Saturday 3 January 2009

যেমন গেল ২০০৮

এই লেখাটির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে এবারও ২০০৮ সালের সালতামামি করছি।

জানুয়ারি মাস পুরোটাই গেছে দেশে যাবার তাড়নায়। ২০০৬ সালের এপ্রিলে দেশে যাওয়ার পর এবারই ২০০৮ এর ফেব্রুয়ারিতে দেশে যাই। এছাড়াও ভিসা বাড়াতে অনেকটা মানসিক প্রশান্তিতে ছিলাম।


ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখে দেশে যাই। প্রথম সপ্তাহ বেশ ফূর্তিতে কেটে গেলেও মা-র পীড়াপিড়ি ও নিজের হালকা ইচ্ছার কারণে বিয়ে করি। কুয়াশা নামের একটি অপরূপা মেয়েকে নিজের ভাগ্যের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলি। ফেব্রুয়ারির ১৩ তারিখে বিয়ে হয়। এটিই ২০০৮ সালে আমার জন্য সবচেয়ে বড় ঘটনা। এরপর হানিমুনে যাই সেন্টমার্টিন। অনেকদিনের ব্যাচেলর জীবনের সমাপ্তিতে প্রথম প্রথম একটু অস্বস্তিতে ভুগলেও পরে মানিয়ে নিই। নতুন বউকে ফেলে লন্ডন ফিরে আসি মার্চের প্রথম সপ্তাহে।

স্বাভাবিকভাবেই মার্চের পুরো সময়টা আমার কেটে যায় বউয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলায়। সাধারণত ৫০-৬০ পাউন্ডে আমার মোবাইল খরচ চলে গেলেও মার্চ-এপ্রিল-মে এই তিন মাসে আমার মোবাইল বিল ১৯২-১৯৪-১৯৮ পাউন্ড বিল আসে। কি আর করা ...

বছরের প্রিয় মাস এপ্রিলে সচলায়তনে একটি পোস্ট দেই। কিন্তু ডুয়েল পোস্টের অভিযোগে আমার সে পোস্টটা প্রথম পাতা সরিয়ে নিলে সচলায়তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার খটমট লেগে যায়। বিভিন্ন প্রমাণ হাজির করা স্বত্ত্বেও সচল কর্তৃপক্ষের একগুয়েমি, স্বজনপ্রীতি আর দ্বৈতনীতির কারণে বিরক্ত হয়ে সচল ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত নিই।

পাশাপাশি চালু হয় আমারব্লগ.কম। এখানেই মনোনিবেশ করি। এদিকে বিয়ে পরবর্তী অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য ঢাকায় ফোন যোগাযোগ বেড়ে যায়, বউয়ের সঙ্গে টেক্সট আর ফোন তো চলছ্ই। লন্ডনের বন্ধুবান্ধরা ব্যাচেলর পার্টির আয়োজন করে। পাশাপাশি বউকে লন্ডনের আনার কাগজপত্র ঠিকঠাক করতে থাকি। এভাবেই কেটে যায় মে পর্যন্ত।

মে-র শেষ সপ্তাহে আবার ঢাকা যাই বিয়েত্তোর অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য। বউয়ের একান্ত ইচ্ছা ও অনুরোধের কারণে বিভিন্ন যোগাড় যন্ত্র করতে করতেই সময় কেটে যায়। অবশেষে ৩০ মে একটি সফল অনুষ্ঠান করে জুন মাসের ৯ তারিখে বউকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডন ফিরে আসি।

পরদিন ১০ জুন বউকে সাথে নিয়ে পিসিওয়ার্ল্ড থেকে কমপিউটার কিনি ৯০০ পাউন্ড দিয়ে। পকেটের অবস্থা ঠনঠন হলেও বাই নাউ পে লেটার সুবিধায় কমপিউটার কিনি। ইচ্ছা ছিল এতে এডিটিং কার্ড ও সফটওয়্যার লাগিয়ে কিছু খ্যাপের কাজ করব। কিন্তু সেটা আর করা হয় না। ব্লগিং আর মুভি দেখাতেই কমপিউটার বেশি ব্যবহার হচ্ছে।

পূর্বের বোহেমিয়ান লাইফের স্থিতি আসে বউ আসার পর। সিগারেট খাওয়ার পরিমাণও কমিয়ে দিয়েছি। বন্ধুদের সঙ্গে বাড়ি কেনার বাসনায় ব্যাংক থেকে লোন নিই ১০ হাজার পাউন্ড। বাড়ি আর কেনা হয় না, এদিকে টাকাও খরচ হয়ে যাচ্ছে। তাই তাড়াতাড়ি আগের গাড়িটা বেচে অক্টোবরে নতুন একটা গাড়ি কিনি - হোন্ডা সিভিক। কম পয়সার গাড়ি চালিয়ে নানান হ্যাপা আর পোহাতে ইচ্ছা করল না। তাই এবার ২৫০০ পাউন্ড খরচ করলাম। মাশাল্লাহ গাড়ি এখন পর্যন্ত খুব ভালো চলছে।

ব্লগিং যেহেতু জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে তাই পুরো বছর জুড়েই ব্লগিং করে গেছি। সচল থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় আর সামহোয়ারে ব্যান খেয়ে থাকায় আমারব্লগ.কম-এ বেশি সময় দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি নিজের ব্লগকে আরো একটু সাজিয়েছি। কমিউনিটি ব্লগগুলো ছাড়াও যারা নিভৃতে ব্লগিং করে যাচ্ছে তাদের ব্লগগুলোতেও ঢুঁ মারা হয়েছে। ব্লগে সারাবছর যতোটুকু সম্ভব জামাতের বিরোধিতা করে গেছি।

বিভিন্ন জায়গা থেকে এ বছর চাকরির অফার এসেছে। কিন্তু ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতার কারণে চাকরির বর্তমান জায়গা ছাড়তে পারছি না। সারা বছরই তড়পাড়ানোর মধ্যে ছিলাম কোনো কিছু নির্মাণ না করতে পারায়। মাঝে মাঝে মনে হয়েছে এতোদিনের গ্যাপ পূরণ করে আবার উঠে দাঁড়াতে পারব কিনা। আত্মবিশ্বাসে হালকা চিড় ধরছে। তবে এ বছর বরাবরের মতোই প্রচুর ছবি দেখেছি। ২০০৭-এ বেশি দেখেছি ইউরোপিয়ান ছবি আর গেল বছর দেখলাম কোরিয়ান, থাইল্যান্ড, চিন আর জাপানি ছবি। পাশাপাশি কিছু বই-ও পড়তে শুরু করেছি ফিল্মের উপর।

বছরের শেষ নির্বাচনের খবরে খুব খুশি হয়েছি। আমার মাতৃকূল (মাতা সহ) আওয়ামীপন্থী হয়ে বিভিন্ন পদ দখল করে রাখলেও আমার আওয়ামী প্রীতি নেই। শফিক রেহমানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় কেউ কেউ বিএনপিপন্থী ভেবে থাকলেও আমি সেটা নই। এ নির্বাচনের জামাতের ভরাডুবীতে আমি সবচেয়ে খুশি। তবে এই ডিসেম্বরে প্রচন্ড ব্যস্ত ছিলাম।

২০০৯ কেমন কাটবে? খুবই খুবই ব্যস্ততায়। অনেক অনেক পরিকল্পনা রয়েছে এ বছর। ছবি নির্মাণের জন্য এ বছরটাই হবে আমার ভাবনাচিন্তার বছর। তাই ২০০৯ এ আমাকে ব্লগে খুব কম পাওয়া যাবে। আমার সামগ্রিক ধ্যান ধারণা এখন ছবি নির্মাণকে ঘিরেই চলছে। ছবিটি হবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক। মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে এই একটি ছবিই আমি নির্মাণ করব। দোয়া কইরেন যেন সফল হই।

2 মন্তব্য:

Anonymous said...

আপনার ও ভাবীর জন্য অনেক শুভেচ্চা রইল। ২০০৯ হোক আপনাদের সাফল্যের বছর। মুক্তিযুদ্ধের ছবি দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

Ahmed Arif said...

নতুন বছর শুভ হোক। ভাবিকেও আমার পক্ষ থেকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাবেন। আপনার সিনেমা দেখার অপেক্ষায় রইলাম। "প্রজাপতিকাল" দেখার পর থেকেই আমি আপনার কাজের ভক্ত।