Wednesday 25 July 2007

ভারতের দিনগুলো (পর্ব ০৪) : অবশেষে দিল্লী

দেবযানীর সঙ্গে বেশ জমে গেল মধ্যদুপুরে। রোমেলও বেশ খাতির করে নিয়েছে। শুধু রোমেলের বন্ধুটা একটু চুপচাপ। দুপুরে ভাত খাওয়ার সময় দেবযানী বাড়ি থেকে আনা পটলের একরকম তরকারিও সেধেছিল আমাদের। যদিও আমরা কেউ খাইনি। সবাই ঠিকানা অদলবদল করলাম। দেবযানী আসলে থাকে বারাণাসীতে। শুনে আমি বেশ মজা পেলাম। ওকে বললাম, কোনো একদিন নিশ্চয়ই যাব। দেবযানীও আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখল। দেশে থাকতে শুনেছিলাম বারাণাসীতে নাকি অতি উৎকৃষ্ট প্রকারের বাঈজী নাচ হয়। দেখার খুব শখ ছিল। অবশ্য দেবযানীকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করিনি।

বারাণাসী চলে এলে দেবযানী নেমে পড়ে। বেশ করে টা টা দিলাম ওকে। জানালা দিয়ে অনেকক্ষণ মুখ বাড়িয়ে ছিলাম। আর কি কখনো দেখা হবে? সন্ধ্যার দিকে আলীগড় চলে এলো ট্রেন। রোমেল বিদায় নিল আমার কাছ থেকে। ঠিকানা আগেই নিয়ে রেখেছিলাম। বললাম, ফোন করব তোকে। দিল্লী থেকে মাত্র দেড় ঘন্টা দূর। চলেও আসতে পারি।

রোমেল চলে গেলে একদম একা হয়ে গেলাম। আক্ষরিক অর্থেই একা। খায়েঙ্গা, যায়েঙ্গা টাইপের হিন্দিদৌরাত্ম নিয়ে আমি পড়ে গেলাম মুশকিলে। এতোক্ষণ বুঝতে পারিনি ভিনদেশী অঞ্চলে আছি আমি। আমার বুকে ভয় ধরিয়ে কালকা থামল পুরোনো দিল্লী স্টেশনে। রাত তখন হয়তো আটটা হবে। কিছুই চিনি না। শুধু জানি পাহাড়গঞ্জ যেতে হবে। একটা অটো ঠিক করে চলেও এলাম। তবে রাতের অন্ধকারে বুঝতে পারিনি পুরোনো দিল্লী দেখতে কেমন?

বেশ ভালোই খাওয়া হলো দিল্লীকা লাড্ডু। ৩৫০/৪৫০ টাকার নিচে রুম পাচ্ছি না। আর আমার মাত্র এক রাতের জন্য দরকার। কেননা পরদিনই তো ইনস্টিটিউটে চলে যাব। ওইখানে হস্টেলে থাকব। যাই হোক ২৫০ টাকায় একটা রুম পেয়ে উঠে গেলাম। খুব তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলাম আমি সেইখানে।

পরদিন ইনস্টিটিউটে গিয়ে ভর্তি হই। একজন ইনস্ট্রাক্টর আমাকে সবকিছু ঘুরিয়ে, দেখিয়ে নিয়ে গেল এডিটিং রুমে। এডিটিং মেশিনগুলো দেখে আমার পছন্দ হলো না (এইপ্রথম আমি এডিটিং মেশিন দেখছি, ঢাকায় থাকতে দেখিনি)। আমি ভাবছিলাম কমপিউটার জাতীয় কিছু হবে। ভয়ে ভয়ে বললাম, মেশিনগুলো তো খুব পুরোনো মনে হচ্ছে। এগুলো কাজ করে? ইনসট্রাক্টর আমার কথা শুনে হিন্দিতে বলে উঠল, কেয়া বাত কোরো ইয়ার! এ্যায়সা ঘটিয়া মেশিনমে কাম সিখো তো বেসিক স্ট্রং হো যায়েগা। সামঝা ?

আমি উসখুশ করে বেরিয়ে আসি। পুরো টাকাটাই পানিতে গেল ভাবতে ভাবতে ক্যান্টিনে গিয়ে বসি। একটা ছেলে এগিয়ে আসে। নাম হলো সা'দ। ফয়েজাবাদের ছেলে। ক্যামেরার কোর্সকরতে এসেছে। পরিচয় হতেই বলল, চল কিছু খেয়ে আসি।

কেএসসি-তে গেলাম। ঢাকাতে তখনো এতো বড় আর চেইন কোনো ফাস্টফুডের দোকান ছিল না। এতোসব চেইন শপ দেখে মাথাটা হালকা ঘুরাল। টাইট জিনস আর টি-শার্ট পরা মেয়েদের দেখে তিষ্ঠাতে না পেরে একটা সিগারেট ধরিয়ে ফেল্লাম। যাইহোক খাওয়া দাওয়া শেষে স্বাভাবিকভাবেই আমি বললাম, বিলটা আমি দেই। দেখলাম সা'দ অতি স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টা মেনে নিল। বিল দিয়ে বেরিয়ে এলাম।

রাতে হস্টেলে আরো অনেকের সঙ্গে পরিচয় হলো। হরিয়ানা রাজকুমার, দিল্লীর ভাষ্কর্য, নেপালের গৌতম আর ধীরাজ। গুজরাটের বিশাল, কানপুরের মুকুল। কিন্তু পরদিন পরিচয় হলো কলকাতার শ্বাশতী আর দিল্লীর রাধিকার সঙ্গে।

রাধিকা ছিল সবচেয়ে সুন্দরি (আসলেই সুন্দরি) এবং সে ছিল এডিটিংয়ে। আমার রোল ১ আর রাধিকার ২। আমাদের নিয়ম ছিল সবাই রোল নম্বর অনুযায়ী বসবে। নিয়মটা এজন্যে যে, যখন 1 নম্বর মেশিন চালাবে তখন তার ডানপাশে ২ নম্বর আর বাম পাশে ১০ নম্বর (কেননা ব্যাচে ১০ জন ছাত্র ছিল) বসবে। যখন ২ নম্বর কাজ করবে তখন তার ডানপাশে ৩ নম্বর আর বাম পাশে ১ নম্বর বসবে। আর একারণেই ক্লাসে আমি আর রাধিকা সবসময়ই পাশাপাশি বসতাম। তবে ব্রেকের সময় রাধিকা চলে যেত। ওর হাজব্যান্ড ইয়াতিন (ভাগবান, বাবুল ছবির চিফ এ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর) তখন ডিরেকশনের ক্লাস করতো। রাধিকা তার জন্য অপেক্ষা করত। এই ফাঁকে আমি তখন শ্বাশতীকে খুঁজতাম। কলকাতার মেয়ে শ্বাশতী। আমি ধরেই নিয়েছিলাম শ্বাশতীর সঙ্গে আমার একটা ইটিসপিটিস হয়ে যাবেই। কেননা ও-ও হস্টেলে থাকত। তখন দিল্লীতে প্রচন্ড শীত।আমি নিশ্চিত ছিলাম শ্বাশতীর নিশ্চয়ই কোনো এক শীতের রাতে আমায় দরকার হবে ...

... তখন পর্যন্ত কিন্তু দেবযানীকে আমার একদমই মনে পড়েনি ...

0 মন্তব্য: