Monday 21 July 2008

এ্যারে হুমায়ুন্যা … বালাছোত নি?

আইজকাইল সবাই বলা শুরু করছে যে বিশেষ কইরা ১২ থিকা ১৬ বছরের বাঙালি পুলাপাইনরা হুমায়ূন পইড়া বই (আউট বই) পড়ার অভ্যাস করছে। শুইনা আমার খটকা লাগে। পড়ার অভ্যাস করছে মানেটা কি? ১২ বছরের হওনের আগে কি ওই পোলাপাইন আর কোনো বই পড়ে নাই! ঠাকুমার ঝুলি, ঈশপের গল্প এসব কি আর নাই! যদি নাই থাকে নিশ্চয়ই রংচংয়া কোনো না কোনো বই তো বের হইছ। তাহলে এসব পড়া বাদ দিয়া ১২ থিকা ১৬ বছর পর্যন্ত ওয়েট করছে হুমায়ূন পইড়া বই পড়া অভ্যাস করণের লাইগা?
এসব শুনে আরো মনে হয় আমার বয়স বাইড়া গেছে। কারণ আমি ছুডুবেলায় যখন বই পড়া অভ্যাস করছি তখন হুমায়ুনরে চিনতাম না। বই পড়ছি কুয়াশা, দস্যু বনহুর, আর সবচেয়ে বেশি বই পড়ছি সেবা প্রকাশনীর। আমার বই পড়ার অভ্যাস করছে সেবায়। পরে ‘সৌরভ’ দিয়া হুমায়ূনের সাথে পরিচয়। আস্তে আস্তে হয়ে উঠেছি সর্বভুক। প্রথম প্রথম হুমায়ুন ব্যাডার লেহা পছন্দ করতাম। পরে যখন দেহি হালায় আগডুম বাগডুম লিখতাছে তখন বাদ্দিয়া দিছি। হের লেখা এহন টয়লেট টিস্যুর লাহান।


হুমায়ুনের নাকি একটি নির্দিষ্ট পাঠকশ্রেণী আছে। তারা কারা? স্কুলের শেষের দিকের থেকে শুরু করে কলেজ পড়ুয়া সবাইকে নিয়ে ভার্সিটির প্রথমদিকের ছাত্রছাত্রী পর্যন্ত সবাই নাকি হুমায়ুনের পাঠক। আগেই বিভিন্ন ফোরামে, ব্লগে বলা কথায় জেনে গেছি যে হুমায়ুন এদের পাঠাভ্যাস করিয়েছে আর তাই তারা বই পড়ছে। কিন্তু কি বই? হুমায়ুনই শুধু?
হ্যা কথা সত্য। হুমায়ুন যদি কোনো পাঠক তৈরি করে থাকে তবে সে শুধু হুমায়ুনপাঠক তৈরি করেছে। ওইসব পাঠকদের হুমায়ুনের বই পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়েছে, বই পড়ার অভ্যাস তৈরি হয়নি। হুমায়ুনের বই যারা পড়ে তারা অন্য কোনো লেখকের বই পড়তে চায় না, মজা পায় না। জিগাইলে কয়, হুমায়ুন এতো মজা কইরা লেখে যে হেভ্ভি লাগে। অন্য বইগুলা এরম না।
আর তাই সবার মতো আমি মানতে পারি না যে হুমায়ুন বাঙালির পাঠাভ্যাস তৈরি করছে। হুমায়ুন তার নিজের নির্দিষ্ট পাঠকগোষ্ঠী তৈরি করেছে। ক্রেডিট দিতে চাইলে আমি রসময় গুপ্তরেও দিতে চাই। হেই ব্যাডায়ও বাঙ্গালির পাঠাভ্যাস তৈরি করছে। যদি ভালো কইরা কই, তাইলে সংবাদপত্রও বাঙালির পাঠাভ্যাস তৈরি করে।
এবার আসা যাক হুমায়ুনের নাটক-সিনেমা নিয়া। প্রথমেই বলে রাখি, হুমায়ুন আহমেদের যেসব নাটকের (এইসব দিনরাত্রি, অয়োময়, কোথাও কেউ নেই, বহুব্রীহি সহ আরো অনেক) প্রশংসা যা করা হয় তার একটাও তার নিজের পরিচালিত নয়। মোস্তাফিজুর, নওয়াজিশ, বরকতউল্লাহরা বানিয়েছেন এসব। হুমায়ুন আগে ভালো লিখতেন, ভালো পরিচালকেরা সেটা পরিচালনা করতেন। সো নো ক্রেডিট ফর হুমায়ুন।
এবার বলি তার অন্যান্য নাটকগুলার কথায়। যারা মিডিয়ার বাইরের লোক তাদের জানিয়ে রাখি অধিকাংশ নাটক হুমায়ুন নিজে পরিচালনা করেন না, তার এ্যাসিস্ট্যান্টরা করেন। তিনি তখন নূহাশ পল্লীর স্ইমিংপুলে সাঁতার কাটেন কিংবা খাস কামরায় কাউকে নিয়ে একান্ত সময় কাটান। যাক, সেসব বড়দের খাবার - আমাদের জন্য সেরেল্যাক। তো ইদানিংকালের তার নাটকে আমরা কি পাই? কোথাও কেউ নেইয়ের বাকের ভাইকে (অর্থাৎ সেরম একটা চরিত্র) আর কে কোন নাটকে দেখছেন মনে করেন তো? অয়োময়ের মির্জা সেই যে রাজ্য হারালো আর কোনো নাটকে সেটা আর ফিরে পেলো না। আমি উন্মুক্ত ফোরামে সবাইকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি, যে কেউ হুমায়ূনের ইদানিংকালের দশটি নাটক এনে দেন। আমি ভালো কোনো সম্পাদককে দিয়ে এডিট করিয়ে আলাদা একটি পূর্ণাঙ্গ নাটক বানিয়ে দিব। আপনারা ধরতেও পারবেন না। গড়পড়তা অন্যান্য নাটকগুলোর মতো এটিও একটি হুমায়ুনীয় নাটক বলে মনে হবে আপনার। এতোটাই ফালতু, এতোটাই স্বকীয়তাহীন।
হুমায়ুনের পরিচালিত ফিল্ম? আজকাল খারাপ লাগলেও সমালোচনা করা যায় না যদি তাতে মুক্তিযুদ্ধের কোনো ছাপ থাকে। আগুনের পরশমনি’র স্ক্রিপ্ট মোটামুটি মানের হলেও উৎরে গেছে কেন সেতো প্রথমেই বলে রাখছি। এরপরের ফিল্মগুলো? ভাই পয়সা আছে, নাম আছে। তাই ফিল্মের ক্যামেরা ভাড়া করে একটা নাটক বানিয়ে বড় পর্দায় দেখিয়েছে। তুমি চুদির বাল কেডা এসব বোঝার।
আজকাল হুমায়ুনকে ব্যক্তি আর লেখক হিসেবে আলাদা করে দেখার অনুরোধ জানানো হচ্ছে। হ ঠিক কথা। লেখক হিসেবে তিনি আগে খুব ভালো ছিলেন। এখন পচে গেছেন। ব্যবসায়ী লেখক। ব্যবসা খারাপ না, তবে কিসের ব্যবসা সেটা জানতে হবে। দুধ বেইচা মদ খাই নাকি মদ বেইচা দুধ খাই। মাইয়ার বান্ধবি শাওনরে বিয়া করাডা আমার কাছে অতো দোষের মনে হয় না। সেইদিক দিয়া হুমায়ুনরে ব্যক্তি হিসেবে আলাদাই ভাবতাছি। তবে বাংলাদেশের আমজনতারা এখনও আমার মতো এতো ডাইনামিক :-) চিন্তা করার পারে না। তাই এসব টাইপ লোকদের এরম অসম প্রেম একটু ভাইবা চিন্তা করনের কাম। ধরেন যেমন হুমায়ুনপাঠক আছেন তেনারা যদি এইসব অসমপ্রেম আর বিয়া করন শুরু করে তাইলে কি অবস্থা দাড়াইব?
লেখান হুমায়ুন আহমেদ - আপনার বাবা একজন শহীদ ব্যক্তি। আপনার প্রথম জীবনের দু:খকষ্টগুলো পড়েছি, জেনেছি। আপনার সহ পুরো পরিবারের প্রতি সমব্যথী, সহমর্মী হয়েছি। আপনার প্রথম দিকের লেখাগুলো আমি আজো পড়ি। ‘জনম জনম’ নামে একটি অসাধারণ উপন্যাস (আফসোস, এটাকে নিরন্তর নামে একটা ফালতু ছবি বানাইছে সাইদ) যিনি লিখতে পারেন তার কাছ থেকে আরো অনেক কিছু আশা করি। অথচ আপনি সবাইকে বুড়ো আংগুল দেখিয়ে আপনার মতোই লিখে চলেছেন। সম্প্রতি আপনি পত্রিকায় এদেশের মুক্তিযুদ্ধ আর শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে নিয়ে নাকি বিভ্রান্তিকর কথা বলেছেন। আমি সেসব মিস করেছি তাই বিশদ মন্তব্য করছি না। তবে আপনার কাছ থেকে আজো মুক্তিযুদ্ধের উপর কোনো ভালো লেখা পাইনি (জোছনা ও জননীকে গোণায় ধরি না)। রাজাকারদের বিরুদ্ধে একটা উঁচু শব্দ আপনার কণ্ঠ থেকে বের হতে শুনিনি। শহীদের সন্তান হিসেবে আপনার কর্মকান্ডকে যথেষ্ট মনে হয়নি আমার। আজকে চারিদিকে আপনাকে নিয়ে অতি স্বাভাবিকভাবে আলোচনা শুরু হয়েছে যা আমার মনে হয়েছে আরো আগেই শুরু হতে পারত। এতোসব ডামাডোলের মতো আপনি কেমন আছেন এখন? এই যে হুমায়ুন … ভালো আছেন তো? এই যে হুমায়ুন ….ভালো আছেন তো?
ধুর হালায় দেহি কানে হুনে না।
এ্যারে হুমায়ুন্যা … বালাছোত নি?

3 মন্তব্য:

Anonymous said...

টেস্ট কমেন্ট।

Anonymous said...

আপনি বিরাট গ্যানি লোক, যা বললেন সবই সত্যি হওয়ার কথা :)

তানবীরা said...

আপনাকে হুমায়ূন জবাব দিলে আমাদেরকে জানায়েন :)