছতলায় থাকা যায়, জোছনা খেয়ে থাকা যায়।

বাস্তব বড়ই রূঢ়। ফ্ল্যাট ছেড়ে আভার সংসার নেমে আসে কমন টয়লেটে, শেয়ার্ড কিচেনে। চাকরি খুঁজতে অনিন্দ্য বেরিয়ে যায় সকালে। আভাই তাকে ঠেলেঠুলে পাঠিয়ে দেয় চশমা, মানিব্যাগ এগিয়ে। পাশের ভাড়াটিয়ার সঙ্গে চিৎকার হইহুল্লোড় করে রান্না করে। কমন টয়লেটের জ্বালায় মোজার গন্ধ দূরে পালায়।

দিন গড়ালে, রাত পোহালে প্রথম বিবাহবার্ষিকী আসে। অনিন্দ্য রেস্টুরেন্টে খেতে চায়, আভা চায় ঘরেই ভালোমন্দ কিছু খেয়ে পয়সা বাঁচাতে। অনিন্দ্যর জয় হয়, বন্ধুর কাছ থেকে ধার করা গাড়িতে চড়ে রেস্টুরেন্টে যায় তারা। সেখান থেকে যায় সেই বন্ধুর ফ্ল্যাটে। আভা আফসোস করে, ইস এরকম একটা ফ্ল্যাটে যদি থাকতে পারতাম।

অনিন্দ্য পকেট থেকে চাবি বের করে আভার হাতে তুলে দেয়। প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে এই ফ্ল্যাটটি সে আভাকে গিফট করে। তার চাকরি যায়নি। প্রজেক্ট সাকসেস হওয়ায় বস তাকে মোটা বোনাস সহ হলিডে দেয়। তখনি সে চিন্তা করে এই হলিডেতে আভাকে বাস্তবে ঘুরিয়ে আনবে।

আভা সব শুনে অনিন্দ্যর বুকে কিল মারে। অনিন্দ্য মৃদুস্বরে জানতে চায়, আমাদের জোছনা খাওয়ার কী হবে। আভা মুখ তুলে বলে, খাব তো। তবে ভরপেট হয়ে, ডেজার্ট হিসেবে।

7 মন্তব্য:

Shaqlain Shayon said...

পড়ে ভাল লাগল ভাইয়া।

ভাঙ্গা পেন্সিল said...

গল্পটার লেখক অনেকটা আভার মতোই ভাবে...যেভাবেই হোক, হ্যাপি এন্ডিং আনতেই হবে :P

Anonymous said...

দারুণ দারুণ দারুণ! খুব ভালো লাগল গল্পটা। :)

Loginbd said...

Chomotkar likhechen....

নীলা said...

ভীষন ভালো লাগলো লেখাটা। ভালো থাকবেন।

Anonymous said...

হ্যাপি এন্ডিং হওয়াই ভাল

শনিবারের চিঠি said...

খুব ভালো লাগলো। আপনি বেছে বেছে আভা নামটাই নিলেন? ভালো লাগার সুর জানিয়ে গেলাম।