Monday 19 January 2009

হায়রে গাড়ি ..

পাথর নীলা যেমন অনেকের সহ্য হয়না, তেমনি শুনতাম ইলেকট্রনিক্স জিনিসও নাকি সবার সয় না। কেউ কেউ টিভি কিনলে নাকি দুই মাসেই সেটার পিকচার টিউব জ্বলে যায় আবার এমনও শোনা যায় কারো কারো টিভি ২০ বছর ধরে চলছে। ফ্রিজ কেউ কেউ দাদার আমল থেকেই চালাচ্ছে, কারো কারো ফ্রিজ নাকি আবার কিনার ছয় মাসের মধ্যেই ঠান্ডার বদলে গরম হতে থাকে। কারো কারো কমপিউটারের মাদারবোর্ড ক্র্যাশ করে, ভাইরাসের কারণে বার বার ফরম্যাট করতে হয়।


এক মোবাইল ছাড়া (তাও সাধারণ মানের) কোনোরূপ যন্ত্র আমি সাথে নিয়ে ঘুরি না। কোনো আইপড কিংবা অন্য কোনো সঙ্গীত শোনার যন্ত্রও আমার নাই। শখের মধ্যে আছে একটা গাড়ি। তো এই গাড়িই হলো আমার যন্ত্রণা। আমাকে ঠিকমতো আরাম দিতে পারলো না আজ পর্যন্ত।

বাংলাদেশে যখন গাড়ি চালাতাম তখন যা যা যন্ত্রণা পেয়েছি

  • জাহাঙ্গীরনগর থেকে আসার সময় গাড়ির ফ্যানবেল্ট ছিড়ে যাওয়া
  • মুন্সীগঞ্জ যাওয়ার পথে ফেরিতে ওঠার সময় গাড়ির বাম্পার বাড়ি খাওয়া
  • কাওরান বাজারে আন্ডারপাসের ঠিক সামনে গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যাওয়া। বাজারশুদ্ধ লোকের সামনে গাড়ি ঠেলা।
  • মারুতি চালাতাম বলে বাস কন্ডাক্টররা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বলত, ওস্তাদ বামে প্লাস্টিক ...
  • সামনের বামপাশের দরজার আয়না চিরদিনের মতো ফিক্সড হয়ে যাওয়া

লন্ডন এসে খান তিনেক গাড়ি পরিবর্তন করেছি। সর্বশেষ গাড়িটা চমৎকার চলছে। তবে যন্ত্রণার শেষ নেই। লন্ডনের যন্ত্রণাগুলো হলো
  • দুইবার থিওরি আর পঞ্চমবার প্র্যাকটিকাল পরীক্ষা দিয়ে লাইসেন্স পাওয়া
  • নতুন ড্রাইভার বলে উচ্চমূল্যের ইন্স্যুরেন্স (বাংলাদেশে এই হ্যাপাটা ছিল না)
  • গাড়ি কেনার তৃতীয় দিনে অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে গাড়ি উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া। ৪০০ পাউন্ড দিয়ে গাড়ি ছুটিয়ে আনা। (বাই দ্য প্রথম গাড়িটা কিনেছিলাম ৬০০ পাউন্ড দিয়ে)
  • প্রথমবার MOT (ফিটনেস) করাতে গিয়ে ৩০০ পাউন্ডে যন্ত্রাংশ সংযোজন
  • মাসখানেক পর পুনরায় অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে গাড়ি ক্ল্যাম্পড। এবার ১০০ পাউন্ডে গাড়ি উদ্ধার 
  • প্রচুর মদ্যপান করে গাড়ি চালিয়ে পুলিশের হাতে ধরা খাওয়া। পুলিশের মেশিন দিয়ে এ্যালকোহলের মাত্রা পরীক্ষা। ভাগ্যক্রমে আর হালকা চালাকির কারণে সেবার পরিত্রাণ পাওয়া (সে গল্প পরে করা যাবে)
  • রাস্তায় গাড়ির স্টার্ট প্রায়ই বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • সর্বশেষ হিথরো থেকে আসার সময় গাড়ির তলা ফুটো হয়ে ইঞ্জিন অয়েল নাই হয়ে যাওয়া
  • গাড়ি স্ক্র্যাপ (ভেঙ্গে ফেলা) করা
  • গাড়ি ছাড়া ইন্স্যুরেন্সের বাকি ৬ মাস ৯০ পাউন্ড করে পরিশোধ করে যাওয়া।
  • এই পর্যন্ত মোট ৪ বার স্পিডিংয়ের কারণে পুলিশের জেরার সম্মুখীন হওয়া।
  • স্পিডিংয়ের জন্য ক্যামেরা ফ্ল্যাশ খাওয়া। ফলাফল ৬০ পাউন্ড এবং ৩ পয়েন্ট জরিমানা। হাতে আছে আর মাত্র ৩ পয়েন্ট। এটাও খরচ হয়ে গেলে সর্বনিম্ন ২ বছরের লাইসেন্স বাতিল।
  • সর্বশেষ যন্ত্রণা গাড়ির সামনে পিছনে দুইদিকের নম্বর প্লেট চুরি হওয়া। ২৫ পাউন্ড দিয়ে নতুন নম্বর প্লেট সংযোজন।

এতোসব যন্ত্রণার পরে এখন 'লরির নিচে গাড়িসহ ঢুকে যাওয়া' ছাড়া আর কিছু বোধহয় বাকি নাই। আগামীকাল ২০ জানুয়ারি মঙ্গলবার ২০০৯ লন্ডন থেকে ম্যানচেস্টার রওয়ানা দিচ্ছি। ৪/৫ ঘন্টার জার্নি। জানি না কপালে কি আছে

0 মন্তব্য: