Sunday 13 April 2008

প্রবাসে থেকে বাংলাদেশের জন্য দুঃখবিলাস !!

আমাদের প্রবাসীদের জীবনযাপনের মধ্যে অন্যতম রুটিন কাজ হচ্ছে দেশের জন্য হা-পিত্যেস করা। এটাকে কেউ দুঃখবিলাস বলেন, কেউ বা বলেন নিছক লোক দেখানো দেশপ্রেম।

দেশ নিয়ে স্মৃতিচারণে মনে পড়ে যায় নিজের কখনো কাপড় না ধোয়ার কথা, চা বানিয়ে না খাওয়ার কথা, আড্ডাবাজির কথা অথবা পয়সার টানাটানিতে কোনো ছোটকাজ (অডজব) না করার কথা। সেইসব সুখের দিনগুলো, সময়গুলো, মুহূর্তগুলো ছেড়ে কেন আমরা বিদেশে থাকি?

ফিরে গেলেই তো হয়। কিন্তু বাস্তবতা তা বলে না। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে পারিপ্বার্শিকতার চাপেই হোক, কিংবা সন্তানের উচ্চ ভবিষ্যতের কথা ভেবেই অনেকেই আর দেশের সেই সুখস্মৃতিময় দিনগুলোর ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরির বেলায় আনন্দিত হন না। আমি মনে করি দরকারও নাই।

আমাদের সবারই দেশের প্রতি যে হাহাকার রয়েছে, সেটাকে অসম্মান করার কোনো কারণ নাই। অপদস্থ করার জন্য হুট করে 'দেশে কেন ফিরে যান না' টাইপের কথা বলার মধ্যেও কোনো ক্রিয়েটিভিটি নাই। ঢাকা শহরে অট্টালিকার চিপায় পড়ে আকাশ দেখতে না পেয়ে আফসোস করেছি, ইশ গ্রামে কি মুক্ত আকাশ-বাতাস। ভেবেছি অথচ গ্রামে গিয়ে থাকিনি।

বাংলাদেশ একটি বিশাল গরীব জনগোষ্ঠির দেশ। ছোট মাটিতে এতো চাপ সয় না। তাই যে যেভাবে পারছে দেশের বাইরে ছুটতে চাইছে, কেউ সৌদী আরবে মরুর বুকে ইমারত তৈরির কাজ করছে, কেউ মেরিকার এসি রুমে এইমাত্র অডজব সেরে এসে ব্লগিং করছে। অবশ্য খোদা না করুক আর কোনো বাংলাদেশীকে প্লেনের চাকায় কিংবা কন্টেইনার বাক্সে দেশত্যাগের ইচ্ছায় পেয়ে বসে।

মানবাধিকারকর্মী কর্মী নাসরিন যখন মারা গেলেন তখন তার সম্পর্কে অনেক আর্টিকেল বেরিয়েছিল। সেইসব আর্টিকেলে কারো লেখায় জানতে পারি নাসরিন সবসময় চাইতেন প্রবাসে বাঙালিরা যেন সবসময় কিছু একটা করে সেখানেই শক্ত আসন গেঁড়ে বসতে পারে, বুকের মধ্যে দেশপ্রেম নিয়ে তারা সেখানেই থেকে যাক, দেশে ফেরার দরকার নাই। তাহলে দেশের বিপদে ওইসব মানুষদের কাছে ছুটে যাওয়া যায় সাহায্য কিংবা পরামর্শের জন্য। কথাটা আমার খুব ভালো লেগেছিল।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইহুদীরা ব্যাপকভাবে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু যেখানেই তারা থাকুক না কেন নিজেদের একটা দেশ গড়ার তাড়না তাদের সবসময়ই ছিল, এবং ভালোভাবেই সেটা করতে পেরেছে। সেজন্য তাদের সবাইকে মধ্যপ্রাচ্যে জড়ো হতে হয়নি। ইহুদীরা আজকের বিশ্বে কি বুদ্ধিতে কোন পর্যায়ে আছে, সেটা আর না বলি।

দেশের জন্য ওইসব ছটফটানি মেরিকা-লন্ডন-মন্ট্রিলের মতো নিরাপদ জায়গায় বসে করেও যদি দুইটা টাকা দেশে বেশি পাঠানো যায়, ক্ষতি কি? দেশের জন্য কিছু করতে হলে দেশেই থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যার যার জায়গায় থেকেই সেটা করা যায়। জাতি হিসেবে আমাদের মার্কেটিংটা খুবই খারাপ, সেইটাতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আর সেজন্যই ক্রেতার কাছাকাছি থাকাটা জরুরি, যদি সে সুযোগটা থাকে।

বিদেশের ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই লোন নিয়ে এসে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন। এদের অনেকেই দেশে হয়তো ফেরত যাবেন না। সবুজ পাতা, লাল পাতার জন্য থেকে যাবে। থাকুক না, সমস্যা নাই তো। আমরা যদি ছড়িয়ে না পড়ি তাহলে আবার কিসের তাগিদে এক হতে চাইব? আমাদের মধ্যে জাফর ইকবাল ক'জন আছেন? বা আমরা সবাই চাইলেই কি জাফর ইকবাল হতে পারি? ভিন্ন পাসপোর্টধারী বাংলাদেশী নাগরিকদের (NRB) জন্য যে কোনো ব্যবসায় প্রথম ১০ বছরে কোনো সরকারি ট্যাক্স দিতে হয় না। লাল পাতা, সবুজ পাতা নিয়ে এই উদ্দেশ্যে কেউ যদি দেশে ফেরত যায় তাতেও তো বাংলাদেশের লাভ, অনেকেরই কর্মসংস্থান হবে।

দেশের জ্যাম-লোডশেডিং-ছিনতাই নিয়ে নাক সিঁটকায় কিন্তু কোনো সাপ্তাহিক আড্ডায় দেশের জন্য কেঁদে উঠলে তাকে ভুল বুঝার অবকাশ নাই। বুঝতে হবে তার হৃদয়ের কোণায় দেশ নিয়ে একটা সুখ চিনচিন করে। সেই তাগিদে সে অনেক কিছুই করে ফেলতে পারে। শুধু আমাদের সবারই সে ইচ্ছাটা লালন করতে হবে ...

1 মন্তব্য:

মাজেদুল ইসলাম said...

আপনার এই পোস্টের সাথে আমি একমত।দেশের বাইরে থেকেও দেশের জন্য কাজ করা যায়।যারা সুনীল এর পূর্ব পশ্চিম বইটি পড়েছেন তারা নিশ্চই জানেন যে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসীরা দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন।আর প্রায় প্রতিটা প্রবাসীদের উপর দেশে তাদের অনেক আত্মিয়রা নির্ভরশীল।