Wednesday 30 September 2009

একটা সিনেমা বানাতে চাই - ০১

আমারব্লগের 'মুভিব্লগিং' ধারণায় আমি এক্সাইটেড। নতুন, যাদের ফিল্মমেকিং সম্পর্কে আগ্রহ আছে তাদের জন্যই এ ধারাবাহিক পোস্ট লিখব বলে ঠিক করেছি। পুরোনো, যারা ইতিমধ্যেই ফিল্ম কিংবা ভিডিও মিডিয়ায় কাজ করছেন তাদের জন্য এ পোস্টে কিছুই নেই। তবে নতুনদের উদ্দেশ্যে যে কোনো পরামর্শ তারা দিতে পারেন।





ফিল্ম নির্মাণের জন্য আপনাকে জানতে হবে শট কয় প্রকার। মূলত শট তিন প্রকার -

১. ক্লোজ আপ শট
২. মিড শট বা মিডিয়াম শট
৩. লং শট

এ তিন প্রকার শটকেই নানাভাবে খেলিয়েই ফিল্ম নির্মাণ করা হয়। নিচে স্থিরচিত্রের মাধ্যমে শটগুলো বোঝানোর চেষ্টা করছি।

ক্লোজ আপ শট মিড বা মিডিয়াম শট লং শট

এবার আসা যাক ক্যামেরা মুভমেন্ট নিয়ে। মূলত ক্যামেরা মুভমেন্ট তিন প্রকার -

১. টিল্ট আপ এন্ড ডাউন (ক্যামেরা উপর-নীচ আর নীচ-উপর করা)
২. প্যান রাইট এন্ড লেফট (ক্যামেরা ডান-বাম এবং বাম-ডান করা)
৩. জুম ইন এন্ড আউট (এটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন)

তো এই হলো ক্যামেরা শট আর মুভমেন্ট। মোটামুটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়া গেল 'কিভাবে' আর 'কি' ধারণ করবেন আপনার ক্যামেরায়। এবার আসা যাক আপনি কিরকম ফিল্ম বানাবেন।

আপনাকে প্রথমে একটি গল্প বাছাই করতে হবে। এ গল্প বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনার নিজস্ব চিন্তা ও উদ্দেশ্য কাজ করবে। আপনি বিনোদনমূলক কিছু বানাতে চান নাকি দর্শকদের উদ্দেশ্যে কোনো মেসেজ দিতে চাচ্ছেন সে সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। গল্প পাওয়া হয়ে গেলে এবার সেটার ভিজুয়ালাইজেশন করুন। ডিরেক্টরের কাজই হলো ভিজুয়ালাইজ করা আর সেটার পূর্ণাঙ্গ রূপ দেয়ার জন্য দক্ষ সহকর্মীদের (ক্যামেরাম্যান, এডিটর, লাইট ক্রু, সেট ডিজাইনার প্রভৃতি) সমন্বয় করা। তারপর সবার মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি হয় একটি পরিপূর্ণ ফিল্ম।

গল্পে/ উপন্যাসে অনেক কিছু সহজে লিখে ফেলা যায়। কিন্তু সেটার চিত্রধারণে সমস্যা থাকে। গল্পে গরুকে গাছে উঠানো গেলেও বাস্তবে সম্ভব হয় না। আবার গল্পে/ উপন্যাসে এমন অনেক কিছুই থাকে না, যেটা চিত্রায়ণের সময় আপনাকে দেখাতে হবে। উদাহরণ দিচ্ছি -

মজিদ মিয়া প্রতিদিন ভোরে তার জোয়াল কাঁধে নিয়ে অন্যের জমিতে হালচাষ করতে বের হয়।

এ লাইনটি হতে পারে আমারফিল্ম.কম এর জন্য ৩ মিনিটের একটি ফিল্ম। একজন আনকোরা কাউকে ভিজুয়ালাইজ করতে দিলে তিনি হয়তো নিচের বিষয়গুলোই ভাববেন -

১. মজিদ নামের একটি চরিত্র (অভিনেতা)
২. ভোরের সূর্য্য (প্রকৃতি)
৩. জোয়াল (প্রপস)
৪. গ্রামের মেঠো পথ (লোকেশন)

কিন্তু একজন পরিচালক লাইনটি নিয়ে আরো অনেক কিছুই ভাববেন, উপরের লাইনে যেসবের উল্লেখ নেই। যেমন, সূর্য্য উঠছে - এরকম একটি দৃশ্যই যথেষ্ট সেটা বোঝানোর জন্য। কিন্তু আরো প্রাণবন্ত এবং বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য পরিচালক এখানে অনেক কিছু করতে পারেন। তিনি দূর থেকে ভেসে আসা আজানের (ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক/ আবহ) ধ্বনি ব্যবহার করতে পারেন। উদীয়মান সূর্য্যের পর গ্রামের খালি মেঠো পথ কিংবা মুসল্লীরা নামাজে যাচ্ছে এরকম কিছু থাকতে পারে। মজিদ মিয়া অন্যের জমিতে চাষ করেন। তাই তিনি গরিব, বর্গাচাষী। সাধারণত বর্গাচাষীদের আর্থিক এবং সামাজিক অবস্থা ভালো হয় না। অতএব মজিদ মিয়ার শরীর একটি ময়লা গেঞ্জি এবং ন্যাতনেতে লুঙ্গি (কস্টিউম) থাকতে পারে। মজিদ মিয়ার বাড়িঘরের অবস্থা দেখানোর জন্য শট নেয়া যেতে পারে। তার বাড়ির উঠোনে মুরগীর বাচ্চাদের কিচিরমিচির।

এবার আমি আমার মতো করে মজিদ মিয়া প্রতিদিন ভোরে তার জোয়াল কাঁধে নিয়ে অন্যের জমিতে হালচাষ করতে বের হয় এ লাইনটির ভিজুয়াল করছি। আমি যেমনটি ভাবছি আপনার ভাবনা সেরকম নাও হতে পারে, পরিচালক ভেদে এই ভিজুয়ালাইজেশনের তারতম্য হয়।

১. বিস্তীর্ণ জমি পেরিয়ে দূরে দৃশ্যমান গ্রামের মাথা দিয়ে সূর্য্য উঠছে - এক্সট্রিম লং শট। কাট টু ...
২. গাছপালার ফাঁক দিয়ে সেই সূর্য্য দেখা যাচ্ছে - লং শট। কাট টু ...
৩. গ্রামের মেঠো পথ। সেই পথ ধরে হেঁটে আসছে একজন মুসুল্লি - লং শট। কাট টু ...
৪. মজিদ মিয়ার ঘর। ঘর থেকে মজিদের বউ জমিলা বের হয়ে ক্যামেরার ডান দিক দিয়ে বের হয়ে যায় - মিডিয়াম লং শট। কাট টু ...
৫. মুরগীর খোয়াড়ের দরজা। জমিলার হাত প্রবেশ করে দরজা খুলে দেয়। একটা মুরগী ঝটপট বেরিয়ে যায়। ক্লোজ শট। কাট টু ...
৬. উঠান, মুরগীর খোয়াড়, গরুর গোয়ালঘর সহ মজিদের পুরো বাড়ি। জমিলা সবগুলো মুরগী বের করে গোয়াল ঘরের দিকে রওনা দেয় - লং শট। কাট টু ...
৭. মজিদের ঘরের দরজা। মজিদ বেরিয়ে এসে চোখ কচলায়- ক্লোজ শট। কাট টু ...
৮. গোয়াল খাবারের গামলা। ক্যামেরা ক্লোজ শট থেকে জুম আউট হচ্ছে - দেখা যাচ্ছে গরুর মুখ - জুম আউট হচ্ছে - এবার গরুর মুখ সহ জমিলাকে দেখা যাচ্ছে - জুম আউট হচ্ছে - এবার মজিদ ফ্রেমে প্রবেশ করে - ক্যামেরা মিডিয়াম লং শটে ফিক্সড হয় - মজিদ গোয়াল ঘর থেকে জোয়াল হাতে নেয়।
৯. গ্রামের মেঠো পথ। ক্যামেরা গাছ থেকে টিল্ট ডাউন হয়ে নেমে আসে। মজিদ জোয়াল হাতে গরুসহ হেঁটে আসছে। লং শট। কাট টু ...

এভাবে দৃশ্য গেঁথে গেঁথে আপনার গল্পটি তুলে ধরবেন দর্শকের কাছে। এর সঙ্গে আপনি আজানের ধ্বনি, পাখির/ মুরগীর কিচিরমিচির, গরুর হাম্বা ইত্যাদি আবহ মিশিয়ে দৃশ্যটি প্রাণবন্ত করে তুলবেন।

কিন্তু নতুনদের জন্য ক্যামেরার এতো শট আর ক্যামেরার স্থান পরিবর্তন জটিল হতে পারে। অথবা আপনি এতোসব কষ্টই করতে চান না অথচ আমারফিল্ম.কম এ ভিডিও আপলোড করতে চান। তাহলে? আপনাদের জন্য সহজ উপায় হচ্ছে এ পদ্ধতিতে এগোনো - লং শট > মিডিয়াম শট > ক্লোজ শট > ক্লোজ শট > মিডিয়াম শট > লং শট > ক্লোজ শট > ক্লোজ শট > ... ... ... লং শট >

আজকে জিয়া ভাইয়ের পোস্টের ভিডিওটা একটু দেখি। ইউটিউব থেকে এমবেড করে দিলাম।



ভিডিওটি জিয়া ভাই হয়তো এমনিই তুলেছেন। কিন্তু চাইলে ক্যামেরাতেই এডিট করে করে তিনি সুন্দর একটি ভিজুয়াল তৈরি করতে পারতেন যদি লং>মিড>ক্লোজ এই ফর্ম্যাটে এগোতেন। ভিডিওর প্রথমে জিয়া ভাই ক্যামেরা রাইট প্যান করে তীরে গেছেন। গুড। এরপর ক্যামেরার রেকর্ড স্টপ করে তিনি জুম ইন করে তীরের নৌকাকে মিড শটে তুলতে পারতেন। এরপর রেকর্ড স্টপ করে তীরের দোকানগুলো রেকর্ড করতে পারতেন একই ফ্রেমে। এরপর রেকর্ড বন্ধ করে ঢেউয়ের বা বালি তটের দৃশ্য ধারণ করতে পারতেন। আপনি যতোই এ্যামেচার হোন না কেন এভাবে ভিডিও তোলার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে তা অনেক দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠবে।

আপাতত এটুকুই। আমারফিল্ম.কম এ আপনার ফিল্ম দেখার প্রত্যাশায় রইলাম।

0 মন্তব্য: