Thursday 26 July 2007

'নদী'র নাম সই অঞ্জনা ...

আ আ আ আ আ আ আ ... ...

যতোটুকু সম্ভব মুখ হাঁ করে তারস্বরে চেঁচিয়ে যাচ্ছে একপাল ছেলেমেয়ে। আমিও মুখটা হাঁ করে আছি। গলায় অবশ্য কোনো শব্দ নেই। সে অবস্থায় আমি বাম থেকে ডান, ডান থেকে বামে চোখ ফেরাই। একাগ্রচিত্তে গলা সাধছে সবাই। আমি খেয়াল করতে থাকি কার কার আলজীব দেখা যায়।

নদীর কাছে এসে চোখ থামাই। গলাটা একটু বাড়িয়ে আলজীব দেখার চেষ্টা করি। পারি না, নিরাশ হই। ক্ষান্ত হয়ে আওয়াজ বের করি গলা থেকে। আ আ আ আ ... ...

= = = = =

ওয়ার্কশপ শেষে সবাই সিঙ্গাড়া খাবে ঠিক করে। আমি ধীরপায়ে জটলা থেকে, পরিকল্পনা থেকে সরে যাই। পকেটে আছে তিনটাকা। কলিজা সিঙ্গাড়ার দামও তিন টাকা। খুব বুদ্ধিযুক্ত কাজ মনে হয় না সিঙ্গাড়া খাওয়ায় শামিল হওয়া। বরং বাংলা ফাইভ কিনলেও আরো পঞ্চাশ পয়সা থেকে যাবে।

সিগারেট ধরিয়ে দোকান থেকে একটু সরে দাঁড়িয়ে কষে তিনচারটা টান দেই। লাস্ট তিন ঘন্টা সিগারেট খেতে পারিনি। ছেলেমেয়েরা বেরিয়ে আসছে। উঁকি দিয়ে দেখে দ্রুত হাঁটতে শুরু করি গেটের উদ্দেশ্যে।

= = = = =

চুমুর মতো শব্দ করে দুইটানে সিগারেট শেষ করে ফিল্টারটা মাটিতে পিষে ফেলি। তাকিয়ে দেখি নদী আসছে। চুলগুলে হাত দিয়ে পিছনে সরিয়ে দিই। নদী আরো কাছে আসে। সঙ্গে শাওন।

- কি ব্যাপার, সিঙ্গাড়া খাওয়ায় তো ছিলে না।
- ধ্যাত। ওইসব সিঙ্গাড়া আমার ভালো লাগে না।
- এখানে দাঁড়িয়ে আছ যে? বাসায় যাবে না?
- হ্যা। চল।

শাওন, নদী সহ হাঁটতে থাকি। ওরা কি নিয়ে যেন কথা বলছে। আমার কানে কিছুই যায় না। আমি নদীর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থাকি। একবার সরু হয়, আরেকবার প্রসারিত হয়, মাঝে মাঝে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে। নদীর দাঁতগুলো দেখার চেষ্টা করি। সোডিয়ামের মৃদু আলোয় গোণা যায় না। ধ্যাত, আমি চেষ্টা বাদ দিই। তারচেয়ে বরং আগামীকাল নদীর চোখের পাঁপড়ি গুণব।

= = = = =

শাওন একটু পর বিদায় নিয়ে চলে যায়। এতোক্ষণ চুপচাপ থাকা আমি কথা বলতে শুরু করি।

- তোমার নাম তো বেশ সুন্দর। নদী।
- হ্যা। সবাই তাই বলে।
- তোমার দেশের বাড়ি কই?
- ময়মনসিংহ।
- ওইখানে নদী আছে ?
- না। নদ আছে। ব্রহ্মপুত্র।
- ও ওইটা ময়মনসিংহে নাকি?
- হুমম।
- আমার বাবা একবার ময়মনসিংহ গেছিল। ওইখানকার মন্ডা খুব মজার হয়।
- ওইটা আসলে মুক্তাগাছা। একই কথা, অনেকে ময়মনসিংহের মন্ডাও বলে।
- তুমি গল্প লেখো ?
- মাঝে মাঝে লিখি তো।
- কোথাও ছাপা হয়েছে?
- যায়যায়দিনে পাঠিয়েছিলাম। ওরা ছাপায় না।
- আমারটা ছাপিয়েছে।
- ওমা তাই নাকি! কোন সংখ্যায়?
- চিঠি সংখ্যায়।
- আমারটা ডাস্টবিনে ফেলে দিছে মনে হয়।

আমি হাসি। যায়যায়দিনের প্রতি অসীম কৃতজ্ঞতায় মন ভরে যায়। মনে মনে প্রার্থনা করি, কখনোই যেন নদীর কোনো লেখা যায়যায়দিনে ছাপা না হয়। মুখে বলি,

- না না। লেখতে থাকো, ছাপা হবেই।
- আর হইছে। আচ্ছা আমি যাই।

রোকেয়া হলের কাছাকাছি টিচার্স কোয়ার্টারে আসতেই নদী বিদায় নিতে চায়।

- এখান দিয়ে কোথায় যাও? হলগেট তো আরো দূরে।
- হলগেট বন্ধ। কোয়ার্টারের ভিতরে একটা ভাঙ্গা দেয়াল আছে। আমি লুকিয়ে ঢুকে পড়ি। এতো রাত পর্যন্ত বাইরে থাকার পারমিশন নাই।
- আচ্ছা যাও। আগামীকাল দেখা হবে।

= = = = =

সোহরাওয়ার্দী পার্কের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবি, আগামীকাল ওয়ার্কশপে গ্রুপিং হবে। এনিহাউ ওর গ্রুপে থাকতে হবে। গ্রুপ প্রোডাকশনে চামে ওর হাত ধরে ফেলব। সিদ্ধান্ত নিয়েই বেশ খুশি খুশি লাগল। কিন্তু পরক্ষণেই ... হায় হায় !

এক সপ্তাহ হয়ে গেল অথচ ওর হাতের আঙ্গুলগুলো তো ভালো করে খেয়াল করলাম না। ধ্যাত ...

1 মন্তব্য:

Anonymous said...

luchamir r jayga pan na?