Wednesday 25 July 2007

ওটা মেয়ে গাংচিল। ছেলে গাংচিল এতো নিচ দিয়ে ওড়ে না।

পড়ন্ত বিকেল। সমুদ্রের তীরে আগত পর্যটকরা অপেক্ষা করছে সূর্য ডোবার। কেউ কেউ ক্যামেরা নিয়ে প্রস্তুত। উঠতি বয়সের তরুণেরা ঘোড়া (গাধাসদৃশ) দৌড়াচ্ছে। দূরে কিছু মেয়েরা হল্লা করছে। আর সবকিছু ছাপিয়ে শোনা যাচ্ছে সমুদ্রের গর্জন। শোঁ শোঁ শব্দ।

সবার থেকে একটু দূরে ঝাউগাছের আড়ালে বালুর উপর বসে আছে ছেলেটি ও মেয়েটি। মেয়েটি একমনে সমুদ্র দেখছে। ছেলেটি একটি কাঠি দিয়ে বালুতে আঁকিবুকি করছে। মেয়েটি আকাশ পানে তাকায়। কিছুণ পর মুখ নামিয়ে জিজ্ঞেস করে ছেলেকে, কার ছবি আঁকছ? ছেলেটি আঁকতে আঁকতে বলে, তোমার।

মেয়েটি মুখ বাড়িয়ে দেখে। ফিক করে একটু হেসেও ফেলে। তারপর আবার সমুদ্রের দিকে তাকায়। সমুদ্র যেন একটু বেশিই গর্জন করছে আজ।

সূর্য ডুবতে শুরু করেছে। সৈকতের সবার মধ্যেই যেন ফূর্তির জোয়ার। ছবি তোলায় ব্যস্ত সকলে। কিন্তু ছেলেটি তখনো মেয়েটির ছবি আঁকছে।

মেয়েটি গালে হাত দিয়ে সূর্যাস্ত দেখছিল। হঠাৎই বলে উঠল, দেখো দেখো ওই যে গাংচিল। ছেলেটি মুখ তুলে তাকায়। বলে, ওটা মেয়ে গাংচিল।

মেয়েটি অবাক হয়, তুমি কি করে বুঝলে ?ছেলে গাংচিল এতো নিচ দিয়ে উড়ে না। ছেলেটি ছবি আঁকায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

সূর্য প্রায় ডুবুডুবু। শেষ মুহূর্তের ছবি তোলার জন্য সবাই ব্যস্ত। ছেলেটিরও ছবি আঁকা শেষ। দুজনে উঠে দাঁড়ায়। বালুতটে আঁকা নিজের ছবি দেখে মেয়েটি খুব খুশি হয়। এগিয়ে গিয়ে ছেলেটির গালে আলতো চুমো খায়। এই প্রথম ছেলেটি হাসে। মেয়েটির হাত নিজের হাতে নেয়। ঠিক করে আগামীকালও ওরা ঠিক এ জায়গাতেই দেখা করবে।

এদিকে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। ডুবে যাওয়া সূর্যের লীলাভ আলোয় ঘর চিনে ফিরতে শুরু করেছে সবাই। প্রচন্ড বাতাস, সমুদ্রের গর্জন। বালুতটে আঁকা মেয়েটির ছবি বাতাসে মুছে যায়।

পরদিন। ছেলেটি এসে অপেক্ষা করে। আজকে ওর হাতে একটা গোলাপ ফুল। ফুল নিয়ে পায়চারি করতে থাকে ছেলেটি। কিন্তু মেয়েটি আসে না। অনেকণ অপেক্ষা করে ছেলেটি। বালিতে বসে ছবি আঁকতে থাকে। দূরে উড়ে যাওয়া গাংচিল গুণতে থাকে। তারপরও মেয়েটি আসে না। ছেলেটি অনেকণ অপেক্ষা করে চলে যায়।

তার পরদিনও ছেলেটি আসে কিন্তু মেয়েটি আসে না।

পরদিনও না।

তার পরদিনও না।

মেয়েটি আর এলোই না।

ছেলেটি কিন্তু প্রতিদিনই এসে অপেক্ষা করে।

হায়রে! ছেলেটি জানবে কি করে যে মেয়েটির বাবা বাসা চেঞ্জ করেছে এবং মেয়েকে অন্য কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি করে দিয়েছে।


নোটিশ : এটা আমার কোনো গল্প না। অনেক অনেক বছর আগে রহস্যপত্রিকায় এ গল্পটি (বিদেশী গল্প) পড়েছিলাম। হুবহু মনে নেই, নিজের মতো করে আবার লিখলাম। ভালো কথা এই গল্পটাই আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় লিখে এসেছিলাম।

0 মন্তব্য: