Sunday, 28 December 2008
২০০৮ নির্বাচনে বিজয়ী দলের জন্য মন্ত্রণালয় পুনর্বিন্যাস
Tuesday, 16 December 2008
নাট্য সমালোচনা : আনিসুল হক/ ফারুকী গংয়ের মশকরা
Thursday, 11 December 2008
ব্লগ পরিক্রমা : ব্লগারদের খবর জানবেন যেখানে
Friday, 28 November 2008
কলকাতার উপন্যাসিকদের উপন্যাস নিয়ে বাংলাদেশে টিভি সিরিয়াল বানানোর তীব্র প্রতিবাদ করছি
Saturday, 22 November 2008
নামচা ০২
Thursday, 13 November 2008
আমি কেন বাংলাদেশেই ফিল্ম বানাতে চাই
সচলে সুমন চৌধুরির লেখাটা পড়লাম। হাজারো ভিড়ের মাঝে আমার প্রডাকশন তার ভালো লেগেছে শুনে ভালো লাগল। থ্যাঙ্কস সুমন চৌধুরী। তবে আক্ষেপ রয়ে যাচ্ছে আরো ভালো প্রডাকশন বানাতে পারছি না বলে। সবাই প্রশ্ন করে যে লন্ডনে মিডিয়ার সঙ্গে আছি অথচ নিয়মিতভাবে নাটক বানাচ্ছি না কেন? আসলে এখানে মনের মতো কাজ করার সুযোগ নাই। প্রথমত রয়েছে আর্টিস্ট প্রবলেম। এখানে সবাই অ্যামেচার। যদিও তাদের শিখিয়ে নিয়ে কাজ করা যায় কিন্তু সবাই কোনো না কোনো প্রফেশনে জড়িত। তাই শিডিউল মেলানো টাফ হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত রয়েছে শুটিং কিংবা ফিল্মিংয়ের সমস্যা। লন্ডনের রাস্তাঘাটে যেনতেনভাবে ক্যামেরা নিয়ে ফিল্মিং করা যায় না। অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে, না থাকলে পুলিশ মামুরা হাজির। কোর্সের এ্যাসাইনমেন্ট বলে আর কতো পার পাওয়া যায়। রয়েছে হ্যান্ডস বা লোকবলের সমস্যা। লাইট, বুম, ট্রাইপড ছাড়াও মনিটর, স্ক্রিণ এসব বহন কিংবা ধরার লোক নাই। তাই শুধুমাত্র ক্যামেরা আর প্রাকৃতিক আলোর উপর নির্ভর করে, লুকোচুরি করে (যে কাজটা হুমায়ুন আহমেদসহ আরো আরো বড় বড় বাংলাদেশি পরিচালকরা দেশের বাইরে গিয়ে করে থাকেন) ফিল্মিং করাটা আমার ধাতে সয় না। লন্ডনে ফিল্মিং করব অথচ লন্ডন আই, টাওয়ার ব্রিজ এগুলো না দেখালে কিভাবে হবে! ফ্রান্সে গেলে আইফেল টাওয়ারের নিচে কিংবা গ্রিসে গেলে ওই যে খাম্বাগুলো আছে সেগুলার তলায় যদি আমার নায়ক-নায়িকারা একটু প্রেম করার সুযোগ না পায় তাইলে লন্ডন, ফ্রান্স বা গ্রিসে নাটক/সিনেমা বানাব কেন? পার্কে গাছের চিপায়, বাসার সামনের রাস্তায়, হোটেলের লবিতে কিংবা পরিচিতদের রেস্টুরেন্টে ১/২ সিকোয়েন্স থাকতে পারে, পুরো নাটক/সিনেমা নামানো যায় না।
Wednesday, 12 November 2008
Britain & Sex 2008 - Homosexuality and Safe Sex

আজ হলো শেষ পর্ব
Sunday, 9 November 2008
Britain & Sex 2008 - Home and Away

আজ হলো তৃতীয় পর্ব – HOME AND AWAY
Friday, 7 November 2008
Britain & Sex 2008 - Manhood and Monogamy
আজ হলো দ্বিতীয় পর্ব – MANHOOD AND MONOGAMY
Thursday, 6 November 2008
Britain & Sex 2008 - Quantity and Quality
গেল অক্টোবর মাসের ২৬ তারিখে বৃটেনের পত্রিকা The Observer একটি সাপ্লিমেন্টারি বের করে SEX UNCOVERED নামে। এতে বৃটেনবাসীর সেক্স ও তাদের চিন্তাভাবনাগুলো উঠে আসে। সেই জরিপের চুম্বক অংশগুলো ধারাবাহিকভাবে পোস্ট আকারে দেয়া হবে।
আজ হলো প্রথম পর্ব – QUANTITY AND QUALITY
Monday, 3 November 2008
আওয়ামী লীগের খুশির কারণ তারা ইলেকশনে জিতবে
Wednesday, 29 October 2008
এবার তবে নিজের ঘর সাজাই
Sunday, 26 October 2008
নামচা ০১
এ বছরের শুরুতেই বিয়ে করেছি। তাই সংসার গোছাতে সময় লেগেছে অনেক। নতুন বাসায় উঠেছি। বউয়ের ব্যাংক একাউন্ট, জিপি, ইন্স্যুরেন্স নাম্বার এগুলোর পিছে সময় দিতে হয়েছে। সবচেয়ে বেশি যা করতে হয়েছে তা হলো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ। খাওয়া দাওয়া ঠিক সময়ে করার প্র্যাকটিস চালু করতে বাধ্য হয়েছি। সবচেয়ে পীড়াদায়ক যে বিষয়টি মেনে চলছি তা হলো সময়মতো ঘরে ফেরা।
Saturday, 4 October 2008
নাস্তিকেরা কেন 'ইসলাম লইয়া' বেশি ফাল পারে?
তবে প্রথমে একটু প্রারম্ভিকা।
Friday, 3 October 2008
প্রিয় ব্লগার সুমন রহমান (বিদ্যাকূট) এর প্রতি
Friday, 12 September 2008
গাড়ি বয়ান ...
২০০১ সালে প্রথম নাটক পরিচালনা করি। বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে যা হয়, প্রথম কাজেই দেখিয়ে দেবার একটা প্রবণতা থাকে। আমার মধ্যেও সেটা ছিল। কিন্তু পরিণতি তেমনটা হয়নি। যা ভেবেছিলাম সেরকম করে নাটকটা বানাতে পারিনি। প্রথম কাজ হিসেবে অনেক ভুলত্রুটি রয়ে যায় (যা দেখলে এখনো বিব্রত ও লজ্জিত হই, যদিও সাধারণ দর্শকরা সেটা বুঝতে পারত না)। নাটকটি বিক্রির চেষ্টা করি এবং যথারীতি ফেল মারি। আমার মাথায় বাড়ি পড়ে ...
Monday, 18 August 2008
সম্পাদনার টুকিটাকি (পর্ব ০২)
এডিটিং বা সম্পাদনা বিষয়ক টুকিটাকি সিরিজের এটা দ্বিতীয় পর্ব। এখানে এডিটর বলতে আমরা ভিডিও এডিটর অর্থাত টিভি মিডিয়ার এডিটর ও তার কাজ সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব।
Tuesday, 12 August 2008
সম্পাদনার টুকিটাকি (পর্ব ০১)
Monday, 21 July 2008
ভারত, বিডিআর, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আর কিছু কথা
জরিপের কাজে আমি বাংলাদেশের অনেক জায়গাতেই ঘুরেছি। ইন্টারভিউয়াররা যখন হামলে পড়ত সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার যাওয়ার জন্য তখন আমি কোণে পড়ে থাকা পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, রংপুরের পীরগঞ্জ, খাগড়ছড়ির দীঘিনালা, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ, ভোলার মনপুরা কিংবা বরিশালের গৌরনদী তুলে নিতাম। আমার লজিক ছিল বাংলাদেশের বিখ্যাত জায়গাগুলোতে কোনো না কোনোদিন যাওয়া হবেই। তাই এই ফাঁকে অখ্যাত অঞ্চলগুলোতেই বরং যাই। তাই ঘটেছে। বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েছি কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন, বান্দরবানের চিম্বুকে-কেওকারাডংয়ে, সিলেটের জাফলংয়ে। আমার বরাবরই সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো বেশ পছন্দের ছিল। কি সেটা নদীপথের, পাহাড়ের কিংবা সমতলের।
একবার বৃষ্টি দেখতে গিয়েছিলাম সিলেটের জাফলংয়ে। ঝুমবৃষ্টির মধ্যেই আমরা ছোট ডিংগি নৌকায় নদী পার হয়ে একটা ছোট চাবাগানে যাই। এদিক সেদিক ঘোরাঘুরির পর একজন বিডিআর সদস্যকে দেখতে পেয়ে কাছে যাই। আমরা তো আনন্দে বৃষ্টিতে ভিজছি কিন্তু সেই বিডিআর রাইফেল কাঁধে ঝুলিয়ে ফুটো হয়ে ছাতায় বৃষ্টি আগলে দাঁড়িয়ে দূরে তাকিয়ে আছেন। বয়স হয়তে ৪০-৪৫ হবে। কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করি,
: আপনি কি দেখেন?
: ইন্ডিয়া। মানুষ।
: কই কিছুই তো দেখি না। খালি তো পাহাড়।
: আমি দেখি। ওই যে ওইদিকে দেখেন।
বিডিআরের নির্দেশিত দিকে আমি আঙ্গুল তুলে বলি,
: ওই দিকে ?
: আরে কি করেন। হাত নামান। হাত তুইলা দেখাইয়েন না।
: কেন? গুলি মারবে?
: মারতেও পারে।
: আচ্ছা ওরাও কি আপনারে দেখে?
: হ দেখে। ওরা দূরবীন দিয়া দেখে বাংকারে বইয়া।
: আপনের দূরবীন কই?
: আমি আল্লাহর দূরবীন দিয়া দেখি।
আমি লোকটার চোখে তাকাই। ভ্রু কুঁচকে ক্রমাগত চোখ এপাশ ওপাশ করে কি যেন খুঁজছেন। কাঁধ থেকে ঝুলে থাকা রাইফেলটা শক্ত হাতে চেপে ধরে আছেন। আল্লাহর দেয়া দুই দুরবীন তখন চকচক করছে।
: আচ্ছা কাদের অস্ত্র বেশি আধুনিক? বিডিআরের না বিসিএফের?
: আমাগো বন্দুকগুলা ভালো।
: কিরকম?
: ওরা তো একটা গুলি মাইরা মুইতা ঠান্ডা কইরা আবার গুলি মারে। আমরা ততক্ষণে অনেকগুলা গুলি করতে পারি। চাইনিজ মাল তো।
: তাইলে পেপারে যে এতো পড়ি বিএসএফ খালি বিডিআর মারে।
: কারণ ওগো সিস্টেম ভালো।
: কিরকম সিস্টেম?
: হাত তুইলেন না। আমি যেদিকে কই হেদিক তাকান। দেখছেন ওই যে গাছের নিছে একটা ছোট ঘর। ওইটা একটা ওয়াচক্যাম্প। ওইখানে কমপক্ষে ৪টা বিএসএফ আছে। তারপর ডানদিকে দেখেন আধামাইলও হইব না আরেকটা। দেখছেন?
: না।
: আরে বড় গাছটার আড়ালে। ওইখানে আরো ৪/৫ জন আছে। ওগো ক্যাম্পগুলার মধ্যে চলাচলের লাইগা গাড়িও আছে। এহন যদি আমারে গুলি মারে তাইলে একলগে কয়টা মারতে পারব চিন্তা করেন। আমি যদি বাঁইচাও যাই, নদী পার হইয়া ক্যাম্পে যাইতে পারুম না। কারণ গুলির শব্দে সব মাঝিরা নৌকা নিয়া ঘাটে যাইব গা ভয়ে। আমার কাছে ওয়ারল্যাসও নাই যে ক্যাম্পে খবর পাঠামু।
: তাইলে আপনারা এভাবেই ডিউটি করেন? ভয় লাগে না?
: কিয়ের ভয়? আমার কোনো ডর ভয় নাই।
ডরভয়হীন অকুতোভয় এই সীমান্তরক্ষীরে আবারও একলা ফেলে আমরা চলে যাই। অহেতুক আত্মতৃপ্তি নিয়ে ফিরি - আমাগো চাইনিজ মাল, ওগো বন্দুক দিয়া গুলি বাইরাইলে মুইতা ঠান্ডা করতে হয়। কিন্তু ভাবি না ওই ‘সিস্টেম’-এর কথা। আল্লাহর/ ভগবানের দুরবীন দিয়া সীমান্ত পাহারায় পাঠিয়ে দিই হান্নান আর কৃষ্ণপদদের।
* * * * * * * * * * * * *
আমি ইন্ডিয়ায় ছিলাম টানা চারমাস। অম্লমধুর অনেক অভিজ্ঞতা সেখানে হয়েছিল। ইন্সটিউটের অনেকের সঙ্গেই বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলাপ হয়েছিল। দুয়েকজন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিল, তুমি পাসপোর্ট নিয়ে এসেছ কেন এখানে? ইন্ডিয়ায় আসতে কি তোমাদের পাসপোর্ট লাগে? কই নেপালী কারো তো লাগে না।
এই অজ্ঞতা অবশ্য ইনস্টিউটের সবার ছিল না। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে সবারই একটা তাচ্ছিল্যভাব এবং আগডুম বাগডুম কল্পনা ছিল। এমনকি কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজিতে পাশ করা শ্বাশতীও তার কলেজ পর্যন্ত জানত বাংলাদেশে হিন্দুদের শুধু সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রামেই দেখতে পাওয়া যায়। অনেকে এমন ভাব করত যে, নেপাল আর বাংলাদেশ ইন্ডিয়ারই স্টেট। শুধু দেশ হিসেবে এদেরকে দেখা হচ্ছে আরকি। অনেকই বিশ্বাস করত, আইএসআই-এর আরেকটা সদর দপ্তর বাংলাদেশে আছে। তাদের এ ধারণা যে ইন্ডিয়ার মিডিয়ার তৈরি সেটা আর বলাবাহুল্য।
ইন্সটিউটে আমার একবার হাতাহাতি হয়েছিল একজনের সঙ্গে। ‘বাংলাদেশ - ইট ইজ জাস্ট ফর ইন্দিরা গান্ধী’ এই বাক্যটার বিরুদ্ধে আমার যুক্তিতর্ক সে মানতে পারে নাই। আমাকে সেদিন সে ‘পিটাই’ করত যদি আশেপাশের কেউ না ঠেকাতো। ‘পড়াই কে লিয়ে’ আসার পর আমি বাংলাদেশ নিয়ে এতো কথা কেন বলি?
* * * * * * * * * * * * *
সম্প্রতি বিএসএফ কর্তৃক বিডিআর নিহত হওয়ার ঘটনায় আমি অবাক হই না। পাশ্ববর্তী দেশ হিসেবে ইন্ডিয়ার এই দাদাগিরি নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশকে অলমোস্ট নিজের বাজারে পরিণত করে নিয়েছে। বাংগালি জাতিকে আমি সবসময়ই বিপণনবিমুখ একটি জাতি হিসেবেই দেখি। তার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে রয়েছে দুর্নীতি। আর তারই সুযোগে প্রতিবেশি এই দেশটি দাদাগিরি ফলাচ্ছে। টেলিভিশনে ইন্ডিয়ান সংস্কৃতি আর পাকিস্তানি ইসলামি জোশের ঠেলায় হারাতে বসেছি বাংগালি কালচার। মুক্তিযুদ্ধ সাহায্য করেছে বলে এদেশীয় কিছু সুশীলের আনন্দবাজারীয় দালালি আর মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত কুত্তার বাচ্চাদের পাকিস্তানি পদলেহনে অস্থির হয়ে গেছে পুরো বাংলাদেশ। আর এসবের গ্যাড়াকলে পড়ে হান্নান আর কৃষ্ণপদেরা ঈদ-পূজায় দেশে যেতে পারে না ….
…. মেজাজ হঠাৎই খারাপ হয়ে গেছে। আর লিখলাম না ….
এ্যারে হুমায়ুন্যা … বালাছোত নি?

Tuesday, 15 July 2008
‘আচার’ আর ‘নিয়মের’ মাঝে তফাৎ কি? কোনটা ‘আচার’ কোনটা ‘নিয়ম’?
ব্লগার শমশের বলল, নিয়ম থাকলে নিয়ম ভাংগার ইচ্ছাটাও বাড়ে। কথা সত্য, কিন্তু আমরা তো প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু নিয়ম মেনে চলছি। সব তো ভেঙ্গে ফেলি না। বাসে লাইন ধইরা উঠি, টয়লেটের সামনে নিয়ম মাইনা কিউ ধরি। আমরা এতো নিয়ম মেনে আবার তার বিরোধিতা করি কেন? এসব ভাবতে ভাবতে আরেকটি শব্দ মনে পড়ল - ‘আচার’।
আমাদের দেশে স্কুলের পোলাপান ক্লাস নিতে টিচার এলেই দাঁড়িয়ে যায়। জানি না এইটা নিয়ম কিনা। অর্থাৎ আমি যদি না দাঁড়াইতাম তাহলে কি টিচার আমাকে নিয়ম ভঙ্গের জন্য মারত? (যদিও এরম ফাজলামো বহুত করছি, ধরা খাই নাই)। নাকি এইটা অনেককাল আগে থেকে ফলো করে আসায় একটা নিয়মে দাঁড়িয়েছে।
কেউ মারা গেলে পাশের বাড়ি থেকে মৃতবাড়িতে তিনবেলা খাবার যায়। এটি শিওর কোনো নিয়ম ছিল না। মানুষ সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দীর্ঘদিন ধরে এটা পালন করে আসায় একটা আচারে পরিণত হয়েছে।
তারমানে কোনটা আচার আর কোনটা নিয়ম তার কিছু কিছু বোঝা যায়। কিন্তু সবগুলোই কি? সহজে বোঝার জন্য আচার আর নিয়মের সংজ্ঞা কি কি?
Monday, 14 July 2008
বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত কিভাবে দাঁড়িয়ে গাইতে হয়?
ফুটবল বিশ্বকাপে দেখতে পাই নানান দেশের জাতীয় সঙ্গীত নানান ভঙ্গিতে গাইবার ভঙ্গি। কেউ ডানবুকে, কেউ বামবুকে হাত রেখে, কেউ দুইহাত ভাঁজ করে রেখে কেউ ডান অথবা বামদিকে মাথা ঘুরিয়ে রেখে, কেউ কেউ থুতনি উর্ধ্বমুখে তুলে জাতীয় সঙ্গীত গাইছে। ধরে নিয়েছিলাম এই ভঙ্গিগুলো হচ্ছে সেসব দেশের জাতীয় সঙ্গীত গাইবার সময় শ্রদ্ধা প্রদর্শনের উপায়।
ছোটবেলায় স্কুলে পিটি করার সময় জাতীয় সঙ্গীত গাইতাম। সেই থেকেই চর্চা শুরু। পিটিতে আমরা দুইহাত (মুষ্ঠিবদ্ধ অথবা খোলা) রানের কাছে চেপে ধরে দুপায়ের মাঝে চারআঙ্গুল ফাঁক রেখে সটান সামনের দিকে তাকিয়ে হেড়ে গলায় গাইতাম। জানতাম সেটাই হলো নিয়ম। এভাবে দাঁড়িয়েই জাতীয় সঙ্গীত গাইতে হয় অথবা জাতীয় সঙ্গীত গাইবার সময় এ ভঙ্গিতেই দাঁড়িয়ে গাওয়াটাই নিয়ম। এভাবেই সম্মান দেখাতে হয়।
কিন্তু আজকে ইউটিউবে ক্লোজআপ ওয়ান ২০০৮ এর অডিশনের বিভিন্ন ক্লিপ দেখছিলাম। সেখানে চট্টগ্রামের অডিশনে দেখলাম অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগ বুকে হাত রেখে জাতীয় সঙ্গীত গাইছে। খটকা লাগল আমার কাছে। জাতীয় সঙ্গীত দাঁড়িয়ে গাইবার এই ভঙ্গি তো আমারদের নয়। নিয়ম কি চেঞ্জ হয়ে গেল?
দুইপায়ের পাশে দুই হাত সমান বিছিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইবার যে নিয়ম ছোটবেলায় শিখেছি এখন কি সেটা যার যার ইচ্ছেমতো ভঙ্গিতে গাওয়ার নিয়ম হয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনী কিংবা রাষ্ট্র/সংবিধান কি বলে? এ ব্যাপারে কেউ কি ডিটেইলস জানেন?
পোস্টটি আমারব্লগে দেয়ার পর বিভিন্নজন কমেন্ট করেছেন এরকম।
**************************************************
পালকি সমাচার
ব্যস, আমি ঢাকায় ফোন করে পুরান ঢাকার এক বন্ধুকে বউয়ের খায়েশ জানিয়ে এ সংক্রান্ত যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করে রাখতে বললাম। বন্ধু আশ্বস্ত করল আমাকে। এর প্রায় একমাস পর ঢাকায় নেমে বন্ধুকে জিজ্ঞেস করতেই বলল, কোনো টেনশন করিস না। ঢাকা শহরে পালকি যে ভাড়া পাওয়া যায় এটা আমি নিশ্চিত হয়েছি। এখন কষ্ট করে আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।
আমার মাথায় বাঁশ। হালায় কয় কি! ওর তো পালকি কনফার্ম করার কথা ছিল। এদিকে বিয়ের অনুষ্ঠানের বাকি আছে ৪ দিন, অনুষ্ঠানের ঝামেলা সারব না পালকি খুঁজব। মেজাজ খারাপ করে প্রথমে গেলাম কাঁটাবন। বিয়ের সামগ্রী বিক্রি করে এমন কয়েকটা দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল পালকি পাওয়া সম্ভব। এর জন্য ভাড়া লাগবে ২৫০০-৩০০০ টাকা। ডিপোজিট সমপরিমাণ। আর কনেবাড়িতে যাওয়ার ভাড়া বাবদ আরো ৫০০ টাকা। যদি নিজেই পালকি নিয়ে যাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয় তাহলে টাকাটা লাগবে না। সবকিছুই ঠিক হলো কিন্তু সমস্যা হলো বেহারা পাওয়া যাবে না। তাহলে পালকি বইবে কে? এটা জানতে চাইলে দোকানদার একটা সাজেশন দিল। ৪ জন কামলা ভাড়া করে তাদের দিয়ে পালকি বহন করানো যায়। কিন্তু পোশাক। সেই ঐতিহ্যবাহী পালকিবেহারার পোশাক? সেটারও সমাধান মিলল। কমদামী ৪টা ফতুয়া আর শাদা লুংগি কিনে ফেললেই হলো। বেহারা সংকটে পড়ে আমি এ বুদ্ধিটাই গ্রহণ করলাম। তবে দোকানদারকে জানালাম যে আগামীকাল আমি কনফার্ম করব।
বউয়ের মেসেজ পাওয়ার পর লন্ডনে বসেই আমি চিন্তা করে রেখেছিলাম - বউ যদি পালকিতে চড়ে তবে আমি ঘোড়ার গাড়িতে চড়ব। সেই মোতাবেক পরদিন সকালবেলায় নিমতলী গেলাম ঘোড়ার গাড়ি অর্থাৎ টমটম খুঁজতে। আবার ভাবলাম টমটমে আমি আর পালকিতে বউ চড়ে আসবে অথচ কোনো মিউজিক থাকবে না তা কি হয়! তাই খোঁজ লাগালাম বাদকদল অর্থাৎ ব্যান্ড পার্টির।
নিমতলীতে টমটম খুঁজছি। একটা পেয়েও গেলাম। সবেমাত্র তৈরি করে রং লাগানো হচ্ছে এমন একটা টমটম পেয়েই মালিকের সংগে বাতচিত শুরু করলাম। ব্যাটা ১৮০০ টাকা চাইল। কি মনে করে তাকে বললাম আপনি বেহারা সহ পালকি আর ব্যান্ড পার্টি যোগাড় করে দেন। সে বলল চেষ্টা করে দেখবে। বিকালে একটা ফোন করতে বলল।
বিকেলে ফোন করতেই সে বলল, পালকি পাওয়া গেছে দিতে হবে ৬০০০ টাকা। বেহারার জন্য কোনো পয়সা লাগবে না। তাদের নিজস্ব পোশাকও রয়েছে। আর ব্যান্ড পার্টি বিভিন্ন ধরনের আছে। সর্বোচ্চ ২৪ জনের থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৪ জনের ব্যান্ড পার্টি। আমি ৪ জনের ব্যান্ড পার্টির কথা বলতেই জানালা তাদের ভাড়া হলো ১২০০ টাকা। কিছুক্ষণ মুলামুলি করার পর সব মিলিয়ে যা দাঁড়াল তা হলো
পালকি = ৫৮০০
টমটম = ১৬০০
ব্যান্ড = ১২০০
তবে এদের বখশিশ হিসাবের মধ্যে রইল না। সেটা আমার ইনসাফের উপর ছেড়ে দেয়া হলো।

এবার এলো ফুল সাজানোর বিষয়টি। কথা ছিল বিকাল ৪টার দিকে নিমতলী থেকে পালকি ভ্যানে করে আর টমটমে ব্যান্ড পার্টি নিয়ে শাহবাগ আসা হবে ফুল সাজাতে। সেখানে ফুল দিয়ে পালকি আর টমটম সাজিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে আমার বাসায় আসবে। সেখান থেকে ৭টায় রওনা দিয়ে পৌঁছে যাব কনের কাছে, কমিউনিটি সেন্টারে। কিন্তু ফুল সাজানোতে অনেক সময় চলে যাওয়াতে পালকি আর টমটম আমার বাসায় এলো রাত ৮.৪৫ মিনিটে। সেখান থেকে রওনা দিব এমন সময় নামল ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টি একটু থেমে আসতেই রওনা দিলাম টমটম চড়ে। আমার সামনে ভ্যানে করে পালকি যাচ্ছে। পেছনে ব্যান্ড পার্টি তারস্বরে বাজিয়ে চলছে বাংলা-হিন্দি নানান গান। অবশেষে সাড়ে নয়টায় কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছলাম।

বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে রাতে বউকে চড়ানো হলো পালকিতে। আমি রওনা দিলাম ঘোড়ার গাড়িতে। কিছুদূর পর বন্ধুরা বলল, আগের দিনে বউয়ের পালকির পাশে জামাই হেঁটে যেত, আর তুই কিনা ঘোড়ার গাড়িতে। নাম ব্যাটা। আমিও চটজলদি লাফ দিয়ে নেমে পড়লাম। এরপর বাকি পথটুকু বউয়ের পালকির পাশে হেঁটেই বাসায় ফিরেছি।


পালকি বাসার সামনে থামতেই সবাই মিলে বউকে বরণ করে নিল।

Friday, 27 June 2008
সেন্টমার্টিনের একাংশে ন্যুড বিচ তৈরি করা হোক
খারাপ লাগলেও হাচা কতা হইল পৃথিবীর দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত দেখার কোনো খায়েশ বিদেশীগো নাই। দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত দিয়া কি বাল ফালানি যায় হেইডা নিয়া হেরা মাতা ঘামায় না। তাই তারা গোয়া চইলা যায়। প্রবাল দ্বীপে যদি পানির তলে স্কুবা ডাইভিং কইরা প্রবাল হাতান না যায় তাইলে প্রবাল দ্বীপেই বা যাইব ক্যান? একজন বিদেশি কক্সবাজারে গিয়া কি করব? রাস্তায় হাঁটতে গেলে পাবলিক মাইয়াগো দুধের দিকে চাইয়া থাহে। বিকিনি পইরা গোসল করন যায় না। কোনো ওয়াটার রাইড নাই। সারা শরীর ঢাইকা গোসল যদি করেও তাইলে সন্ধ্যার পর কি করব? বার্মিজ মার্কেট গিয়া পুতি, গামছা আর উপটান কিনব মুখে মাখার লাইগা? এত্তো এত্তো টাকা লইয়া যদি আসেই বা তাইলে জুয়া খেইলা সেই টাকা এদেশে রাইখা যাওনের মতো ক্যাসিনো কই? রাত্রেবেলায় ক্যাম্পফায়ার করনের খায়েশ জাগলে নির্ঘাত হেগোরে ছুরিকাঘাতে জীবন দিয়া যাইতে হইব এই দেশে। পানির কাছে আইসা পানির মইদ্যে থাকনের কোনো সুযোগ নাই। সিগারেটের পুটকি, পেলাশটিক, ছাগলের লাদি কি নাই বিচের মইদ্যে। শান্তিতে হাটনও তো যায় না। দেশি লোকেরাই মজা পায় না তো বিদেশিরা মুততে আইব বাংলাদেশের সীবিচে?










Saturday, 10 May 2008
প্রিয় শফিক রেহমান - আপনার প্রতি ঋণ স্বীকার
জানি আপনি ভালো নেই। তাই কেমন আছেন জিজ্ঞেস করলাম না। প্রিয় সন্তানের কাছ থেকে কোনো বাবা দূরে শান্তিতে থাকতে পারে না। যায়যায়দিনের সঙ্গে আপনি আর নেই অর্থাৎ নিজের হাতে গড়া সেই যায়যায়দিন এখন আপনাকে ছাড়াই চলবে। এই ছেড়ে থাকার কষ্ট কতোটুকু হতে পারে আপনার সঙ্গে বেশ কিছুদিন থাকায় আমি সেটা বুঝতে পারি।
ব্লগে বিভিন্নজন আপনাকে বিভিন্ন নেগেটিভ ভাষায় সমালোচনা করছে।
আপনাকে নিকৃষ্ট সম্পাদক ভাবছে,
দালাল ভাবছে,
ছুঁড়ে ফেলছে আপনাকে,
আর আমি ভাবছি আরো কতো আগেই আরো কতোজনকে দালালির অভিযোগে আমাদের ছুঁড়ে ফেলার কথা ছিল।
আমি আপনার মানসিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করছি। মনে পড়ে যাচ্ছে আপনার সঙ্গে কাটানো আমার স্বর্ণময় দিনগুলো। সেই কবে আপনার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল ...
১৯৯৪ সাল। যায়যায়দিনের চিঠি সংখ্যায় আমার একটা গল্প ছাপা হলো। তার কয়েকদিন পর সজীব ওনাসিসের ২০০ টাকার মানিঅর্ডার পেলাম। টুকটাক গল্প কোথাও কোথাও ছাপা হলেও লেখালেখি করে টাকা প্রথম পেয়েছিলাম আপনারই কাছ থেকে। আমার জুতোটা ছিঁড়ে গিয়েছিল। তাই লেখালেখির প্রথম উপার্জন দিয়ে একজোড়া জুতো কিনতে চাইলাম। গুলিস্তানের চোরাই জুতোর মার্কেট থেকে ১৮০ টাকায় একজোড়া জুতো কিনি। বাকি ২০ টাকা দিয়ে বন্ধুবান্ধব সহ চা সিগারেট খাই। আজ এতো জায়গায় এতো আবজাব লিখি, কেউ একটা টাকাও দেয় না। আমিও ভাবতে থাকি, থাকুক - আপনার কাছ থেকে পাওয়া ওই ২০০ টাকা আমার প্রথম আর শেষ সম্মানি থাকুক।
যায়যায়দিনে আপনি একবার ঘোষণা দিয়েছিলেন, যাদের লেখা ছাপা হয়েছে তারা যেন সম্পাদকের অফিসে যোগাযোগ করে। আমি সেই খবরটা দেরিতে পেয়েছিলাম, ততোদিনে যোগযোগের দিন শেষ হয়ে গেছিল। খুব আফসোস হয়েছিল। তাই পরবর্তীতে ডেমক্রেসিওয়াচের (আপনার স্ত্রী তালেয়া রেহমানের প্রতিষ্ঠান) বিজ্ঞাপন দেখে প্রথম দিনেই ইংরেজি/কমপিউটার শিখতে ভর্তি হয়ে যাই। দিনটা ছিল ১৯ ডিসেম্বর ১৯৯৫। যতো না ইংরেজি/ কমপিউটার শিখতে চেয়েছিলাম তারচেয়ে আশা ছিল আপনার সাহচার্য পাবার। তখন খুব ইচ্ছে ছিল সাংবাদিক হবার। পাশাপাশি থিয়েটার করি, মুভি বানানোর খুব শখ। সিদ্ধান্ত নিলাম যায়যায়দিনের সাংবাদিক কাম মুভিমেকার হব।
অবশেষে স্বপ্নপূরণ হয়, আপনার সঙ্গে পরিচয় হয়। ১৪ জন ছাত্রছাত্রী ডেমক্রেসিওয়াচে ইংরেজি কপচাই। আপনি সপ্তাহে একদিন এসে লাইফস্টাইল ক্লাস নেন। সেই যে স্যার ডাকা শুরু হলো, আশেপাশের সবার ভাই ডাক শুনেও আপনাকে স্যার-ই সম্বোধন করে গেলাম। ক্লাসে আপনার চমৎকার বাচনভঙ্গী আমাকে মুগ্ধ করত। আপনার কথাবার্তা আমাকে স্পিরিট এনে দিত। আপনি উদ্ধুব্ধ করেন উপার্জনের জন্য। আপনি বলেছিলেন, উন্নতবিশ্বের সব ছেলেমেয়েরা পড়াশোনার পাশাপাশি উপার্জনও করে। বাংলাদেশে সেটা শুধু টিউশনির মধ্যেই সীমাবদ্ধ। যাদের বাবা মা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল তারা সেই টিউশনিটাও করে না। অথচ নিজের উপার্জনের মজাই আলাদা। আপনি সবসময় বলতেন, বাপের হোটেলে খাচ্ছ খাও কিন্তু গার্লফ্রেন্ডকে তোমার উপার্জনের পয়সা দিয়ে গিফট দিও, বন্ধুদের মাসে একবার অন্তত খাওয়াবে, নিজের পয়সার প্রথম গাড়িটি কিনতে আপনি আমাকে/আমাদের উৎসাহ যুগিয়েছিলেন।
লেখাটা মানপত্রের মতো হয়ে যাচ্ছে কিনা আমি জানি না কিন্তু আপনার এ মন খারাপের দিনে আমি শুধুই স্মরণ করতে চাইছি আপনার কাছ থেকে আমি যা যা শিখেছি, আমাকে যে পরিমাণ অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, আমার কর্তব্য এ সবকিছু স্মরণ করা। কোনোদিন আপনাকে বলা হয়ে উঠেনি যে বন্ধুরা আমাকে ’চিপা শফিক দ্য জুনিয়র’ ডাকতেও শুরু করেছিল। এমন না যে আপনার সবকিছুই আমি পছন্দ করতাম। কিন্তু আপনার অনেক কিছু দ্বারাই আমি ভীষণ প্রভাবিত ছিলাম।
আপনি একজন অসম্ভব সিনেমাপ্রেমী মানুষ। তাবৎ অস্কারপ্রাপ্ত মুভিগুলো আপনার বাসার দুটি রুমের দেয়ালজুড়ে থাকা শেলফে সাজানো থাকত। আপনার পুত্র সুমিত রেহমান নতুন রিলিজ পাওয়া ছবিগুলোর ভিএইচএস কপি বাজারে বের হওয়া মাত্রই ইংল্যান্ড থেকে আপনার কাছে পাঠিয়ে দিত। আপনার বাসায় আপনি ছোট থিয়েটার বানিয়েছিলেন। সাল ১৯৯৬। মধুমিতা তখনও সারাউন্ড সাউন্ড সিস্টেমে ছবি প্রদর্শন করে কিনা জানি না তবে আমার প্রথম সারাউন্ড সাউন্ড অভিজ্ঞতা আপনার ওই ছোট থিয়েটার হলে ইন্ডিপেন্ডেস ডে ছবিটি দিয়েই হয়েছিল। সেবা প্রকাশনী আমাকে সুযোগ করে দিয়েছিল বিশ্বের সেরা অনুবাদ পড়ার, আর আপনি আমাকে দেখিয়েছেন বিশ্বের সেরা সেরা মুভিগুলো। আজকে এই পাশ্চাত্যে বসে আমি হাজারো মুভি দেখি আর আপনার প্রতি শ্রদ্ধায় নত হয়ে আসি ম্যুভি দেখার টেস্ট আমার মাঝে গড়ে দেয়ার জন্য। মনে আছে আমরা সবসময় আালাপ করতাম একটি ফিল্ম সোসাইটি করার জন্য। অবশেষে আপনি তা করেছেনও - একাডেমি ফিল্ম সোসাইটি। আমার দুর্ভাগ্য সেসময় আমি থাকতে পারিনি।
ডেমক্রেসিওয়াচে চাকরি করি। আমার সাংবাদিক হওয়ার ইচ্ছার কথাটা আপনি জানতে পেরেছিলেন। তখন আমি খুব অগোছালো থাকতাম। জীবনে কখনো শার্ট ইন করে পড়তাম না, স্যান্ডেল কিংবা স্লিপার পড়ে চলতাম। মাঝে মাঝে হয়তো ফিতাটাও ছেঁড়া থাকত। আমাকে ডেকে বলেছিলেন, সাংবাদিক হতে চাও? তোমার যা লেবাস তাতে তো বঙ্গভবনে, সচিবালয়ে ঢুকতেই দেবে না। তুমি আমার জন্য ইন্টারভিউ আনবে কি করে? পরের মাসে আমার সেলারি বেড়ে যায়। আমি নতুন জামা-জুতো কিনি। আমি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছি শুনে আরেকদিন ডেকে বললেন, বাংলাদেশে ডিগ্রির খুব দাম। যতোই বিদ্বান হও, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হতে পারবে না ডিগ্রি না থাকলে। তুমি তোমার ডিগ্রি কমপ্লিট কর। আমি সায়েন্সের ছাত্র, কমার্সের ডেবিট ক্রেডিট বুঝি না। কিন্তু সহজে পাস করা যায় শুনে বি.কম ভর্তি হলাম। আপনি আমাকে সপ্তাহে দুইঘন্টা পড়াবেন বললেন। একদিন ঠিকই খুব করে ডেবিটক্রেডিট বুঝিয়ে দিলাম। আমার ভালো লাগল না। আপনাকে গৃহশিক্ষকের ভূমিকায় দেখতে ইচ্ছে করছিল না। তাই আপনার মতো FCA (Fellow of Chartered Accountants) ছেড়ে আমি পাড়ার বড়ভাইয়ের কাছে পড়তে শুরু করি।
আমার খুব দু:খ হয় আপনার বিশেষ সংখ্যাগুলোকে কেউ যখন চটি বই বলে। এদের অনেককেই বলতে শুনেছি, অশ্লীলতার সংজ্ঞা নির্ধারণের কিছু নাই। তারপরও আমি এ ব্যাপারে আপনাকে প্রশ্ন করাতে আপনি বলেছিলেন, বিশেষ সংখ্যার লেখাগুলো সব পাঠকেরই লেখা। ৭১ এর সাড়ে সাত কোটি জনগণ কিভাবে সাড়ে ১৫ কোটি হয়ে গেছে পাঠকদের গল্পে এসবের কিছুটা আঁচ পাওয়া যায়। এখন এটাকে কেউ অশ্লীলতা ভাবলে তাদের ব্যাপার। যাযাদি অশ্লীল না। প্রেমলীলা মোটেই অশ্লীল কিছু না। আপনি বিদেশী বিভিন্ন পত্রপত্রিকা দেখিয়ে বলেছিলেন নতুন কিছু নিতে আমাদের একটু কষ্টই হয়।
আমি জানি প্রতিটি বিশেষ সংখ্যার জন্য প্রচন্ড কষ্ট আপনি করেন। ব্লগে দেখলাম কেউ কেউ বলল আপনার বেতনভুক্ত লোকেরা নিজেরাই লিখে নাকি ছাপিয়ে দেয়। অথচ আমি দেখেছি কি পরিমাণ চিঠি/গল্প আপনার ঠিকানায় আসতে। কেউ কেউ বিশেষ সংখ্যা গুলোর প্রতিটি গল্পই চরম অশ্লীল/ চটিসম হয়েছে বলে রায় দিয়ে ফেলেছেন। অথচ আপনি জানলেও আবার জানিয়ে রাখছি ভালোবাসা সংখ্যার ’মন্দভাগ্যের লোকটি’-র মতো অসাধারণ অনেক গল্পই তারা পড়েনি, বা চোখ এড়িয়ে গেছে - তাদের প্রতি করুণা। যাযাদিতে ছাপা হওয়া পাঠক/লেখকদের নিয়ে সম্মেলন করেছিলেন। ওই সম্মেলনের জন্য তখন প্রচুর খেটেছিলাম। তখন আমার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল সিলেট থেকে আসা তরুণ লেখক আরিফ জেবতিকের সঙ্গে। ফকিরাপুলের বকশী কিংবা বিলাস হোটেলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা এরকম আরো অনেক পাঠক/লেখকদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। আপনিই তো লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থেকে একজন বহুমাত্রিক কলাম লেখক আবিষ্কার করেছিলেন।
আপনার বড় সমালোচনা বানানরীতি নিয়ে। আমি নিজেও কিছুটা বিরক্ত ছিলাম এই রীতির উপর। আপনাকে জিজ্ঞেস করতেই যুক্তি দিয়েছিলেন, কীবোর্ডের কম কী চেপে শব্দের বানান লেখাটাই আপনার রীতি। তাই ‘প্রিয়’ (পাঁচটা কী) এর বদলে ‘পৃয়’ (চারটা কী) লিখতেন আপনি। এটা আমার ভালো লাগেনি। তবে চন্দ্রবিন্দু ফেলে দিতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমি একমত হয়েছিলাম। আমি এখন খুব হাসি ব্লগের বানানরীতি দেখে। সবার অজান্তেই কিন্তু ব্লগের বানানগুলো যায়যায়দিনের বানানের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে।
আপনি চরমভাবে একজন মানুষকে উৎসাহী করে তোলেন। আপনি বিশ্বাস করতেন সবার মাঝেই কিছু করার ক্ষমতা রয়েছে। বিশেষ করে তরুণদের আপনি খুবই পছন্দ করেন। লেখালেখি শেখার প্রতিষ্ঠান এই ইউরোপে দেখলেও বাংলাদেশে নেই। আপনি আমাকে লিখতে শিখিয়েছেন। কোথায় প্যারা কিংবা সংলাপ বসাতে হবে আপনি বুঝিয়েছিলেন। একটি লেখা কতো সহজ করে লেখা যায় সেসম্পর্কে আপনি টিপস দিতেন। আপনি বলতেন, আমি সপ্তাহে ২০০০ বাংলা শব্দ লিখি। তুমি কয়টা লেখো? আপনি বনফুল পড়তে বলতেন সবসময়। টাকা থাকলে যেন পুরো বনফুলসমগ্র কিনে ফেলি সেকথাটাও বলতেন। আরো একটি কথা বলতেন, অনুকরণ নয় সবসময় অনুসরণ কর। বিদেশী সাহিত্য পড়ার জন্য তাড়া দিতেন। কালচারের চেয়ে কাস্টম জানতে বলতেন। বাঙালিরা রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তী করে এটা হচ্ছে সংস্কৃতি আর কেউ মারা গেলে তার পাশের বাসা থেকে মৃতবাড়ির সদস্যদের জন্য খাবার যায় এটা হচ্ছে আচার। আপনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আচার জানতে বলতেন।
১৯৩৪ সালের ১১ নভেম্বর আপনার জন্ম। অথচ আপনাকে দেখে যে কেউ এভারগ্রীণ বলতে বাধ্য হতো। সবসময় চকমকে পোশাক পড়তেন। সিঁড়ি দিয়ে লাফিয়ে উঠানামা করা কিংবা পিকনিকে ডেকরেটরের চেয়ার সাাজানো কিংবা পিকনিক শেষে ছড়িয়ে থাকা ময়লা কাপজ কুড়ানোর সময় আপনার সঙ্গে পেরে উঠতাম না। কিন্তু আপনার এইসমস্ত আচরণ ক্যামোফ্লেজ বলে বিশ্বাস করি না। একসময় আপনি ছিলেন জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক। আপনার লালগোলাপ অনুষ্ঠানটি কেউ কেউ অখাদ্য বললেও আমি জানি ওটা ভালো একটি প্রোগ্রাম ছিল। ঢাকা শহরের বাইরে মফস্বলের তরুণদের জন্য ওটি একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ছিল। আমি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদি দিয়ে বিষয়টি বুঝতে চেষ্টা করেছি। ঢাকার দর্শকরা এখন আর ইত্যাদির জন্য সময় বের করে প্রস্তুত হয়ে থাকে না, অথচ অন্যান্য মফস্বল শহরে ইত্যাদির জনপ্রিয়তা এখনো তুঙ্গে। সম্ভবত লালগোলাপ সেরকমই একটি অনুষ্ঠান। রাজধানীর শহুরে আমাদের জন্য লালগোলাপ কোনো ইনফরমেশন দেয় কিনা জানি না, ভেবে দেখি গ্রামের/মফস্বলের তরুণরা ওই অনুষ্ঠান থেকে কি শিখছে। ওই প্রোগ্রামে আপনার পোশাক নিয়েও ব্লগে হাসির খোরাক হয়েছেন। টিভির পোশাক কিরকম হবে এ ব্যাপারে আপনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ দর্শকের শাদাকালো টিভি। তাই আপনি এমন পোশাক পছন্দ করেন যেটা শাদাকালো টিভিতে সুন্দর দেখায়। বহুপূর্বে যখন টিভিতে উপস্থাপনা করতেন তখনকার জন্য এ ব্যাখ্যা হয়তো ঠিক ছিল। কিন্তু এখন শস্তায় কালার টিভি পাওয়া যায়। তাই আপনি কি পোশাক পরে লালগোলাপ উপস্থাপনা করতেন আর দেখতে কেমন লাগত আমি বুঝতে পারছি না। বহুদিন ওই প্রোগ্রাম দেখি নাই।
আমার বসভাগ্য চিরকালই ভালো। এবং আমার সেলারি ভাগ্যও ভীষণ ভালো। কোনো মাসের বেতন হবে কিনা তার জন্য কখনোই দুশ্চিন্তা করতে হয়নি। আপনি সবসময় চেষ্টা করতেন মাসের ১ তারিখে বেতন দিতে। সাপ্তাহিক যায়যায়দিনের প্রতিটি কর্মীর টেবিলে আপনি খামসহচেক এবং চকলেট নিজে গিয়ে দিয়ে আসতেন। মাঝে মাঝে তাদের চা বানিয়ে খাওয়াতেন। অথচ যখন শুনি আপনি বেতন দেয়ার ভয়ে দেশ ছাড়তে চেয়েছিলেন তখন হিসেব মেলাতে পারি না। ভেতরের কথা আমার কখনোই জানা হবে না। কিন্তু আমি হিসেব করে দেখেছি ১০৪ জন সাংবাদিকের (ধরে নিলাম ১০০০০ x ১০৪) ১৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার জন্য দেশ ছাড়ছেন মানতে পারি না। এই আমিই তো জানি এরশাদ আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া যায়যায়দিনের আবু লায়েস মামুন, হরিপদ রায়, সজীব ওনাসিস সহ আরো অনেককেই আপনি দীর্ঘ ৬ বছর ধরে নিয়মিত বেতন দিয়ে আসছিলেন। আপনার দৈনিক করার ইচ্ছের কথা শুরু থেকেই জানতাম। প্রথম দৈনিকটি কেউ গ্রহণ করেনি। অনেকের অনেক ব্যাখ্যা আছে কিন্তু আমার কাছে গেটাপ মেকাপের কারণেই মার খেয়েছেন বলেই ধারণা। এছাড়াও বিলি-বিক্রি সংক্রান্ত ঝামেলাÍ কারণে আপনি সুবিধা করতে না পেরে বন্ধ কÍে দিয়েছিলেন। আমি দেখেছি সেই সময়ের আপনার সমস্ত কর্মীর জন্য আপনি বিভিন্ন জায়গায় চাকরি পাইয়ে দিতে চেষ্টা করেছিলেন। আজ তাই দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে পারি, সমকালের মাহবুব আজীজ কিংবা এনটিভির ফাহিম আজ আপনার কারণেই সাংবাদিক। গ্রামীণ ফোন সহ আরো অনেক কর্পোরেট অফিসে অনেকেই আপনার জন্য বেশ সম্মানজনক চাকরি করছে। বাংলাদেশের তরুণ সাংবাদিকদের অনেকেই আপনার সঙ্গে কাজ করেছে। তাদের অনেকেই এখন আপনাকে পছন্দ করছে না। কিন্তু এরা অনেক নতুন ধারণা আপনার কাছ থেকে পেয়েছে।
আপনি ছিলেন আপোষহীন। যায়যায়দিনের প্রচ্ছদের (দড়িছেঁড়া পাল্লার ছবি) জন্য আদালতের সুয়োমুটো রুল (ঠিক মনে করতে পারছি না) আপনার উপর জারি হয়েছিল। আমি জীবনের প্রথম কোর্টে যাই। সঙ্গে ছিলেন কামাল হোসেন, ব্যরিস্টার ইশতিয়াক, সারা হোসেনসহ আরো অনেকেই। আপনাকে দেখেছিলাম স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে এপর্যন্ত আদালতের প্রতীক দাড়িপাল্লা নিয়ে কে কবে কি ছাপিয়েছে তার রেফারেন্স দিতে। অথচ টুপির কাছে নতজানু প্রায়পদচুম্বনরত আমাদের অন্যান্য সম্পাদকেরা একটি শিবির পত্রিকার রেফারেন্সও দিতে পারে নাই। কিন্তু এখন যখন আপনাকে দালাল বলা হয় আমার নিরুত্তর থাকতে হয়। মনে পড়ে লাইফস্টাইল ক্লাসে আপনি তুলোধুনো করে ফেলতেন বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের। আপনার বাসায় নিয়মিত আসাযাওয়ার ফলে অনেক বড় বড় রাজনৈতিক নেতাকে দেখতে পেয়েছি। আপনি সরাসরি তাদের সমালোচনা করতেন। সেই আপনি যখন বিএনপি-জামাতের একপেশে কথা ছাপান যায়যায়দিনে তখন আপনার বাসার দেয়ালের শেলফে সাজিয়ে রাখা কালো চামড়ার যায়যায়দিনের পুরোনো সংখ্যাগুলো ঢুকরে উঠে। ত্রিশ সেট অলংকারের প্রচ্ছদ থেকে সমস্ত অলংকার ঝরে পড়ে।
কিন্তু তাই বলে ব্লগাররা যেমন বলছে আপনার চেয়ে লুচ্চা আর দ্বিতীয়টি দেখে নাই তখন খুঁজতে মন চায় বাংলাদেশের আর কতো কতো লুচ্চা প্রতিনিয়ত কি কি লিখে যাচ্ছে। কতো কতো সুশীল দেশের পোঙ্গা মেরে দিচ্ছে তা নিয়ে প্রায়শই আমরা ব্লগে মাতম করি। এখন আপনার দিনের পর দিন, মইন-মিলা নিয়ে প্যারোডি লেখা হয় - আমার দুঃখ হয়। বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসের প্রবর্তক হয়ে আজ আপনি ভালোবাসাহীন। যারা আপনার বিশেষ সংখ্যায় ছাপানোর জন্য শাদা কাগজের একপৃষ্ঠায় ৭০০/১০০০ শব্দের গল্প লিখে পাঠিয়েছিল তারাই আজ চটি চটি বলে রায় দিয়ে ছিঁড়ে ফেলছে আপনার সন্তানসম প্রতিটি সংখ্যাকে। অবলীলায় বলে দিচ্ছে প্রতিটি গল্পই একএকটি চটি। একজন বাম যখন পচে তখন তার চেয়ে র্দুগন্ধ আর বেশি কেউ ছড়াতে পারে না। কিন্তু আফসোস আজকে সবাই ভুল ভাবছে আপনি বুঝি তার চেয়েও বেশি দুর্গন্ত ছড়াচ্ছেন। তাই সবাই এখন ৩টাকার শফিক রেহমানকে মনে রাখতে চায়, ৭টাকার শফিক রেহমানকে ভুলে যায়।
একজন লেখকের সব লেখা ভালো হয় না,
একজন পরিচালকের সব ম্যুভি হিট হয় না,
একজন গায়কের সব গান শ্র“তিমধুর হয় না।
আপনার সব চিন্তাভাবনাও সঠিক হয়নি।
কিন্তু তাই বলে আপনার প্রতি এমন আচরণ আমাকে ব্যথিত করে।
আমার এ লেখাটি আপনার প্রতি আমার ঋণ স্বীকার। আজকে আমি যা তার ৫০% আপনার অণুপ্রেরণায় তৈরি। আপনি আমাকে ভিন্নভাবে ভাবতে শিখিয়েছেন, আমাকে উদ্যমী করেছেন। আপনি সবসময়ই চেষ্টা করেছেন স্মার্ট প্রজন্ম তৈরি করতে। অনেকেই এটা নিয়ে হেসেছে, অনেকেই ব্যঙ্গ করেছে। আপনি বলতেন যেভাবেই হোক পাশ্চাত্যে ৫টা বছর কাটিয়ে এসো। সেখানে নতুন কিছু শিখো, তারপর দেশে এসে সেটাকে উপস্থাপন কর। আমি আজ পাশ্চাত্যে, আপনারই প্রিয় শহরে।
আপনি এখন কি করছেন জানতে ইচ্ছে করে। তবে এটা বিশ্বাস করছি আপনি থেমে যাবার পাত্র নন। শিগগীরই কিছু একটা শুরু করবেন আমি আশা করছি। বয়স আপনাকে থামিয়ে রাখতে পারবে না। আমার মনে পড়ে যাচ্ছে আপনার কালো রকি জীপগাড়িতে করে শহীদমিনার যাওয়া, কিংবা হবিগঞ্জে পোস্টার প্রদর্শনী করার কথা। আপনার সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছিল এ বছরের ফেব্র“য়ারি মাসে। বিয়ে করা নতুন বউকে দেখাতে নিয়ে গিয়েছিলাম আপনার কাছে। তখনও আপনি আমাকে অনেক অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। চলে আসার সময় পিঠ চাপড়ে বলেছিলেন, তুমি একজন লেখক এটা মনে রাখবে। আরো ভালো লেখার চেষ্টা কর।
আমি লিখতে পারি কিনা জানি না, কিন্তু আমি খুব ইন্সপায়ার্ড হয়েছি।
আমি জানি এ লেখার কারণে আমাকে অনেক কটুকথা সইতে হবে। আমি জামাতে ইসলামকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করি, এরপর বাদবাকি সবদলগুলোকে সমান ঘৃণা করি। হয়তো ব্লগাররা এখন আমার উপর রাজনৈতিক ট্যাগ লাগিয়ে দেবে, ঝাঁপিয়ে পড়বে আমার উপর। আমি সবকিছুর জন্য প্রস্তুত। আপনার কাছে অনেক কিছু শিখেছি। তাই গুরুর জন্য কিছু কষ্ট সইতে আমার কোনো আপত্তি নেই।
ভালো থাকবেন আপনি
Friday, 25 April 2008
যে কারণে সচলায়তনকে বিদায় জানালাম (সচলে আমার শেষ পোস্ট)
সত্যজিত সংক্রান্ত আমার পোস্টটি কাটপেস্ট এবং ইন্টারনেটের অন্যজায়গায় প্রকাশিত হয়েছে মর্মে সেটা প্রথম পাতা থেকে সরানো হয়েছে। নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে আমার উপর। আমি এর প্রতিবাদে নীতিমালা ভঙ্গের কারণ জানতে চেয়েছি এবং ইতিপূর্বে অন্য ব্লগে প্রকাশিত লেখা সচলে পোস্ট দেয়ার রেফারেন্স দিয়েছি। কিন্তু তারপর আমাকে মডারেটরের পক্ষ থেকে নিচের কথাগুলো শুনতে হয়েছে।
মডারেশন ভালো না লাগলে যেখানে মডারেশন নাই সেখানে যান, সামগ্রিক মঙ্গলের জন্য সেটাই ভালো। নীতিমালা ভেঙ্গেছেন, আমরা তৎপর হয়েছি। অন্য কাকে কি করলাম সেই কৈফিয়ত দিতে বাধ্য নই।
আমি স্বীকার করছি যে সত্যজিত সংক্রান্ত পোস্টটি একই সময়ে আমারব্লগ এবং সচলে প্রকাশিত হয়েছে। নির্মীয়মাণ আমাব্লগে পোস্ট দিলে ৩০ মিনিট দেরিতে প্রথম পৃষ্ঠায় আসে। তাই আমি ভেবেছিলাম সেরকম ঘটবে। কিন্তু কেমন করে জানি না সত্যজিত পোস্টটি আমারব্লগে সঙ্গে সঙ্গে প্রথম পৃষ্ঠায় এসে যায়। আমি পোস্টটি সচলেই প্রথম দিয়েছিলাম। অরূপই আমাকে প্রথমেই জানিয়ে দেয় যে এটা আমারব্রগেও প্রকাশ পেয়েছে। আমি অবাক হই। তাই এ কারণে আমার পোস্টটি প্রথম পৃষ্ঠা থেকে সরিয়ে দিলে আমি তেমন আপত্তি হয়তো করতাম না। যদিও আমি অনেক দেখেছি একই সময় একই পোস্ট দুই জায়গায় পোস্ট হতে
দ্বিতীয় কারণটি হলো কাটপেস্ট। আমার পোস্টের কন্টেন্ট ছিল প্রথম আলো থেকে কাটপেস্ট করা। এখানেও আমার আপত্তি আছে। কাটপেস্ট শব্দটি দিয়ে আমরা যতোটুকু বুঝি আমার পোস্টটি সেরকম ছিল না। প্রথম আলোর সত্যজিত আর্টিকেল থেকে আমি শুধু তার নির্মিত ছবির লিস্টটুকু নিয়েছি। প্রথম আলোর নাম লিখেছি সূত্রের প্রতি বিশ্বস্ত থাকায়। এ বিষয়ে আরো জানতে চাইলৈ এবং সচলে পূর্বে প্রকাশিত পুরো কাটপেস্ট সংক্রান্ত পোস্টের রেফারেন্স দিলে মডারেটররা আমাকে মনে করিয়ে দেয় তাদের নিম্নোক্ত ক্ষমতার কথা।
কর্তৃপক্ষ নিম্নোক্ত অধিকারগুলো সংরক্ষন করেন
× যেকোন অ্যাকাউন্ট ব্লক করা
× যেকোন লেখা / মন্তব্য মুছে ফেলা,
× যেকোন লেখা ১ম পাতা থেকে সরিয়ে দেওয়া
× যেকোন লেখা অপ্রকাশ করা
× এ বিষয়ে কোনরূপ ব্যাখ্যা দিতে কর্তৃপক্ষ বাধ্য নন।
যে কোনো ক্লোজড গ্রুপে মডারেশন থাকতেই পারে, এবং সেটা মেনেই সেখানে চলতে হবে। আমিও তাই মেনে সচলের মডারেশনকে শ্রদ্ধা করতাম। কিন্তু যখন দেখা গেল কারো কারো জন্য নিয়মের ব্যতিক্রম এবং এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে ‘কর্তৃপক্ষ চাইলে কোনো কৈফিয়ত না দেবার এখতিয়ার রাখে‘ শুনতে হয় তখন আমি অসহায় বোধ করি।
তখন মনে হয়, ‘হেথায় মোরে মানাইছে না গো‘ আর তাই সিদ্ধান্ত নিলাম সচলায়তনে আমি বরং নাই থাকি। আপনারা ভালো থাকবেন। যারা আমার লেখা পড়তেন, উৎসাহ দিতেন তাদের সবাইকে জানাই শ্রদ্ধা। আপনাদের খুব মিস করব …..
আমিই প্রথম নই। এর আগে আরো অনেকেই মডারেশনের কোপানলে পড়ে চুপিচুপি সচল ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু আমি জানিয়েই যেতে চাই। আমার এ পোস্ট হয়তো অনেকেরই ভালো লাগবে না, তাদের কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
ভালো থাকবেন, হ্যাপী ব্লগিং …
বি.দ্র. সচলে আমার একাউন্ট মুছে দেয়া হয়েছে (অনুরোধ করেছিলাম একদিন পর ডিলিট করতে) বলে আমি বাধ্য হলাম এখানে আমার পোস্টটি প্রকাশ করতে
সত্যজিতের নির্মিত সকল ছবির তালিকা
সত্যজিতের ছবির লিস্টি
০১. পথের পাঁচালী (১৯৫৫)
০২. অপরাজিত (১৯৫৬)
০৩. পরশপাথর (১৯৫৮)
০৪. জলসাঘর (১৯৫৮)
০৫. অপ্সরীর সংসার (১৯৫৯)
০৬. দেবী (১৯৬০)
০৭. তিনকন্যা (১৯৬১)
০৮. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (তথ্যচিত্র) (১৯৬১)
০৯. কাঞ্চনজঙ্ঘা (১৯৬২)
১০. অভিমান (১৯৬২)
১১. মহানগর (১৯৬৩)
১২. চারুলতা (১৯৬৪)
১৩. টু TWO (১৯৬৫) (দূরদর্শনের জন্য নির্মিত)
১৪. মহাপুরুষ (১৬৫)
১৫. কাপুরুষ (১৯৬৫)
১৬. নায়ক (১৯৬৬)
১৭. চিড়িয়াখানা (১৯৬৭)
১৮. গুপী গাইন বাঘা বাইন (১৯৬৮)
১৯. অরণ্যের দিনরাত্রি )১৯৭০)
২০. সিকিম (১৯৭১)
২১. সীমান্ত (১৯৭১)
২২. দ্য ইনার আই (তথ্যচিত্র) (১৯৭২)
২৩. প্রতিধ্বনি (১৯৭২)
২৪. অশনি সংকেত (১৯৭৩)
২৫. সোনার কেল্লা (১৯৭৪)
২৬. বালা (১৯৭৬)
২৭. জন অরণ্য (১৯৭৬)
২৮. শতরঞ্জ কী খিলাড়ী (১৯৭৭)
২৯. জয় বাবা ফেলুনাথ (১৯৭৮)
৩০. হীরক রাজার দেশে (১৯৮০)
৩১. সদগতি (১৯৮১) (দূরদর্শনের জন্য নির্মিত)
৩২. পিকুর ডায়রি (১৯৮১) (দূরদর্শনের জন্য নির্মিত)
৩৩. ঘরে বাইরে (১৯৮৪)
৩৪. সুকুমার রায় (তথ্যচিত্র) (১৯৮৭)
৩৫. গণশত্রু (১৯৮৯)
৩৬. শাখা প্রশাখা (১৯৯০)
৩৭. আগন্তুক (১৯৯১)
Sunday, 13 April 2008
আহা রে ... সোনালী বন্ধু রে ...
ওই রাইতের আড্ডার কথা আমার এখনো মনে পড়ে, সকালে বাথরুমে দাঁত মাজতে গেলে এখনো আয়নায় মাঝে মাঝে বন্ধুরে দেখি, দেইখা হাসি আসে আবার দুঃখও লাগে; বন্ধুরে আমি খুব পছন্দ করতাম, এখনো করি, অর লগে আমার ঝগড়া লাগে প্রতি কথায়, তাও বন্ধুরে আমি ভালা পাই, বন্ধুর লগে এই শহরে বাসে, টিউবে, মুভিতে প্রচুর সময় কাটাইছি, অয় খাইতে পছন্দ করে, যতোটা আমি করি না, কিন্তু বন্ধুর লাইগা আমি অর খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিজের খাওয়া লাইরা গেছি, লারতে লারতে অর কথা শুইন্যা গেছি, অর অফিসের কথা শুনছি, অফিসের পার্টির কথা শুনছি, অয় যে বেশি মদ খাইয়া হুঁশ হারাইয়া ফেলে সেই কথা শুনছি, তারপর ডিসিশান নিছি আমার লগে থাইকা মদ খাইয়া যদি হুঁশ হারায়া ফেলে তাইলে আমি অরে দেইখ্যা রাখুম। আহা রে ... সোনালী বন্ধু রে ...
সেই বন্ধু একদিন মাঝরাইতে মদ খাইয়া আমারে ফালাইলা এক ব্যাডার হাত ধইরা ট্যাক্সিতে কইরা চইলা গেলে অনেক দুঃখ পাইছি, হাউকাউ কইরা চিল্লাচিল্লি করছি রাস্তার মাঝখানে দাঁড়াইয়া আরেক বন্ধুর লগে, মনে মনে ভাবছি আর যামু না অর কাছে, কিন্তু পরদিন বন্ধু ফোন করলে পোলাপানের মতো অভিমান কইরা কইছি, তুই আমারে ফালাইয়া গেলি ক্যান, আমার খিদা পাইছিল, ভাবছিলাম তোর বাসায় গিয়া ভাত খামু; বন্ধু সরি কইলে এরপর আমরা আরো অনেকদিন এই শহরের রাস্তায় হাঁটছি, পার্কে গিয়া শুইছি, পার্টিতে গেছি, রাইতে অরে বাসায় দিয়া ভোরে নিজের বাসায় ফিরছি, কিন্তু কখনো হাত ধরতে গেলে বন্ধু ফস কইরা উঠছে, চেইতা গিয়া কইছে, তুই এতো খচখচ করস ক্যান?; ধমক খাইয়া আমি ভাবতে থাকি বন্ধুর লাইগা আমার মন এতো টানে কেন, আর সেইটা ভাবতে ভাবতে মনে পইরা যায় এই শহরে আসার পর বন্ধুর জন্মদিনে রাইতের অন্ধকারে অর গালে আমি একটা ছোট্ট চুমা দিছিলাম। আহা রে ... সোনালী বন্ধু রে ...
আবার ওই রাইতের কাহিনীতে ফিরা আসি, যে রাইতে আমি হুইস্কি খাইছি, গাঞ্জা খাইছি, ভোদকা খাইছি, চিপস খাইছি, সিগারেট খাইছি অথচ ডিমভাজা খাই নাই; কারণ আমার খুব ঘুম পাইতেছিল নাকি আমারে কেউ কইছিল ওইদিনের মতো ডিম ভাজতে কিন্তু ঘুমের কারণে আমি রাজি হই নাই সেইটা মনে আসে না; রাত আরো গভীর হইলে আমি বন্ধুর লগে ঘ্যান ঘ্যান করি, চল যাইগা, অনেক তো গান হইছে; বন্ধু ধমকায়, তুই যা গা; তখন আমার চোখে পাহাড় ভাইঙ্গা ঘুম আসে, রান্নাঘরে গিয়া খিচুড়ি খাইয়া আমি পাশের ঘরে চইলা যাই, কতোক্ষণ পরে আমার ঘুম ভাঙ্গে জানি না, আমি বন্ধুর খোঁজে ওই রুমে যাই কারণ অরে বাসায় দিয়া আইতে হইব কিন্তু বন্ধুরে দেখি না, পরে পাশের রুমে গিয়া আমি তব্দা খাইয়া যাই, পাচ মিনিট খাড়ায়া থাইকা ফিরা আইসা খাটের উপর লেপের তলায় ঢুইকা যাই।
তখন বিভিন্ন শব্দরাজি আমার মাথায় ক্রমাগত ঠকঠক কইরা বাড়ি মারতাছিল, আহ .. উহ .. তুমি কিন্তু আমাকে ব্যথা দিচ্ছ সোনা ...
আহা রে ... সোনালী বন্ধু রে ...
প্রবাসে থেকে বাংলাদেশের জন্য দুঃখবিলাস !!
দেশ নিয়ে স্মৃতিচারণে মনে পড়ে যায় নিজের কখনো কাপড় না ধোয়ার কথা, চা বানিয়ে না খাওয়ার কথা, আড্ডাবাজির কথা অথবা পয়সার টানাটানিতে কোনো ছোটকাজ (অডজব) না করার কথা। সেইসব সুখের দিনগুলো, সময়গুলো, মুহূর্তগুলো ছেড়ে কেন আমরা বিদেশে থাকি?
ফিরে গেলেই তো হয়। কিন্তু বাস্তবতা তা বলে না। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে পারিপ্বার্শিকতার চাপেই হোক, কিংবা সন্তানের উচ্চ ভবিষ্যতের কথা ভেবেই অনেকেই আর দেশের সেই সুখস্মৃতিময় দিনগুলোর ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরির বেলায় আনন্দিত হন না। আমি মনে করি দরকারও নাই।
আমাদের সবারই দেশের প্রতি যে হাহাকার রয়েছে, সেটাকে অসম্মান করার কোনো কারণ নাই। অপদস্থ করার জন্য হুট করে 'দেশে কেন ফিরে যান না' টাইপের কথা বলার মধ্যেও কোনো ক্রিয়েটিভিটি নাই। ঢাকা শহরে অট্টালিকার চিপায় পড়ে আকাশ দেখতে না পেয়ে আফসোস করেছি, ইশ গ্রামে কি মুক্ত আকাশ-বাতাস। ভেবেছি অথচ গ্রামে গিয়ে থাকিনি।
বাংলাদেশ একটি বিশাল গরীব জনগোষ্ঠির দেশ। ছোট মাটিতে এতো চাপ সয় না। তাই যে যেভাবে পারছে দেশের বাইরে ছুটতে চাইছে, কেউ সৌদী আরবে মরুর বুকে ইমারত তৈরির কাজ করছে, কেউ মেরিকার এসি রুমে এইমাত্র অডজব সেরে এসে ব্লগিং করছে। অবশ্য খোদা না করুক আর কোনো বাংলাদেশীকে প্লেনের চাকায় কিংবা কন্টেইনার বাক্সে দেশত্যাগের ইচ্ছায় পেয়ে বসে।
মানবাধিকারকর্মী কর্মী নাসরিন যখন মারা গেলেন তখন তার সম্পর্কে অনেক আর্টিকেল বেরিয়েছিল। সেইসব আর্টিকেলে কারো লেখায় জানতে পারি নাসরিন সবসময় চাইতেন প্রবাসে বাঙালিরা যেন সবসময় কিছু একটা করে সেখানেই শক্ত আসন গেঁড়ে বসতে পারে, বুকের মধ্যে দেশপ্রেম নিয়ে তারা সেখানেই থেকে যাক, দেশে ফেরার দরকার নাই। তাহলে দেশের বিপদে ওইসব মানুষদের কাছে ছুটে যাওয়া যায় সাহায্য কিংবা পরামর্শের জন্য। কথাটা আমার খুব ভালো লেগেছিল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইহুদীরা ব্যাপকভাবে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু যেখানেই তারা থাকুক না কেন নিজেদের একটা দেশ গড়ার তাড়না তাদের সবসময়ই ছিল, এবং ভালোভাবেই সেটা করতে পেরেছে। সেজন্য তাদের সবাইকে মধ্যপ্রাচ্যে জড়ো হতে হয়নি। ইহুদীরা আজকের বিশ্বে কি বুদ্ধিতে কোন পর্যায়ে আছে, সেটা আর না বলি।
দেশের জন্য ওইসব ছটফটানি মেরিকা-লন্ডন-মন্ট্রিলের মতো নিরাপদ জায়গায় বসে করেও যদি দুইটা টাকা দেশে বেশি পাঠানো যায়, ক্ষতি কি? দেশের জন্য কিছু করতে হলে দেশেই থাকতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যার যার জায়গায় থেকেই সেটা করা যায়। জাতি হিসেবে আমাদের মার্কেটিংটা খুবই খারাপ, সেইটাতে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। আর সেজন্যই ক্রেতার কাছাকাছি থাকাটা জরুরি, যদি সে সুযোগটা থাকে।
বিদেশের ছাত্রছাত্রীরা অনেকেই লোন নিয়ে এসে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন। এদের অনেকেই দেশে হয়তো ফেরত যাবেন না। সবুজ পাতা, লাল পাতার জন্য থেকে যাবে। থাকুক না, সমস্যা নাই তো। আমরা যদি ছড়িয়ে না পড়ি তাহলে আবার কিসের তাগিদে এক হতে চাইব? আমাদের মধ্যে জাফর ইকবাল ক'জন আছেন? বা আমরা সবাই চাইলেই কি জাফর ইকবাল হতে পারি? ভিন্ন পাসপোর্টধারী বাংলাদেশী নাগরিকদের (NRB) জন্য যে কোনো ব্যবসায় প্রথম ১০ বছরে কোনো সরকারি ট্যাক্স দিতে হয় না। লাল পাতা, সবুজ পাতা নিয়ে এই উদ্দেশ্যে কেউ যদি দেশে ফেরত যায় তাতেও তো বাংলাদেশের লাভ, অনেকেরই কর্মসংস্থান হবে।
দেশের জ্যাম-লোডশেডিং-ছিনতাই নিয়ে নাক সিঁটকায় কিন্তু কোনো সাপ্তাহিক আড্ডায় দেশের জন্য কেঁদে উঠলে তাকে ভুল বুঝার অবকাশ নাই। বুঝতে হবে তার হৃদয়ের কোণায় দেশ নিয়ে একটা সুখ চিনচিন করে। সেই তাগিদে সে অনেক কিছুই করে ফেলতে পারে। শুধু আমাদের সবারই সে ইচ্ছাটা লালন করতে হবে ...
Sunday, 16 March 2008
কুয়াশাখ্যান ...
জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক হানিফ সংকেত বাম হাত তুলে জোরে চিৎকার করে উঠলেন, ওইখানে একজন দাঁড়িয়েছেন। আপনার নাম?
অনুষ্ঠান সহকারিরা দৌড়ে গেলেন মাইক নিয়ে বিজয়ীর কাছে। বিজয়ী তার নাম বললেন। এরপর আরো ৩ জন বিজয়ীর নাম জেনে নিয়ে হানিফ সংকেত আবারো বললেন, এই যে সামনের সারিতে একজন দাঁড়িয়েছেন। আপনার নাম?
সহকারিরা মাইক ধরতেই বিজয়ী বললেন, আমার নাম কুয়াশা। হানিফ সংকেত হাততালি দিতে দিতে বললেন, আমরা ৫ জন বিজয়ী পেয়ে গেছি। আপনারা চলে আসুন মঞ্চে ...
পর পর ৫ জন বিজয়ী মঞ্চে এসে দাঁড়ালেন। প্রত্যেকের হাতে বিশাল সাইজের ফুলকপি। কুয়াশা নামের মেয়েটিও দাঁড়িয়ে আছে ফুলকপি হাতে।

আমি অবাক হই, আমার বোন!
কুয়াশা নামের মেয়েটিকে দেখিয়ে সহকারিরা বলল, এই মেয়েটি আপনার বোন নয়! আপনার আম্মার সঙ্গে দেখে আমরা তো বোন মনে করেছিলাম। আপনার চেহারার সঙ্গেও বেশ মিল আছে। তাই সবচেয়ে বড় ফুলকপিটা মিলনায়তনে প্রবেশের সময়ই তার হাতে ধরিয়ে দিয়েছিলাম যেন স্টেজে উঠতে পারে।
আমি মিন মিন করে বলি, আমরা ৪ ভাই। কোনো বোন নেই।
*
ইত্যাদির মিলনায়তন অংশ দৃশ্যায়ণের জন্য প্রচুর দর্শকের প্রয়োজন হয়। আমি ইত্যাদি সম্পাদনা করতাম জেনে অনেকেই অনুষ্ঠানের দর্শক হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে। তাই প্রতিবারই বেশ কিছু টিকিট আম্মার হাতে দিতাম। আম্মা সবাইকে বিলিয়ে দিতেন। কিন্তু এবার আম্মা নিজেই অনুষ্ঠানে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করলেন। আমি বলে দিয়েছিলাম অনুষ্ঠান সহকারিদের আমার নাম বলতে, তাতে ভালো সারিতে বসার জায়গাটা পাওয়া যাবে। আম্মা যে কুয়াশাকে নিয়ে যাবেন আমি জানতাম না। (কুয়াশার আম্মার সাথে আমার আম্মার খাতির ছিল একই কলোনিতে থাকতাম বলে)
সেই প্রথম কুয়াশাকে দেখি, টিভি পর্দায়। সামনাসামনি দেখি আরো দুইদিন পর, আমার বাসায়।
অনুষ্ঠানের দর্শকপর্বে অনেকগুলো ভিটামিনের নাম বলে কুয়াশা প্রথম না দ্বিতীয় পুরষ্কার হিসেবে বেশ কিছু বই জিতেছিল। সেখান থেকে কিছু বই আমাকে দেয়ার জন্য বাসায় আসে। আম্মা ঘুম থেকে আমাকে জাগান।
হাত-মুখ ধুয়ে কুয়াশার সামনে যাই। শ্যামলা বর্ণের মেয়েটি মুখ নিচু করে বসেছিল। সামনে ইত্যাদির প্রাইজ হিসেবে পাওয়া সবগুলো বই। আমি জিজ্ঞেস করি, ভালো আছ?
- জ্বি ভাইয়া।
- অনুষ্ঠান কেমন দেখলে?
- ভালো। আমি তো কিছু বই-ও পুরষ্কার পেলাম।
আমি আর বলি না যে তাকে আমার বোন ভেবেই স্টেজে তুলে দেয়া হয়েছিল। (এক্ষেত্রে একটা কথা বলে রাখি, কেউ যেন ভাববেন না ইত্যাদির দর্শকপর্বগুলো সাজানো, সহকারিরা প্রতিপর্বেই ২/১ জনকে স্টেজে উঠিয়ে দিলেও সেখানে প্রশ্নোত্তর অথবা ফানগুলো নিজেদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে করতে হয়। তবে আশার কথা এই যে স্টেজে উঠলেই কিছু না কিছু পুরষ্কার পাওয়া যায়)
- শুনেছি তুমি খুব গল্পের বই পড়।
- আপনিও তো পড়েন। আপনার শেলফেও অনেক বই দেখলাম। তাই আম্মা বলল, এখান থেকে আপনাকে যেন কয়েকটি দিই।
- না না, আমার লাগবে না। বরং তুমি আমার শেলফ থেকেও বই নিয়ে পড়তে পারো। আমি তো বাসায় তেমন থাকি না। তুমি এসে আমার ছোট ভাইকে বলে নিয়ে যেও।
*
সম্ভবত জুন-জুলাই, ২০০৭ সাল, লন্ডন
- হ্যালো আম্মা কেমন আছ তোমরা?
- ভালো? তুই কবে আসবি? বিয়ে শাদী করতে হবে না?
- বিয়ে তো করব আগামী বছর ১৪ এপ্রিল। তুমি এর মধ্যে মেয়ে ঠিক করে রেখো।
- আমি একটা মেয়ে দেখেছি। আমার পছন্দ হইছে।
- তাই নাকি? ছবি পাঠাও।
- তুই চিনিস মেয়েকে। কুয়াশা...
- কুয়াশা! নাম তো সুন্দর। কোন মেয়েটা?
- ওই যে ইত্যাদিতে গেছিল। তোকে বই দিতেও এসেছিল।
- কি জানি। আমি চেহারা মনে করতে পারছি না। তুষারকে (ছোটভাই) বল ছবি স্ক্যান করে পাঠাতে।
- আচ্ছা আমি বলব। ওর মা-র সঙ্গে তো আমার খাতির আছে। একদিন বাসায় যাব।
- তুষারকে বোলো ক্যামেরা নিয়ে যেতে।
*
কুয়াশাকে আবার দেখি, আন্তর্জালে। প্রায় ৬/৭ টা ছবি। কিন্তু কোনোটাতেই চেহারা ঠিকমতো বোঝা যায় না। মুখটুখ ঢেকে রেখেছে। ছোটভাইকে জিজ্ঞেস করলাম ছবির এই অবস্থা কেন? ছোটভাই জানায় মেয়ে নাকি একদমই ছবি তুলতে দিতে চায়নি। যাহোক বেছেবুছে একটা ছবি পেলাম যেখানে চেহারাটা পরিষ্কার এসেছে।
*
- হ্যা আম্মা। আমার পছন্দ হয়েছে।
- পাকা কথা দিব? আমি কিন্তু ১০০০ টাকা সেলামি দিয়ে এসেছি।
- এখনো হ্যা-না কিছু বোলো না। আমি তো আসছিই দেশে। সামনাসামনি দেখতে চাই মেয়েকে প্রথমে।
- সেটাই ভালো। কুয়াশার বাবাও তোকে প্রথমে দেখতে চেয়েছে।
- আমার ছবি দিয়ে দিও।
- ধ্যাত। তোর কোনো ভালো ছবি নাই। তুই কিছু ছবি তুলে আমাকে পাঠা।
- আচ্ছা পাঠাব নে। তুষারকে বোলো মেয়ের মোবাইল নাম্বারটা এসএমএস করতে।
*
স্কুলজীবনের বন্ধু মেহেদী এসএলআর ক্যামেরা কিনে শখের ফটোগ্রাফী শুরু করেছে। বন্ধুকেই বলতেই সে খুবই খুশি, ফার্স্ট এ্যাসাইনমেন্ট। সে ঠিক করল খুব সকালে ছবি তোলা হবে। সেসময় ওয়েদার বেশ ভালো থাকে, ছবিতে লাইটিং ভালো হবে। সকাল ৭টায় ছবিতোলা পর্ব শেষ হলো। সেইদিনই ছবিগুলো পাঠিয়ে দেই। কয়েকদিন পর ছোটভাই মেয়ের মোবাইল নাম্বার পাঠায়।
প্রথম কথোপকথন
- হ্যালো, কুয়াশা?
- জ্বি। কে?
- আমি .... অমুক ...
- স্লামালেকুম।
- কেমন আছ?
- এই তো, ভালো।
- ইয়ে মানে, তোমার সঙ্গে আমার তো বিয়ের কথা চলছে। তুমি কি জানো?
- জ্বি বুঝতে পারছি।
- তোমার কি ইচ্ছা?
- আব্বা আম্মা যা ঠিক করবেন।
- মানে? তোমার আব্বা আম্মা একটা গরুছাগলের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিলেও কি রাজি হবে?
- ওনারা এটা করবেন নাকি? আপনি কি গরুছাগল?
- ওই কথার কথা বললাম আর কি। আমার সম্পর্কে কিছু জানতে ইচ্ছে করে না? তোমার কোনো প্রশ্ন/ জিজ্ঞাসা থাকলে আমাকে করতে পারো।
- আমি তো আপনাকে চিনি।
- ও আচ্ছা। তুমি এতো কম কথা বল কেন?
- আমি এমনই।
- আচ্ছা তোমার ইমেইল আইডি কি? তুমি কি চ্যাট কর?
- জ্বি না।
- তোমাদের বাসায় কমপিউটার নাই?
- না।
- আয় হায়। তোমরা এতো গরীব?
- জ্বি আমরা খুব গরীব।
দ্বিতীয় কথোপকথন
- হাই কুয়াশা, কেমন আছ?
- জ্বি ভালো।
- কি কর?
- বিকালের নাস্তা করি।
- কি খাও?
- পুরি।
- পুরি। কিনে আনছ না বানানো?
- বানানো।
- কে বানাইছে?
- আম্মা।
- তুমি কিছু রাঁধতে পারো না?
- না।
- এরপর কি করবে?
- সন্ধ্যা হলে পড়তে বসব।
- ও আচ্ছা।
কিছুক্ষণ চুপ দুজনেই।
- কি ব্যাপার কথা বলছ না যে?
- কি বলব
- আমিই বকবক করছি। তুমি কিছু বল।
- কি বলব?
- আরে সেটা কি আমাকেও বলে দিতে হবে? আমার সম্পর্কে তোমার কি কিছুই জিজ্ঞেস করার নাই?
- কি জিজ্ঞেস করব?
- আহা। তোমার আমার বিয়ের কথা হচ্ছে। কতো কিছুই তো জিজ্ঞেস করার থাকতে পারে। আমি কি করি, হোটেলে কাজ করি না দোকানে? কতো কিছুই তো জানার আছে। আর আমাকে আপনি আপনি করে বলছ কেন? তুমি করে বল।
- এখন পারব না।
আবারও চুপচাপ।
- তুমি এতো কম কথা বল কেন? আমি কিছু জিজ্ঞেস করলেই উত্তর দিচ্ছ। এমনিতে কিছু বলছ না।
- আমি একটু কম কথা বলি।
- ঠিকাছে। কিন্তু এটাতো বিয়ের ব্যাপার, না? বিদেশে থাকা ছেলেদের ব্যাপারে কতোরকম গল্প চালু আছে। তোমার তো আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সবকিছু জিজ্ঞেস করা উচিত। কতো কিছু জানার থাকতে পারে। তোমার কেন ইচ্ছে করবে না! আমার কোনো এ্যাফেয়ার আছে কিনা? বা হাবিজাবি কতোসব। এতো কম কথা বললে তো চলবে না। আমরা একটা সিদ্ধান্তে যেতে চাচ্ছি। অথচ আমি কিছু জিজ্ঞেস করলে তবেই উত্তর দিচ্ছ, এটা কেমন কথা, তুমি নিজে থেকেই ....
- আপনি আমাকে বকা দিচ্ছেন কেন?
- না বকা নয়, এই বোঝাচ্ছি আরকি। যাহোক, আমার মনে হচ্ছে তুমি বোধহয় এ বিয়েতে রাজি না। ঠিক আছে, আমি আর তোমাকে ফোন করব না। তুমি যদি আমাকে এসএমএস কর, তাহলে বুঝব তুমি বিয়েতে ইন্টারেস্টেড, তাহলেই আমি আবার ফোন করব। আমি তোমার এসএমএসের অপেক্ষায় থাকলাম।
সেপ্টেম্বর ২০০৭, লন্ডন
- কুয়াশার সঙ্গে কথা বলেছিস?
- হ্যা আম্মা। কিন্তু মেয়ে তো কথা বলে না।
- কথা বলে না মানে?
- আরে, কিছু জিজ্ঞেস করলে উত্তর দেয়। এমনিতে চুপ করে থাকে। আমার তো মনে হয় মেয়ের কোনো এ্যাফেয়ার আছে, তাই আমার প্রতি ইন্টারেস্টেড না।
- এটা কেমন কথা?
- হ্যা। আমি ফান করি, কিন্তু মজা পায় না। মেয়ে তো গল্পের বইটই পড়ে জানতাম। ফান বোঝে না। কোথায় আমি রোমান্টিক করে বললাম, তুমি এসএমএস করলে ফোন করব। আজকে এতোদিন হয়ে গেল কোনো এসএমএস নাই। আমিও আর ফোন করি নাই।
- তাহলে এখন কি করব? কুয়াশার মাকে না করে দেব?
- জানি না। এমনিতে আমার ভিসা রিনিউ করার সময় এসেছে। টেনশনে আছি। যদি ভিসা রিনিউ না হয় তখন তো দেশে ফেরত আসতে হবে। আর দেশে আসলে বিয়ে আরো এক বছর পরে করব ২০০৯ সালে। এখন বিয়েতে রাজি হলে পরে ভিসা রিনিউ না হলে মেয়ে পক্ষ বলবে ঠগবাজি করে বিয়ে করেছি। সো বিয়ে টিয়ে সব এখন বাদ। ভিসা রিনিউ হলে ছুটিতে দেশে আসছি, তখন ভাবা যাবে। আর এসব কুয়াশা টুয়াশা দিয়ে হবে না।
- তুই যা ভালো বুঝিস।
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৮, ঢাকা
- কিরে তুই বিয়ে করবি এবার?
- আরে বিয়ে তো করব ১৪ এপ্রিল। কিন্তু ততোদিনে আমি লন্ডনে ফিরে যাব। তুমি তো কোনো মেয়ে ঠিক করে রাখতে পারলে না আম্মা। তাহলে অন্তত এনগেজমেন্টটা করে যেতে পারতাম।
- এ্যাই তুই কুয়াশাকে তো সামনাসামনি দেখিস নাই। দেখবি?
- ওই মেয়ের এখনো বিয়ে হয়নি? তুমি না করে দাওনি?
- আমি হ্যা-না কিছুই বলিনি। শুধু বলেছি মেয়ের বাবা তো ছেলেকে দেখতে চেয়েছে। ছেলে আসুক, তারপর দেখা যাবে। এখন তো তুই এসেছিস, আবার যোগাযোগ করব?
- ছবি দেখে পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু সামনাসামনি দেখে যদি পছন্দ না হয়? তখন না কেমন করি বলি।
- আমি বললাম তো। ছবিতে যেরকম, সামনাসামনিও সেরকম।
- কিন্তু মেয়ে তো কথা কম বলে।
- তো তোর সঙ্গে কি বেশি বেশি কথা বলবে নাকি? বিয়ে হয়নি কিছু হয়নি। করব যোগাযোগ?
- আচ্ছা কর।
*
আম্মা যোগাযোগ করল কুয়াশার মা-র সঙ্গে। সারাদিন টো টো করে রাতে ঘরে ফিরে আমি জানতে চাইলাম। আম্মা মুখ কালো করে বলল, কুয়াশার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আরেক জায়গায়। তুই কিছু বললি না দেখে আমিও ওদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ওরা ভেবেছে আমরা ইন্টারেস্টেড নই।
- তাই নাকি?
- হ্যা। কুয়াশার আম্মা বলল, আমরা গরিব আপা। একটা গরিব ছেলে পাইছি। আর আপনারা তো যোগাযোগ করলেন না। তাই ওই গরিব ছেলের সঙ্গেই বিয়ে ঠিক করে ফেলেছি। আপনাদের মতো বড়লোকের সঙ্গে তো আমাদের মানায় না।
- হু বুঝলাম। কিন্তু কথার মাঝখানে এতো গরিব গরিব কেন? এসব কি ধরনের কথা?
- কি জানি।
*
সেরাতে আমার ইমেইল ইনবক্স থেকে কুয়াশার ছবি বের করে দেখতে থাকলাম। কেন জানি হঠাৎ করেই প্রেমে পড়ে গেলাম মেয়েটার। খারাপ লাগতে শুরু করল। ইস, এই মেয়েটার বিয়ে আরেক জায়গায় হয়ে যাবে? খুব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকলাম কুয়াশাকে। চোখ-মুখ-ঠোঁট-নাক-তিল ... এতো সুন্দর মেয়ে আমি আগে বুঝি নাই! কি বাল মিডিয়ায় কাম করি। সুন্দর চিনি না। বুকের মাঝে চিনচিন করে উঠল। কুয়াশাকে হারিয়ে ফেললাম?
সেরাতে প্রচুর সিগারেট খেলাম। মানতেই পারছি না যে কুয়াশা আরেকজনের বউ হয়ে যাবে। এমন কেন মনে হচ্ছে? কুয়াশার তো আমার বউ হওয়ার কথা না। আমিই তো যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলাম। ধ্যাত, ছাইপাশ ভাবতে ভাবতে হঠাৎই মনে হলো, আচ্ছা কুয়াশার কি সত্যিই আরেক জায়গায় বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। ওর আম্মা 'গরিব' কথাটা কেন তুলল? সহজভাবে বললেই হতো যে মেয়ের বিয়ে আরেক জায়গায় ঠিক হয়ে গেছে। তবে কি কোনো ক্ষোভ থেকে বলেছে? আমাদের পরিবারের কোনো কিছুতে কি তাদের প্রতি তাচ্ছিল্যভাব করা হয়েছে? ভাবতে ভাবতে আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাল, না - কুয়াশার বিয়ে ঠিক হয়নি কোথাও।
*
পরদিন আম্মাকে বললাম, আম্মা তুমি খালাকে কুয়াশাদের বাসায় পাঠাও। আমার মনে হচ্ছে যে ওর বিয়ে ঠিক হয়নি, অন্য কোনো ব্যাপার আছে। আর তুমি আবার ফোন কর কুয়াশার আম্মাকে। আফরোজা আন্টিকেও (আম্মার বন্ধু) বল। কুয়াশার যদি সত্যিই বিয়ে ঠিক না হয়ে থাকে তবে ওর সঙ্গে আমার এনগেজমেন্টের ব্যবস্থা কর।
খালা ওদের বাসায় গেল। আফরোজা আন্টি ফোন করল। আম্মা তার অফিসের একজনকে (কুয়াশাদের পরিচিত) পাঠাল ওদের বাসায় এমনিতে ঘুরে আসার জন্য, মেয়ের কি আসলেই বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে কিনা যদি বুঝতে পারে। ছোটভাইয়ের কাছ থেকে কুয়াশার মোবাইল নাম্বার আবার নিয়েছি, কিন্তু সাহস পাইনি ফোন করার।
রাতে বাসায় ফিরে আম্মার কাছে বিস্তারিত শুনে পুরা টাসকি খেলাম। ঘটনা হলো আমি নাকি ফোনে মেয়েকে গরিব বলে অবহেলা করেছি। আম্মা আমাকে বলল, তুই এসব বাজে কথা কেন বললি?
- কোথায় আমি ওদের গরিব বললাম!
- তুই নাকি বলেছিস, ওদের বাসায় কমপিউটার নেই, ওরা গরিব।
- আমি তো ওটা মজা করে বলেছি। এখন আমি যদি এরকম করে বলি - হা হা হি হি তোমরা এতো গরিববব...কি মজা...তোমাদের কমপিউটার নাই...হি হি - তাহলে কি ফান হয় নাকি? এটা তো সিরিয়াসলি বলতে হবে। মেয়ে এর উত্তরে নাকি সুরে বলতে পারত - কি আর করা বলেন, আমরা খুব গরিব, এখন বিয়ে করবেন? - মেয়ে তো কোনো রিঅ্যাক্টই করেনি ওইসময়। কথাই কয় না।
- সবকিছু তো তোর নাটক না। বিয়েশাদী বেশ সিরিয়াস বিষয়।
- আচ্ছা যাহোক, এখন ওরা কি বলেছে?
- ওরা আত্মীয়রা মিলে বিষয়টা আবার ভাবছে।
- তার মানে। কুয়াশার তাহলে অন্য কোথাও বিয়ে ঠিক হয়নি?
- আমি আর সেটা জিজ্ঞেস করিনি।
- গুড। তাহলে ১৩ ফেব্রুয়ারি কিংবা ২৯ ফেব্রুয়ারি আমার এনগেজমেন্ট ঠিক কর। কিন্তু ওই দুইদিনের যে কোনো এক দিন হতে হবে।
- আবার তোর এসব আর্ট কালচার শুরু হলো।
- আরে আম্মা এটাই তো জীবন। ১৩ ফেব্রুয়ারি হলো পহেলা ফাগুন। অথবা লিপ ইয়ারের দিন ২৯ ফেব্রুয়ারি।
- তাহলে ১৪ এপ্রিল বিয়ে করবি না?
- হ্যা ওইদিনই করব। আমি আবার আসব। তখন বিয়ে করব।
- তুই কুয়াশাকে একটা ফোন কর।
- কালকে করব।
১০ ফেব্রুয়ারি ২০০৮, ঢাকা
- হ্যালো কুয়াশা ?
- হ্যা, কে?
- আমি অমুক ... কেমন আছ?
- ভালো?
- কোথায় তুমি?
- ভার্সিটিতে
- শোনো, তুমি নাকি রাগ করেছ তোমাকে গরিব বলেছি বলে? আরে ওটা তো ফান ছিল।
- শুনুন। আমি এখন ক্লাসে ঢুকব। আপনি পরে ফোন করেন।
- তোমার ক্লাস কখন শেষ হবে?
- ২টায়।
- ওকে। আমি তখন ফোন করব। প্লিজ তুমি কিন্তু মোবাইল অফ করে রেখো না। তোমার সঙ্গে আমার অনেক কথা আছে।
কিন্তু কুয়াশা আমার কথা রাখল না। ২টার সময় ফোন করে কুয়াশার মোবাইল বন্ধ পেলাম। আমি ক্রমাগত এসএমএস করি। কুয়াশা রিপ্লাই দেয় না, মোবাইল খোলে না। আমার কষ্ট হতে থাকে। এতো রাগ মেয়েটার?
১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৮, ঢাকা
সারাদিন কুয়াশার মোবাইলে ট্রাই করেছি, কিন্তু মোবাইল বন্ধ। সন্ধ্যায় বেইলি রোডে আড্ডা মারছিলাম। তখনই আম্মার ফোন।
- তুই কই?
- বেইলি রোডে?
- এখনি মিষ্টি কিনে কুয়াশাদের বাসায় চলে আয়। আমি কুয়াশাদের বাসায় আছি।
- তাই নাকি? ওরা রাজি হয়েছে?
- শোন। কুয়াশা ছোটবোনকে নিয়ে ওদের মামার সঙ্গে বইমেলায় গেছে। এখনই ফিরে আসবে। তুই জলদি আয়। কুয়াশাকে দেখে নিবি।
- আমি তো বাসা চিনি না।
- বাসায় যা। ড্রাইভার চেনে, ওকে নিয়ে চলে আয়।
সঙ্গে আরো দুইজন বন্ধুকে নিয়ে নিলাম। মিষ্টির দোকানে গিয়ে বন্ধুদের বললাম, দোস্ত চল একটা মজা করি। এই ধর ২০ কেজি মিষ্টি নিয়ে যাই। কি বলিস? বন্ধুরা ধমকে উঠল, রাখ ব্যাটা। এমনিতে গরিব কইয়া গ্যাঞ্জাম লাগাইছস। এখন ২০ মিষ্টি নিয়া গেলে বলবে লন্ডন থিকা আইয়া ভাব দেখাইতাছস। বন্ধুদের ধমক খেয়ে আমি ৪ কেজি মিষ্টি নিয়ে কুয়াশাদের বাসায় যাই।
বিধিবাম! কুয়াশাকে সেদিনও দেখলাম না। ওর বাবা আমাকে দেখল। টুকটাক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করল। আমি অতি ভদ্র হয়ে বসে থেকে সবকিছুর উত্তর দিলাম। বারবার কুয়াশার মোবাইলে ট্রাই করা হচ্ছিল। কিন্তু বইমেলায় নাকি নেটওয়ার্ক থাকে না, তাই তাদের রিচ করতে পারছে না। আমি ৮টায় গেছিলাম ওদের বাসায়, রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত বসে থেকে ভগ্ন হৃদয় নিয়ে ফিরে এলাম।
রাতে বাসায় ফিরে আম্মাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম ওরা আরো সময় চেয়েছে। মেয়ের বাবা-মা, মেয়ের মামাদের সঙ্গে আলাপ করবে। আমি অস্থির হয়ে গেলাম। সেরাতে আমি আরো সিগারেট খেলাম। আমার খুব মন খারাপ করতে থাকল। কুয়াশার ছবি বের করে দেখতে থাকি। জিদ চেপে গেল। সিদ্ধান্ত নিলাম এনগেজমেন্ট নয়, বিয়েই করব পহেলা ফাগুনে এই মেয়েকে। যেভাবেই হোক, দরকার হলে উঠিয়ে নিয়ে আসব। বন্ধুদের বলতেই তারা উৎফুল্ল হয়ে উঠল। চাকরিবাকরি করে সংসারি, কেউ কেউ বাচ্চাকাচ্চার বাপ হয়ে যাওয়া বন্ধুরা অতীতে ফিরে যাওয়ার সুযোগে আনন্দিত।

সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে দেখি আফরোজা আন্টি, খালা সহ আম্মার অফিসের অনেকেই এসেছে। আফরোজা আন্টিকে দেখে আমি বললাম, আন্টি আপনারা থাকতে কুয়াশার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে না? ওর কোথাও বিয়ে ঠিক হয়নি। এতো কিসের আলোচনা ওদের।
আমার কথা শুনে আফরোজা আন্টি ফোন করলেন কুয়াশার আম্মাকে। সরাসরি বললেন, দেখেন আপা, আমরা জানতে পেরেছি কুয়াশার বিয়ে ঠিক হয়নি। এর আগে তো বিয়ে দিতে আপনারা রাজি ছিলেন তবে এখন এতো কিসের আলোচনা। শুনেন, আমরা আগামীকাল ছেলে নিয়ে আপনাদের বাসায় আসছি। কোনো আয়োজন না, আমরা কয়েকজন এসে আংটি পরিয়ে দিয়ে যাব। আপনি আপনাদের আত্মীয় যাদের খবর দেয়ার দিন। আর হ্যা, আগামীকালই হতে হবে। ছেলের তেমনই ইচ্ছে।
আমি বেরিয়ে পড়ি। সারাদিন আম্মার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ রাখি। ১৩ তারিখ নিয়ে ওদের আপত্তি। এই দিনটা নাকি ভালো না। আমি বললাম, ভালো না মানে? এইদিন পহেলা ফাগুন। পরের বছর কুয়াশা বাসন্তী শাড়ী পরে বিবাহবাষির্কী পালন করবে। আর নয়তো ২৯ ফেব্রুয়ারি কর। তবে আমি ৫ তারিখ লন্ডন ফিরে যাব। এদিকে বন্ধুদের সঙ্গে ২৬ তারিখ আমার সেন্টমার্টিন যাওয়ার কথা। নাহ, তুমি ১৩ তারিখই আংটি পরাবে বল। আর বেশি কথা বললে বলবা, কুয়াশাও রাজি। ১৩ ফেব্রুয়ারি, পহেলা ফাগুন এসব বিষয়ে ওরও আগ্রহ আছে।
আম্মাকে কথাগুলো বললাম ঠিকই। কিন্তু তখনও ওরা ফাইনাল কিছু বলছে না। রাতে বাসায় ফিরে আম্মাকে জিজ্ঞেস করতেই জানলাম, ওরা এনগেজমেন্ট করতে মোটামুটি রাজি। তবে ১৩ তারিখ না করে ১৪ তারিখ করতে বলছে। কি জানি ভালোবাসা দিবস।
- আরে ধুর। ওইসব বিদেশী কালচার। তুমি ওদের বল যে ১৩ তারিখ পহেলা ফাগুন বিয়ে হবে, তারপরদিন ভালোবাসা দিবসে আমরা দুইজন ঢাকা শহর ঘুরব।
- তুই না ১৪ এপ্রিল বিয়ে করবি?
- এখন সবাই পহেলা বৈশাখে বিয়ে করছে। তাই আমি পহেলা ফাগুনে করব।
- কিন্তু ওদের তো বলা হয়েছে শুধু আংটি পড়ানো হবে।
- ঠিক আছে। তারপরও আমি কাজি নিয়ে আসব। তুমি সিস্টেম করে বাবুল মামা আর খালাকে দিয়ে বিয়ের কথা পাড়বে। দেখো ওরা রাজি হয়ে যাবে।
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৮
পহেলা বসন্ত। ঢাকা শহরের মেয়েরা বাসন্তী শাড়িতে সেজেছে। আমি কুয়াশাকে বসন্ত দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে একটা এসএমএস করলাম। কোনো রিপ্লাই পেলাম না। বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে পড়লাম বইমেলা, টিএসসিতে। আম্মাকে বললাম আমাকে ফোন করলেই চলে আসব।
আম্মা বিকেল ৪টায় ফোন করে জানাল ওরা একটা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে এনগেজমেন্টের আয়োজন করেছে। আমি যেন সন্ধ্যার পরপরই চলে আসি। আমি আলহামুলিল্লাহ বলে বইমেলা ঘুরতে লাগলাম। বাসায় যেতে আর কতোক্ষণ। কিন্তু হায়! বইমেলা থেকে বেরিয়ে দেখি রাস্তায় প্রচুর জ্যাম। বসন্ত দিবসে সারা বইমেলা-ঢাবি জুড়ে মানুষের বন্যা। বইমেলার লাইন শাহবাগ পর্যন্ত ঠেকেছে। বাসার দিকে সিএনজি-ট্যাক্সি কেউই যেতে চাইছে না। এদিকে বিকেল ৫টা বেজে গেছে। অবশেষে একটা রিক্সা পেলাম। ২৫ টাকা ভাড়ার জায়গায় তাকে ৭০ টাকা দিয়ে ঠিক করলাম। কিন্তু রিক্সা যাবেটা কোন জায়গা দিয়ে? আম্মা ক্রমাগত ফোন দিচ্ছে। রিক্সাওয়ালাকে বললাম, আমার বিয়া আজকে। যেমনে পারো জলদি চালাও। রিক্সাওয়ালা বলল, না ভাইজান। জোরে চালাতে পারুম না। দেহেন না কেমন জ্যাম।
বলেই রিক্সাওয়ালা দুর্দান্ত গতিতে ফাঁক ফোকর দিয়ে জ্যাম ঠেলে প্রাণান্তকর চেষ্টায় রিক্সা নিয়ে ছুটতে শুরু করল। বন্ধুর সঙ্গে কথোপকথন শুনে মাঝখানে রিক্সাওয়ালা বলল, ভাই আপনে তো মনে হয় লন্ডন থাহেন। আমারে নেওন যায় না? আমি কই, ভাই, সুযোগ থাকলে সবাইরে লন্ডন নিয়া যাইতাম।
যাহোক, সব ঠেলেঠুলে কোনোমতে রাত ৮টায় বাসায় পৌঁছলাম। আমি পাঞ্জাবি পড়ি না। পুরোনো ভাঁজ করা একটা শার্ট পরে বন্ধুদের নিয়ে (সঙ্গে কাজি) রওনা দিলাম চাইনিজ রেস্টুরেন্টে। রেস্টুরেন্টে ঢুকেই ইতিউতি তাকিয়ে কুয়াশাকে খুঁজি। কাউকেই দেখতে পাই না। আম্মাকে বললাম, ওদেরকে বলছ যে এনগেজমেন্ট না বিয়ে করতে চাই।
- আমি অনেক কষ্টে বুঝিয়েছি, ওরা রাজি।
- গুড। তাহলে বিয়ে পড়ানো হোক।

*
কাজি এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করল। আমি কবুল বললাম কিন্তু তখনো কুয়াশাকে দেখিনি। কেমন যেন অদ্ভুত অনুভূতি হতে লাগল। অবশেষে কুয়াশাকে পেলাম। লন্ডনের বন্ধুদের ফোন/এসএমএস করে জানাতে শুরু করলাম। কাজি গেল মেয়ের কবুল আনতে। কুয়াশাকে না দেখেই বিয়ে করে ফেললাম।
কথা ছিল এনগেজমেন্ট, হলো বিয়ে। এরপর দুজনেই যার যার বাসায় চলে যাব। ঠিক হলো ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখে অনুষ্ঠান করে মেয়ে উঠিয়ে নেয়া হবে। কিন্তু বন্ধুরা শুরু করল ফাজলামো। দেখি না কি হয় ভেবে তারা বলতে শুরু করল মেয়েকে এখনই নিয়ে যাবে। মেয়ে পক্ষরা সবাই না না করে উঠল। বন্ধুরা আমাকে কানে কানে জিজ্ঞেস করল আমি রাজি কিনা। মাথা নেড়ে হ্যা বলতেই তারা আরো জোরেসোরে বিষয়টা নিয়ে দেনদরবার শুরু করল। মেয়েপক্ষ কোনোমতেই রাজি হচ্ছে না দেখে এবার বন্ধুরা বলতে লাগল, তাহলে ছেলেকে রেখে দেন। এই বিয়ের রাতে আমরা কাউকে আলাদা রাখতে চাই না। ওদের এই হল্লায় কিভাবে যেন গার্জিয়ানদের সায় মিলে গেল। আমি আস্তে করে কুয়াশাকে বললাম, শোনো আগামী ২৬ তারিখ সেন্টমার্টিনে আমাদের হানিমুন। আজকে যাও আর না যাও সেন্টমার্টিনে কিন্তু যেতেই হবে।
অবশেষে বন্ধুদের জয় হলো। তারা মেয়েপক্ষকে রাজি করিয়ে ফেলল। কুয়াশা বাবা-মাকে জড়িয়ে কেঁদেকেঁটে আমার সঙ্গে গাড়িতে উঠল। পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভ্যালেন্টাইন্স ডে। শাহবাগের ফুলের দোকানে গমগম করছে মানুষ। রাত ১টায় বন্ধুরা ছুটল ফুল কিনতে, বাসর সাজানো হলো। দীর্ঘ ১৬ বছর পর আমি দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ি। হা হা হা হা হা ....
*
২৬ তারিখ সেন্টমার্টিন গেলাম আমরা দুজনে। এর আগেরদিন ২৫ তারিখ সচলের আড্ডায় বইমেলায় কুয়াশাকে নিয়ে গেছিলাম। সেন্টমার্টিনে অনেক মজার সময় কাটল আমাদের। আমরা দুইজন দুইজনের হরিহর আত্মা হয়ে গেলাম। ছবি দেখে কি মনে হয় আপনাদের ?

Thursday, 24 January 2008
হারিয়ে যাওয়া দৃশ্যাবলী, হাতড়ে বেড়াই, ছুঁতে পারি না, ফিরে আসে না ...
০২। নতুন ফ্রিজ কেনার পর দুধ-চিনি দিয়ে মিশিয়ে আইসক্রীম বানানোর বিরামহীন চেষ্টা
০৩। প্রচন্ড গরমের দুপুরে ফ্যান ফুলস্পিডে চালিয়ে ঠান্ডা ফ্লোরে গাল ঠেকিয়ে শুয়ে থাকা
০৪। ভাড়ায় ব্রেকহীন সাইকেল চালিয়ে পাড়া ছেড়ে বহুদূর চলে যাওয়া
০৫। দুপুরের ঘুমের পর জেগে উঠে সন্ধ্যা হয়ে গেছে দেখে এবং তাই খেলতে যেতে না পারায় নিজের উপর তীব্র রাগ
০৬। লাটিমের 'আল' লাগানোর ভালো কামারখানা খুঁজতে ভিন্ন ভিন্ন বাজার, পাড়া চষে বেড়ানো
০৭। লাল-নীল হরেক রঙের ঘুড়ি, নাটাই, মাঞ্জা
০৮। মসজিদে জুম্মার নামাজে বন্ধুদের সঙ্গে দুষ্টুমি
০৯। পুরানো খাতাবই দিয়ে কটকটি খাওয়া
১০। মা-র মার খেয়ে খাটের তলায় লুকিয়ে যাওয়া
১১। ঈদের জামাকাপড় মাথার কাছে নিয়ে চানরাতে ঘুমোতে যাওয়া
১২। মুভি অফ দ্য উইকে কিসসিন টাইপের কিছু দেখে পরদিন স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনা
১৩। প্রথম চটিবই পড়া/ নীলছবি দেখার পর অবিশ্বাস এবং উত্তেজনা
১৪। বায়োনিক ওম্যান, সিক্স মিলিয়ন ডলার ম্যান, ম্যান ফর আটলান্টিক, টারজান, ইনক্রিডিবল হাল্ক, দ্য ফল গাই, দি এ টিম, নাইট রাইডার, থান্ডার ক্যাটস, ম্যানিমেল, স্ট্রিটহক, ম্যাকগাইভার, ড়্যাভেন
১৫। ঘুমিয়ে গেলে ঘুমের ঘোরে মা-র খাইয়ে দেয়া
১৬। জ্বর হলে মা-র বার বার জানতে চাওয়া - কিছু খেতে ইচ্ছে করে বাবা?
১৭। সেইসব বায়নাগুলো - স্ট্যাম্প, ঠাকুরমার ঝুলি, খেলনা, ফুলগাছ, ছোটবোন চাওয়া
১৮। ভালো ছেলে বানানোর সে কি প্রাণান্তকর চেষ্টা বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজনদের
১৯। পড়ার বইয়ের দিকে তাকিয়ে ভালো লাগা মেয়েটির কথা চিন্তা করা
২০। আজব আজব সব স্বপ্ন দেখা, একটাও সত্যি হলো না ..
২১। মার্বেল খেলা, ঢাই আর চুইয়া, ম্যাচ বাক্স ও সিগারেটের তাস, নাক্কিমুট খেলা, লিচুর বিচি
২২। খেলতে গিয়ে স্যান্ডেল হারিয়ে ফেলা
২৩। ভুতের ভয়, পরীক্ষার আগে ডিম না খাওয়া, রাব্বি-জিদ্দি-এলমা
Friday, 4 January 2008
জনমত জরিপ @ প্রান্তিক থেকে পিরোজপুরের পথে
কোনো রিক্সা নেই। ২ নং হল থেকে প্রান্তিক মোটামুটি দূরে। প্রায় দৌড়ে চলছি তিনজনে। কোনোমতে প্রান্তিকে এসে একটা দোকানের নীচে ঠাঁই নিলাম। আমি বুঝতে পারছি না বাস চলেই গেল কিনা। দোকানের আশ্রয় ছেড়ে রাস্তায় এসে দাঁড়িয়ে রইলাম। বৃষ্টির ঝাপটা কমেছে, কিন্তু প্রচন্ড বাতাস। একটু ঠান্ডাও লাগছে।
একটা বাস এসে থামে প্রান্তিকে। খালেক এন্টারপ্রাইজের বাস দেখে আমি এগিয়ে যেতেই দেখি কন্ডাক্টরের পিছু পিছু জাহিদও নামছে। আমি নীলু আর সুমিকে জোরে ডাকলাম। সুমি দৌড়ে এলো, হাতে নীলুর ব্যাগ।
- নীলু কই?
- টুথব্রাশ কিনছে।
- টুথব্রাশ কিনছে! এখন কি দাঁত মাজবে?
- না, সকালে তো লাগবে।
- তাহলে সকালে কেনা যেত না? যত্তোসব। তুমি বাসে উঠো। এ্যাই জাহিদ ওকে সিটে নিয়ে বসা।
জাহিদ সুমিকে নিয়ে বাসে উঠতেই আমি প্রান্তিকের একটা দোকানে ঢুকলাম। মেমসাহেব তখন টুথব্রাশের রং পছন্দ করছে। জোরে একটা ধমক দিয়ে কোনোমতে একটা ব্রাশ কিনেই দৌড় দিলাম বাসের দিকে। কন্ডাক্টর তখন চিৎকার শুরু করেছে।
বাসে উঠেই আমি সিটে গা এলিয়ে দিলাম। লাস্ট কয়েক ঘন্টা ধরে এতো টেনশনের ধকল শরীরে সইছে না। একটু ধাতস্থ হতেই বাসের অন্যান্যদের খোঁজ নেয়া শুরু করলাম। সবার সঙ্গে নীলু আর সুমির পরিচয় করিয়ে দিলাম। সবাইকে আমার দুরাবস্থার কথা বললাম। তাদের কথাও শুনলাম - এই ঝড়বৃষ্টির রাতে কে কিভাবে গাবতলী পৌঁছেছে।
মালা নামে একটা মেয়ে ছিল সেই গ্রুপে। সে বাগেরহাট যাবে। প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টি থাকলেও প্ল্যানমাফিক সে আগেই গাবতলী চলে যায়। কিন্তু কোন বাসে উঠবে বুঝতে না পেরে কাউন্টারে দাঁড়িয়ে ছিল। তখন একটা লোক এসে নাকি তাকে বারবার ইশারা করছিল। সাড়া না পেয়ে পরে সরাসরি মালার কাছে জানতে চায়, সারা রাত থাকতে হলে সে কতো টাকা নেবে? মালার নাকি তখন মরে যেতে ইচ্ছে করছিল। ঘটনা শুনে অবশ্য আমরা বেশ মজাই পেয়েছিলাম।
মালা বেশ সুন্দর গান গাইতে পারে। যেমন তেমন না, গানের উপর বহুবছরের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আছে তার। ১২ জন হওয়ায় পুরা বাসের মালিক আমরাই হয়ে উঠি। মালাকে গান গাওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। না না করতে করতে মালা ৩টা গান গেয়ে ফেলে। তারপর শুরু হয় অন্তক্ষরী খেলা। 'গ' দিয়ে গানের শুরু করতে হবে এমন সময় নীলু গান ধরে - গরু তুই মানুষ হইলি না। অথচ সেই সময় আমি ধরতে চাইছিলাম - গানেরই খাতায় স্বরলিপি ...
গরু নিয়ে গান শুরু হওয়ায় আমার গানের খাতার স্বরলিপি হারিয়ে গেল তৎক্ষণাৎ। সবাই হো হো করে হেসে উঠে। বাসে উঠার পর নীলু বেশ চুপচাপ ছিল। আমি ভেবেছিলাম যে রাগারাগি করেছি বলে হয়তো চুপ মেরে গেছে। অন্ত্যক্ষরী খেলাতেও সে অংশগ্রহণ করছিল না। কিন্তু হঠাৎ 'গ' এর বেলায় গরুর গান গেয়ে ফেলার কারণটা কি? নীলুর দিকে তাকিয়ে দেখি সে ততোক্ষণে সিটে হাঁটুর উপর দাঁড়িয়ে গেছে। সমানে গাইছে গান। যেহেতু কোনো দলের না তাই অক্ষর পেলেই গেয়ে ফেলছে গান ঝটপট। নীলুর গানের তোড়ে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শিক্ষিত মালাও চুপ হয়ে গেছে।
ফেরি পার হবার পর মধ্যরাতে বাসের অনেকের মধ্যেই ঝিমুনি শুরু হয়ে গেছে। আমার পাশের দুইসিটে সুমি আর জাহিদ বসেছিল। ওদের মধ্যে ফরমাল পরিচয়/আলাপচারিতা শেষ হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। জাহিদ আগের সার্ভেতে অন্য গ্রুপে ছিল। কিন্তু নীলুর ঘটনা শুনে এবার সে আমার সঙ্গেই যাচ্ছে। সুমি তখনো জেগে আছে, কিন্তু জাহিদ কিছুক্ষণ পরপরই ঘুমানোর ভান করছে। হয়তো ভাবছে, নীলুর বন্ধু হিসেবে সেও যদি জাহিদের চোখেমুখে হাত বুলিয়ে দেয়। হা হা হা ...
আমি নীলুর হাত ধরে বসে আছি। পট পট করে আঙ্গুল ফুটাই। নীলু জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে অন্ধকারে কি যেন দেখতে থাকে। আমি সাহস করে একটা আঙ্গুলে কামড় দিই। নীলু হাত টেনে নেয়,
- কি কর?
- কি করলাম !
আমি হাতটা আবার টেনে নিই। নীলু কিছু বলে না। দুইহাতের মাঝে নিয়ে চাপ দিই, উল্টেপাল্টে দেখি। বেশ কিছুক্ষণ ওরকমই থাকি। বাইরে মনে হয় ভোর হতে শুরু করেছে। ধ্যাত, অন্ধকার আরেকটু থাকছে না কেন? আলো ফুটলে তো সবাই জেগে যাবে। তখন কি নীলুর হাত ধরে বসে থাকতে পারব। ঘাড় ফিরিয়ে দেখি জাহিদ আর সুমি দুজনেই বেঘোর ঘুম। আমি আরেকটু ঘন হয়ে বসি। ফিসফিস করে কথা বলতে থাকি,
- আচ্ছা তুমি যে আমার সঙ্গে যাচ্ছ, তোমার বাসায় জানে?
- না।
- হলের সবাইকে বলেছ?
- না তারাও জানে না।
- তাহলে?
- বুদ্ধু কোথাকার। হলের সবাই জানে বাসায় যাচ্ছি, আর বাসায় তো জানেই যে আমি হলে আছি।
আমি নীলুর কনে আঙ্গুলটা মটকে দেই।
- তোমার তো ভালোই বুদ্ধি।
- তবে ভাইয়া থাকলে আসতে পারতাম না।
- তিনি কোথায়?
- পড়তে গেছেন দেশের বাইরে, স্কলারশিপে।
নীলুর আঙ্গুলের ফাঁকে ফাঁকে আমার আঙ্গুলগুলো ঢুকিয়ে দিই।
- উফ যা টেনশনে ফেলেছিলে তুমি। তুমি জানতে না আমি আসব?
- হুমম জানতাম।
- তাহলে এভাবে টেনশনে ফেললে কেন? তোমাকে না পেয়ে পরে খালারা আমাকে হলের ভেতর ঢুকতে দেয়। আমার তো মনে হয় গেস্টরুমের পাশের টয়লেটে বসে ছিলাম।
- তাই নাকি?
দুইজনের তর্জনী পাশাপাশি রেখে মেলাতে থাকি কার আঙ্গুল বড়। নীলুর না আমার।
- হুমম। আমি ভাবছিলাম যে তুমি আসবে না।
- আরে আমি তো সকাল থেকেই তৈরি হয়ে বসে ছিলাম। দেখলে না তুমি বলার পরপরই কতো তাড়াতাড়ি ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে এলাম।
- হ্যা। আর ওদিকে যদি বাস মিস হয়ে যেত।
- আরে বাবা, সেজন্যেই তো তাড়াতাড়ি চলে এলাম।
নীলুর হাতের মুঠি চাপছিলাম। এবার জোরে একটা চাপ দেই,
- এ্যাহ, তাড়াতাড়ি এলে মানে? কথা ছিল তুমি হলে থাকবে, আমি কল দিলে তবেই নামবে। বাইরে ছিলে কেন তুমি?
- কি করব? দীপু এসেছিল।
- দীপু? তুমি দীপুর সঙ্গে ছিলে?
- কি করব? ওর আজকে আসার কথা ছিল না। বিকেল থেকেই একসঙ্গে ছিলাম। আমাকে ছাড়ছিল না। কোনোমতে জোর করে এসেছি।
আমি নীলুর হাত একেবারেই ছেড়ে দিই। নীলুও হাত টেনে নেয়। বাইরে ভোর হয়ে গেছে।