Sunday 13 April 2008

আহা রে ... সোনালী বন্ধু রে ...

ওইদিন যে প্রচুর পরিমাণে মদ খাইছিলাম তা কিন্তু না, এরও অনেকদিন আগের আড্ডায় গাঞ্জা আর অরেঞ্জ জুস দিয়া ভোদকা খায়া আমি পরে ডিমভাজি করছিলাম, কারণ আমি শুধু ওইটাই ভালো করতে পারি এবং সবাই বলছিল ডিমভাজিটা দেখতে পুরা পুডিংয়ের মতো হইছে; অথচ ওইদিন অল্প মদ খায়া কেমন জানি হয়া গেলাম, আমার হাসনরাজা, লালন কিছুই ভালো লাগে না, খালি ঘুম পায়, বাসায় যাইতে চাইলে বন্ধু কয়, এতো যাই যাই করস ক্যান? গেলে তুই যা গা; তখন আমি আবার গান শুনতে থাকি, কারণ এই বাসার আড্ডায়, আমার যতোদূর মনে পড়ে, আমরা একলগে আইতাম, একলগে যাইতাম, আড্ডা শেষে বন্ধুরে অর বাসায় গাড়ি চালাইয়া দিয়া আইতাম। আহা রে ... সোনালী বন্ধু রে ...

ওই রাইতের আড্ডার কথা আমার এখনো মনে পড়ে, সকালে বাথরুমে দাঁত মাজতে গেলে এখনো আয়নায় মাঝে মাঝে বন্ধুরে দেখি, দেইখা হাসি আসে আবার দুঃখও লাগে; বন্ধুরে আমি খুব পছন্দ করতাম, এখনো করি, অর লগে আমার ঝগড়া লাগে প্রতি কথায়, তাও বন্ধুরে আমি ভালা পাই, বন্ধুর লগে এই শহরে বাসে, টিউবে, মুভিতে প্রচুর সময় কাটাইছি, অয় খাইতে পছন্দ করে, যতোটা আমি করি না, কিন্তু বন্ধুর লাইগা আমি অর খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিজের খাওয়া লাইরা গেছি, লারতে লারতে অর কথা শুইন্যা গেছি, অর অফিসের কথা শুনছি, অফিসের পার্টির কথা শুনছি, অয় যে বেশি মদ খাইয়া হুঁশ হারাইয়া ফেলে সেই কথা শুনছি, তারপর ডিসিশান নিছি আমার লগে থাইকা মদ খাইয়া যদি হুঁশ হারায়া ফেলে তাইলে আমি অরে দেইখ্যা রাখুম। আহা রে ... সোনালী বন্ধু রে ...

সেই বন্ধু একদিন মাঝরাইতে মদ খাইয়া আমারে ফালাইলা এক ব্যাডার হাত ধইরা ট্যাক্সিতে কইরা চইলা গেলে অনেক দুঃখ পাইছি, হাউকাউ কইরা চিল্লাচিল্লি করছি রাস্তার মাঝখানে দাঁড়াইয়া আরেক বন্ধুর লগে, মনে মনে ভাবছি আর যামু না অর কাছে, কিন্তু পরদিন বন্ধু ফোন করলে পোলাপানের মতো অভিমান কইরা কইছি, তুই আমারে ফালাইয়া গেলি ক্যান, আমার খিদা পাইছিল, ভাবছিলাম তোর বাসায় গিয়া ভাত খামু; বন্ধু সরি কইলে এরপর আমরা আরো অনেকদিন এই শহরের রাস্তায় হাঁটছি, পার্কে গিয়া শুইছি, পার্টিতে গেছি, রাইতে অরে বাসায় দিয়া ভোরে নিজের বাসায় ফিরছি, কিন্তু কখনো হাত ধরতে গেলে বন্ধু ফস কইরা উঠছে, চেইতা গিয়া কইছে, তুই এতো খচখচ করস ক্যান?; ধমক খাইয়া আমি ভাবতে থাকি বন্ধুর লাইগা আমার মন এতো টানে কেন, আর সেইটা ভাবতে ভাবতে মনে পইরা যায় এই শহরে আসার পর বন্ধুর জন্মদিনে রাইতের অন্ধকারে অর গালে আমি একটা ছোট্ট চুমা দিছিলাম। আহা রে ... সোনালী বন্ধু রে ...

আবার ওই রাইতের কাহিনীতে ফিরা আসি, যে রাইতে আমি হুইস্কি খাইছি, গাঞ্জা খাইছি, ভোদকা খাইছি, চিপস খাইছি, সিগারেট খাইছি অথচ ডিমভাজা খাই নাই; কারণ আমার খুব ঘুম পাইতেছিল নাকি আমারে কেউ কইছিল ওইদিনের মতো ডিম ভাজতে কিন্তু ঘুমের কারণে আমি রাজি হই নাই সেইটা মনে আসে না; রাত আরো গভীর হইলে আমি বন্ধুর লগে ঘ্যান ঘ্যান করি, চল যাইগা, অনেক তো গান হইছে; বন্ধু ধমকায়, তুই যা গা; তখন আমার চোখে পাহাড় ভাইঙ্গা ঘুম আসে, রান্নাঘরে গিয়া খিচুড়ি খাইয়া আমি পাশের ঘরে চইলা যাই, কতোক্ষণ পরে আমার ঘুম ভাঙ্গে জানি না, আমি বন্ধুর খোঁজে ওই রুমে যাই কারণ অরে বাসায় দিয়া আইতে হইব কিন্তু বন্ধুরে দেখি না, পরে পাশের রুমে গিয়া আমি তব্দা খাইয়া যাই, পাচ মিনিট খাড়ায়া থাইকা ফিরা আইসা খাটের উপর লেপের তলায় ঢুইকা যাই।

তখন বিভিন্ন শব্দরাজি আমার মাথায় ক্রমাগত ঠকঠক কইরা বাড়ি মারতাছিল, আহ .. উহ .. তুমি কিন্তু আমাকে ব্যথা দিচ্ছ সোনা ...

আহা রে ... সোনালী বন্ধু রে ...

0 মন্তব্য: