Wednesday 25 July 2007

ভারতের দিনগুলো : শেষ পর্বের দ্বিতীয় কিস্তি (দেবযানীকে দেখব বলে ... )

এ্যালবামের পাতাগুলো ঝাপসা হয়ে গেছে। তারপরও একটা করে পাতা উল্টাচ্ছি আর বন্ধুদের ছবিগুলো দেখছি। যেন এখনই আমাকে এ্যালবামটি ফেরত দিতে হবে, তার আগে যতোটুকু পারা যায় মুখগুলো হৃদয়ে গেঁথে ফেলতে চাইছি। একপর্যায়ে আর পারলাম না, এ্যালবামের পাতাগুলো ভিজে যাচ্ছে। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। সিক্ত আমি, এ্যালবামটা বন্ধ করে দিই। জীবনে এদের সঙ্গে আর হয়তো দেখা হবে না। প্রিয়জন ছেড়ে দূরে যাওয়া আসলেই খুব কষ্টের। আমি চোখ মুছে একটু এলিয়ে বসি ...

... আমি দেবযানীর কাছে যাচ্ছি। ট্রেনটাকে খুব আপন মনে হলো। ঝিকঝিক শব্দে আমাকে ছুটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেবযানীর কাছে। আমি ভাবতে চেষ্টা করলাম দেবযানীর মুখটা। আশ্চর্য একদমই মনে পড়ছে না। নিজের উপর বিরক্ত হলাম। এটা কি হচ্ছে? দেবযানীকে প্রথম দেখার স্মৃতি হাতড়ালাম। ঝাপসা হয়ে ধরা দিল দেবযানী। আমি তাতেই খুশি।

ভাবতে লাগলাম দেবযানীর কথা। আমাকে দেখে নিশ্চয়ই খুশি হবে। স্টেশনে আসার কথা রিসিভ করতে। আচ্ছা ও কি ড্রেস পড়বে? দেবযানী একটু মোটাসোটা মেয়ে। একটু কি শুকিয়েছে? না থাক, ওকে একটু মোটাতেই বেশ মানায়। ও পরীক্ষার কথা বলছিল। প্রিপারেশন ভালো হচ্ছে কিনা কে জানে। ওকে বাংলাটা ভালো করে শেখাতে হবে। শুধু বলতে পারলেই কি হয় নাকি? বাঙালির মেয়ে বাংলাটা লিখতে পারে না - হতেই পারে না। বাঙালির সন্তান জীবনে প্রথম অক্ষরটি লিখবে - অ।

কিসব আবোল-তাবোল ভাবছি আমি ! ধ্যাত, দেবযানী তো আমার শুধুই বন্ধু। সেটাকে আরো খাঁটি করে তুলতে হবে। শুধু একবার দেখা আর দুটো চিঠি পেয়েই এতো কিছু ভাবার কোনো মানে হয় না। তবে আমি নিজেই বুঝতে পারছি দেবযানীর সঙ্গে দেখা হবার জন্য বেশ মুখিয়ে আছি আমি।

ঘুমানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু ঘুম আসছে না। দীর্ঘ চারমাস পর দেশে যাব। একটু ভয় ভয় লাগছে। মধ্যবিত্ত বাবার এতোগুলো টাকা খরচ করে `এডিটিং' শিখলাম, কাজ করে খেতে পারব তো? শঙ্কা জাগে মনে। `নাটক করা ছেলে এবার কিসব ছাইপাশ শিখে এসেছে' - বলে ত্যাড়া মন্তব্য করার মতো লোকের অভাব নাই। ধ্যাত, আগে যাই তো বাংলাদেশে।

আমি আবার দেবযানীর কথা ভাবতে লাগলাম। আমি কোথায় থাকব সে ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি দেবযানীকে। আমাকেও দেবযানী নিজে থেকে কিছু বলেনি। আমি গল্প বানাতে শুরু করি। দেবযানীরা হলো আদর্শ ফ্যামিলি। একভাই - একবোন আর বাবা-মা। আমি ভাবতে লাগলাম আমাকে নিশ্চয়ই দেবযানীর ছোটভাইয়ের সঙ্গে থাকতে হবে। আচ্ছা মধ্যরাত পর্যন্ত দেবযানীর সঙ্গে যদি গল্প করি ওর বাবা-মা মাইন্ড করবে না তো ? মনে হয় না। ওর বাসায় কি সিগারেট খাওয়া যাবে ? দেবযানী খুব একটা অপছন্দ করে মনে হয় না। আমি আর রোমেল যখন সিগারেট খাচ্ছিলাম তখন তেমন কিছু মনে করেনি দেবযানী। আমি ভাবতে থাকি, গভীররাতে আমি আর দেবযানী বসে গল্প করছি। গল্পের মাঝপর্যায়ে আমরা দুজনই হাত ধরে থাকি। কিন্তু কেউই খেয়াল করি না। গল্প যেন ফুরায় না। আমাকে ঠেলে ঘুমোতে পাঠায় দেবযানী ...

... ভাবতে ভাবতে নিজেই লজ্জা পেলাম। ইনস্টিটিউটে থাকতে এই চারটা মাস দেবযানীকে একদমই মনে পড়েনি। এমনকি ট্রেনে উঠেও দেবযানীর মুখটা অনেকট কষ্টে মনে করতে হয়েছে। অথচ এই আমিই কিন এখন দেবযানীকে নিয়ে লাভস্টোরি ভাবছি। তারচেয়ে বরং ঘুমিয়ে যাই।

আমি সত্যি সত্যিই ঘুমানোর আয়োজন করলাম। কাঁথা বের করে জড়িয়ে নিলাম। পরদিন ১১টায় ট্রেন বারাণাসী পৌঁছবে। দেবযানী স্টেশনে আসবে। দেখামাত্র কি বলব আমি? দেবযানীই বা প্রথম কি বলবে? এই যাহ। ওর জন্য তো কোনো গিফট নেয়া হলো না। কি ছোটোলোকি কারবার। আমাকে কার্ড পাঠাল, নিয়ম করে দুইটা চিঠিও পাঠাল। আর আমি কিনা কিছুই নিলাম না তার জন্য। নিজেকে কষে চটকানা দিতে ইচ্ছে করল।

মানুষ ঘুমাতে যায় খুব আরাম করে। আমি ঘুমিয়ে গেলাম নিজের উপর একরাশ বিরক্তি নিয়ে।

0 মন্তব্য: