Sunday 28 December 2008

২০০৮ নির্বাচনে বিজয়ী দলের জন্য মন্ত্রণালয় পুনর্বিন্যাস

গেল বিএনপি সরকারের প্রথম সমালোচনা ছিল বিশাল আকারের মন্ত্রীসভা গঠন করার জন্য। সকলের মন রক্ষার্থে হাওয়া ভবনের ক্যারিশমাটিক জাদুতে আলতাফ/বাবরের মতো অকর্মণ্যরাও মন্ত্রণালয় পেয়েছে। অথচ গত দুই বছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হাতে গোণা কয়েকজন উপদেষ্টা (ভিন্নর্থে মন্ত্রী) নিয়ে বাংলাদেশের সমস্ত মন্ত্রণালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করেছেন।


বাংলাদেশ নামক এই ছোট দেশে এতো এতো মন্ত্রণালয় আমার কাছে অহেতুক মনে হয়। এদের কয়েকটি একই সঙ্গে মার্জ করে দিয়ে একজন মন্ত্রী দিয়েই চালানো সম্ভব। প্রথমেই দেখা যাক বর্তমানে বাংলাদেশে মন্ত্রণালয় মোট কয়টি আছে?

০১। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়
০২। আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
০৩। অর্থ মন্ত্রণালয়
০৪। কৃষি মন্ত্রণালয়
০৫। খাদ্য ও দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়
০৬। ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়
০৭। তথ্য মন্ত্রণালয়
০৮। ধর্ম মন্ত্রণালয়
০৯। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
১০। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়
১১। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়
১২। শ্রম মন্ত্রণালয়
১৩। পাট ও পোশাক মন্ত্রণালয়
১৪। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়
১৫। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
১৬। পার্বত্য অঞ্চল বিষয়ক মন্ত্রণালয়
১৭। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়
১৮। ভূমি মন্ত্রণালয়
১৯। নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়
২০। মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়
২১। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়
২২। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়
২৩। শিল্প মন্ত্রণালয়
২৪। শিক্ষা মন্ত্রণালয়
২৫। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়
২৬। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়
২৭। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়
২৮। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়
২৯। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়
৩০। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
৩১। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
৩২। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়
৩৩। জনশক্তি ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়
৩৪। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়
৩৫। নৌ মন্ত্রণালয়


দেখা যাচ্ছে মোট ৩৩টি মন্ত্রণালয় রয়েছে। লিস্টটা গুরুত্ব অনুসারে সাজানো হয়নি। এছাড়াও মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত নানান ডিভিশন রয়েছে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর পাশাপাশি প্রতিমন্ত্রীও নিয়োগ দেয়া হয়। লিস্টিটা পাওয়ার জন্য ধন্যবাদ ব্লগার নাজিমউদদীনকে।

এতোসংখ্যক মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের জন্য একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। আমার একটা আইডিয়া এলো তা হলো এসব মন্ত্রণালয়গুলোকে একটার সঙ্গে আরেকটা মার্জ করে নতুন কোনো নাম দেয়া যায় কিনা। এতে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী নিয়োগের হার কমে আসতে পারে। আরেকটা কাজ যেটা করা যেতে পারে তা হলো আপনার পছন্দ অনুসারে কোন মন্ত্রণালয়ের জন্য কোন ব্যক্তি (দলমত নির্বিশেষ) উপযুক্ত হতে পারে সেটা জানিয়ে দিন। আমি প্রথমেই মন্ত্রণালয়ের সংখ্যাগুলো কমিয়ে আনছি।

০১। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় - এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। তাই একে আলাদাভাবেই রাখা গেল।
০২। আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় - এটিও আলাদা মন্ত্রণালয়ের দাবি রাখে।
০৩। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় - খুবই নাজুক অবস্থা আমাদের এ মন্ত্রণালয়ের। যোগ্য কূটনীতিক নাই।
০৪। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় - ল' এন্ড অর্ডার ঠিক রাখার জন্য এটি আলাদা মন্ত্রণালয় হবে।
০৫। অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়
০৬। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়
০৭। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় - এর মধ্যে নৌ মন্ত্রণালয়ও থাকবে।
০৮। শ্রম, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় - পাট ও গার্মেন্টস মন্ত্রণালয়কে অবলুপ্ত করে শিল্পের আন্ডারে নিয়ে যাওযা হলো।
০৯। তথ্য মন্ত্রণালয় - এ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ডাক ও টেলি মন্ত্রণালয় থাকবে।
১০। বনজ, খনিজ, পানি, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয় - এইটার একটা ভালো নামকরণ দরকার।
১১। স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়
১২। সংস্কৃতি, সমাজকল্যাণ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় - মুজাহিদ চুদির পুত সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হওয়ার পর গ্রামে গঞ্জে শিবিরের কর্মী বাইড়া গেছিল। তাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংস্কৃতি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় একীভূত হইল।
১৩। শিক্ষা মন্ত্রণালয় - এর মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় মার্জ করবে।
১৪। বেসামরিক বিমান ও পর্যটন ও পার্বত্য অঞ্চল বিষয়ক মন্ত্রণালয় - পর্যটনের সঙ্গে যেহেতু পার্বত্য অঞ্চলের যোগসূত্র আছে তাই সবগুলা মিলে একটা মন্ত্রণালয় হবে।
১৫। বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও যুব-ক্রীড়া মন্ত্রণালয় - বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়কে যুব-ক্রীড়ার সঙ্গে মিশাইলাম তাতে যদি তরুণদের প্রযুক্তিমুখী করার সম্ভাবনা জাগে।
১৬। ভূমি, খাদ্য ও দূর্যোগ মন্ত্রণালয়
১৭। কৃষি মন্ত্রণালয় - এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ মন্ত্রণালয় হওয়ার দাবি রাখে।
১৮। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়
১৯। জনশক্তি ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় - বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে পৃথিবীর চারদিকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য এটাকে আলাদা মন্ত্রণালয়ের মর্যদা দেয়া হলো।

৩৫ থেকে কমিয়ে ১৯টি মন্ত্রণালয় করা হলো। বাকি রইল ধর্ম মন্ত্রণালয়। ধর্ম বিষয়ক আলাদা কোনো মন্ত্রণালয় না করে একটা কমিটি টাইপের কিছু রাখা যেতে পারে। বাকি রইল কোন লোকের অধীনে কোন মন্ত্রণালয় থাকবে। আপনারা সাজেশন দিন। আর কিছু বাদ/ভুল হলে ধরিয়ে দিন।

2 মন্তব্য:

Anonymous said...

আপনার পর্যবেক্ষণ বেশ ভাল। প্রশাসনিক সংস্কার আর আধুনিকায়নের জন্য পরস্পর-সম্পর্কিত "ক্লাস্টার মিনিস্ট্রি" প্রবর্তনের কথা কয়েকবছর ধরে শোনা যাচ্ছে (যথারীতি বাস্তবায়ন আর হয়না। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আর প্রশাসন একাডেমির লাইব্রেরীতে এসব প্রস্তাব নিয়ে গবেষণা হয় কেবল)।

২. ধর্মকে স্থানীয় সরকার আর সমাজকল্যাণ-- এদুয়ের যে কোনটার সঙ্গে জুড়ে দেয়া গেলে ভাল হয়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান/উপাসনালয়ের জন্য বিভিন্ন ধরণের বরাদ্দ আছে। এসব ঠিক জায়গায় পৌঁছানোর জন্য এই দুই মন্ত্রণালয় তো বটেই এমনকি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও বহু কথা/কাজ চালাচালি করে সময় নষ্ট করা হয়। তবে উচিত কথা বললে এই ধরণের মন্ত্রণালয় বা কমিটি থাকারই দরকার দেখিনা। আর থাকলেও বরাদ্দের হালুয়ারুটি বাদ দিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে জুড়ে থাকা উচিত :P

৩. আপনার লেখায় জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ টার্ম বাদ পড়ে গেছে। সম্ভবত ১০ নম্বরে খনিজের সঙ্গে আসার কথা।

৪. কৃষির সংজ্ঞা এখন অনেকটাই সমন্বিত রূপ পেয়ে গেছে। তাই এর সঙ্গে মৎস্য ও পশুসম্পদ আসতে পারে। খাদ্য কিন্তু কৃষির সঙ্গে আসা উচিত, কারণ এদের তথ্য-সমন্বয় খুব জরুরী।

৫. পানি(১০ এ আছে)আসতে পারে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে।

৬. বাংলাদেশে জমি কম থাকতে পারে কিন্তু ভূমি বিষয়ক জটিলতার অবস্থা অকল্পনীয়। এটা একক মন্ত্রণালয় হওয়াই বাঞ্ছনীয়।

৭. নারী ও শিশু যে বিবেচনায় স্বাস্থ্যের সঙ্গে এসেছে, তাতে কিন্তু তথ্য মন্ত্রণালয়েরই কাজের সম্পৃক্ততা বেশী। মাঠের কাজের সমন্বয়ের জন্য নারীও শিশুকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে দিলে ভাল হয়। কারণ জেলা পর্যায়ে মেয়েদের হোম, শিশুদের এতিমখানা এগুলোর ব্যবস্থাপনা আবার সমাজকল্যাণের আওতায়।

অলৌকিক হাসান said...

আপনার কমেন্টে একমত।