Tuesday 16 December 2008

নাট্য সমালোচনা : আনিসুল হক/ ফারুকী গংয়ের মশকরা

দেশে থাকতে যেটা অনিয়ম ছিল প্রবাসে সেটাই অর্থাৎ টেলিভিশন দেখাটা মোটামুটি নিয়মের মধ্যে পড়েছে। কারণটা হলো ইন্টারনেট। দেশে নাটক দেখা হতো না তেমন একটা, অথচ প্রবাসে এসে বাংলাদেশী নাটক দেখা হচ্ছে অনেক। এই ঈদেও তাই প্রচুর বাংলাদেশী নাটক ডাউনলোড করে দেখতে শুরু করেছি।


ফারুকী গং অর্থাৎ এদের ভাই বেরাদারের প্রতি আমি আংশিক বিরক্ত। এদের সবার কাজের ধারা এক। একজন পরিচালকের স্বাতন্ত্র লক্ষ্য করা যায় না এদের নির্মাণে। এ বিষয়ে ফারুকীর বক্তব্য হলো, গুরুর ছাপ তো শিষ্যের মধ্যে থাকবেই। মানছি, কিন্তু তারপরও গুরুর শিক্ষাকে মাথায় নিয়ে নিজের বৈশিষ্ট্য ফুটিয়ে তোলা, বক্তব্য দেয়া পরিচালকের ধর্ম। ফারুকীর ভাই বেরাদাররা সেটা করতে পারছেন না। ইন্টারনেটে নাটক ডাউনলোড করার সময় দেখি লেখা থাকে 'ফারুকীর নাটক'। অথচ নাটকের টাইটেলে পরিচালকের নাম উঠে আশুতোষ রানা, রেদওয়ান রনি, ফাহমী, রুমেল ইত্যাদি ভাই বেরাদারের। অনেকেই বলে, আইজকা ফারুকীর একটা নাটক দেখলাম, হেভ্ভি জোশ। শুনে আমিও আগ্রহভরে নাটকটি দেখতে গিয়ে দেখি ওটা আসলে ফারুকীর নির্মাণ নয়, তারই কোনো ভাই বেরাদারের। আফসোস, ভাই বেরাদাররা গুরুর পাকেচক্রে এমনই আটকে আছে যে তাদের কাজের লেভেল পর্যন্ত গুরুর নামে হচ্ছে। এসব ভাইবেরাদাররা আসলে গুরুর মেধাকে অনুসরণ না করে অনুকরণ করছে। ফলে দেখা যায় সংলাপ শেষে একই জায়গাতেই মিউজিক বাজছে, একই স্টাইলে সিকোয়েন্স পরিবর্তন হচ্ছে, একই স্টাইলে সংলাপ আওড়াচ্ছে। ভাষারীতি ছাড়াও ফারুকী গংয়ের বিরুদ্ধে আরো একটা অভিযোগ আছে, যে তার নাটকে ঝগড়াঝাটিই প্রাধ্যন্য পায়। সব আর্টিস্টরা এমনভাবে সংলাপ আওড়ায় যেন ঝগড়া করছে।

আমি ফারুকীর কিছু কিছু কাজের খুবই ভক্ত। তার মেধার প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা আছে। মাঝে মাঝে সেটাতে ঝাটকা লাগে, অর্থাৎ মানতে পারি না ফারুকী কোনো খারাপ কাজ করবে। একুশে টেলিভিশনে প্রচারিত তার 'প্রত্যাবর্তন' নাটকের প্রতি মুগ্ধতা আমার কোনোদিনই শেষ হবে না। পাশাপাশি ব্যাচেলর, মেড ইন বাংলাদেশ সহ আরো কিছু কিছু (নাম মনে করতে পারছি না) নির্মাণকে আমি যাচ্ছেতাই-এর পর্যায়ে ফেলে দিতে পারি।

ফারুকীর লাস্ট নাটক যেটা দেখেছিলাম সেটা হলো 'স্পার্টাকাস ৭১'। এ নাটকের প্রশংসা করার ভাষা আমার নেই। নাট্যাঙ্গণের যাবতীয় পুরষ্কার এ নাটকের জন্য ফারুকীকে দিয়ে দেয়া যায়। নাটকের কাহিনীটি একটু বলে নিই,

শাওন-বাঁধন নামে দুই জমজ ভাইকে নিয়ে একাত্তরের পটভূমিকায় স্পার্টাকাস ৭১ নির্মিত হয়। দুইভাইয়ের মধ্যে একজন ছিলেন বাগদত্তা, তিনি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। সেই কারণে স্থানীয় রাজাকার মাহবুবের কোপানলে পড়ে পরিবারটি। খোঁজখবর নিতে যখনই ওই বাড়িতে মাহবুব যেত, শাওন-বাঁধনের বাবা-মা তাদের অবশিষ্ট জমজ সন্তানটিকে একবার শাওন আরেকবার বাঁধন সাজিয়ে রাজাকারকে বোঝাত যে তাদের দুই সন্তানই বাড়িতে আছে, মুক্তিযুদ্ধে যায়নি। কিন্তু শেষ রক্ষা হয় না। রাজাকার মাহবুব বিষয়টি ধরে ফেলে। শর্ত দেয় বাবা-মাকে, তাদের ছেলের হবু বউকে আর্মিক্যাম্পে নিয়ে গেলে তারা বেঁচে যাবে। শাওন-বাঁধনের বাবা কাজটি করতে বাধ্য হন, অর্থাৎ ছেলের হবু বউকে আর্মি ক্যাম্পে দিয়ে আসেন। কিন্তু নাটকের শেষে দেখা যায় রাজাকার মাহবুব শাওন-বাঁধনকে হত্যা করে। দুঃখ সইতে না পেরে বাবা আত্মহত্যা করেন, একমাত মা বেঁচে থাকেন এই দুঃসহ ঘটনার পরও। (স্মৃতি থেকে লেখা, একটু এদিক সেদিক হতে পারে)

এবারের ঈদে তুমুল জনপ্রিয় হওয়া এই নাটকের সিক্যুয়াল তৈরি করেন ফারুকী 'এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি' নামে। নাটকটি যৌথভাবে রচনা/ চিত্রনাট্য করেছেন আনিসুল হক এবং ফারুক। পরিচালনায় ফারুকী ও রেদওয়ান রনি। প্রচন্ড আগ্রহ নিয়ে নাটকটি দেখেছি এবং যারপরনাই হতাশ হয়েছি। নাটকটি সত্য ঘটনা নিয়ে না হলে এই পোস্টে ওই নাটক নিয়ে আমার দুটি কথা আছে।

নাটকটি শুরু হয় স্পার্টাকাস ৭১ নাটকের কিছু দৃশ্য দেখিয়ে। একাত্তরের সময় নিয়ে নির্মিত ওই নাটকের বেঁচে যাওয়া মা আজ ৩৭ বছর পর কোথায় কিভাবে আছেন সেটা দেখার আমন্ত্রণ জানিয়ে নাটক শুরু হয়। আমি হতভম্ব হয়ে দেখি শাওন-বাঁধনের মা মাহবুব রাজাকারের বাড়িতে চাকরাণী/ বুয়ার কাজ করছেন এবং সেটা মাহবুব রাজাকার কর্তৃক দখলকৃত তারই নিজ বাড়িতে।

নিশ্চয়ই এর কোনো ব্যাখ্যা নাট্যকার দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধার মা তার সন্তানের হত্যাকারীর বাড়িতে বুয়া হয়ে ৩৭ বছর ধরে কিভাবে থাকতে পারেন তার ব্যাখ্যা পেতে নাটকটি ধৈর্য্য ধরে দেখতে থাকি। অবশেষে একটা ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। দখল করা বাড়িতে নতুন এ্যাপার্টমেন্ট তুলতে গিয়ে রাজাকার মাহবুব জানতে পারে এজন্য এ বাড়ির সমস্ত ওয়ারিশদের স্বাক্ষর লাগবে। তখন রাজাকার মাহবুব, শাওন-বাঁধনের মাকে তার ভাইদের বাড়িতে পাঠায়। কেননা শাওন-বাঁধনের মা এ বাড়িটি মাহবুব রাজাকারকে লিখে দিলেও তার পরিমাণ ছিল মুল সম্পত্তির ২%, বাকি ১৪% এর মালিক শাওন-বাঁধনের মামারা। মা যখন তার ভাইদের বাড়িতে যায় তখন জানা যায়, সন্তান হত্যা এবং স্বামী আত্মহত্যা করার পর মা নাকি তার ভাইদের কাছে গিয়েছিলেন আশ্রয়লাভের জন্য, কিন্তু ভয়ে ভাইয়ের তাকে আশ্রয় না দিলে তিনি সিদ্ধান্ত নেন রাজাকার মাহবুবের বাড়িতেই তিনি থাকবেন এবং বেঁচে থেকে তিনি আজীবন মাহবুব রাজাকারকে অভিশাপ দিবেন। আর এ কারণেই নাটকে আমরা দেখি তিনি মাহবুব রাজাকারের বাড়িতে বুয়ার কাজ করছেন।

হায় খোদা! এই আনিসুল হকই তো কালজয়ী 'মা' উপন্যাস লিখেছিলেন! যিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার মাকে এতো কাছাকাছি দেখেছনে, এতো এতো মুক্তিযোদ্ধার মায়েদের সম্পর্কে জেনেছেন, তিনি পারলেন কি করে একজন মুক্তিযোদ্ধার মাকে তারই সন্তানের হত্যাকারী, স্বাধীনতা বিরোধী, দেশের শত্রুর বাড়িতে বুয়ার কাজ করাতে। তিনি কী চমক দেখাতে চাইলেন, মুক্তিযোদ্ধার মাকে রাজাকারের স্ত্রীর হাতে দুধ চুরি করে খাওয়ার অভিযোগের সিকোয়েন্স লিখে? দেশ আজ স্বাধীনতা বিরোধী, রাজাকারদের পদভারে কম্পিত। তিনি সাজেস্টিভ কিছু দেখালেন কি যে আজ দেশের সমস্ত মুক্তিযোদ্ধারা এমনই ভাবে রাজাকারদের চাকর হয়ে আছে? কল্পনার ঘোড়া এমন করে দৌড়াতে হয়!

এটা মশকরা করা হয়েছে দর্শকদের সাথে, সর্বোপরি দেশের জনগণের সাথে। একজন নাট্যকার হিসেবে তার স্বাধীনতা আছে তার মতো করে নাটক লিখতে, কিন্তু তিনি যখন ইতিহাস বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে লিখবেন তখন যেন আমাদের আবেগকেও সম্মান জানান।

আমি বিশ্বাস করি একজন মুক্তিযোদ্ধার মা কোনোভাবেই তার সন্তানের হত্যাকারীর বাড়িতে বুয়ার কাজ করতে পারে না। এটা সম্ভব হয় কি করে! ৩৭ বছর ধরে একজন মুক্তিযোদ্ধার মা সন্তানের হত্যাকারীর বাড়িতে ভাত খাচ্ছে, যেখানে আনিসুল হক 'মা' উপন্যাসে আমাদের জানান যে, মুক্তিযোদ্ধা আজাদের মা ছেলের মৃত্যুর খবর জেনে কখনোই ভাত খাননি, জুতো-স্যান্ডেল পরেননি, ফ্লোরে বালিশ-তোষক ছাড়া ঘুমিয়েছেন। সেই আনিসুল হক এটা কিভাবে লিখলেন? ফারুকী তা কিভাবে নির্মাণ করলেন? আমাদের মুক্তিযোদ্ধার মা-রা এতোটাই অসহায়? যে সাহসে ছেলেকে বন্দুকের মুখে ঠেলে দিতে পারেন, সেই মায়েরা এতোটাই অসহায় হয়ে যেতে পারে কি যে সন্তানের হত্যাকারীর বাড়িতে তাকে আশ্রয় নিতে হয়! টিভি পর্দায় আমাদের দেখতে হয় মুক্তিযোদ্ধার মা তার সন্তানের হত্যাকারীর জুতো পালিশ করে দিচ্ছে!

নাটকের এক পর্যায়ে দেখা যায় শাওন-বাঁধনের বন্ধুরা অনেক বছর পরে হলেও তাদের নামে স্মৃতি পরিষদ গঠন করে মাহবুব রাজাকারের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করে। সেই মাহবুব রাজাকার তখন ৩৭ বছর ধরে ভরণপোষনের দোহাই দিয়ে শাওন-বাঁধনের মাকে আদালতে মিথ্যে স্বাক্ষী দিতে রাজি করায়। একটা কাগজ ধরিয়ে তাকে মুখস্থ করতে বলা হয় যেখানে লেখা থাকে, তার সন্তানের হত্যাকারী মাহবুব রাজাকার নয় বরং পাকিস্তানী মিলিটারী। মাহবুব তাকে এতো বছর ধরে দেখাশোনা করছেন আল্লাহ যেন তার ভালো করে। আমি অবাক হয়ে দেখি, সেই মা সারারাত ধরে সেটা মুখস্থ করছেন এবং সাংবাদিক সম্মেলনেসুযোগ পাওয়া স্বত্ত্বেও তার পাশে বসে থাকা রাজাকার মাহবুবকে ছেলের হত্যাকারী হিসেব সনাক্ত করেন না।

কেন কেন কেন? এসব মশকরা দেখিয়ে আনিসুল হক এবং ফারুকী গং কি বোঝাতে চেয়েছে? দেশে যে দৌর্দন্ড প্রতাপে স্বাধীনতা বিরোধিরা চরে ফিরছেন সেটাই তারা ইঙ্গিতে বোঝালেন? রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সারা দেশ যখন সোচ্চার তখন এসব ইঙ্গিত কাদের পক্ষে যায়? এসব ফালতু সাজেস্টিভ আর ইঙ্গিত আর কতোকাল আমরা সইব? সব খুলে বলতে নেই, বুঝে নিতে হয় - এমন কাঁচকলা আর কতোকাল রান্না করে খাব? একজন মুক্তিযোদ্ধার মাকে তারই সন্তানের হত্যাকারীর বাড়িতে কাজের বুয়া হিসেবে ৩৭ বছর রেখে, দুধ চুরির অপবাদ দিয়ে, শেষ পর্যন্ত ওই রাজাকারের কোনো পরিণতি না দেখিয়ে আনিসুল হক/ ফারুকীর গংরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোন দিকটা হাসিল করলেন?

রাজাকারকে ঘৃণা করতে পার, তাদের সন্তানদের নয়। এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি নাটকে আনিসুল হক/ ফারুকীরা প্রচ্ছণ্নভাবে এটা স্টাবিলিশড করলেন। মাহবুব রাজাকারের ছেলে বাচ্চু মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে বলে তার বয়সী বন্ধুরা সবাই ইউনিভার্সিটিতে গেলেও সে তাদের সঙ্গে ঠিকমতো মিশতে পারে না। খেলায় তাকে কেউ নিতে চায় না, রাস্তায় রাজাকারের বাচ্চা বলে পাড়ার ছেলেরা খ্যাপায়, পাশের বাসার মেয়ের সঙ্গে প্রেমটাও ঠিকমতো হয়ে উঠে না দেখিয়ে আনিসুল/ ফারুকীরা একটা সিমপ্যাথী গড়ে তুলেছে সারা নাটকে রাজাকারের সন্তানের পক্ষে। বাবার কৃতকর্মের জন্য সন্তানকে দুষতে হবে কেন এমনটাই প্রতিধ্বনি করতে চেয়েছে নাটকের নির্মাতারা। কিন্তু বাবার সামনে কখনোই ওই ছেলেকে প্রতিবাদীর ভূমিকায় আনতে পারেনি নাট্যকার/ নির্মাতা। নাটকের শেষ দৃশ্যে দেখা যায় ফোনালাপের মাধ্যমে ছেলে তার বাবাকে ইন্টারভিউ নিচ্ছেন প্রথম আলোর হয়ে (নিজের পত্রিকার নাম বেচা, কার্টুনিস্ট আরিফের সময় এই পত্রিকার ভূমিকা আমরা দেখেছি)।

আজকাল ব্লগ সহ সমাজে কিছু কিছু সুশীলের উৎপত্তি হয়েছে যারা থেকে থেকে কুয়ার ভিতর থেকে মাথা উঠিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, ৭১ এর জন্য পুরো পাকিস্তানী জনগণকে দায়ি করা কি উচিত? বাবা রাজাকার হলেও ৭১ এর পর জন্ম নিয়েছে বলে তার সন্তানকে বাবার কর্মকান্ডের জন্য ঘৃণা করা যাবে কি? এইসব প্রশ্নের আড়ালে তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায় রাজাকারদের। আনিসুল হক এবং ফারুকী নিশ্চয়ই ওই পথে হাঁটছেন না।

কল্পনারও একটা সীমা থাকা দরকার। মুক্তিযোদ্ধার মায়ের এমন পরিণতি দেখিয়ে আমাদের কি বোঝাতে চাইলেন আনিসুল হক এবং ফারুকী তা আমার বোধগম্য না। তবে তাদের এমন কল্পনা স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রশ্রয় দেয়। আনিসুল হক স্বনামধন্য লেখক, ফারুকী একজন ভালো নির্মাতা। আপনাদের প্রতি অনুরোধ আপনারা এমন কিছু নির্মাণ করবেন না যা মানুষের আবেগকে খাটো করে। এমন অবাস্তব কিছু লিখবেন না যা আমাদের অপমান করে।

নাটকটি এমনভাবে শেষ হয়েছে যাতে মনে হয়েছে এর তৃতীয় পর্ব নির্মাণ সম্ভব। সারা নাটকেই আমার বিরক্তি চালু ছিল কিন্তু নাটকের শেষ দেখে এর তৃতীয় পর্ব নির্মাণের সম্ভাব্যতা দেখে আমি আশাবাদী হয়েছি যে ফারুকী গং তৃতীয় পর্ব নির্মাণ করে এমন অবাস্তব একটি নাটকের সুন্দর সমাপ্তি টানবেন। আগামী ২৬ মার্চ আপনাদের এই ভুল শুধরে নিন।


নাটকটির টরেন্ট ফাইল ডাউনলোড করে দেখতে পারেন এই লিংক থেকে।

4 মন্তব্য:

সেলিম হোসেন said...

রাজাকারের বাড়িতে শাওন বাধনের মায়ের বুয়ার কাজ করাটা আমারও মোটেও ভাল লাগেনি।

Ishtiaq Rouf said...

অবিশ্বাস্য। কিছু বলার নেই। আনিসুল হক/ফারুকীর অতিরিক্ত বাণিজ্যিক হয়ে যাওয়া নিয়ে আগেও অভিযোগ ছিল আমার।

সবটা পড়ে মনে হল যে এঁরা এফডিসি'র জন্য স্ক্রিপ্ট লিখছিলেন।

Anonymous said...

লজ্জ্বা অপমানে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। তাদের হিসেবে নির্বাচনের উল্টো ফলাফলের অনুমান ছিল বোধহয়। এখন সিক্যুয়েল পুরো ঘুরে যাবে :)

অলৌকিক হাসান said...

ধন্যবাদ।

এ বিষয়ে ব্লগারদের মতামত জানতে পড়তে পারেন

প্রথমে http://amarblog.com/aloukik/28878
পরে http://amarblog.com/geducacha/29298 (এই লিংকে ডাউনলোড ছাড়াই নাটকদুটো দেখার লিংক পাবেন)

অনেকেই বলছেন যে মা কে দেখিয়ে বাংলাদেশ বোঝানো হয়েছে। কিন্তু এতেও অনেক অসঙ্গগতি রয়ে গেছে। নাটক দেখে বোঝা যায় যে মা স্বাধীনতার পর থেকেই ওই রাজাকারের বাড়িতে আশ্রয়ে আছেন। এটা অতিকল্পনাপ্রসূত। স্বাধীনতার কিছু বছর পর পর্যন্ত আমরা বুঝে উঠতে পারিনি যে রাজাকার স্বাধীনতাবিরোধীরা আমাদের পেয়ে বসবে। তো মাকে দেশ স্বাধীনের পরপরই রাজাকারের আশ্রয়প্রার্থী ভাবি কি করে? কল্পনারও তো একটা সীমা থাকা দরকার। আমি যদি বর্তমান রাজাকারদের প্রতাপ (নির্বাচনের আগের কথা বলছি) বোঝানোর জন্য একটা নাটক বানাই এমন যেখানে দেখা যাবে স্বাধীনতার পরপরই মুক্তিযোদ্ধারা যার যার স্থানীয় রাজাকারদের ফুলেল সম্বর্ধনা ও গাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা লাগিয়ে ঘুরাচ্ছে তো কেমন হয়! কেউ সমালোচনা করলে আমি বলব যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধীদের শক্ত অবস্থান বোঝাতেই এমন নাটক নির্মাণ করেছি। কেউ মানতে পারবে এ কথা।

আরেকটা বিষয় হলো কিছু কিছু বিষয় নিয়ে রূপক হতে পারে না। গর্ভধারিনী মা তেমন একটি বিষয়। তারপর সে মায়ের যদি দুটি সন্তান মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ হারায় সে মা কোনোমতেই ছেলের হত্যাকারীর বাড়িতে বুয়ার কাজ করে পুরো বাংলাদেশে রাজাকারদের অবস্থান বোঝাতে কোনো রূপক হতে পারে না। এটি আনিসুল হকের চিন্তার দৈন্যতা।

এছাড়াও নাটকটিতে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ না দেবার বিষয়ে বিষয়টিকে অস্বীকার/ প্রতিবাদ করা হয়েছে। সংলাপে বোঝানো হয়েছে যে, আগে তো ভর্তি পরীক্ষা দিতে দিক, না টিকলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে না। তো অনেক ভালো ছাত্রও অসুস্থতা কিংবা অন্য কোনো কারণে ২য় কিংবা ৩য় বিভাগ পেয়ে যায়। তাহলে তাদেরও তো ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে দেয়া উচিত, যদি টিকে যেতে পারে। কিন্তু আমরা সেটা করি না। একটা নির্ধারিত মার্কের আওতায় যারা থাকে সেসব ছাত্ররাই (বাংলা ও ইংরেজি মিলিয়ে ৪০০ মার্ক পড়ে থাকলেও) ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ পায়। সেখানে মাত্র ২০০ নম্বরের বাংলা ইংরেজি পড়ুয়া মাদ্রাসা ছাত্ররা কেন আলাদাভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ পাবে!!

এরকম নানা অসঙ্গতিপূর্ণ হলো এই নাটকটি। সম্প্রতি নির্বাচনের ডামাডোলের মধ্যে চ্যানেল আইতে রাজনীতিবিশারদ হিসেবে ফারুকী হাজির হয়ে মতামত দিয়েছেন যে, জামাত যুদ্ধাপরাধী হলেও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করার সুযোগ পেতে পারে। এ সবই হচ্ছে স্টান্টবাজি - ইনিয়ে বিনিয়ে তাদের জায়েজ করে দেয়ার অপচেষ্টা।

ভালো থাকবেন।