Thursday 13 November 2008

আমি কেন বাংলাদেশেই ফিল্ম বানাতে চাই


সচলে সুমন চৌধুরির লেখাটা পড়লাম। হাজারো ভিড়ের মাঝে আমার প্রডাকশন তার ভালো লেগেছে শুনে ভালো লাগল। থ্যাঙ্কস সুমন চৌধুরী। তবে আক্ষেপ রয়ে যাচ্ছে আরো ভালো প্রডাকশন বানাতে পারছি না বলে। সবাই প্রশ্ন করে যে লন্ডনে মিডিয়ার সঙ্গে আছি অথচ নিয়মিতভাবে নাটক বানাচ্ছি না কেন? আসলে এখানে মনের মতো কাজ করার সুযোগ নাই। প্রথমত রয়েছে আর্টিস্ট প্রবলেম। এখানে সবাই অ্যামেচার। যদিও তাদের শিখিয়ে নিয়ে কাজ করা যায় কিন্তু সবাই কোনো না কোনো প্রফেশনে জড়িত। তাই শিডিউল মেলানো টাফ হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত রয়েছে শুটিং কিংবা ফিল্মিংয়ের সমস্যা। লন্ডনের রাস্তাঘাটে যেনতেনভাবে ক্যামেরা নিয়ে ফিল্মিং করা যায় না। অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে, না থাকলে পুলিশ মামুরা হাজির। কোর্সের এ্যাসাইনমেন্ট বলে আর কতো পার পাওয়া যায়। রয়েছে হ্যান্ডস বা লোকবলের সমস্যা। লাইট, বুম, ট্রাইপড ছাড়াও মনিটর, স্ক্রিণ এসব বহন কিংবা ধরার লোক নাই। তাই শুধুমাত্র ক্যামেরা আর প্রাকৃতিক আলোর উপর নির্ভর করে, লুকোচুরি করে (যে কাজটা হুমায়ুন আহমেদসহ আরো আরো বড় বড় বাংলাদেশি পরিচালকরা দেশের বাইরে গিয়ে করে থাকেন) ফিল্মিং করাটা আমার ধাতে সয় না। লন্ডনে ফিল্মিং করব অথচ লন্ডন আই, টাওয়ার ব্রিজ এগুলো না দেখালে কিভাবে হবে! ফ্রান্সে গেলে আইফেল টাওয়ারের নিচে কিংবা গ্রিসে গেলে ওই যে খাম্বাগুলো আছে সেগুলার তলায় যদি আমার নায়ক-নায়িকারা একটু প্রেম করার সুযোগ না পায় তাইলে লন্ডন, ফ্রান্স বা গ্রিসে নাটক/সিনেমা বানাব কেন? পার্কে গাছের চিপায়, বাসার সামনের রাস্তায়, হোটেলের লবিতে কিংবা পরিচিতদের রেস্টুরেন্টে ১/২ সিকোয়েন্স থাকতে পারে, পুরো নাটক/সিনেমা নামানো যায় না।


দেশে স্যাটল করে ফিল্ম বানাব শুনলেই সবাই বলে - তবে এখানে নয় কেন? উত্তরে আমি বলি এখানে পারব না। প্রশ্নকর্তার উৎসাহের কমতি নেই, বলেন - লন্ডনে আছেন, মেইনস্ট্রিমে জায়গা নিতে পারবেন না? আমি বলি, জায়গা নিতে পারলেও ফিল্ম বানানো আমার দ্বারা সম্ভব হবে না। আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে, ক্যান! জায়গা পাইলে ফিল্ম বানাইতে পারবেন না ক্যান? আমি হতাশা ছড়িয়ে বলি, কারণ ম্যানচেস্টারের একটা বখে যাওয়া ছেলে তার মায়ের সঙ্গে ক্যামনে কথা কয় সেইটা আমি জানি না।

একটা ফিল্ম শুধু কিছু ছবির ধারাবাহিকতা রক্ষা করে একটা ঘটনার বয়ান করে যাওয়া নয়। তাতে অনেক অনুসঙ্গ আছে। এদেশে থেকে সেগুলো আমি করতে পারব না। আমি জানি না এখানকার ১২ বছরের মেয়ের জীবনে কোনো ছেলেকে ভালো লাগার প্রথম অনুভূতি কিরকম হয়, আমি জানি না এখানকার একটা কবির ভাবনাগুলো কিরকম। এরকম অনেক কিছুই আমি জানি না। এগুলো জানতে হলে আমাকে প্রচুর সময় প্রচুর মানুষের সঙ্গে বিভিন্ন স্তরে মিশতে হবে। তাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে একাত্ম হতে হবে। কিন্তু সেই মাইকেল মধুসূদন টাইপের প্রচেষ্টা আমার দ্বারা হবে না। এতে করে জীবনের আরো ২০/২৫টা বছর দিতে হবে। ভুলে যেতে হবে আমি বাঙালি - যা একেবারেই অসম্ভব।

টিভিতে দেখা অথবা অল্পবিস্তর এদেশি মানুষের সঙ্গে যা মিশেছি কিংবা পত্রিকায় পড়ে যতোটুকু জানছি সেই অভিজ্ঞতা যথেষ্ট নয় একটি ফিল্ম বানানোর জন্য। আমার শুভাকাঙ্ক্ষিরা আমার ভালোই চায়। আমাকে মনে করিয়ে দেয় ভারতীয় চিত্রপরিচালক মীরা নায়ার, দীপা মেহতা, গুরিন্দারদের কিংবা হালের বাংলাদেশি বংশদ্ভুত পরিচালক সাদিক আহমেদের কথা। তারা দেখতে চায় নেমসেক, ওয়াটার, বেন্ড ইট লাইক বেকহ্যামের মতো ছবিও আমি বানাতে পারি। আমি লজ্জিত হয়ে সবিনয়ে তাদের জানাই যে ওইসব পরিচালকরা হয় খুব ছোটবেলায় দেশ ছেড়ে এসেছেন কিংবা তাদের ছবির পটভূমিগুলো তাদেরই ছেড়ে আসা দেশ নিয়েই।

ভারতীয় ওইসব ছবিগুলোকে আমি হলিউড, কানাডিয় কিংবা বৃটিশ ফিল্ম কখনোই বলব না। ওইসব ছবির উপাদান তাদের অবস্থান করা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে না। দুয়েকটা হলিউড তারকা নিয়ে বাকি ৯৮% ভারতীয় অভিনেতা/ অভিনত্রিদের নিয়ে নির্মিত ছবিকে যেভাবে হলিউডি কিংবা বৃটিশ ফিল্মের আওতায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয় তা নিতান্তই হাস্যকর। বিজ্ঞজনেরা যে যাই বলুক কারিগরি সুবিধার কারণে কোনো ছবি কোনো দেশকে রিপ্রেজেন্ট করে না। আমি ভাবতে ভালোবাসি ছবির উপাদানই ছবির দেশ নির্দেশ করে।

এদেশে আমি তাহলে কি ধরণের ছবি বানাতে পারি? উত্তর খুব সোজা। বাংলাদেশি কমিউনিটি নিয়ে। ফোর্স ম্যারেজ, ইনস্টিটিউশনাল রেসিজম, বাংলাদেশিদের এদেশে ঘাঁটি ফেলার সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে ফাঁকে ফুকে দুয়েকটা ছবি বানানো যায়। ফান্ড হাতছাড়া করার কি দরকার ভেবে একটা 'অন্তর্যাত্রা'ও বানিয়ে ফেলা যায় কিন্তু তাতে ক্ষুধা মিটবে না।

আবার আসা যাক এদেশের প্রেক্ষাপটে। ধরা গেল যে আমি বৃটিশ ফিল্মের ইন্ডাস্ট্রিতে একটা ছবি বানানোর ফান্ড পেলাম। ছবির সাবজেক্ট কি হবে? প্রথমেই বলেছি যে আমি এদেশের কালচার এবং কাস্টম জানি না। সেটাও কোনো সমস্যা না। পয়সা খরচ করলে স্ক্রিপ্টরাইটার পাওয়া যায়। আমি একটা স্ক্রিপ্টরাইটার ভাড়া করলাম। শ্যাডো ডিরেক্টর হিসেবে কাউকে রিক্রুট করলাম যে কিনা আমাকে সাহায্য করবে আর্টিস্টদের অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলার জন্য। তো সবশেষে আমার কাজ দাড়ালো ফ্রেমে আর্টিস্টের ইন-আউট আর ক্যামেরা কোন কোন জায়গায় বসবে সেটা নির্ধারণ করা। মা-ছেলের কথোপকথন চলছে, ছেলে খুব হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে। আমি ভাবতে চাইলেও পারব না বলতে ছেলেকে যে তুমি এবার হাত নাড়ানো বন্ধ কর। কি কারণে বলব? যেমনটা আমি বাংলাদেশের কোনো ছেলেকে বলতে পারি - মা কথা বলছে তুমি মাথা নিচু করে শুনে যাও, মাঝে মাঝে ঠোঁট কামড়াইও। এই যে একটা ডিরেক্টরিয়াল ইনপুট এটা আমি হাজারটা শ্যাডো ডিরেক্টর ব্যবহার করেও দিতে পারব না।

সাংস্কৃতিক বাধাটা থেকেই যাচ্ছে। একজন ডিরেক্টর যে দেশের কালচারটা বেশি বোঝেন তার সেদেশেরই কাহিনি, পটভূমি নিয়ে ছবি বানানো উচিত। ছবির কারিগরি সুবিধার জন্য নানান দেশের সুবিধাগুলো সমন্বয় করা যেতে পারে। কিন্তু ছবিটি যে দর্শকদের আপনি বেশি বোঝেন তাদের স্বাদমতো হওয়া দরকার।

এছাড়াও আমি যে ধারার ছবি বানাতে চাই সেটা বাংলাদেশেই সম্ভব। আহা-উহু, ময়না-টিয়া, স্বপ্নডানা-মনপুরা বানাইয়া আমি পত্রিকায় ইন্টারভিউ আর সোসাইটি সোসাইটি খেলা খেলতারুম না। ছবি বানাতে চাই না ১০/২০ জনের জন্য। আমার ছবিতে গান থাকব, নায়ক নায়িকারা নাচব কিন্তু বাদ্যযন্ত্র কই বাজতাছে কেউ কইতারব না। আমার নায়কের চুলের স্টাইল আর প্যান্টের সেলাই নকল হইব। নায়িকাগো কামিজের মাপে থানকাপড় বিক্রি হইব। রিক্সাওয়ালা ছবি দেইখা হল থিকা বারাইয়া কইব, নায়কিটা কি যে নাচন দিছে আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পোলামাইয়ারা কইব, what a nice movie. i really enjoyed it. মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ছাড়া আমার আর কোনো ছবি নাচ-গান ছাড়া হবে না।

এইসব স্বপ্ন বাংলাদেশেই পূরণ হওয়া সম্ভব। কতোদূর সফল হব বলতে পারছি না। তবে স্বপ্ন দেখতে দোষ নাই।

2 মন্তব্য:

Unknown said...

THANKS FOR USING THE CD COVER OF MY FIRST WRITTEN MOVIE TUMI AMAR. You have explained your self superbly. I don't know if you are still dreaming about making a film in Dhaka, but if you are, then I will be obliged to write for you. Abdullah Zahir Babu # 01924424142. Call me, if you need me.

সাইফুল ফারদিন said...

na vai apnare deai hobe dhakaiya film. monpura tura kono film naki? dui akta valo film koren. tarpor boro boro kotha koiyen............