Monday 18 August 2008

সম্পাদনার টুকিটাকি (পর্ব ০২)

পর্ব ০১

এডিটিং বা সম্পাদনা বিষয়ক টুকিটাকি সিরিজের এটা দ্বিতীয় পর্ব। এখানে এডিটর বলতে আমরা ভিডিও এডিটর অর্থাত টিভি মিডিয়ার এডিটর ও তার কাজ সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব।


আপনি কি ভিডিও এডিটর হতে পারবেন?
অবশ্যই। তবে ইচ্ছাশক্তি, একাগ্রতা, ধৈর্য্য এবং ভালোবাসা থাকতে হবে। একটি নাটক যদি একজন ডিরেক্টরের সন্তান হয় তবে সে সন্তানকে আঁতুরঘর থেকে পয়পরিষ্কার করে সুন্দর জামাকাপড় পরিয়ে কপালে অথবা পায়ের পাতায় কাজলটিপ লাগিয়ে স্নো-পাউডার-লোশন মাখিয়ে সুন্দর করে তোলার কাজটি সারেন একজন এডিটর। কমপিউটারের যুগে ভিডিও এডিট করা কোনো ব্যাপারই না। আমরা অনেকেই টুকটাক এডিট হয়তো বাসার কমপিউটারে করে থাকি। সেই একই কাজ এডিটররা প্রফেশনাল মেশিনে সারেন। তবে তাদের কিছু নিয়ম মেনে কাজটি করতে হয়।

ভিডিও এডিটরের মূল কাজ কী?
আগেই বলা হয়েছে যে এডিটরের কাজ হচ্ছে ক্যামেরায় ধারণকৃত দৃশ্যগুলো পরপর সাজিয়ে প্রচারের জন্য তা যোগ্য করে তোলা। তো একাজটি করার সঙ্গে সঙ্গে আরো কিছু বিষয় এডিটরকে করতে হয়। যেমন অডিও কারেকশন, কালার কারেকশন, এফেক্টস/ মোশন/ ট্রান্জিশন দেয়া ইত্যাদি।
ভিডিও এডিটর এবং ফিল্ম এডিটরের মধ্যে পার্থক্য কী? 
পার্থক্য মূলত টেকনলজিতে। সেলুলয়েডের ফিল্ম এডিট করার প্রক্রিয়া ভিন্নতর। শ্যুট করা ফিল্মগুলো রাশপ্রিন্ট করে এরপর কাটা, জোড়া দেয়া, আলোর সামনে ফেলে তা দেখা ইত্যাদি নানান ভুজংভাজুং আছে। তারপর ফাইনাল প্রিন্ট, এরপর অডিওর সঙ্গে সিন্ক্রোনাইজ করা। ভিডিওর ক্ষেত্রে এমন ঝামেলা নেই। যেহেতু এটা ইলেক্ট্রনিক্স তাই ক্যাসেট থেকে সরাসরি ট্রান্সফার (ক্যাসেট টু ক্যাসেট অথবা কমপিউটারে) করে পছন্দমতো জোড়াতালি দেয়া যায়। তবে এখন নানান মেশিন ও সফটওয়্যার বেরিয়েছে ফিল্মকে ভিডিওতরিকায় (কমপিউটারে) এডিট করার। এখন পর্যন্ত টেকনলজিতে ফিল্ম ও ভিডিও সম্পাদনা আলাদা হলেও এসথেটিক বিষয়আশয়গুলো কিন্তু একইরকম।
এডিটর এবং ডিরেক্টরের মধ্যে পার্থক্য কী?
পার্থক্য খুব সোজা। ডিরেক্টর আগেই চিন্তা করে রাখেন তিনি কি করতে চান। আর এডিটর তার সেই চিন্তাকে বাস্তবে রূপ দেয়। একজন ডিরেক্টর তার নাটকের এডিটেড (সম্পাদকৃত) রূপটি কিরূপ হবে (দর্শকরা টিভিতে কি দেখবে) তা কল্পনা করে রাখেন। সেই অর্থে একজন ডিরেক্টর একজন এডিটরও বটে। ডিরেক্টরের চিন্তাকে (রাশ ফুটেজ) সাজিয়ে গুছিয়ে দেয়াটাই এডিটরের কাজ।
তবে কি এডিটিং শুধুই ফরমায়েসি কাজ? ক্রিয়েশনের কি আছে এতে?
এ নিয়ে বিতর্ক আছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের টিভি মিডিয়া জগতে। তবে প্রথমেই জানিয়ে রাখছি এডিটিং মোটেই ফরমায়েশি কাজ নয়, এটি সম্পূর্ণভাবেই একটি ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে প্র্যাকটিস বা ধারা বা চর্চার। আপনি অসংখ্য ফুটেজ নিয়ে বসলেন ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য। এখানে এডিটরের দায়িত্ব বা ক্রিয়েশন হলো ডিরেক্টরের সংগে শলাপরামর্শ করে অসংখ্য ফুটেজ থেকে বেছে বেছে প্রয়োজন এবং লজিকমতো ফুটেজ বসিয়ে সুন্দর একটা ডকু তৈরি করা। আর আপনি একটা নাটকের সিকোয়েন্সের হাতে গোণা কয়েকটা শট নিয়ে এলেন। এডিটর এডিট করতে বসে চিন্তা করল নায়িকার ক্লোজআপ দরকার অথচ ডিরেক্টর মিডক্লোজ নিয়ে এসেছে। সেক্ষেত্রে একজন এডিটর ডিরেক্টরের চাহিদা বা ফরমায়েস অনুযায়ী ওই মিডক্লোজটিই ব্যবহার করবে। (কাজের ধারা বা চর্চার এই বিষয়টি নিয়ে পরে বিস্তারিত আলাপ হবে)
এডিটর কি ডিরেক্টর হতে পারেন?
আবার জিগস। একজন এডিটরের তো এটাই প্লাস পয়েন্ট যে তিনি এডিটিং জেনে/করে তারপর ডিরেক্টর হলেন। আমরা টিভিতে (আমি বারবার নাটকের কথা আনছি, কারণ এতে পাঠকদের বুঝতে সুবিধা হবে) যে নাটক দেখে থাকি তা ডিরেক্টর আগেই দেখে থাকেন বা কল্পনা করে থাকেন। একটা নাটক যদি কল্পনা করে আগেই দেখে ফেলা লাগে তবে এ কাজটি এডিটররা খুব ভালোভাবেই করতে পারেন। এখন সেই কল্পনাকৃত এডিটেড নাটকটি লোকেশন থেকে তুলে আনা এডিটরের পক্ষে অনেক সহজ হয়ে যায়। তবে সেইসাথে একজন এডিটরের, ডিরেক্টরের অন্যান্য গুণগুলো থাকা জরুরি। যেমন, স্ক্রিপ্টিং, শ্যুটিংপ্ল্যান, আর্টিস্ট কমিউনিকেশন, স্টোরিটেলিং ইত্যাদি। মোদ্দাকথা হলো একজন এডিটর, একজন ভালো ডিরেক্টর হওয়ার ইচ্ছার বা সুযোগের এডভান্স লেভেলে অবস্থান করে। একজন ক্যামেরাম্যান বা চিত্রগ্রাহকের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য।
ধন্যবাদ সবাইকে। দেখা হবে পরের পর্বে।

1 মন্তব্য:

সেলিম হোসেন said...

কোথাও দেখা যায় না কেন??