Monday 14 July 2008

পালকি সমাচার

বউ মেসেজ দিয়া কইল - আপনার ঘরে আমি পালকি চড়ে যেতে চাই।

ব্যস, আমি ঢাকায় ফোন করে পুরান ঢাকার এক বন্ধুকে বউয়ের খায়েশ জানিয়ে এ সংক্রান্ত যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করে রাখতে বললাম। বন্ধু আশ্বস্ত করল আমাকে। এর প্রায় একমাস পর ঢাকায় নেমে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করতেই বলল, কোনো টেনশন করিস না। ঢাকা শহরে পালকি যে ভাড়া পাওয়া যায় এটা আমি নিশ্চিত হয়েছি। এখন কষ্ট করে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

আমার মাথায় বাঁশ। হালায় কয় কি! ওর তো পালকি কনফার্ম করার কথা ছিল। এদিকে বিয়ের অনুষ্ঠানের বাকি আছে ৪ দিন, অনুষ্ঠানের ঝামেলা সারব না পালকি খুঁজব। মেজাজ খারাপ করে প্রথমে গেলাম কাঁটাবন। বিয়ের সামগ্রী বিক্রি করে এমন কয়েকটা দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল পালকি পাওয়া সম্ভব। এর জন্য ভাড়া লাগবে ২৫০০-৩০০০ টাকা। ডিপোজিট সমপরিমাণ। আর কনেবাড়িতে যাওয়ার ভাড়া বাবদ আরো ৫০০ টাকা। যদি নিজেই পালকি নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয় তাহলে টাকাটা লাগবে না। সবকিছুই ঠিক হলো কিন্তু সমস্যা হলো বেহারা পাওয়া যাবে না। তাহলে পালকি বইবে কে? এটা জানতে চাইলে দোকানদার একটা সাজেশন দিল। ৪ জন কামলা ভাড়া করে তাদের দিয়ে পালকি বহন করানো যায়। কিন্তু পোশাক। সেই ঐতিহ্যবাহী পালকিবেহারার পোশাক? সেটারও সমাধান মিলল। কমদামী ৪টা ফতুয়া আর শাদা লুংগি কিনে ফেললেই হলো। বেহারা সংকটে পড়ে আমি এ বুদ্ধিটাই গ্রহণ করলাম। তবে দোকানদারকে জানালাম যে আগামীকাল আমি কনফার্ম করব।

বউয়ের মেসেজ পাওয়ার পর লন্ডনে বসেই আমি চিন্তা করে রেখেছিলাম - বউ যদি পালকিতে চড়ে তবে আমি ঘোড়ার গাড়িতে চড়ব। সেই মোতাবেক পরদিন সকালবেলায় নিমতলী গেলাম ঘোড়ার গাড়ি অর্থাৎ টমটম খুঁজতে। আবার ভাবলাম টমটমে আমি আর পালকিতে বউ চড়ে আসবে অথচ কোনো মিউজিক থাকবে না তা কি হয়! তাই খোঁজ লাগালাম বাদকদল অর্থাৎ ব্যান্ড পার্টির।

নিমতলীতে টমটম খুঁজছি। একটা পেয়েও গেলাম। সবেমাত্র তৈরি করে রং লাগানো হচ্ছে এমন একটা টমটম পেয়েই মালিকের সংগে বাতচিত শুরু করলাম। ব্যাটা ১৮০০ টাকা চাইল। কি মনে করে তাকে বললাম আপনি বেহারা সহ পালকি আর ব্যান্ড পার্টি যোগাড় করে দেন। সে বলল চেষ্টা করে দেখবে। বিকালে একটা ফোন করতে বলল।

বিকেলে ফোন করতেই সে বলল, পালকি পাওয়া গেছে দিতে হবে ৬০০০ টাকা। বেহারার জন্য কোনো পয়সা লাগবে না। তাদের নিজস্ব পোশাকও রয়েছে। আর ব্যান্ড পার্টি বিভিন্ন ধরনের আছে। সর্বোচ্চ ২৪ জনের থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৪ জনের ব্যান্ড পার্টি। আমি ৪ জনের ব্যান্ড পার্টির কথা বলতেই জানালা তাদের ভাড়া হলো ১২০০ টাকা। কিছুক্ষণ মুলামুলি করার পর সব মিলিয়ে যা দাঁড়াল তা হলো

পালকি = ৫৮০০
টমটম = ১৬০০
ব্যান্ড = ১২০০

তবে এদের বখশিশ হিসাবের মধ্যে রইল না। সেটা আমার ইনসাফের উপর ছেড়ে দেয়া হলো।



এবার এলো ফুল সাজানোর বিষয়টি। কথা ছিল বিকাল ৪টার দিকে নিমতলী থেকে পালকি ভ্যানে করে আর টমটমে ব্যান্ড পার্টি নিয়ে শাহবাগ আসা হবে ফুল সাজাতে। সেখানে ফুল দিয়ে পালকি আর টমটম সাজিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আমার বাসায় আসবে। সেখান থেকে ৭টায় রওনা দিয়ে পৌঁছে যাব কনের কাছে, কমিউনিটি সেন্টারে। কিন্তু ফুল সাজানোতে অনেক সময় চলে যাওয়াতে পালকি আর টমটম আমার বাসায় এলো রাত ৮.৪৫ মিনিটে। সেখান থেকে রওনা দিব এমন সময় নামল ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি একটু থেমে আসতেই রওনা দিলাম টমটম চড়ে। আমার সামনে ভ্যানে করে পালকি যাচ্ছে। পেছনে ব্যান্ড পার্টি তারস্বরে বাজিয়ে চলছে বাংলা-হিন্দি নানান গান। অবশেষে সাড়ে নয়টায় কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছলাম।



বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রাতে বউকে চড়ানো হলো পালকিতে। আমি রওনা দিলাম ঘোড়ার গাড়িতে। কিছুদূর পর বন্ধুরা বলল, আগের দিনে বউয়ের পালকির পাশে জামাই হেঁটে যেত, আর তুই কিনা ঘোড়ার গাড়িতে। নাম ব্যাটা। আমিও চটজলদি লাফ দিয়ে নেমে পড়লাম। এরপর বাকি পথটুকু বউয়ের পালকির পাশে হেঁটেই বাসায় ফিরেছি।





পালকি বাসার সামনে থামতেই সবাই মিলে বউকে বরণ করে নিল।

0 মন্তব্য: